বিবিধ ভাবনা-৫

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১.

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর শাসন হলো ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার। ফ্যাসিবাদ হলো অতি দুর্বৃত্তদের স্বৈরাচার। তখন দেশের পুলিশ, প্রশাসনের কর্মচারি, আদালতের বিচারক এবং সমগ্র রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো দুর্বৃত্তদের চাকর-বাকরে পরিণত হয়। তখন অসম্ভব হয় আইনের শাসন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তখন হত্যাযোগ্য অপরাধ রূপে গণ্য হয়। যাদেরকেই সরকার নিজেদের শত্রু মনে করে তাদেরকেই নির্মূল করে। তখন সরকার বেছে নেয় গুম-খুনের পথ। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তখন হত্যাযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়। এরই উদাহরণ হলো আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরূপ দুঃশাসন আর কোন কালেই চেপে বসেনি। এ হলো শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিবের দান।

ফ্যাসিবাদীরা হলো মানবরূপী অতি হিংস্র জীব। এরা বাঘ-ভালুকের চেয়েও হিংস্রতর। প্রশ্ন হলো, শান্তিপূর্ণ আন্দলোনের মাধ্যমে্ কি এরূপ হিংস্রদের হটানো যায়? নেকড়ের ন্যায় হিংস্র পশু মারতে তো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়। অথচ বাংলাদেশ দখলে নিয়েছে মানবরূপী এরূপ নেকড়দের এক বিশাল দল। ইউরোপে এরূপ এক অসভ্য শাসন চেপে বসেছিল জার্মানীর হিটলার এবং ইটালির মুসোলিনির হাতে। তাদের হটাতে ইউরোপীয়দের প্রকান্ড একটি বিশ্বযুদ্ধ করতে হয়েছে।

সভ্য ভাবে বাঁচার খরচটি তো বিশাল। সে খরচ পোষাতে অর্থ ও প্রাণের কোরবানী দিতে হয়। ইসলামে সে পবিত্র কাজটিই হলো জিহাদ। কে কতটা সভ্য ভাবে বাঁচবে সেটির হিসাব হয় সে কোরবানীর উপর। যাদের সে সামর্থ্য নাই তারা যেমন দুর্বৃত্ত শাসকদের রাজস্বদাতায় পরিণত হয়, তেমনি তাদের সৈনিকেও পরিণত হয়। এরাই পরকালে পূর্ণ করবে জাহান্নাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সভ্য ভাবে বাঁচার সে আগ্রহ বা সামর্থ্যটি বাংলাদেশীদের মাঝে কতটুকু? সে আগ্রহ ও সামর্থ্য যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীদের মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে সেটি সুস্পষ্ট ধরা পড়ে দেশের নতজানু মিডিয়াকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আদালতের বিচারক, প্রশাসকের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দিকে তাকালে।   

২.

আল্লাহর প্রতি ভালবাসা যতই তীব্রতর হয় ততই তীব্রতর হয় আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্রুতা। নইলে ঘটে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বেঈমানী। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার ঈমানদার বান্দার সে মহৎ গুণটির ঘোষণা এসেছে এভাবে “আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার ওয়া রুহামাও বায়নাহুম।” অর্থঃ কাফেরদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর, ঈমানদারদের প্রতি করুণাপূর্ণ। তাই মুসলিমকে শুধু হিংস্র পশুদের চিনলে হয় না। চিনতে হয় মানবরূপী হিংস্র জানোয়ারদেরও। সে জানোয়ার তো তারাই যারা মহান আল্লাহতায়ালার জমিনে তার শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠার বিরোধী। মুসলিমকে তাই শুধু পানাহারে বাঁচে না, বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার শত্রুদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও তাদের নির্মূলের স্পৃহা নিয়ে।

৩.

বাংলাদেশে জাতীয় পতাকা আছে। আছে জাতীয় সঙ্গিত, জাতীয় কবি, জাতীয় ফুল ও জাতীয় ফল। দেশের মাঝে যা কিছু অতি বিশাল বা তুলনাহীন তাকেই জাতীয় বলার প্রবনতাটি বাঙালীর মজ্জাগত। তাই প্রশ্ন এসে যায়, বাংলাদেশে জাতীয় চোর কে? মাত্র কিছু লোকের ঘরে যারা সিঁদ কাটে বা পকেটে হাত দেয় -তাকে কি জাতীয় চোর বলা যায়? বাংলাদেশে এমন চোরের সংখ্যা তো বহু লক্ষ। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সামর্থ্যটি তূলনাহীন। সে হানা দিয়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের পকেটে। সে চুরি করেছে কোটি কোটি মানুষের ভোট। একাজটি পূর্বে কেউ করেনি। ফলে জাতীয় চোরের খেতাবটি অন্য কারো প্রাপ্য নয়, সেটি প্রাপ্য একমাত্র হাসিনার। তাই কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষে কি কখনো এরূপ জাতীয় চোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে পারে?

৪.

চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ -এসবই গুরুতর অপরাধ। তবে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ হলো দেশবাসীর ভোটের উপর ডাকাতি করা। সে ডাকাতির ফলে সমগ্র দেশ দখলে যায় ভয়ানক অপরাধীদের হাতে। সমগ্র দেশ জুড়ে তখন ডাকাতি হয়ে যায়। ডাকাতদের শাসনে অসম্ভব হয় অন্যান্য অপরাধীদের নির্মূল করা। তখন প্লাবন আসে অপরাধ কর্মে। কারণ, অপরাধীদের সরকার অপরাধীদের নির্মূলে নয় বরং তাদের প্রতিপালনে কাজ করে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বলয়ে তাদের বরং অংশীদারিত্ব দেয়া হয়।

তাই চোর-ডাকাত ও খুনিদের ন্যায় অপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়ে আর যাই হোক, চুরি-ডাকাতি, গুম-খুন ও ধর্ষণ বন্ধ করা যায় না। হাসিনার আমলে বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে।কিন্তু তাতে চুরি-ডাকাতি, গুম-খুন ও ধর্ষণ কমেনি। বরং তা বহুগুণ বেড়েছে। কারণ, ডাকাতদের শাসনে পুলিশের প্রায়োরিটি কখনোই চুরি-ডাকাতি, গুম-খুন ও ধর্ষণ নির্মূল নয়, বরং মূল কাজ হয় সরকারকে পাহারা দেয়া। তখন পুলিশ নিজেও নামে দুর্বৃত্তিতে। তাই সভ্য ভাবে ও শান্তিতে বাঁচতে হলে শুধু ঘর বাঁধলে চলে না। পানাহার জোগাড় করলে চলে না, বরং নির্মূল করতে হয় দুর্বৃত্তদের। সভ্য ভাবে বাঁচার এছাড়া বিকল্প পথ নাই। কিন্তু সে কাজটি বাংলাদেশে হয়নি।   

৫.

ঈমানদারের জীবনে ঈমানের প্রকাশ ঘটে তার প্রতিটি কর্মে ও আচরণে। আগুনে উত্তাপের ন্যায় ঈমানের এরূপ প্রকাশ অনিবার্য। রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকাটাই তাই ঈমানদারের পক্ষে অসম্ভব। তাকে প্রতি পদে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ নিতে হয়। এটি ঈমানের দায়বদ্ধতা। ফলে ঈমানদার যেমন লড়াই করে ইসলামের পক্ষে, তেমনি বিদ্রোহ করে ভোটডাকাত শাসকের বিরুদ্ধে। সে লড়াইটি না থাকাই বেঈমানী।

 

 

৬.

চোর-ডাকাতদেরও লজ্জা থাকে। তাই তারা রাতের আঁধারে চুরি-ডাকাতিতে নামে। ধরা পড়লে তারা গ্রাম ছাড়ে এবং পরিচিত লোকদের সামনে আসতে লজ্জা পায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সে লজ্জা-শরম নাই। অথচ লজ্জা হলো ঈমানের অর্ধেক। বেশরম হওয়াটি তাই বেঈমানী। প্রশ্ন হলো, বেঈমানের শাসন কি কোন সভ্য মানুষ মেনে নেয়? সেটি করলে তো অসভ্যতার বিজয় হয়। বাংলাদেশে কি সেটিই হয়নি?

 

৭.

ঈমানদার হওয়ার অর্থই আল্লাহর সৈনিক হওয়া। মানব জাতি বিভক্ত আল্লাহর সৈনিক ও শয়তানের সৈনিক -এই দুই দলে। ঈমানদারের জীবনে যুদ্ধ তাই অনিবার্য। সুরা নিসা’র৭৬ আয়াতে তাই বলা হয়েছে, “যারা ঈমানদার তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায় এবং যারা কাফের তারা যুদ্ধ করে শয়তানের রাস্তায়। এবং যুদ্ধ করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল অতি দুর্বল।” মহান আল্লাহতায়ালার পথে সে যুদ্ধ না থাকাটি তাই বেঈমানী। নামায-রোযায় সে বেঈমানী ঢাকা যায় না। অপর দিকে কাফেরদের যুদ্ধগুলি হয় ভাষা, বর্ণ, দল, গোত্র ও নানারূপ মতবাদের নামে। বাংলাদেশে তেমন একটি যুদ্ধ তারা যেমন একাত্তরে করেছে, তেমনি এখনো লাগাতর করছে। সেটি যেমন নিজেদের ক্ষমতায় রাখতে, তেমনি ইসলামের বিজয় রুখতে।

 

৮.

জনগণের প্রতি যাদের সামান্যতম দরদ আছে তারা কখনোই তাদের ভোটের উপর ডাকাতি করে না। তাদের কথা বলা ও সভা-সমিতির স্বাধীনতাও কেড়ে নেয় না। এরূপ বর্বর নৃশংসতা তো তাদের যারা জনগণের শত্রু। অথচ বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে তো আজ সেটিই হচ্ছে্। কোন সভ্য দেশের জনগণই এরূপ অসভ্য ও অপরাধী সরকারকে মেনে নেয় না। কারণ মেনে নেয়াটি আরেক অসভ্যতা। তাই সভ্য মানুষ মাত্রই যেমন তার আঙিনা থেকে মশামাছি ও হিংস্র পশু তাড়ায় তেমনি তাড়ায় শাসকের কুরসি থেকে অসভ্য ও দুর্বৃত্তদেরও। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। ফলে বিশ্বের দরবারে ধরা পড়ছে বাংলাদেশীদের নিদারুন অক্ষমতা। সে সাথে অসভ্যতাও। ১৯/১০/২০

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *