মুসলিম জীবনে রাজনীতি ও জিহাদ এবং বাঙালী মুসলিমের আত্মসমর্পণ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মহান আল্লাহতায়ালার চাওয়া-পাওয়া

মানবের সৃষ্টি ইবাদতের জন্য। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: “ওয়া মা খালাকতুল জিন্না ও ইনসানা ইল্লা লি ইয়াবুদুন।” অর্থ: “এবং ইবাদত ভিন্ন অন্য কোন কারণে জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করা হয়নি।” বার্তাটি এখানে সুস্পষ্ট। এ জীবনে একমাত্র সেই সফল, যে সফল ইবাদতে। এবং সেই প্রকৃত বিফল, যে ব্যর্থ ইবাদতে। এখানেই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ্ প্রশ্নটি এসে খাড়া হয়। সেটি হলো, ইবাদত কাকে বলে? ইবাদতের সহিহ প্রক্রিয়াই বা কী? বস্তুত মানব জীবনে এর চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ্ প্রশ্ন দ্বিতীয়টি নাই? অংক, বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কারিগরি প্রযুক্তি  বা পেশাগত জ্ঞান উপার্জন বাড়ালেও ইবাদত কাকে বলে এবং সঠিক ইবাদতই বা কি –সে বিষয়ে কোন জ্ঞান দান করেনা। ফলে মানবকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল -সেটি অর্জিত হয় না। তখন সমগ্র বাঁচাটিই ভূল লক্ষ্যে ও ভূল পথে হয়। সে ভূল পথে কি জান্নাতে পৌঁছা যায়? বরং সে ভূলে যা অনিবার্য হয় –তা হলো জাহান্নামে পৌঁছা।

প্রশ্ন হলো, ইবাদত বলতে কি বুঝায়? এটি কি শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিল? নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ইবাদত কি শুধু এগুলোতে সীমিত ছিল? তবে কী ছিল তাদের ইবাদত? কী ছিল তাদের রাজনীতি? জিহাদ বলতেই বা কী বুঝায়। আজকের মুসলিমদের জন্য তাদের শিক্ষণীয় সূন্নত বা দিক-নির্দশনা বা কী? রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, যুদ্ধবিগ্রহে ঈমানদারের এজেন্ডাই বা কী? মানব জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো এগুলো। বাঁচতে হলে কী ভাবে বাঁচতে হয় –সেটিও জানতে হয়। তবে এটি্‌ও সত্য, বিষয়গুলো একমাত্র তখনই সঠিক ভাবে জানা যায় যখন তা জানা হয় যার উদ্দেশ্যে বাঁচা সেই মহান আল্লাহতায়ালা থেকে।

মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মু’মিনের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো অনেক। তার নিজ জীবনের প্রতি মুহুর্তের বাঁচাটিই তো মহান আল্লাহতায়ালার রহমতের উপর বাঁচা। কিন্তু ঈমানদার থেকে মহান আল্লাহতায়ালার চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলোও অনেক। ঈমানদারগণ নিজেদের পরিচয় নিয়ে যাই ভাবুক না কেন, মহান আল্লাহতায়ালার কাছেও মু’মিনদের নিজস্ব একটি পরিচয় রয়েছে। তাদের জীবনের কর্মসূচী বা এজেন্ডা নিয়েও মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব প্রত্যাশা রয়েছে। কি তাদের পরিচয়? মহান আল্লাহতায়ালার প্রত্যাশাই বা কি? মানব জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এগুলো। এখানে ভূল হলে এ জীবনের বাঁচাটিই ভূল হয়। মু’মিনকে প্রতি মুহুর্তে বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ার দেয়া পরিচয় ও প্রত্যাশার সাথে নিজের কর্ম ও চরিত্রকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মিলিয়ে। রেলগাড়িকে যেমন পাতা রেলের উপর দিয়ে চলতে হয়, তেমনি মু’মিনকে চলতে হয় সে প্রত্যাশার সাথে পূর্ণ সঙ্গতি রেখে। সঙ্গতিপূর্ণ হলো সিরাতুল মুস্তাকীম। পবিত্র কোর’আনে বিশাল অংশ জুড়ে মু’মিনদের সে পরিচয় ও তাদের থেকে প্রত্যাশীত সে কর্মগুলোকে তুলে ধরেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। পবিত্র কোর’আনে মু’মিনের সে পরিচয়ের সংক্ষিপ্ত সারাংশ এসেছে এভাবে, “তারা তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকুকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজের নির্মূলকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; (হে নবী) এই মু’মিনদেরকে তুমি শুভ সংবাদ দাও।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ১১২)।

