মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি প্রসঙ্গে
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 14, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
প্রসঙ্গ সবচেয়ে বড় নিয়ামত
অন্যান্য ধর্মের অনুসারিদের থেকে মুসলিমগণ যে কারণে শ্রেষ্ঠতর এবং সে সাথে অতি ভাগ্যবান -সেটি জনশক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভাষা, ভূগোল বা অন্য কোন কারণে নয়। সেটি হলো পবিত্র কোর’আন। একমাত্র তাদের কাছেই রয়েছে মানব জাতির উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহতায়ালার দেওয়া সর্বশেষ কিতাব। মহান আল্লাহতায়ালার নিজের ভাষায় পবিত্র কোর’আন চিত্রিত হয়েছে “হুদাল্লিল মুত্তাকীন” (মুত্তাকীনদের জন্য প্রদর্শিত পথ), “বায়ানুল লিন্নাস” (মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা) “সিরাতুল মুস্তাকিম” (সোজা রাস্তা) এবং “মাওয়েজাতুল হাসানা” (সুন্দরতম ওয়াজ) রূপে। এই কোর’আনের কারণেই মুসলিমগণ অতীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিল এবং প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছিল এক বিশ্বশক্তির। এটিই হলো পবিত্র কোর’আনের শ্রেষ্ঠ মোজেজা। মুসলিম উম্মাহ ততদিনই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পেরেছিল যতদিন তারা কোর’আনকে অনুসরণ করেছিল। তাদের পতনের শুরু তখন থেকেই -যখন তারা বিচ্যুৎ হয়েছে কোর’আন থেকে।
পবিত্র কোর’আন ছাড়া সভ্য ভাবে বাঁচার অন্য কোন রাস্তা নাই। রাস্তা নাই জান্নাতে ফিরে যাওয়ার। হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়াকে যখন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হলো তখন তাঁদের নিজেদের এবং তাঁদের বংশধরদের জান্নাতের সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, জান্নাতের পথ দেখাতে দুনিয়াতে বহু নবী-রাসূল আসবেন। নবী-রাসূলদের কাছে ওহী নিয়ে ফেরেশতাও আসবেন। লক্ষাধিক নবী-রাসূল বস্তুত পথ দেখানোর সে কাজটিই করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে বান্দার সংযোগের এটিই হলো একমাত্র মাধ্যম। পবিত্র কোর’আনকে “হাবলিল্লাহ” তথা আল্লাহতায়ালার রশিও বলা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, যারা সে রশিকে আঁকড়ে ধরলো তারাই সিরাতুল মুস্তাকিম পেল। তাই জান্নাতে ফিরতে হলে শর্ত হলো নবী-রাসূলদের প্রদর্শিত সে পথ অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে মুসলিমগণ অমুসলিমর চেয়ে বহুকোটি বেশী গুণ ভাগ্যবান। কারণ, একমাত্র তাদের হাতেই রয়েছে পবিত্র কোর’আন -যা জান্নাতের পথ দেখানোর লক্ষ্যে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সর্বশেষ এবং একমাত্র রোড ম্যাপ। অন্যরা বৈষয়িক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে বিপ্লব আনতে পারে। কিন্তু সে সমৃদ্ধিতে পার্থিব জীবনে শান্তি আসে না, বরং পরকালে জাহান্নামে নেয়।
বহু বিস্ময়কর আবিষ্কারের জনক হলেও শান্তি ও জান্নাতে পথে চলার রোড ম্যাপ আবিষ্কারের সামর্থ্য মানুষের নেই। অথচ জান্নাতের যোগ্য হতে এবং উচ্চতর মানবিক সভ্যতার নির্মাণে অতি অপরিহার্য হলো এই রোডম্যাপ। এখান থেকেই মানুষ পায় সঠিক নীতিবোধ ও মূল্যবোধ। পায় ন্যায়-অন্যায় যাচাইয়ের বিচারবোধ। বাঘের ধারালো নখর যেমন হীংস্রতা বাড়ায়, তেমনি বিজ্ঞানের অগ্রগতি পশুর চেয়েও হীংস্রতর করে মানুষকে। বিগত শতাব্দীর দুইটি বিশ্বযুদ্ধে যেভাবে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৃত্যু, বহু কোটি মানুষের পঙ্গুত্ব, হাজার হাজার নগর-বন্দরের বিনাশের ন্যায় নৃশংস বর্বরতা ঘটলো -তা কি প্রস্তর যুগের কোন অসভ্য জাতির হাতে ঘটেছিল? হালাকু-চেঙ্গিজের অপরাধ ছিল এ তুলনায় নস্যিতূল্য। অথচ সর্বকালের এ জঘন্য অপরাধটি তো সংঘটিত হয়েছিল তাদের দ্বারা যাদের রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রচণ্ড অহংকার। আজও যে বর্বরতা নিয়ে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, চেচনিয়া ও কাশ্মীরের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, ধর্ষিতা হচ্ছে নারী এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে অসংখ্য ঘরবাড়ী।
বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও পারমানবিক বোমা তৈরী করলেও তথাকথিত উন্নত দেশগুলো উন্নত নীতিবোধ, বিবেকবোধ ও মূল্যবোধ গড়তে পারেনি। তাদের দ্বারা উচ্চতর মানবিক সভ্যতাও নির্মিত হয়নি। পিরামিডের নির্মাণে অতীতে পাথর চাপায় যেমন বহু সহস্র মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অত্যাচারিত হয়েছে মিসরের সাধারণ প্রজা, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার নিষ্ঠুর ঘানি টানতে প্রাণ হারাচ্ছে দরিদ্র বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। পিরামিড যেমন নির্যাতনের প্রতীক, তেমনি আজকের পাশ্চাত্য সভ্যতা প্রতীক হলো দুর্বল জাতি সমূহের উপর সাম্রাজ্যবাদী শোষণ, শাসন ও বর্বরতার। অথচ আজ থেকে ১৪শত বছর আগে মানবতা তার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছিল। আইনের শাসন, বর্ণবাদ-রাজতন্ত্র-সামন্তবাদের বিলোপ, সার্বজনীন জ্ঞানচর্চা, ধনিদরিদ্রের সম-অধিকার, নারীর স্বাধীনতা ও সম্পদে তাদের অংশীদারিত্ব, খলিফা হয়ে আটার বস্তা পিঠে টানা বা চাকরকে উটে চড়িয়ে নিজে রশি টানার মত বিস্ময়কর ঘটনাও সেদিন সম্ভব হয়েছিল। মানুষের মহাশূণ্যে ভ্রমনের চেয়েও মুসলমানদের সে অর্জনটি ছিল বেশী বিস্ময়কর। দরিদ্র আরবেরা সেদিন জন্ম দিয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মানবিক সভ্যতাটির। এবং সেটি সম্ভব হয়েছিল মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত রোডম্যাপ পূর্ণ অনুসরণের কারণে। সঠিক পথের অনুসরণে মানুষ যে কত দ্রুত কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে পারে -এটি হলো তারই প্রমাণ। আল্লাহতায়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের মহফিলে যে গর্ব প্রকাশ করেছিলেন -বস্তুত সেটিই সেদিন সার্থকতা পেয়েছিল। বান্দা সেদিন মহান আল্লাহতায়ালার লক্ষ্য পূরণে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। বান্দাহর সে আচরণে মহান আল্লাহতায়ালা এতই খুশী হয়েছিলেন যে সে সন্তুষ্টির কথা পবিত্র কোর’আনে উল্লেখ করেছেন এভাবে: “রাদীআল্লাহু আনহু ওয়া রাদূউ আনহু।” অর্থ: আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও সন্তুষ্ট আল্লাহর উপর।”
প্রসঙ্গ সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা
প্রশ্ন হলো, আজকের মুসলিমগণ কেন আজ এতো অধঃপতিত? কোর’আন তো আজও অবিকৃত। নবীজী (সা:) পথ এখনো বেঁচে আছে হাদীসে। কথা হলো, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের যে গুরুতর ব্যধিগুলো ১৪ শত বছর পূর্বে আরোগ্য পেল, সেটি কেন আজ মুসলিম বিশ্বে জেঁকে বসে আছে? পথটি সঠিক হলে গাধার পিঠে বা পায়ে হেঁটেও গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায়। কিন্তু ভ্রান্ত পথে উন্নত যানেও সেটি অসম্ভব। মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত রোডম্যাপের গুরুত্ব এখানেই। মুসলিমদের বর্তমান ব্যর্থতাই বলে দেয়, সঠিক পথে চলার কাজটি তারা বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছে। বস্তুত মুসলিম জীবনের সবচেয়ে বড় বড় ব্যর্থতাটি ঘটেছে সে প্রদর্শিত পথ বেয়ে পথ চলার ক্ষেত্রে। বরং তাদের হাতে সংঘটিত হয়েছে ইসলামের মূল বিশ্বাসের সাথে গাদ্দারী। গুম, খুন, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের যে স্থানে তারা পৌছেছে -সেখানে কেউ ইসলামের পথে চলে পৌঁছায় না। সেটি পথভ্রষ্টতার দলিল।
ইসলাম যে নিশ্চিত সফলতার পথ -সেটি ১৪ বছর পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে। এ পথের গুণেই মুসলিমগণ ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সফলতার উচ্চমার্গে পৌঁছেছিল। বিশ্বের অন্য জাতিরা তখন অশিক্ষা, -অজ্ঞতা ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। বিশ্ব জুড়ে চলছিল বর্বরতম স্বৈরাচার। ছিল রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধবিগ্রহ। ধর্মের নামে মানুষ মূর্তি, অগ্নি, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী এমনকি সাপ-শকুনকেও দেবতা বলে পূজা করতো। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ছিল উলঙ্গতা অশ্লিলতা। নারী ছিল অধিকার বঞ্চিত ভোগ্যসামগ্রী। বিশ্বজুড়ে ছিল বর্ণবাদ, ছিল দাসপ্রথা। কিন্তু সে অন্ধকারের যুগে দ্রুত উন্নতির রেকর্ড গড়েছিল মুসলিমগণ। কিন্তু আজ তারাই দুর্গতির শিকার। রোডম্যাপ কাউকে গন্তব্যস্থলে টানে না। এটি পথ দেখায় মাত্র। পথটি জেনে নিতে হয় এবং সেটির অনুসরণে নিষ্ঠাবান হতে হয় ব্যক্তিকেই। এজন্য যেটি অপরিহার্য সেটি হলো রোডম্যাপ থেকে শিক্ষা গ্রহণের সামর্থ্য। সে সামর্থ্য অর্জনে ইসলামে জ্ঞানার্জন এজন্যই ফরয। কারণ, জ্ঞান ছাড়া মহান আল্লাহতায়ালার দেওয়া রোডম্যাপ থেকে পাঠোদ্ধার অসম্ভব। তখন অসম্ভব হয় নির্দেশনা লাভ। এটির অভাবে হালাল-হারাম, সত্য-অসত্য ও ন্যায়-অন্যায় জানা হয় না। ইসলামে জ্ঞানার্জন তাই নিছক সামাজিক, অর্থনৈতিক বা কারিগরি বিষয় নয়, এটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। অথচ মুসলিম জীবনে এ ক্ষেত্রটিতেই সবচেয়ে বড় অবহেলা হয়েছে।
না বুঝে কোর’আন তেলাওয়াতে বা সেটি জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়াতে জ্ঞানার্জনের ফরয আদায় হয় না। আদায় হয় না বলেই না বুঝে তেলাওয়াতকে ফরয করা হয়নি, ফরয করা হয়েছে কোরআন থেকে শিক্ষালাভ ও কোর’আনের অনুসরণকে। মহান আল্লাহতায়ালা কোর’আন নাযিলের মূল লক্ষ্যটি পবিত্র কোরঅআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন: “নিশ্চয়ই আমরা কোরাআনেক সহজ করেছি যাতে মানুষ তা বুঝতে পারে এবং স্মরণে রাখতে পারে। কিন্তু (প্রশ্ন হলো) তা থেকে শিক্ষা নেয়ার কেউ আছে কি?”-(সুরা কামার, আয়াত ১৭)। প্রশ্ন হলো, নিছক তেলাওয়াতে জ্ঞানের ভান্ডারে যোগ হয় কি কোন নতুন জ্ঞান? মেলে কি শিক্ষা? মেলে কি হিদায়ত? অথচ হিদায়াত না পেলে অসম্ভব হয় মুসলিম থাকা। তখন অসম্ভব হয় সিরাতুল মুস্তাকিমে চলা। আর হিদায়াত যে মেলেনি যে -সে প্রমাণ কি কম? হিদায়েত না পাওয়ার কারণেই কোর’আন তেলাওয়াতকারি সূদ খায়, ঘুষ খায় এবং নানাবিধ দূর্নীতিতে লিপ্ত হয়। কোর’আন তেলাওয়াত হয় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। রমযান মাসে কোর’আন খতম হয় মসজিদে মসজিদে। যে অফিসে ঘুষ ও দূর্নীতির সয়লাব সেখানেও প্রচুর নামাযী। নামাযীদের মাঝে তেলওয়াতকারীর সংখ্যাও অনেক। অথচ বাংলাদেশ দূর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে ৫ বার। প্লাবন বইছে বেপর্দা, অশ্লিলতা ও ব্যভিচারের। নগর-বন্দরে বাজার বসেছে পতিতাবৃত্তির।
