বিবিধ প্রসঙ্গ-৮
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on March 21, 2020
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
এক. যে অপচয়ে এ জীবনে বাঁচাটাই ব্যর্থ হয়
একজন নারী বা পুরুষ তার সমগ্র জীবনে যা কিছু খরচ করে তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হলো তার সময়। ব্যক্তির জিম্মায় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত অতি মহামূল্য আমানত হলো এটি। সময় শেষ হয়ে গেলে সকল সামর্থ্যই শেষ হয়ে যায়। কোটি কোটি টাকার সম্পদও তখন কাজে লাগে না; সে সম্পদের মালিক তখন অন্য কেউ হয়। কাজ লাগে না মেধা, ডিগ্রি বা দৈহিক বল। তাই ব্যক্তির জীবনে অতি গুরুতর খেয়ানত বা পাপ হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া এ শ্রেষ্ঠ আমানতের খেয়ানত। সে মহামূল্য আমানতটি কীরূপে ব্যবহৃত হলো তার ভিত্তিতেই জুটবে জান্নাত বা জাহান্নাম পাবে। কাজে না লাগালে বহু কোটি টাকার সম্পদও কোন কাজ দেয় না। সূর্য্যের তাপে বরফের টুকরো যেমন হাওয়া হয়ে যায়, তেমন জীবনের গতিতে হারিয়ে যায় সময়ও। তাই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার পরিচয়টি মেলে সময়ের সুষ্ঠ ব্যবহারে। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনের সকল সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে সময়ের বিনিয়োগটি কীরূপে হলো তার উপর। এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান তো তারাই যারা সময়কে হারিয়ে যেতে দেয় না, বরং ধরে রাখে জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্মের মাঝে এবং পাঠিয়ে দেয় পরকালের ট্রেজারে। মানব জীবনের এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দ্বিতীয়টি নেই। বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি বুঝাতেই মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনে একটি সুরা নাযিল করেছেন এবং সেটি হলো সুরা আছর।
‘আছর’ শব্দের অর্থ হলো সময়। সুরা আছরে মহান আল্লাহতায়ালা সময়ের কসম খেয়ে যে মহা সত্যটি তুলে ধরেছেন তা হলোঃ “নিশ্চয়ই বিলুপ্ত হয় সময় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিটি মানুষ। কিন্তু সে ক্ষতি থেকে বাঁচে একমাত্র তারাই যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও তাঁর বিধানের উপর, নেক কর্মে বিনিয়োগ করে নিজের সময় ও সামর্থ্য এবং একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করে হকের প্রতিষ্ঠায় ও ধৈর্য ধারণে।” তবে বিনিয়োগকৃত সময় মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কতটা প্রতিদান দিবে -সেটি নির্ভর করবে ব্যক্তি তার সময়ের মূল্য কতটা বাড়ালো তার উপর। সবার যোগ্যতা বা সামর্থ্য যেমন এক নয়, তেমনি এক নয় সবার সময়ের মূল্যও। সময়ের উপর ভ্যালুএ্যাডিং তথা মূল্যসংযোজনটি হয় ব্যক্তির যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সৎ কাজে নিজের সামর্থ্য থেকে। সামর্থ্য বৃদ্ধির কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারটি হলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। যে জানে এবং যে জানে না –উভয়ে যে এক নয়, সে সত্যটি পবিত্র কোর’আনে বার বার বলা হয়েছে। জ্ঞানহীন, অভিজ্ঞতাহীন ও কর্মহীন ব্যক্তির সময়ের মূল্য তাই জ্ঞানবান অভিজ্ঞ ব্যক্তির সমান হয় না। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বলে যে তাঁর নিজের যোগ্যতা বাড়ালো সেই বহুগুণ বৃদ্ধি করলো তার সময়ের মূল্য। বস্তুতঃ মানব জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে কাজটি ত্বরান্বিত করতেই মহান আল্লাহতায়ালা জ্ঞানার্জনকে নামায-রোযার আগে ফরজ করেছেন। নামাজের ওয়াক্ত দিনে ৫ বার, কিন্তু জ্ঞানার্জনের ওয়াক্তটি দিন-রাতের প্রতি মুহুর্ত এবং তা আমৃত্যু। এবং এ ফরজ ছুটে গেলে ক্বাজা আদায়ের সুযোগ নেই, বরং ভয়ানক কুফলটি ভুগতে হয় ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। সেটি যেমন এ দুনিয়ায়, তেমনি আখেরাতে। সে ব্যর্থতা আখেরাতে জাহান্নামে হাজির করে।
আলো-বাতাস ও পানাহারের ন্যায় সময়ের খরচ সবার জীবনেই থাকে। কারো জীবনে সেটি হয় কল্যাণের পথে, কারো জীবনে অকল্যাণের পথে। বিশাল ভিন্নতা থাকে গুণগত সামর্থ্যের অঙ্গণেও। সৎকর্মশীল জ্ঞানীর বিনিয়োগে সমাজ ও রাষ্ট্রের বুকে বাড়ে নেক আমলের ফসল। জাহেলের বিনিয়োগে বাড়ে দুর্বৃত্তি; এবং তা টানে জাহান্নামে। প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত সময়টি সীমিত। একটি মুহুর্তও বাড়ানো যায় না বহুকোটি অর্থ ব্যয়ে –এ হুশিয়ারিটি এসেছে সুরা মুনাফিকুনে। অপর দিকে সুরা মুলক’য়ে এ দুনিযার জীবন চিত্রিত হয়েছে পরীক্ষাপর্ব রূপে। ব্যক্তির ঈমান ও আমলের বিচারটি হয় পার্থিব জীবনের এ পরীক্ষা অঙ্গণে। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিচা্র হয় কীরূপে সে মহা মূল্যবান সময়কে খরচ করলো -তা থেকে। সীমিত সময়ের শেষ ঘন্টাটি বেজে উঠলে পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেয়া হয়। তাই যার সুস্থ্য বিবেক-বুদ্ধি আছে সে কখনো্ই পরীক্ষার হলে বসে নাচ-গানে মন দেয় না। এবং বাজে কথা ও কাজে সময় নষ্ট করে না। ইসলামে সময়ের এরূপ অপচয় তাই অতি গর্হিত কর্ম। এর পরিনাম নিয়ে ভবিষ্যতের চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে সুরা মুদাচ্ছেরে। বলা হয়েছে, জাহান্নামবাসীদের যখন জিজ্ঞেস করা হবে তোমরা কী করে জাহান্নামে পৌছলে, তখন যে কারণগুলি তারা তুলে ধরবে তার মধ্যে অন্যতম কারণটি হবে, তারা সময় কাটিয়েছিল বাজে আ্ড্ডায় অর্থহীন আলোচনায়।
শুধু সময় নয়, ব্যক্তির প্রতিটি দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক সামর্থ্যই হলো মহান আল্লাহতায়ালার দান তথা আমানত। ব্যক্তির ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো, এ আমানতকে সে ব্যবহার করবে মহান আল্লাহতায়ালার জমিনে তাঁরই প্রদর্শিত দ্বীন তথা ইসলামের প্রতিষ্ঠায়। এবং প্রতিষ্ঠা দিবে তাঁরই দেয়া কোর’আনী আইন তথা শরিয়ত। একমাত্র এভাবেই পালিত হতে পারে আল্লাহর খলিফা রূপে একজন মুসলিমের আমৃত্যু দায়বদ্ধতা। ফলে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে যে, সে সামর্থ্য ব্যয় হবে জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় কুফরি মতবাদের প্রতিষ্ঠায় এবং বাধা দিবে শরিয়ত প্রতিষ্ঠায়? অথচ বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে সে হারাম কাজটিই হচ্ছে।
দুই. জাহেল হওয়ার শাস্তি ও অসভ্যতা
