ভারতের ট্রানজিট এবং বাংলাদেশের আত্মঘাত
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 26, 2021
- বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ভারত কেন ট্রানজিট চায়?
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত কেন ট্রানজিট চায়? সে ট্রানজিটের উন্নয়নে ভারত কেন এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়? কেনই বা আওয়ামী সরকার ভিন্ন প্রতিটি সরকারই অতীতে সে ট্রানজিট দিতে বিরোধীতা করলো? এ প্রশ্নগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতীয় অভিলাষ ও স্ট্রাটেজী বুঝতে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের খাত বিশাল; সেটি শুধু ট্রানজিট বা রাস্তাঘাট নয়। অথচ শিল্প, কৃষি, বিদ্যুৎসহ বিনিয়োগের অন্য কোন খাতেই ভারত আজ অবধি কোন বিনিয়োগ করেনি। অতএব ট্রানজিট খাতে কেন তার এত আগ্রহ? ভারত নিজেও কোন ধনি দেশ নয়। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ, আফ্রিকার ২২টি দেশে যত গরীব মানুষের বাস, তার চেয়ে বেশী দরিদ্র মানুষ বাস ভারতের ৮টি প্রদেশে। আফগানিস্তান বা ইরাকে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে যত আত্মত্যাগী যুবক বোমা হামলায় প্রাণ দেয় ভারতে তার চেয়ে বহুশত গুণ বেশী কৃষক বা গৃহবধু দারিদ্র্য ও হতাশায় আত্মহত্যা করে। নিজ দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হলে দেশটির দরিদ্র মানুষের অনেক উপকার হতো। অথচ সে পথে না গিয়ে ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ট্রানজিট খাতে। হেতু কি? রহস্য এখানেই।
বিষয়টি বুঝতে হলে বুঝতে হবে ভারতের উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মনদের আসমুদ্র-হিমাচল ব্যাপী এক হিন্দু সাম্রাজ্য গড়ার আগ্রাসী মানসিকতাকে। দেশের গরীব মানুষদের প্রতি এসব বর্ণবাদী আগ্রাসী হিন্দুদের দরদ অতি সামান্যই। তারা সেখানেই বিনিয়োগ বাড়ায় যা তাদের সে আগ্রাসী অভিলাষ পুরণে জরুরী। আর সেচিত্রটিই ফুটে উঠে বাংলাদেশের প্রতি তাদের বিদেশ নীতি ও স্ট্রাটেজীতে। বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এদেশের উন্নয়নে বহু দূরদেশের পুজিপতিও বিনিয়োগ করেছে। পাকিস্তান আমলে বিনিয়োগ করেছে আদমজী, বাওয়ানী, ইস্পাহানী, আমিনের ন্যায় বহু অবাঙালীও। কিন্তু দেশটিতে ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ ছিল একাত্তরের পাকিস্তান বিরোধী যু্দ্ধে। সেটি ছিল যেমন বিপুল অর্থের, তেমনি রক্তেরও। এ বিষয়টি অস্বীকারের উপায় নেই, ভারতীয়দের সে বিনিয়োগ না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টিই হত না। মুক্তিবাহিনী সমগ্র দেশ দূরে থাক একটি জেলাকেও স্বাধীন করতে পারিনি। সে বাস্তবতার নিরিখেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেলদের কাছে, কোন বাংলাদেশী মুক্তি যোদ্ধার কাছে নয়। আরো সত্য হলো, একাত্তরের সে যুদ্ধ ও বিনিয়োগটি ভারতের কোন খয়রাতি প্রকল্প ছিল না, বরং সেটি ছিল নিজ সাম্রাজ্য বিস্তারের অনিবার্য প্রয়োজনে। ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার লক্ষে। মুজিব স্বাধিনতার ঘোষনা দিল কি দিল না, মূক্তি বাহিনী যুদ্ধ করলো কি করলো না – ভারত সে অপেক্ষায় ছিল না। এমন একটা যুদ্ধ নিজ খরচে লড়ার জন্য ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই দুপায়ে খাড়া ছিল। তাই ভারতের সে বিনিয়োগটি যেমন একাত্তরে শুরু হয়নি, তেমনি একাত্তরে শেষও হয়নি। সেটির শুরু হয়েছিল সাতচল্লিশে, এবং চলছে আজও। তবে চলছে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ও ভিন্ন ভিন্ন রণাঙ্গনে। ট্রানজিট হল তারই এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ট্রানজিটের দাবী, চট্রগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের নৌ ও বিমান বন্দর ব্যবহারের দাবী, বাংলাদেশের মিডিয়া খাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগ, আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের আগাতর প্রতিপালন –এবিষয়গুলো বুঝতে হলে ভারতের সে আগ্রাসী মনভাব ও সামরিক প্রয়োজনটি অবশ্যই বুঝতে হবে। তখন সুস্পষ্ট হবে, যে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে ভারত এগিয়ে আসছে সেটিও কোন খয়রাতি প্রজেক্ট নয়। বরং এটি হলো এক অবিরাম আগ্রাসী স্ট্রাটেজীর অবিচ্ছিন্ন অংশ। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশীদের যে যাই বলুক, ভারতীয়দের মাঝে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কোন অস্পষ্টতা নেই। বিষয়টি তারা খোলাখোলী ভাবেই বলে। এবং সেটিই ফুটে উঠেছে “ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিভিউ” জার্নালের সম্পাদক মি. ভরত ভার্মার লেখাএক নিবন্ধে। এ প্রবন্ধে মি. ভার্মার সে নিবদ্ধ থেকে উদ্বৃতি দিয়ে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করা হবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে যে অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, ভারত সেটিই হতে চায় সমগ্র এশিয়ার বুকে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়। আর সে অবস্থায় পৌঁছতে হলে অন্য দেশের অভ্যন্তরে শুধু নতজানু দালাল বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ প্রতিপালন করলে চলেনা। আগ্রাসনকে বিজয়ী ও স্থায়ী করতে নিজেদের বিশাল দূতাবাস, ঘাঁটি, বন্দরসুবিধা ও স্পাইনেট ওয়ার্কের পাশাপাশি সেনা ও রশদ সরবরাহের অবকাঠামোও গড়ে তুলতে হয়। প্রয়োজনে সামরিক আগ্রাসনও চালাতে হয়। শুধু হামিদ কারজাইদের মত ব্যক্তিদের কারণে আফগানিস্তান মার্কিনীদের হাতে অধিকৃত হয়নি। এলক্ষে ঘাঁটি, বন্দর ও সড়ক নির্মানও করতে হয়েছে। অবিরাম যুদ্ধও চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ভারতও তেমনি শুধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিপালন নিয়ে খুশি নয়। তাকে একাত্তরে প্রকান্ড যুদ্ধও লড়তে হয়েছে। তারা আগামীতেও এমন একটি যুদ্ধের পুরা প্রস্তুতি চায়। মি. ভার্মা তার প্রবন্ধে সে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন। ভারত তাই ভারতমুখী রাজনীতিবিদদের প্রতিপালনের পাশাপাশি ভারতীয় সেনা ও রশদ চলাচলের অবকাঠামোও গড়ে তুলতে চায়।
তবে সাম্রাজ্য বিস্তারে ভারতের যেমন স্বপ্ন আছে, তেমনি প্রচন্ড ভয়ও আছে। দেশটির সাম্রাজ্য-লিপ্সু নেতাদের মাঝে যেমন রয়েছে পাকিস্তানভীতি, তেমনি রয়েছে চীনভীতি। চীন দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসঞ্চয় করছে। প্রুতিবেশী নেপালও এখন চীনের পক্ষে। মধ্য ভারতের কয়েকটি প্রদেশে জুড়ে লড়াই করে চলেছে হাজার হাজার মাওবাদী। ভারতীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষায় মাওবাদীদের এ যুদ্ধই ভারতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বর্তমান কালের সবচেয়ে বড় হুমকি। অপরদিকে পাকিস্তানও এখন আর একাত্তরের দুর্বল পাকিস্তান নয়। তার হাতে এখন পারমানবিক বোমা। রয়েছে দূরপাল্লার শত শত মিজাইল। রয়েছে হাজার হাজার আত্মত্যাগী ইসলামী বোমারু যোদ্ধা – যাদের মাত্র কয়েকজন মোম্বাই শহরকে কয়েকদিনের জন্য অচল করে দিয়েছিল। তাছাড়া যুদ্ধ চলছে কাশ্মীরে। যুদ্ধ চলছে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের প্রদেশগুলিতেও। ভারতের ভয়, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ও তাদের মিত্ররা দ্রুত পরাজিত হতে চলেছে। ফলে তাদের আশংকা, দেশটি পুনরায় দখলে যাচ্ছে তালেবানদের হাতে -যারা পাকিস্তানের মিত্র। ভারতীয়দের ভয়, তালেবানগণ কাবুলের উপর বিজয় অর্জনের পর মনযোগী হবে ভারত থেক কাশ্মীর আজাদ করতে। কাশ্মীরের মজলুল মুসলমানদের দুর্দশায় আফগানিস্তানের সেক্যুলার নেতৃবৃন্দ নিশ্চুপ থাকলেও ধর্মপ্রাণ তালেবানগণ সেটি সইবে না। বরং কাশ্মীরী মুসলিমদের জিহাদের পক্ষে দাঁড়ানো তারা ফরজ জ্ঞান করবে। সে সাথে ভারতীয়দের আতংক ধরেছে দেশটির উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়েও। সেখানে চীনও সুযোগ খুঁজছে।
ভারতীয়দের ভয়ের আরো কারণ, দেশটি তিনদিক দিয়েই শত্রু দ্বারা ঘেরাও। উত্তর-পূর্ব সীমান্তের সাতটি প্রদেশ মূল ভারতের সাথে সংযুক্ত মাত্র ১৭ মাইল চওড়া শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে। মুরগির ঘাড়ের ন্যায় সরু এ করিডোরটি চীন যে কোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে। বন্ধ করতে পারে পূর্ব সীমান্তের বিদ্রোহী বিচ্ছিন্ততাবাদীরাও। ভারতীয়দের সে ভয় ও আতংকের ভাবই প্রকাশ পেয়েছে মি. ভরত ভার্মার প্রবন্ধে। তবে তার লেখায় শুরুতে যেটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো আগ্রাসী ভারতীয়দের নিজ অভিলাষের কথা। তিনি লিখেছেন, “India has the potential to be to Asia, what America is to the world… Possibly India is the only country in Asia that boasts of the potential to occupy the strategic high ground gradually being vacated by the retreating western forces, provided it develops offensive orientation at the political level. অর্থ: “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মর্যাদা অর্জন করেছে সমগ্র পৃথিবীতে, ভারতের সামর্থ্য রয়েছে এশিয়ার বুকে সে অবস্থায় পৌঁছার।.. সম্ভবতঃ ভারতই এশিয়ার একমাত্র দেশ যার সামর্থ্য রয়েছে পিছে হঠা পশ্চিমা শক্তিবর্গের ফেলে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজিক ক্ষেত্রগুলো দখলের। তবে সেটি সম্ভব হবে যদি দেশটি রাজনীতির ময়দানে আক্রমণাত্মক ছকে নিজেকে গড়ে তোলে।”
বিষয়টি ব্যয়বহুল
কোন বৃহৎ শক্তির একার পক্ষেই এখন আর বিশ্ব-রাজনীতি নিজ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব নয়। একাজ অতি ব্যয়বহুল। আফগানিস্তানকে কবজায় রাখার বিপুল খরচ সোভিয়েত রাশিয়াকে শুধু পরাজিতই করেনি, ১৫ টুকরোর বিভক্তি করে ফেলেছে। তেমনি ইরাক ও আফগানিস্তান দখলদারির খরচ বিপাকে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। দেশটি আজ প্রচন্ড ভাবে বিপন্ন অর্থনৈতিক ভাবে। ফলে বিজয় দূরে থাক, তারা এখন পিছু হটার রাস্তা খুঁজছে। ভারতের খায়েশ, তারা সে শূণ্যস্থান দখলে নিবে। আর সে জন্য তারা এখন আগ্রাসী স্ট্রাটেজী নিয়ে এগুচ্ছে। অথচ একটি এশিয়ান শক্তি হওয়ার খরচও কম নয়। তবে এমন বাতিক শুধু হঠকারিই করে না, বিবেকশূণ্যও করে। তাই বিশ্বের সর্বাধিক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে হলে কি হবে, দেশটির বাতিক উঠেছে শত শত কোটি টাকার অস্ত্র কেনার। এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে একটি প্রকান্ড যুদ্ধের। এ জন্যই প্রয়োজন পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ট্রানজিটের। কারণ, ভারতীয় সমরবিদদের বিবেচনায় শিলিগুরি সরু করিডোরটি আদৌও নিরাপদ নয়। সম্ভব নয় এ পথ দিয়ে কোন যুদ্ধকালীন সময়ই ভারতের পূর্ব সীমান্তে লাগাতর রশদ সরবরাহ। সংকীর্ন এ গিরিপথের উপর ভরসা করে কোন যুদ্ধ পরিচালনা অসম্ভব।
ভারতীদের আতংক যে এ নিয়ে কতটা প্রকট সে বিবরণও পাওয়া যায় মি. ভার্মার লেখায়। তিনি লিখেছেন, “By 2012, to unravel India, Beijing is likely to para-drop a division of its Special Forces inside the Siliguri Corridor to sever the Northeast. There will be simultaneous attacks in other parts of the border and linkup with the Special Forces holding the Siliguri Corridor will be selected. All these will take place under the nuclear overhang. In concert Islamabad will activate the second front to unhook Kashmir by making offensive moves across the IB in the plains… Meanwhile the fifth columnists supporting these external forces will unleash mayhem inside. অর্থঃ “ভারতকে বিপাকে ফেলার জন্য ২০১২ সালের মধ্যে বেইজিং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে শিলিগুরি করিডোরে এক ডিভিশন স্পেশাল ফোর্সকে প্যারাসুট যোগে নামাতে পারে। শিলিগুরি করিডোরের উপর স্পেশাল ফোর্সের দখলদারি বলবৎ রাখার জন্য সে সময় সীমান্তের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একযোগে হামলা হতে পারে। সব কিছুই হবে এমন এক সময় যখন পারমানবিক বোমার ভয়ও মাথার উপর ঝুলতে থাকবে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ইসলামাবাদ কতৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর দ্বিতীয় রণাঙ্গণ খুলবে। দেশের অভ্যন্তরে একই সময় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে পঞ্চম বাহিনীর লোকেরা।”
তবে ভারতীয়দের মাথাব্যাথা শুধু শিলিগুড়ি, কাশ্মির বা আভ্যন্তরীন মাওবাদীদের নিয়ে নয়, প্রচন্ড আতংক আফগানিস্তানকে নিয়েও। ভয়ের বড় কারণ, একমাত্র ব্রিটেশদের হামলা বাদে দিল্লি অভিমুখে অতীতের সবগুলি হামলা হয়েছে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে। আর আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হলো মধ্য এশিয়ার দেশগুলির যাওয়ার রাস্তা। সে আফগানিস্তান আজ দখলে যাচ্ছে পাকিস্তানপন্থি তালেবানদের হাতে! ভারতীয় এটি ভাবতেও ভয় হয়। মি. ভার্মা লিখেছেন, “With Afghanistan being abandoned by the West, beginning July 2011, Islamabad will craft a strategy to take over Kabul with the help of Islamic fundamentalist groups. The Taliban will initially concentrate on unraveling a soft target like India in concert with Beijing -Islamabad -Kabul or Chinese Communists- Pakistan Army- Irregular Forces axis.” অর্থঃ ২০১১ সালের জুলাইয়ের দিকে পশ্চিমা শক্তিবর্গ যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে তখন ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ ইসলামী মৌলবাদীদের সাথে মিলে পরিকল্পনা নিবে কাবুল দখলের। তালেবানগণ তখন বেইজিং-ইসলামাবাদ-কাবুল অথবা চীনা কম্যুনিষ্ট-পাকিস্তান সেনাবাহিনী-অনিয়মিত সৈন্য –এরূপ অক্ষীয় জোটের সাহায্য নিয়ে শুরুতে ভারতের ন্যায় সহজ টারগেটের উপর আঘাত হানতে মনযোগী হবে।”
ভারতের ভিতরে বাংলাদেশ
ভারতীয়দের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা সীমানার বাইরের কোন দেশ নয়। বাংলাদেশকে সে পরিকল্পিত প্রতিরক্ষা বুহ্যের বাইরের দেশ ধরলে ভারতের জন্য কোন মজবুত ডিফেন্স স্ট্রাটেজী গড়ে তোলাই অসম্ভব। সেটি ভারত হাড়ে হাড়ে বুঝেছে ১৯৬২ সালে যখন চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে ভারত চরম ভাবে পরাজিত হয়। চীনের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় ভারত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্যসমাবেশই করতে পারেনি। কারণ সেরূপ রাস্তাই ভারতের জন্য সে সময় ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে ভারত তখন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের উপর চাপ দিয়েছিল যাতে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে সৈন্য সমাবেশের সুযোগ দেয়। কিন্তু আইয়ুব খান সে চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। কিন্তু একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ভারতের সামনে সম্ভাবনার রাস্তা খুলে যায়। এশিয়ায় প্রভূত্ব বিস্তারে ভারত আজ যে স্বপ্ন দেখছে সেটি মুলতঃ একাত্তরের বিজয়ের ফলশ্রুতিতেই।
একাত্তরের পর বাংলাদেশের ভূমি, সম্পদ ও জনগণ যে কতটা অরক্ষিত সেটি বুঝতে কি প্রমানের প্রয়োজন আছে? ২৩ বছরের পাকিস্তান আমলে যে দাবীগুলো ভারতীয় নেতাগণ মুখে আনতে সাহস পায়নি সেগুলি মুজিবামলে আদায় করে ছেড়েছে। পাকিস্তান আমলে তারা বেরুবাড়ির দাবী করেনি, কিন্তু একাত্তরে শুধু দাবিই করেনি, ছিনিয়েও নিয়েছে। এবং সেটি মুজিবের হাত দিয়ে। প্রতিদানে কথা ছিল তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশকে দিবে। কিন্তু সেটি সাথে সাথে দেয়নি। আঙরপোতা, দহগ্রামের ন্যায় বহু বাংলাদেশী ছিটমহল এখনও ভারতের কাছে জিম্মি। ভারত সেগুলিতে যাওয়ার করিডোর দিতে নারাজ। এখন তারা জোরে সোরে চাইছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট যা দিয়ে তারা পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলিতে যাবে। এটি চাইছে প্রতিবেশীর প্রতি পারস্পরিক সহযোগিতার দোহাই দিয়ে। অথচ এমন সহযোগিতা কোন কালেই তারা প্রতিবেশীকে দেয়নি। পাকিস্তান সরকার তার পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগের স্বার্থে ট্রানজিট চেয়েছিল। সেটিকে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওয়ারলাল নেহেরু একটি অদ্ভুদ দেশের অদ্ভুত আব্দার বলে মস্করা করেছিলেন। বলেছিলেন, ভারতের নিরাপত্তার প্রতি এমন ট্রানজিট হবে মারাত্মক হুমকি। শুধু তাই নয়, একাত্তরে ভারতীয় ভূমির উপর দিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের পিআইয়ের বেসামরিক বাণিজ্য বিমান উড়তে দেয়নি। এমন কি শ্রীলংকার উপর চাপ দিয়েছিল যাতে পাকিস্তানী বেসামরিক বিমানকে কোন জ্বালানী তেল না দেয়।
বাংলাদেশের সাথেও কি ভারতের আচরন ভিন্নতর? একাত্তরের যুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়। ফলে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটছিল বন্দরে মালামাল বোঝাই ও উত্তোলনের কাজে। এতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। দেশে তখন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। ছিল নিতান্তই দুঃসময়। বাংলাদেশের জন্য চট্রগ্রাম বন্দরটিই ছিল মূল বন্দর। এমন দুঃসময়ে অন্য কেউ নয়, ভারতের অতি বন্ধুভাজন শেখ মুজিব অনুমতি চেয়েছিলেন অন্ততঃ ৬ মাসের জন্য কোলকাতার বন্দর ব্যবহারের। তখন ভারত সরকার জবাবে বলেছিল ৬ মাস কেন ৬ ঘন্টার জন্যও বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেয়া যাবে না। এটিকেও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেছিল। প্রতিবেশী সুলভ সহযোগিতার বুলি তখন নর্দমায় স্থান পেয়েছিল। এমনকি শেখ মুজিবকেও ভারত আজ্ঞাবহ এক সেবাদাস ভৃত্যের চেয়ে বেশী কিছু ভাবেনি। ভৃত্যকে দিয়ে ইচ্ছামত কাজ করিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু তার আব্দারও কি মেনে নেওয়া যায়?