মু’মিনের জীবনের কর্মসূচী তাই স্রেফ ইবাদত, রুকু-সিজদা, তাসবিহ পাঠ, রোযা পালন বা তাওবা পাঠে শেষ হয় না। তাকে সৎকাজের নির্দেশদাতা ও অসৎকাজের নির্মূলকারিও হতে হয়। আবর্জনা ও আগাছার ভিড়ে সভ্য ভাবে বাঁচা যায় না। বস্তুত আবর্জনা ও আগাছা সরানোর মাঝেই ধরা পড়ে ব্যক্তির বিবেকবোধ, ভদ্রতা ও সভ্যতার মান। ইসলামের মূল মিশনটি মসজিদ গড়া নয়, বরং সেটি হলো উচ্চতর সভ্যতার নির্মাণ। সে সভ্যতার ভিত্তি হবে শরিয়তী আইন। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে ঈমানদারদের উপর ফরজ তথা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে “আ’মিরু বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার” (অর্থ: ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল)’এর মিশন। সে মিশন নিয়ে বাঁচা তো তখনই সম্ভব হয় যখন সত্য-মিথ্য, ন্যায়-অন্যায়, সিদ্ধ-অসিদ্ধ ও হালাল­-হারামের যে সীমারেখা শরিয়তে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেগুলোর প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়। এখানেই বাঙালী মুসলিমদের ভয়ানক ব্যর্থতা। বাংলাদেশে রুকু-সিজদাকারীর সংখ্যা বিপুল। রোযাপালনকারী ও তাসবিহ পাঠকারীর সংখ্যাও কোটি কোটি। বিশ লাখের বেশী হাজির হয় তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমায়। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার বাঁকি প্রত্যাশাগুলো পূরণে তাদের ভূমিকা কই? সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজের নির্মূলকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত ন্যায়-অন্যায়ের সীমারেখার সংরক্ষণকারী রূপে তাদের জীবনে লড়াইটি কোথায়? সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্বৃত্তদের অধিকৃতি বিলুপ্ত হয়, জন-জীবনে শান্তি আসে এবং ইসলামী বিজয়ী হয় তো এ দায়িত্বগুলো পালিত হলে।

ঈমানদারের দায়িত্ব হলো পূর্ণ ইসলাম নিয়ে বাঁচা। মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের কাছে আত্মসমর্পণটি পূর্ণ হতে হয়। হাজার মাইলের পথে আধা মাইল বাঁকি থাকলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় না; পুরা পথটি চলতে হয়। তেমনি আংশিক মুসলিম বলে ইসলামে কিছু নাই। পবিত্র কোর’আনে সে হুশিয়ারীটি এসেছে এ ভাষায়: “উদখুলু ফিস সিলমি কা’আফফা।” অর্থ: “পূর্ণ ভাবে প্রবেশ করো ইসলামের মধ্যে।” আর ইসলামে পূর্ণ ভাবে প্রবেশের জন্য  জানতে হয় পরিপূর্ণ ইসলামের পরিচয়। পূর্ণ  ইসলাম বলতে স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ তাহলিল বুঝায় না; বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয রয়েছে এগুলোর বাইরে। প্রশাসন, বিচার-আচার, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, পরিবার পালন, বিবাহিত জীবন, সম্পদ বন্টন, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি সর্ববিষয়ে রয়েছে ইসলামের বিধান। এজন্যই ইসলামকে বলা হয় পরিপূর্ণ জীবন-বিধান। কোন একটি বিধানকে অমান্য করলে অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহতায়ালার। সে অবাধ্যতা ব্যক্তিকে কাফেরে পরিণত করে। ইবলিস মাত্র একটি হুকুম অমান্য করায় অভিশপ্ত শয়তান হতে হয়েছে। তাই ঈমানদার হওয়ার শর্ত হলো, জীবনের যে অঙ্গণেই মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ –সেগুলোর পালনে আপোষহীন হওয়া। ফলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং রাষ্ট্রের বুকে তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা দেয়াও মু’মিনের দায়িত্বের মধ্যে এসে যায়। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ তো সেটিই করেছিলেন।