কোর’আন থেকে শিক্ষাগ্রহণ ও সেগুলির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটিই প্রকাশ পেয়েছে করূণাময় মহান আল্লাহর এ ঘোষণায়। বলেছেন, “কিতাবুন আনযালনাহু ইলাইকা মুবারাকুল লিইয়াদ্দাব্বারু আয়াতিহি ওয়া লি’ইয়াতাযাক্কারা উলুল আলবাব।”-(সুরা ছাদ, আয়াত ২৯)। অর্থ: “রহমতপূর্ণ এ কিতাব আপনার উপর নাযিল করেছি এজন্য যে, যেন এর আয়াতগুলো নিয়ে তারা (ঈমানদারেরা) চিন্তা-ভাবনা করতে পারে এবং যারা সমঝদার ব্যক্তি তারা যেন সেগুলো চেতনায় ধারণ করে।” এ আয়াতে কোরআন নাযিলের মূখ্য উদ্দেশ্যটি ব্যক্ত হয়েছে। কোর’আন এ জন্য নাযিল হয়নি যে ঈমানদারেরা শুধু তেলাওয়াত করবে। বরং এ জন্য যে, তারা আয়াতগুলো নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করবে এবং সেগুলোর শিক্ষা চেতনায় ধারণ করবে এবং তার উপর আমল করবে। এভাবে নিজেদের ইহকাল ও আখেরাত বাঁচাতে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে হুশিয়ার হবে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এ হুশিয়ারির পর কোন মুসলিম কি নিছক কোরআনের তেলাওয়াত নিয়ে খুশি থাকতে পারে?
তাছাড়া প্রশ্ন হলো, কোন কিছু না বুঝলে কি তা নিয়ে ভাবা যায়? সম্ভব কি না বুঝে তা থেকে কোন শিক্ষা লাভ? কোন বিষয়ে ভাবতে হলে সেটি প্রথমে জানতে ও বুঝতে হয়। ভাবনা শূণ্যে হয় না। ভূতের গল্প শুনে শিশুও জানতে চায় ভূতের হতা-পা-মাথা কেমন, দেখতে কেমন ইত্যাদি। কারণ ভূতকে নিয়ে শিশুও ভাবতে চায়। কিছু বুঝতেও চায়। এটিই স্বাভাবিক। এটিই মানুষের ফিতরাত। কিন্তু কোটি কোটি মুসলিম সে ফিতরাত-সুলভ স্বাভাবিক আচরণ করেনি পবিত্র কোর’আনের সাথে। বাংলাদেশের মানুষ দূর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েই বিশ্ব অবাক করেনি বরং তার চেয়ে বেশী অবাক করেছে কোর’আন শিক্ষার নামে সারা দেশে কোর’আনের অর্থ বুঝার বদলে স্রেফ তেলাওয়াত শিখিয়ে। বাংলাদেশের আলেমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এটি। তবে শুধু ব্যর্থতা নয়, ভয়নাক অপরাধও। অপরাধটি এখানে মুসলিম সন্তানকে জাহেল রাখার। তারা জ্ঞানার্জনের ফরয কাজটির গুরুত্ব সেরেছে তেলাওয়াত শিখিয়ে। তেলাওয়াতে যে জ্ঞানার্জনের ফরয আদায় হয় না -সে সত্যটি তারা নিজে যেমন বুঝেনি তেমনি ছাত্রদেরও বুঝতে দেয়নি।
কোন রাজা কি এটুকুতে খুশি হয় যে, প্রজারা তার হুকুম শুধু পড়তে থাকবে, কিন্তু বুঝবে না এবং পালনও করবে না? প্রজাদের এমন আচরণে রাজার হুকুম পালন হয়? বাড়ে কি রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি? অথচ মুসলিম বিশ্বে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশগুলোর সাথে তেমনই আচরণই হচ্ছে। মুসলিম মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। কিন্ত তাঁর সৈনিকেরা যদি আল্লাহ রাব্বুল-আলামীনের হুকুম বুঝা ও মান্য করার বদলে শুধু তেলাওয়াত করে দায়িত্ব সারে তবে কি করে সে হুকুমের মান্যতা বাড়বে? তাঁর দ্বীনই বা কীরূপে বিজয়ী হবে? বান্দার এমন আচরনে