আচরণটি শত্রুসুলভ
প্রতিবেশীর প্রতি ভারতের আচরণ আদৌ বন্ধু-সুলভ নয়, সেটি শত্রু-সুলভ। এবং সেটি নিত্যদিনের। প্রতিবেশী নেপাল ও ভূটানের সাথে বাণিজ্য চলাচল সহজতর করার জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট চেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপাল চেয়েছিল মংলা বন্দর ব্যবহারের লক্ষ্যে ভারতের উপর দিয়ে মালবাহি ট্রাক চলাচলের ট্রানজিট। ভারত সে দাবি মানেনি। অথচ সে ভারতই চায় বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রায় ছয় শত মাইলের ট্রানজিট। ফলে বুঝতে কি বাঁকি থাকে, পারস্পারিক সহযোগিতা বলতে ভারত যেটি বুঝে সেটি হলো যে কোন প্রকারে নিজের সুবিধা আদায়। প্রতিবেশীর সুবিধাদান নয়। কথা হলো, বাংলাদেশের জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট যদি ভারতের জন্য নিরাপত্তা-সংকট সৃষ্টি করে তবে সে যুক্তি তো বাংলাদেশের জন্যও খাটে।
তাছাড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ভারতের সৃষ্ট ষড়যন্ত্র নতুন নয়। ১৯৭৫ সালে মুজিব নিহত হওয়ার পর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্ব অনেক আওয়ামী লীগ ক্যাডার ভারতে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের সীমান্তে তারা সন্ত্রাসী হামলাও শুরু করে। তাদের হামলায় বহু বাংলাদেশী নিরীহ নাগরিক নিহতও হয়। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থাগুলি তাদেরকে যে শুধু অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাই নয়, নিজ ভূমিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারেরও পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের টিকেট পিরোজপুর থেকে দুই-দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতার ভারতে গিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন গড়ে তুলেছে সত্তরের দশক থেকেই। ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত এসব সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া দূরে থাক তাদেরকে নিজভূমি ব্যবহারের পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। এসব কি প্রতিবেশী-সুলভ আচরণ? অথচ সে ভারতই দাবি তুলেছে আসামের উলফা নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার। হাসিনা সরকার তাদেরকে ভারতের হাতে তুলেও দিছে। অথচ কাদের সিদ্দিকী ও চিত্তরঞ্জন সুতার ভারতের মাটিতে যেরূপ জামাই আদর পেয়েছে সে রূপ আদর উলফা নেতাদের ভাগ্যে বাংলাদেশে জুটেনি। ঘাঁটি নির্মাণ, সামরিক প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশের ভূমি থেকে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনার সুযোগও জুটেনি। বরং তাদের জুটেছে জেলের শাস্তি।
বাংলাদেশের জন্য কেন আত্মঘাত?
বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট বা করিডোর যে কতটা আত্মঘাতি সে বিষয়ে বিষদ আলোচনা হওয়া দরকার। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত জুড়ে ভারতের সাতটি প্রদেশ। এগুলো হলো: মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, অরুনাচল, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম। এ রাজ্যগুলির জন্য এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক). সমগ্র এলাকার আয়তন বাংলাদেশের চেয়েও বৃহৎ অথচ অতি জনবিরল। দুই). সমগ্র এলাকাটিতে হিন্দুরা সংখ্যালঘিষ্ট। ফলে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ নিয়ে সমগ্র উপমহদেশে যে রাজনৈতিক সংঘাত ও উত্তাপ এ এলাকায় সেটি নেই। ফলে এখানে বাংলাদেশ পেতে পারে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী যা তিন দিক দিয়ে ভারত দ্বারা পরিবেষ্ঠিত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিন). একমাত্র ব্রিটিশ আমল ছাড়া এলাকাটি কখনই ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল না, এমনকি প্রতাপশালী মুঘল আমলেও নয়। হিন্দু আমলে তো নয়ই। ভারতভূক্ত হয় ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে। ভারতীয়করণ প্রক্রিয়া সেজন্যই এখানে ততটা সফলতা পায়নি। এবং গণভিত্তি পায়নি ভারতপন্থি রাজনৈতিক দলগুলি। চার). সমগ্র এলাকাটি শিল্পে অনুন্নত এবং নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। অথচ এলাকাটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ভারতের সিংহভাগ তেল, চা, টিম্বার এ এলাকাতে উৎপন্ন হয়। অথচ চা ও তেল কোম্মানীগুলোর হেড-অফিসগুলো কলকাতায়। কাঁচামালের রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলিও এলাকার বাইরের। ফলে রাজস্ব আয় থেকে এ এলাকার রাজ্যগুলি বঞ্চিত হচ্ছে শুরু থেকেই। শিল্পোন্নত রাজ্য ও শহরগুলো অনেক দূরে হওয়ায় পণ্যপরিহন ব্যয়ও অধিক। ফলে সহজে ও সস্তায় পণ্য পেতে পারে একমাত্র উৎস বাংলাদেশ থেকেই। ট্রানজিট দিলে সে সুযোগ হাতছাড়া হতে বাধ্য। পাঁচ). যুদ্ধাবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ হল নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্ত এ এলাকায় সে সুযোগ ভারতের নেই। ভারতের সাথে এ এলাকার সংযোগের একমাত্র পথ হলো পার্বত্যভূমি ও বৈরী জনবসতি অধ্যুষিত এলাকার মধ্য অবস্থিত ১৬ কিলোমিটার চওড়া করিডোর। এ করিডোরে স্থাপিত রেল ও সড়ক পথের কোনটাই নিরাপদ নয়। ইতিমধ্যে শত শত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির সেখানে প্রাণনাশ হয়েছে। ছয়). নৃতাত্বিক দিক দিকে তারা মাঙ্গোলিয়। ফলে মূল ভারতের অন্য যে কোন শহরে বা প্রদেশে পা রাখলেই একজন নাগা, মিজো বা মনিপুরি চিহ্নিত হয় বিদেশী রূপে। তারা যে ভারতী নয় সেটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এ ভিন্নতাই যথেষ্ট। এ ভিন্নতার জন্যই সেখানে স্বাধীন হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলছে বিগত প্রায় ৭০ বছর ধরে। ভারতীয় বাহিনীর অবিরাম রক্ত ঝরছে এলাকায়। বহু চুক্তি, বহু সমঝোতা, বহু নির্বাচন হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার সে যুদ্ধ না থামিনি। ফলে বাড়ছে ভারতের অর্থনৈতিক রক্তশূণ্যতা। সমগ্র এলাকা হয়ে পড়েছে ভারতের জন্য ভিয়েতনাম। আফগানিস্থানে একই রূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল রাশিয়ার জন্য। সে অর্থনৈতিক রক্তশূণ্যতার কারনে বিশালদেহী রাশিয়ার মানচিত্র ভেঙ্গে ১৫টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। ভারত রাশিয়ার চেয়ে শক্তিশালী নয়। তেমনি স্বাধীনতার লক্ষ্যে এ এলাকার মানুষের অঙ্গিকার, আত্মত্যাগ এবং ক্ষমতাও নগণ্য নয়। ফলে এ সংঘাত থামার নয়। ভারত চায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু ভারতের কাছে সংকট মুক্তির সে রাস্তা খুব একটা খোলা নাই।
ভারত ট্রানজিট চাচ্ছে পণ্য-পরিবহন ও আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দোহাই দিয়ে। বিষয়টি কি আসলেই তাই? মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুনাচল, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের সমুদয় জনসংখ্যা ঢাকা জেলার জনসংখ্যার চেয়েও কম। এমন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির জন্য পণ্যসরবরাহ বা লোক-চলাচলের জন্য এতো কি প্রয়োজন পড়লো যে তার জন্য অন্য একটি প্রতিবেশী দেশের মধ্য দিয়ে করিডোর বা ট্রানজিট চাইতে হবে? সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে? যখন তাদের নিজের দেশের মধ্য দিয়েই ১৭ কিলোমিটারের প্রশস্ত করিডোর রয়েছে। বাংলাদেশের বিগত সরকারগুলো দেশের আভ্যন্তরীণ সড়কের দুরবস্থার কথা জানিয়ে এতকাল পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে। এবার ভারত বলছে তারা সড়কের উন্নয়নে বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার লোন দিতে রাজী। এবার বাংলাদেশ যাবে কোথায়? অথচ এই এক বিলিয়ন ডলার দিয়ে ভারত তার ১৭ মাইল প্রসস্ত করিডোর দিয়ে একটি নয়, ডজনের বেশী রেল ও সড়ক পথ নির্মাণ করতে পারতো। এলাকায় নির্মিত হতে পারে বহু বিমান বন্দর। ভারতের সে দিকে খেয়াল নাই, দাবী তুলেছে বাংলাদেশের মাঝ খান দিয়ে যাওয়ার পথ চাই-ই। যেন কর্তার তোগলোকি আব্দার। গ্রামের রাস্তা ঘুরে যাওয়ায় রুচি নেই, অন্যের শোবার ঘরের ভিতর দিয়ে যেতেই হবে। গ্রামের ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তায় পথ চলতে অত্যাচারি কর্তার ভয় হয়। কারণ তার কুর্মের কারণে শত্রুর সংখ্যা অসংখ্য। না জানি কখন কে হামলা করে বসে। একই ভয় চেপে বসেছে ভারতীয়দের মাথায়। সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতে তারা চিহ্নিত হয়েছে উপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী রূপে। জনগণ চায় ভারতীয় শাসন থেকে আশু মুক্তি। এ লক্ষে জানবাজি রেখে তারা যুদ্ধে নেমেছে। ফলে ভারতের জন্য অবস্থা অতি বেগতিক হয়ে পড়েছে। একদিকে কাশ্মীরের মুক্তিযুদ্ধ দমনে যেমন ৬ লাখেরও বেশী ভারতীয় সৈন্য অন্তহীন এক যুদ্ধে আটকা পড়ে আছে তেমনি দুই লাখের বেশী সৈন্য যুদ্ধে লিপ্ত উত্তর-পূর্ব এ ভারতে। যুদ্ধাবস্থায় অতিগুরুত্বপূর্ণ হলো দ্রুত সৈন্য সমাবেশের জন্য নিরাপদ সড়ক। ভারত সেটি বাংলাদেশে ভিতর দিতে নিতে চায়। এজন্যই করিডোরের দাবী।
প্রয়োজনটি সামরিক
বাংলাদেশে স্বৈরাচারি বা নির্বাচিত -যে সরকাররই আসুক না কেন, তাদের যে কাছে যে দাবীটি ভারত অতি জোরালো ভাবে পেশ করছে তা হলো এই ট্রানজিটের দাবী। এ বিষয়টি কি বুঝতে আদৌ বাঁকি থাকে যে, ভারত করিডোর চাচ্ছে নিতান্তই সামরিক প্রয়োজনে? আর বাংলাদেশের জন্য শংকার কারণ মূলত এখানেই। ভারত তার চলমান রক্তাত্ব যুদ্ধে বাংলাদেশকেও জড়াতে চায়। এবং কিছু গুরুতর দায়িত্বও চাপাতে চায়। কারো ঘরের মধ্য দিয়ে পথ চললে সে পথে কিছু ঘটলো সহজেই সেটির দায়-দায়িত্ব ঘরের মালিকের ঘাড়ে চাপানো যায়। তার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা ঠুকা যায়। কিন্তু বিজন মাঠ বা ঝোপঝাড়ের পাশে সেটি ঘটলে আসামী খুঁজে পাওয়াই দায়। ভারত এজন্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৬ শত মাইলের করিডোর এবং সে করিডোরের নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশের কাঁধে চাপাতে চায়। তখন এ পথে ভারতীয়দের উপর হামলা হলে বাংলাদেশকে সহজেই একটি সন্ত্রাসী দেশ রূপে আখ্যায়ীত করে আন্তর্জাতিক মহলে নাস্তানাবুদ করা যাবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতেও তোলা যাবে।