সুরা মুদাচ্ছিরে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “ওয়া লি রাব্বিকা ফাকাব্বের।” অর্থ: “এবং মহামান্বিত করো (সকল কিছুর উপর) তোমার প্রতিপালককে।” ঈমানদার তাই কোন নেতা, দল, গোত্র বা জাতির মাহত্ব বাড়াতে নিজের জান, মাল, মেধা বা সামর্থ্যে বিনিয়োগ করে না; বরং সে বিনিয়োগটি হয় তাঁর মহাপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালার নামকে বড় ও সর্বময় করতে। তাই তার মুখে আল্লাহু আকবর ধ্বনিত হয়; জয় বাংলা, জয় হিন্দ ও অনুরূপ স্লোগান নয়। মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে এরূপ বিনিয়োগটি প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ। মুসলিমের প্রতি মুহুর্তের বাঁচাটি তো এ মিশন নিয়ে বাঁচা। তাই চরম গাদ্দারী হলো, তাঁর শরিয়তী বিধানকে দেশের আদালত থেকে হটিয়ে কাফেরদের তৈরী আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। গাদ্দারী হলো, ইসলামী রাষ্ট্রের পরিবর্তে সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেয়া। অথচ সেরূপ গাদ্দারীই মুসলিম দেশগুলোর রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এদের অনেকে নামায-রোযা এবং হজ্ব-যাকাতও পালন করে। নির্ধারিত আট ঘন্টার চাকুরীতে যে ব্যক্তি মাত্র এক ঘন্টা ব্যয় করে -তার চাকুরি কি থাকে? তেমনি স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালনে সর্ব মুহুর্তের ইবাদতের ফরয আদায় হয় না। যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত দায়ভারই ভূলে যায় এবং বাঁচে স্রেফ নিজ স্বার্থ, নিজ পরিবার, নিজ দল, নিজ দেশ ও নিজ নেতাকে মহামান্বিত করতে –সে কি মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার হওয়ার অধিকার রাখে? সে তো চিত্রিত হয় অবাধ্য ও বিদ্রোহী রূপে। এমন বিদ্রোহীদের জীবনে শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও কি জুটবে রহমত? জুটবে কি নবীজী (সাঃ)’র শাফায়াত?

 

ইসলামের জিহাদ প্রকল্প

“জিহাদ” শব্দটি কোন ব্যক্তির আবিস্কৃত পরিভাষা নয়। এটি কোন ধর্মীয় দল বা রাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রকল্পও নয়। বরং জিহাদ শব্দটি বার বার এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত পবিত্র কোর’আনে। এসেছে বিশেষ একটি রাজনৈতিক, মানবিক ও উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। ব্যক্তির চেতনা ও চরিত্রের পরিশুদ্ধিতে যেমন রয়েছে তাসবিহ-তাহলিল, নামায-রোযা, হজ-যাকাতের ন্যায় বিধান, তেমনি সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী জুড়ে পরিশুদ্ধি আনতেও রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব প্রকল্প। পবিত্র কোরআনে বর্নিত সে প্রকল্পটি হলো জিহাদ। রাষ্ট্রকে সভ্যতর ও শান্তিময় করার লক্ষ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজটি মশা-মাছি, হিংস্র পশু ও আবর্জনা নির্মূল নয়, বরং সেটি হলো দুর্বৃত্ত নির্মূল। মশা-মাছি, হিংস্র পশু ও আবর্জনা নির্মূলে যু্দ্ধ লাগে না। কিন্তু বিপুল অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের কোরবানী হয় দুর্বৃত্ত নির্মূলে। এবং এ যুদ্ধটি বিশেষ কোন মৌসুমের নয়, বরং সেটি প্রতি দিন ও প্রতি মুহুর্তের। এবং এটিই হলো ইসলামের জিহাদ প্রকল্প। যে সমাজে জিহাদ নাই, সে সমাজে উচ্চতর সভ্যতা নির্মিত হয় না; বরং আসে পাপাচারের প্লাবন।