মহান আল্লাহপাক কি খুশী হয়? তিনি তো চান তাঁর শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠা পাক। একই অপরাধে ভয়ানক আযাব এসেছিল বনী ইসরাইলের উপর। তারা তাওরাতে বর্ণীত আইনগুলো শুধু তেলাওয়াত করেই দায়িত্ব সেরেছে, প্রতিষ্ঠা দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আনীত মহান আল্লাহতায়ালার অভিযোগটির বর্ণনা এসেছে এভাবে: “ওয়া আনতুম তাতলুঊনাল কিতাবা আফালা তা’ক্বিলুন।” -(সুরা বাকারা. আয়াত ৪৪)। অর্থ: “এবং তোমরা এ কিতাবকে তেলাওয়াত করো অথচ সেগুলো নিয়ে কি চিন্তাভাবনা করনা?” আল্লাহপাক তাঁর কিতাবের সাথে বনী ইসরাঈলীদের আচরণে কতটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন –এ আয়াত হলো তারই প্রমাণ। কথা হলো, কোর’আনের সাথে বাংলাদেশী মুসলিমদের আচরণ কি ইহুদীদের থেকে ভিন্নতর? লক্ষ লক্ষ মানুষ কোর’আন তেলাওয়াত করে, কিন্তু তাদের মাঝে কোর’আনে বর্ণীত শরিয়তের আইনের প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই। ভাবনাও নাই। না বুঝে তেলাওয়াতে মহান আল্লাহর কোর’আন বুঝার হুকুম পালিত হয় না। তাতে কোর’আনের প্রতি অসম্মানই শুধু হয় না, বরং অবমাননাও হয় -সে বোধটুকুও তাদের লোপ পেয়েছে। এর চেয়ে বড় বিস্ময়ের বিষয় আর কি হতে পারে? এটি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ না খেয়ে সেটি বার বার পাঠ করার ন্যায় বেওকুফি।
আলেমদের দায়িত্বহীনতা
বাংলাদেশে যত দ্বীনি মাদ্রাসা আছে, দুনিয়ার আর কোন দেশে তা নেই। একটি জেলাতে যত মাদ্রাসা, তা খোলাফায়ে রাশেদার সময় সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বুকে ছিল না। সে আমলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এসব মাদ্রাসা থেকে তৈরী হয়েছিল হাজারে হাজারে মোজাহিদ, শহীদ ও ধর্ম-প্রচারক। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে তাঁরা পাহাড় পর্বত অতিক্রম করেছেন। অথচ বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে যারা তৈরী হচ্ছেন তাদের সামর্থ্য মিলাদ মহফিল, মুর্দাদাফন, বিবাহ পড়ানো ও ইমামতিতে সীমিত। দেশের সমাজ, রাজনীতি, প্রশাসন, দর্শন, অর্থনীতি, সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে তাদের ভূমিক নজরে পড়ার মত নয়। বাংলাদেশে প্রকাশিত বইয়ের ৫% ভাগের লেখকও তাঁরা নন। অথচ সমাজে তারাই আলেম, আল্লামার বা জ্ঞানীর টাইটেলধারী। আরো বিস্ময়ের বিষয়, বহু আলেম এবং মসজিদের বহু ইমাম শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দুনিয়াদারী রাজনীতি বলে সেটিকে মসজিদের জায়নামাজে নিষিদ্ধ করেছেন। অথচ ইসলামে রাজনীতি হলো অতি উচ্চতর ইবাদত। এ ইবাদতে বিনিয়োগ হয় ঈমানদারের জ্ঞান, অর্থ, সময়, শ্রম ও রক্ত। এবং একমাত্র এ ইবাদতের মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। এবং প্রতিষ্ঠা পায় শরিয়ত। এটি পবিত্র জিহাদ। যে দেশে এ জিহাদের রাজনীতি নাই, সে দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও নাই। যারা এ জিহাদে প্রাণ দেয়, তাদেরকে শহিদ বলা হয়। মৃত্যুর পরও মহান আল্লাহতায়ালা এমন শহিদদেরকে রেজেক দিয়ে থাকেন। জীবনের প্রতিটি রাতের সবটুকু সময় নামাযে কাটালেও শহিদের সমান সম্মান জুটবে -সে ওয়াদা মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনের কোথাও দেননি। অথচ যারা রাষ্ট্রে দ্বীনের বিজয়ে শহিদ হয় -তাদেরকে সে প্রতিশ্রুতি বারবার শোনানো হয়েছে।