তাছাড়া তেমন হামলার সম্ভাবনা কি কম? ভারতী বাহিনী কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুর বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ৭০ বছর যাবত। হাজার হাজার কাশ্মীরীকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, নারীরা হচ্ছে ধর্ষিতা। এখনও সে হত্যাকান্ড চলছে অবিরাম ভাবে। জাতিসংঘের কাছে ভারত সরকার ওয়াদা করেছিল কাশ্মীরীদের ভাগ্য নির্ধারণে সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত করার অনুমতি দিবে। জাতিসংঘ নিরাপত্ত পরিষদ এ্যাডমিরাল নিমিটস্ এর উপর দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারত সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। নিছক গায়ের জোরে। এভাবে কাশ্মীরীদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের পথে। অপর দিকে দেশটিতে মুসলিম হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়ীতে আগুণ। নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন ৫ হাজারের মুসলিম নারী, শিশু ও পুরুষকে নির্মম ভাবে হত্য হয়েছে। অনেককে জীবন্ত আগুণে ফেলা হয়েছে। এমনকি মসজিদ ভাঙ্গার কাজ হয় অতি ধুমধামে ও উৎসবভরে। অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কাজ হয়েছে হাজার পুলিশের সামনে দিন-দুপুরে। হাজার হাজার সন্ত্রাসী হিন্দুদের দ্বারা ঐতিহাসিক এ মসজিদটি যখন নিশ্চিহ্ন হচ্ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও, বিরোধী দলীয় নেতা বাজপেয়ী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ সম্ভবতঃ আনন্দ ও উৎসবভরে ডুগডুগি বাজাচ্ছিলেন। এটি ছিল বড় মাপের ঐতিহাসিক অপরাধ। অথচ এ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর ভারত সরকারের কোন পুলিশ কোন অপরাধীকেই গ্রেফতার করেনি। আদালতে কারো কোন জেল-জরিমানাও হয়নি। ভাবটা যেন, সেদেশে কিছুই ঘটেনি। ভারতীয়দের মানবতাবোধ ও মূল্যবোধের এটিই প্রকৃত অবস্থা। এমন একটি দেশ থেকে কি সুস্থ্য পররাষ্টনীতি আশা করা যায়? দেশটিতে দাঙ্গার নামে হাজার হাজার মুসলমানকে জ্বালিয়ে মারার উৎসব হয় বার বার। এমন সহিংস কান্ড পাকিস্তানের ৭০ বছরের জীবনে একবারও হয়নি। বাংলাদেশের ৫০ বছরের জীবনেও হয়নি।
বাংলাদেশীরা মুসলিমগণ কি ঘুমাবে?
প্রতিটি আগ্রাসী কর্মেরই প্রতিক্রিয়া আছে। ভারতের কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আযাদ লিখেছিলেন,‘‘আফ্রিকার কোন জঙ্গলে কোন মুসলিম সৈনিকের পায়ে যদি কাঁটাবিদ্ধ হয় আর সে কাঁটার ব্যাথা যদি তুমি হৃদয়ে অনুভব না কর তবে খোদার কসম তুমি মুসলিম নও।” (সুত্র: মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রচনাবলী, প্রকাশক: ইসলামী ফাউন্ডেশন, ঢাকা)। এমন চেতনা মাওলানা আবুল কালাম আযাদের একার নয়, এটিই ইসলামের বিশ্ব-ভাতৃত্বের কথা। যার মধ্যে এ চেতনা নাই তার মধ্যে ঈমানও নাই। বাস্তবতা হল, বাংলাদেশে যেমন সেক্যুলারিজমের জোয়ারে ভাসা ভারতপন্থি বহু ক্যাডার আছে তেমনি প্যান-ইসলামের চেতনায় উজ্জিবীতত বহু লক্ষ মুসলমানও আছে। ট্রানজিটের পথে সাক্ষাৎ চোখের সামনে তথা হাতের সামনে মুসলিম হত্যাকারি ও মসজিদ ধ্বংসকারি ভারতীয় সৈনিকদের কাছে পেয়ে এদের কেউ কেউ যে তাদের উপর বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়বে না সে গ্যারান্টি কে দেবে? তাছাড়া বাংলাদেশীদের প্রতি ভারতীয় সৈনিকদের আচরণটাই কি কম উসকানিমূলক? প্রতি বছরে বহু শত বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতীয় বর্ডার সিকুরিটি ফোর্স তথা বিএসএফ হত্যা করছে। এবং এর কোন প্রতিকার কোন বাংলাদেশী পায়নি।
নিরীহ মানুষের এমন হত্যাকান্ড বিএসএফ পাকিস্তান সীমান্তে বিগত ৬০ বছরেও ঘটাতে পারিনি। এমনকি নেপাল বা ভূটান সীমান্তেও হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভারত সরকারের কাছে যে কতটা মূল্যহীন ও তুচ্ছ এবং দেশের জনগণ যে কতটা অরক্ষিত -সেটি বোঝানোর জন্য এ তথ্যটিই কি যথেষ্ট নয়? বহুবার তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ইচ্ছামত গরু-বাছুড়ও ধরে নিয়ে গেছে। বাঁধ দিয়ে সীমান্তের ৫৪টি যৌথ নদীর পানি তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের মতামতের তোয়াক্কা না করেই। ফারাক্কা নির্মান করেছে এবং পদ্মার পানি তুলে নিয়েছে এক তরফা ভাবেই। টিপাইমুখ বাধ দিয়ে সুরমা ও কুশিয়ারার এবং তিস্তার উপর উজানে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে পানিশূণ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। এদের মুখে আবার প্রতিবেশী মূলক সহযোগিতার ভাষা?