মানুষ যখন জাহেল হয়, তখন তার জন্য অসম্ভব হয় ঈমানদার হওয়া। সে সাথে অসম্ভব হয় সভ্য ও বিবেকমান মানুষ রূপে বেড়ে উঠা। জাহেল বা অজ্ঞ হওয়ার এটিই হলো বড় শাস্তি। জাহেলিয়াত হলো মনের ভূবনে গভীর অন্ধকার। ঈমানদার যাওয়ার জন্য যা জরুরী -তা হলো জাহিলিয়াতের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা। গভীর রাতের অন্ধকারে পথ চেনা যায় না। তেমনি মনের অন্ধকারে দেখা যায় না সিরাতুল মুস্তাকীম। সেজন্য চাই কোর’আনের জ্ঞান। চাই সে জ্ঞানে আলোকিত মন। কোর’আনের জ্ঞান দেয় হালাম-হারাম, ন্যায়-অন্যায় চেনার সামর্থ্য। দেয় অতি মানবিক মূল্যবোধ। পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানার্জন এজন্যই ফরয। ইসলামের শুরুটি এজন্যই নামায-রোযা দিয়ে হয়নি, হয়েছে আল্লাহর উপর ঈমানের সাথে “ইকরা” দিয়ে। অর্থাৎ “কোর’আন পড়” তথা কোর’আন থেকে জ্ঞানার্জন করো –এ দিয়ে। কোর’আনের জ্ঞানার্জন তাই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
দিনের আলোর ন্যায় রাতের অন্ধকার চেনাটিও সহজ। তেমনি অতি সহজ হলো সমাজের বুকে চলাফেরা কোর’আনের জ্ঞানশূণ্য বেঈমানদের চেনা। কারণ অঙ্গারের উত্তাপের ন্যায় তাদের বেঈমানীর উত্তপাটিও নিজেদের মধ্যে সীমিত থাকে না। বরং তা প্রচার ও প্রতিষ্ঠা পায় রাষ্ট্র জুড়ে। এরা ক্ষমতায় গেলে খুলে দেয় পাপের সকল রাস্তা। দেশে তখন দুর্বৃত্তির প্লাবন আসে। রাজনীতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি জুড়ে তখন শুরু হয় সীমাহীন পাপাচার ও জুলুম। সংস্কৃতি নামে পাপাচারকে প্রতিষ্ঠা দেয়াই তখন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। কাফেরদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যারাই কাফের তারাই জালেম। তাই কাফের হলো অথচ জালেম হলো না -সেটি তাই ভাবা যায় না। তবে তাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় জুলুমটি হয় মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে। আল্লাহতায়ালার দেয়া খাদ্য-পানীয়’তে পুষ্ট হয়ে তারা বিদ্রোহ করে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও বিধানের বিরুদ্ধে। ইসলামের বদলে তারা বিজয়ী করে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, সেক্যুলারিজমের ন্যায় নানারূপ কুফরি মতবাদকে। তাদের কাছে এমন কি সাপ-শকুন,গরু-ছাগল ও মুর্তিও পূজনীয় গণ্য হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও রাজনীতির নামে তারা শুরু করে ইসলামের বিজয় প্রতিরোধের রক্তাত্ব সন্ত্রাস। প্রতিষ্ঠা পায় গুম, খুন ও বিচারেরর নামে হত্যার রাজনীতি। সবচেয়ে বড় ভোট-ডাকাতও তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী রূপে গৃহীত হয়। গণতন্ত্র হত্যাকারি এবং বাকস্বাধীনিতা হরণকারীও তখন দেশবাসীর পিতা ও বন্ধু রূপে গণ্য হয়।
তিন. আল্লাহপ্রদত্ত উপাধিটি ভাই’য়েরঃ কিন্তু কতটুকু বেঁচে আছে সে চেতনা?
“একমাত্র মুমিনগণই পরস্পরের ভাই। অত:পর পরিশুদ্ধি আনো ভাইদের মাঝে এবং ভয় করো আল্লাহকে যাতে পেতে পার রহমত।” -সুরা হুজরাত,আয়াত ১০। এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই সেটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া পদবী। মু’মিনের ঈমাদারী শুধু মহান আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস নয়, বরং তাঁর দেয়া সে বিশেষ পদবীকেও সন্মান দেয়া। নইলে প্রচণ্ড বেঈমানী হয়। এবং পরস্পরের মাঝে ভাতৃসুলভ সম্পর্কের সে পরিচয়টি মেলে এক ভাই অপর ভাইয়ের সুখ-দুঃখ কতটুকু অনুভুত করে -তা থেকে। নিজের ভাই বহু হাজার মাইল দূরে অবস্থান করলেও তার পা হারানোর ব্যাথাটি হৃদয়ে অনুভুত হয়। তার ব্যাথা লাঘবে অন্য ভাইয়ের অন্তর ছটফট করে। তার বোন ধর্ষিতা বা নিহত হলে সে তখন প্রতিশোধে নামে। দেহে প্রাণ না থাকলে হাত-পা কেটে ফেললেও মৃত ব্যক্তি ব্যাথা পায় না। তেমনি হৃদয়ে ঈমান না থাকলে দুর্বৃত্তদের হা্তে দেশে বা বিদেশে হাজার হাজার মুসলিম ভাই ও বোন নিহত বা ধর্ষিত হলেও তাতে বেদনা জাগে না। বরং দুর্বৃত্ত বেঈমান ব্যক্তিটি নিজ স্বার্থে খুনি ও ধর্ষকের পক্ষ নেয়। বাংলাদেশের ভোট-ডাকাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আচরণ তো অবিকল তেমনই। ভেতরের বেঈমানী তো এভাবেই বেড়িয়ে আসে। কে বলে মানুষের ঈমান বা বেঈমানী দেখা যায় না? অন্য মুসলিমের বিপদে আচরণ কীরূপ হয় -সেটি দেখে ব্যক্তির ঈমাদারী ও বেঈমানী নীল আকাশের সূর্য্যের ন্যায় খালি চোখেও দেখা যায়। দেখা না গেলে বেঈমানদের বিরুদ্ধে যে ফরজ জিহাদ -সেটিই বা হবে কী করে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চরিত্র বিশ্ববাসী জানে। সে যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিল তখন তিন হা্জারের বেশী মুসলিমকে গুজরাতের রাজধানী আহমেদাবাদে হত্যা করা হয়। গণধর্ষণের শিকার হয় বহুশত মুসলিম রমনীক। আগুণ দিয়ে ছাই করা হয় মুসলিমদের শত শত ঘরবাড়ী ও দোকানপাট। এ জঘন্য অপরাধের নায়ক যে নরেন্দ্র মোদি তা নিয়ে বিশ্ববাসীর কোন সন্দেহ ছিল না বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোদির ভিসাদানে নিষেধাজ্ঞা লাগিয়েছিল। অথচ সে মোদিকে হাসিনা দাওয়াত দিয়েছিল হাসিনা।
নিজ গৃহে অন্য ভাইয়ের আগমনে কেউ কি নিষেধাজ্ঞা লাগায়? বরং দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে আলিঙ্গণ করে। তাই একশত বছর আগেও মুসলিম উম্মাহর বুকে ভৌগলিক বিভক্তির দেয়াল গড়া হয়নি। তখন মক্কা, মদিনা, ইস্তাম্বুল, লাহোর, করাচী বা অন্য কোন মুসলিম দেশে ঘর বাঁধতে বা দোকান দিতে কোন বাঙালী মুসলিমের ভিসা লাগেনি। তেমনি অন্য দেশ ও অন্য ভাষার মুসলিমেরও ভিসা লাগেনি বাংলায় এসে ঘর বাঁধতে। দেয়াল গড়ার এ জাহিলিয়াত এসেছে ইসলাম ছেড়ে জাতীয়তাবাদের ন্যায় কুফরি মতবাদে দীক্ষা নেয়ার পর। তখন তারা উৎসবভরে ভায়ের গলায় ছুরি চালিয়েছে। তাই একাত্তরে বহু হাজার অবাঙালী মুসলিম নিহত হয়েছে বাঙালী মুসলিমের হাতে। এবং তাদের ঘরবাড়ী, দোকানপাট ছিনিয়ে নিয়ে বস্তিতে তোলা হয়েছে। বাংলার সমগ্র ইতিহাসে এরূপ মানবতা বিরোধী বর্বর অপরাধ কোন কালেই ঘটেনি। অথচ সে অপরাধের জন্য কা্উকে কোন শাস্তিও দেয়া হয়নি। বরং পুরস্কৃত করা হয়েছে ছিনিয়ে নেয়া ঘরবাড়ী ও দোকানপাট দিয়ে। আজ যেসব বাঙালী বুদ্ধিজীবী বড় বড় নীতি বাক্য আওড়ায় তারাও বাঙালীর সে ঘৃণ্য অপরাধ নিয়ে কথা বলে না। যেন বিজয়ী হলে সকল অপরাধই জায়েজ হয়ে যায়। অথচ জয় বা পরাজয়ে –সর্বাস্থায় ন্যায়ের পথে থাকাতেই ঈমানদারী। বেঈমানীর লাইসেন্স নাই কোন অবস্থাতেই।
অতিশয় বেঈমানী হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া ভাইয়ের পরিচয়টি ভূলে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তির দেয়াল গড়া ও খুনোখুনি করা। মুসলিম বিশ্বজুড়ে সে বেঈমানীটি ব্যাপক ভাবে হচ্ছে ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতার নামে। এবং সে বেঈমানীর উপর ভিত্তি করেই মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতীক অঙ্গণে গড়ে উঠেছে ৫৭টি রাষ্ট্রের বিভক্তির দেয়াল। আরব, ইরানী, তুর্কী, কুর্দী, মুর তথা নানা ভাষার মুসলিমগণ ইসলামের গৌরব কালে এক অখন্ড মানচিত্রে বসবাসের মধ্য দিয়ে যে ঈমাদারীর প্রমাণ দিল সে ঈমানদারীটি আজ মুসলিম জীবনে কই? তাদের সে সূন্নত কি এতই তুচ্ছ? বরং তাদের শক্তি ও ইজ্জতের মূল উৎস ছিল সে একতা। সে একতার মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছিল মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের প্রতি আনুগত্য। এবং এরূপ আনুগত্য গায়েবী সাহায্য আনবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। অপর দিকে বিভক্তি গড়ার প্রতিটি প্রচেষ্টাই মূলতঃ বেঈমানী। অথচ এ বেঈমানী নিয়ে দেশের আলেম নামধারীরা যেমন নিষ্চুপ, তেমনি নিষ্চুপ তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা। প্রশ্ন হলো, এমন বিদ্রোহ কি কখনো রহমত আনে? বরং যা আনে তা তো প্রতিশ্রুত আযাব। তাছাড়া বিভক্তির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যে চরম অবাধ্যতার কবিরা গুনাহ, তা কি স্রেফ নামায-রোযায় দূর হয়? নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত তো মুনাফিকের জীবনেও থাকে। নবীজী (সাঃ)র যুগের মুনাফিকেরা তো মসজিদে নববীতে নবীজী (সাঃ)র পিছনে প্রথম সারিতে নামায পড়েছে্। কিন্তু তাতে তাদের মুনাফিকী দূর হয়নি। এ মহাপাপের শাস্তি থেকে তো তখনই মুক্তি জুটবে যখন বিদ্রোহের বদলে আসবে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। বিভক্তির বদলে সৃষ্টি হবে একতা। এবং দেয়াল গড়া বা পাহারা দেয়ার বদলে শুরু হবে দেয়াল ভাঙ্গার জিহাদ।
ঈমানদার কোন জিহাদ বা যুদ্ধে বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে পুরস্কার পায় না। কারণ, বিজয় তো মহান আল্লাহরতায়ালার দান। সে পুরস্কার পায়, নিজের বলিষ্ঠ ঈমানদারী, নিয়েত ও নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগের বিনময়ে। নিজের সামর্থ্যের সে বিনিয়োগ থাকলে পরাজিত হলেও সে বিজয়ী। তাই প্রকৃত ঈমানদার বিজয় নিয়ে ভাবে না, ভাবে নিজের ঈমানী দায়ভার কতটা পালিত হলো তা নিয়ে। মুসলিমদের পরাজিত এবং জান্নাতের পথ থেকে তাদেরকে দূরে রাখার শয়তানী শক্তিবর্গের প্রকল্প অনেক। মুসলিম বিশ্বের বিভক্ত এ মানচিত্রটি হলো মুসলিম উম্মাহকে পরাজিত, শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন রাখার শয়তানী প্রকল্প। তাই এ বিভক্তি মানচিত্র মেনে নিয়ে বসবাসে কোন পুরস্কার নাই। কোন ইজ্জত বা শান্তিও নাই। বরং যা আছে তা হলো শাস্তি। এবং সে শাস্তি শয়তানী প্রকল্পের কাছে আত্মসমর্পণ ও শয়তানী শক্তিবর্গকে বিজয়ী রাখার শাস্তি। আজ সে শাস্তিই মুসলিম উম্মাহকে ঘিরে ধরেছে। তাই দেশে দেশে মুসলিমগণ নিহত, ধর্ষিতা ও উদ্বাস্তু হচ্ছে। সে সাথে তাদের দেশগুলি অধিকৃত হচ্ছে এবং শহরগুলি শত্রুর বোমা ও মিজাইলের আঘাতে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। অথচ গোলামীর এ অবকাঠামো বিলুপ্তির জিহাদ শুরু হলে সত্ত্বর বিজয় না জুটলোও পরকালে নিশ্চিত জান্নাত জুটতো। মুসলিম দেশগুলিতে নামাযী ও রোযাদারের সংখ্যাটি কোটি কোটি, কিন্তু ইসলামের সে ন্যূনতম ধারণাটি ক’জনের? ২১/০৩/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018