মহান রাসূলে পাক (সাঃ) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে মসজিদের জায়নামায থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে নিয়ে গেছেন। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে বাঁচানো বা অজ্ঞ ব্যাক্তিকে জ্ঞানদান ইসলামে অতি উত্তম ইবাদত। কারণ এটি মানুষের দেহ ও বিবেক বাঁচানোর কাজ। তাই অতীতে ঈমানদারগণ চিকিৎসক, শিক্ষক বা মসজিদেও খতিব হওয়াকে অতি পচ্ছন্দ করতেন। কিন্তু শত্রুশক্তির হাতে পরাজয় থেকে বাঁচানোর চেয়ে সে কাজগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাজনীতির সমকক্ষ একমাত্র রাজনীতিই। রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ নবীজী (সা:)। এবং রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসেছেন তিনি স্বয়ং নিজে। রাজনীতিতে যেমন স্নায়ু যুদ্ধ থাকে, তেমনি অস্ত্রের যুদ্ধও থাকে। নবীজী (সা:) লড়েছেন উভয় যুদ্ধেই। এবং নির্মূল করেছেন আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের ন্যায় শত্রুদের। তাই রাষ্ট্রপ্রধানের যে আসনে নবীজী (সা:) বসেছেন, সে আসনে কি ইসলামে সেক্যুলারিস্টদের বসানো যায়? এরা তো ইসলামের শত্রুপক্ষ। অথচ অধিকাংশ মুসলিম দেশে মুসলিমগণ নিজে ভোট, অর্থ, শ্রম ও রক্তের খরচে তাদেরকেই শাসনক্ষমতায় বসিয়েছে। এতে কি ইসলাম বিজয়ী হয়? সুরক্ষা পায় কি মুসলিম স্বার্থ? দেশে দেশে মুসলিমদের আজ যে বিপন্নদশা তার মূল কারণ, রাজনীতিতে অংশ নেয়াটি জিহাদ গণ্য হয়নি। বরং দ্বীনদারী রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটি। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের দখল নিয়েছে ইসলামে অঙ্গিকারহীন সেক্যুলারিস্টগণ। কথা হলো, ইসলামে অঙ্গিকারহীন হলে কি কেউ মুসলিন থাকে? মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো ইসলামের পক্ষ নেয়া এবং ইসলামের বিজয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়া। সেটি যেমন ব্যক্তি জীবনে, তেমনি রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে। ইসলামে ঈমান আনার সাথে প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ তাই ইসলামের বিজয়ে প্রাণও দিয়েছে।
অধিকৃতি দুর্বৃত্তদের
প্রতিটি মুসলিম দেশে যাদের রাজনীতি শুরু থেকেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল সেটি হলো জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার সেক্যুলার রাজনীতি। চোর-ডাকাত অর্থে হাত দেয়, কিন্তু জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু সেক্যুলারিস্টগণ জাহান্নামে নেয়। সেটি মানুষকে ধর্মে অঙ্গিকারহীন করে। তাই মদ, জুয়া, দেহব্যবসা ও ড্রাগ নিষিদ্ধ করার চেয়েও অধিক জরুরি হলো ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এ রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা। ইসলাম বিরোধীতার চেয়ে বড় দুর্বৃত্তি সমাজে আর কি হতে পারে? এরাই সমাজের বুকে ফিতনা সৃষ্টিকারী। পবিত্র কোর’আনে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলা হয়েছে এরূপ ফিতনা সৃষ্টিকে। গুরুতর অপরাধটি এখানে শরিয়ত পালন তথা পূর্ণ ইসলাম পালনকে অসম্ভব করা। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশ অধিকৃত এসব ভয়ানক দুর্বৃত্তদের হাতে। কিছু লোকের মদ্যপান, পতিতাবৃত্তি বা চুরি-ডাকাতিতে সমগ্র জাতি পরাজিত হয় না। ধ্বংসও হয় না। এমন পাপীগণ নবীজীর (সাঃ) আমলেও ছিল। কিন্তু সেক্যুলার রাজনীতি কোন মুসলিম দেশে বিজয়ী হলে তাতে বিপন্ন হয় ইসলামের বিজয় বা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা।
ইসলামকে বিজয়ী করার যুদ্ধ প্রতি যুগেই শ্রেষ্ঠ কর্ম রূপে প্রশংসিত হয়েছে। অথচ সেক্যুলারিস্টদের শাসনে সে ইবাদতটি ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করেছে। ইসলামের বিজয় অঙ্গিকার থাকার কারণে বহু মুসলিম দেশে মুসলিম নির্যাতন তাই রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। এবং প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়ীক রাজনীতি রূপে চিহ্ণিত হয় আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলোতে সেটিই হচ্ছে। এর কারণ, ইসলামের শত্রুদের দখলদারী। বিস্ময়ের বিষয়, এদের অনেকে নিজেদেরকে মুসলিম রূপে দাবী করে! অনেকে নামায-রোযা এবং হজ্ব-যাকাতও পালন করেন! প্রশ্ন হলো, ইসলামের প্রতিষ্ঠার যারা বিরোধীতা এবং সেটি থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখেন -তারা কি ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা বুঝে? এমন আচরণ দুনিয়ায় ও আখেরাতে কীরূপ ভয়ানক আযাব ডেকে আনবে -সে হুশ কি তাদের আছে? এটি তো আল্লাহতায়ালার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। মহান আল্লাহতায়ালা তো চান, ইসলামের বিজয় (লি’ইয়ুযহিরাহু আলা দ্বীনি কুল্লিহি)। তাই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে সেক্যুলারিস্টগণ আজ যা বলছে নবীজী (সা:)’র যুগে মুনাফিকেরাও সে কথাগুলো প্রকাশ্যে বলতে ভয় পেত।
মূল কারণটি জাহিলিয়াত
মুসলিম উম্মাহর আজ যে পতিতদশা, তার মূল কারণটি জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতা। একই রোগ নবীজী (সা:)র আমলে আরব কাফিরদেরকে ইসলামের শত্রুতে পরিণত করেছিল। এবং ধাবিত করেছিল জাহান্নামের দিকে। জাহিলিয়াতের এ রোগ সারাতে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান। নিছক তেলওয়াত নয়। মহান আল্লাহতায়ালা তাই নামায-রোযা দিয়ে তাঁর পবিত্র মিশনটি শুরু করেননি, শুরু করেছেন কোর’আনের জ্ঞান দিয়ে। “ইকরা” অর্থাৎ পড়ো তথা জ্ঞান অর্জন করো পবিত্র কোর’আনের প্রথম ওহী। নবী করীমের (সাঃ) সময় কোর’আন বুঝাটি এতোই গুরুত্ব পেয়েছিল যে দূর-দূরান্ত থেকে সাহাবাগণ নবীজীর (সাঃ) কাছে ছুটে আসতেন এটুকু জানতে যে, মহান আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে কোন নতুন ওহী এসেছে কিনা। ওহী নাযিল হলো অথচ সেটি জানা হলো না এবং তা মান্য করা হলো না, এ অপরাধে জাহান্নাম যেতে হবে সে ভয়ে প্রতিটি সাহাবী ছিলেন সজাগ। অথচ আজ ঘরে ঘরে কোর’আনের কপি; তাতে রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার নাযীলকৃত সকল আয়াতগুলো। কিন্তু তা থেকে ক’জন জ্ঞান নিচ্ছে এবং তা মেনে চলছে? অথচ সাহাবাগণ আয়াতগুলোকে শুধু মুখস্থই করতেন না, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনাও করতেন। চিন্তা ভাবনার বলে কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না গিয়েও প্রতিটি সাহাবী সেদিন পরিণত হয়েছিলেন বিখ্যাত আলেম ও দার্শনিকে। মুসলিম বিশ্বের নানা জনপদে তারাই সেনাপতি, প্রশাসক, বিচারক, মুফতি, মুফাস্সির, মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ তারা পেশায় ছিলেন কৃষক, শ্রমিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