ভারতের এমন আগ্রাসী ভূমিকার কারণ ভারতবিরোধী চেতনা এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বেতনভোগী র’এর এজেন্ট দিয়ে এমন চেতনাধারিদের দমন অসম্ভব। সেটি ভারতও বুঝে। তাই চায়, বাংলাদেশ সরকার ভারত বিরোধীদের শায়েস্তা করতে বিশ্বস্ত ও অনুগত ঠ্যাঙ্গারের ভূমিকা নিক। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী সীমান্ত ছেড়ে কামানের নলগুলি নিজ দেশের জনগণের দিকে তাক করুক। ট্রানজিট দিলে তেমন একটি যুদ্ধাবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে বাধ্য। তখন দেশটি পরিণত হবে আরেক ইরাক বা আফগানিস্থানে।
সম্প্রতি ভারতের বিদেশ নীতিতে আরেক উপসর্গ যোগ হয়েছে। ভারতের যে কোন শহরে বোমা বিস্ফোরণ হলে তদন্ত শুরুর আগেই ভারত সরকার বাংলাদেশীদের দায়ী করে বিবৃতি দিচ্ছে। যেন এমন একটি বিবৃতি প্রচারের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এ অবধি এমন কাজে বাংলাদেশীদের জড়িত থাকার পক্ষে আজ অবধি কোন প্রমাণ তারা পেশ করতে পারিনি। এমন অপপ্রচারের লক্ষ্য একটিই। ট্রানজিটসহ ভারত যে সুবিধাগুলো চায় সেগুলি আদায়ে এভাবে প্রচন্ড চাপসৃষ্টি করা। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির এটিই হলো এখন মূল স্ট্রাটেজী। লক্ষ্যণীয় হল, সেদেশে বার বার সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের প্রতি তাদের এ নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিপদ বাড়বে যদি এ লড়ায়ে বালাদেশ ভারতের পক্ষ নেয়। পণ্যের পাশাপাশি সৈন্য ও সামরিক রশদ তখন রণাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। ফলে পূর্ব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রতিপক্ষ রূপে চিহ্নিত হবে বাংলাদেশ। আজ অবধি যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি তীরও ছুঁড়েনি তারাই পরিণত হবে পরম শত্রুরূপে। তখন সসস্ত্র হামলার লক্ষ্যে পরিণত হবে বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা। তখন অশান্ত হয়ে উঠবে দেশের হাজার মাইল ব্যাপী উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত। অহেতুক এক রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। কথা হলো, যে গেরিলা যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বিশাল ভারতীয় বাহিনীই হিমসিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মত দেশ কি সফলতা পাবে? তখন বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিচ্ছিনড়বতাবাদীরা বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বিদ্রোহীগণ বন্ধু ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে এ এলাকায়। এ কারণেই বাংলাদেশের জন্য অতিশয় আত্মঘাতি হলো ভারতের জন্য ট্রানজিট দান।
দ্রুত ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নতুন আশংকা
আরো লক্ষ্যণীয় হলো, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এ এলাকাটিতে ভূ-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন হচ্ছে অতি দ্রুতগতিতে। মেঘালায়, মিজোরাম ও ন্যাগাল্যান্ড রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই পরিণত হয়েছে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে। খৃষ্টান ধর্ম জোরে সোরে প্রচার পাচ্ছে পাশ্ববর্তী প্রদেশগুলিতেও। ফিলিপাইনের পর সমগ্র এশিয়ায় এটিই এখন সর্ববৃহৎ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। তাছাড়া ভারতীয় সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের আচরণে এ ধর্মমতের অনুসারিরাও অতি অতিষ্ট। উগ্র হিন্দুদের কাছে হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে দীক্ষা নেওয়া এক অমার্জনীয় অপরাধ। ফলে অতি জোরদার হচেছ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি অখন্ড খৃষ্টান রাষ্ট্র নির্মানের ধারণা। পশ্চিমা খৃষ্টান জগতে এমন রাষ্ট্রের পক্ষে আগ্রহ দিন দিন বাড়বে সেটিই স্বাভাবিক। ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে আলাদা করার পিছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল সে যুক্তির প্রয়োগ হবে ভারতের বিরুদ্ধেও। ফলে খৃষ্টান জগত এবং চীনের ন্যায় বৃহৎ শক্তিবর্গও তখন নিজ নিজ স্বার্থে স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ নিবে। এ অবস্থায় ভারতের পক্ষ নেওয়ার খেসারত দিতে হবে অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৃহৎ শক্তির বিরাগ-ভাজন হয়ে। বাংলাদেশের জন্য সেটি হবে আত্মঘাতি। কিন্তু ভারতের জন্য সুখের বিষয়টি হল, বাংলাদেশের মানুষের গলায় এ ঘাতক ফাঁসটি তাকে নিজে পড়িয়ে দিতে হচ্ছে না। দেশবাসীর গলায় পড়ানোর সে দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার নিজে। ভারতীয়দের সৌভাগ্য যে সে কাজে তারা ভোটডাকাত শেখ হাসিনার একজন সেবাদাস অবৈধ প্রধানমন্ত্রীও পেয়ে গেছে। ডাকাতেরা কখনোই জনগণের স্বার্থ দেখে না, দেখে নিজেদের স্বার্থ।এ মুহুর্তে ভারত সরকারের কাজ হয়েছে, সে পরিকল্পিত ফাঁসটি এ নতজানু অবৈধ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। ১ম সংস্করণ ২৯/০৮/২০১০; ২য় সংস্করণ ২৬/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018