জ্ঞানার্জন নিছক মাদ্রাসার শিক্ষক বা মসজিদের ইমামদের দায়িত্ব নয়, সে দায়িত্ব প্রতিটি মুসলিমের। সাহাবায়ে কেরাম তারই দৃষ্টান্ত। তাই রাসূলে পাকের সাহাবা ছিলেন অথচ আলেম ছিলেন না -সে নজির নেই। জ্ঞানার্জনে তৎপর ছিলেন পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও। বস্তুত মুত্তাকী হওয়ার জন্য এ ছাড়া ভিন্ন পথ নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক সে ঘোষণাটি দিয়েছেন এভাবে: “ইন্নামা ইয়াখশাল্লাাহা মিন ইবাদিহিল উলামা।” -(সুরা ফাতির, আয়াত ২৮)। অর্থ: “বান্দাহদের মাঝে একমাত্র আলেমরা তথা জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে।” এর অর্থ দাঁড়ায়, যার মধ্যে জ্ঞান বা ইলম নেই তার মধ্যে আল্লাহর ভয়ও নেই। তাকওয়া সৃষ্টির জন্য তাই অপরিহার্য হলো পবিত্র কোর’আন থেকে জ্ঞান চর্চা। ইলম অর্জন এজন্যই ফরয।
নিজের নামায-রোযা যেমন নিজে করতে হয়, তেমনি জ্ঞান অর্জনের ফরযটিও নিজে পালন করতে হয়। তাই মসজিদের ইমামের জ্ঞানার্জনে অন্য মুসলিমের জ্ঞানার্জনের ফরয আদায় হয় না। এজন্যই ইসলামের গৌরব যুগে ইসলাম কবুলের সাথে কোরআন বুঝাটিও গুরুত্ব পেত। এটিকে তাঁরা অপরিহার্য ভাবতেন। কোর’আনের ভাষা আরবী নবদীক্ষিত মুসলিমদের আত্মায় পুষ্টি জোগাতে পাইপ লাইনের কাজ করেছিল। এ ভাষাটির মাধ্যমে ব্যক্তি সংযোগ পেয়েছিল মহান আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত জ্ঞানের মহাসমূদ্রের সাথে। সে সংযোগটি বাড়াতেই মিশর, ইরাক, সিরিয়া, সূদান, মরক্কোর ন্যায় বহু অনারব দেশের মানুষ নিজেদের মাতৃভাষা পাল্টিয়ে আরবীকে নিজেদের ভাষা রূপে গ্রহন করেছিলেন। ফলে পুষ্টি পেয়েছিল তাঁদের আত্মা ও বিবেক। ফলে গড়ে উঠেছিল কোরআনী মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব। নির্মিত হয়েছিল অতি-মানবিক ইসলামি সভ্যতা।
অথচ আজকের মুসলিমদের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে প্রকট। কারণ, কোর’আনের সাথে সম্পর্কহীনতার কারণে তাদের আত্মা বা রুহ সে কাঙ্খিত পুষ্টিই পায়নি। অথচ এমন সংযোগ-হীনতায় মানুষ শুধু পশু নয় বরং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়। তখন জন্ম সূত্রে মুসলিম হলেও তার মাঝে মৃত্যু ঘটে ইসলামী চেতনার। বিলুপ্ত হয় ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ। বাংলাদেশে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, ব্যাভিচার ও অশ্লিলতার প্রসার বেড়েছে তো একারণেই। মানুষ চালিত হচ্ছে নিছক বেঁচে থাকার জৈবিক স্বার্থে। বিদ্যাশিক্ষায় অর্থব্যয় পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীক বিনিয়োগ। এ চেতনায় মানুষ মনযোগী হয় বিদেশী ভাষা শিক্ষায়। কারণ এতে রয়েছে অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। অর্থপ্রাপ্তির লোভেই বিপুল অর্থব্যয়ে সন্তানদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে ইংরেজী, ফরাশী, জাপানীসহ বহু বিদেশী ভাষাও শিখছে। কিন্তু যে ভাষাটি না জানলে জীবনের মুল প্রশ্নপত্রটি অজানা থেকে যায় এবং অসম্ভব হয় মুসলিম হয়ে বেঁচে থাকাটিও -তা নিয়ে ভ্রক্ষেপ নেই। ফলে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে মূল ফরযটিই আদায় হচ্ছে না। ফলে সম্ভব হচ্ছে না আল্লাহভীরু মোত্তাকী রূপে বেড়ে উঠাটিও। মুসলিম জীবনে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? ১ম সংস্করণ ০১/০১/২০১১; ২য় সংস্করণ ১৪/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018