তাছাড়া চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী বা খুনিকে ধরা কি এতই সহজ? এদের ধরতে বহু পথ দৌড়াতে হয়, রক্তাত্ব লড়াইয়ের ঝুঁকিও নিতে হয়। আর সমগ্র রাষ্ট্র থেকে চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও ইসলামের বহুরূপী শত্রুদের নির্মূলের কাজটি তো বিশাল। কোন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কি বিনাযুদ্ধে ময়দান ছাড়ে? অবিরাম লড়াই তো এজন্য অনিবার্য। অর্থ ও রক্তক্ষয়ী এ মহান কাজটি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে গণ্য হয় জিহাদ রূপে। এমন অবিরাম জিহাদ প্রতি দেশে হাজার হাজার সার্বক্ষণিক মোজাহিদ চায়। কিন্তু কে রিক্রুট করবে এ বিপুল সংখ্যক মোজাহিদ? কে দিবে তাদের বেতন? কোথা থেকে আসবে তাদের জন্য যানবাহন, রশদ ও বাসস্থান? এখানেও রয়েছে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব স্ট্রাটেজী। প্রতি রণাঙ্গনে মুজাহিদ সংগ্রহ, রশদ ও অর্থ সংগ্রহ এবং খাদ্য ও যানবাহন সংগ্রহের সে দায়িত্বটি নিয়েছ্নে খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। মহান আল্লাহতায়ালার সে জিহাদ প্রকল্পে মোজাহিদদের জন্য কোন বেতন নেই। তাদের জন্য খাদ্য-পানীয় বা বাড়ি-গাড়ির ব্যবস্থাও নেই। মহান আল্লাহতায়ালার বিধান হলো, এ পবিত্র জিহাদে মোজাহিদগণ শুধু নিজ দেহ নিয়ে রণাঙ্গনে হাজির হবে না। বরং হাজির হবে নিজ অর্থ, নিজ খাদ্য ও নিজ বাহন সাথে নিয়ে। কারণ, তিনি শুধু জানের কোরবানী চান না, চান মালের কোরবানীও। এটিই মহান আল্লাহর নির্দেশ। এটিই হলো নবীজী (সাঃ)’র সূন্নত। মহান আল্লাহতায়ালার সে বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম নিজ জীবনে প্রয়োগ করে গেছেন। নিজের উঠ, নিজের ঘোড়া, নিজের হাতিয়ার ও নিজের ঘরে তৈরী খাদ্য নিয়ে তারা রণাঙ্গণে হাজির হয়েছেন। তাদের বিনিয়োগের বহুগুণ বদলা দেয়া হবে আখেরাতে। প্রতিদানে পরকালে তারা পাবেন অনন্ত-অসীম কালের জন্য নিয়ামত ভরা জান্নাত। ঈমানদার সে প্রতিদানটি পাবে মহান আল্লাহতায়ালার কৃত পবিত্র চুক্তির বিনিময়ে -যারা উল্লেখ এসেছে পবিত্র কোরআনে। কোরআন নাযিলের পূর্বে সে চুক্তির কথা তাওরাত ও ইঞ্জিলেও বলেছেন। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সে চুক্তির ঘোষণাটি এসেছে এভাবে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। (শর্ত মোতাবেক) তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, তারা নিধন করে (ইসলামের শত্রুদের) এবং নিজেরাও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে এ বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর প্রতিশ্রুতি পালনে আল্লাহ অপেক্ষা আর কে বেশী সাচ্চা? অতএব আল্লাহর সাথে তোমরা যে চুক্তি করেছো তার জন্য আনন্দিত হও। ইহাই তো মহা সাফল্য।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ১১১)।

তাই যে রাষ্ট্রে প্রকৃত ঈমানদারের বসবাস, সে সমাজে অসংখ্য মোজাহিদ গড়ে উঠবে -সেটিই তো কাঙ্খিত। সে মোজাহিদদের জীবনে প্রবল ও অবিরাম জিহাদও থাকে। সে জিহাদে অর্থ, শ্রম, সময়, মেধা ও রক্তের বিপুল বিনিয়োগও থাকে। এটিই তো নবীজী (সাঃ)’র যুগের ইসলাম। নবীজী (সাঃ)’র যুগে এমন কোন সাহাবা ছিলেন কি যার জীবনে জিহাদ ছিল না? আশার কথা, দেরীতে হলেও নবীজী (সাঃ)র যুগের সে ইসলাম মুসলিম জীবনে আবার ফিরে আসছে। ঔপনিবেশিক ও স্বৈরাচারি শাসকগণ তাদের শাসনামলে ইসলামের ইতিহাস ও কোর’আনের শিক্ষা থেকে মুসলিমদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোর’আন তো এখনও অবিকল বেঁচে আছে। ফলে যতই বাড়ছে কোর’আনের সাথে সংযোগ, ততই বাড়ছে নবীজী (সাঃ)’র ইসলামে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ। এরই প্রমাণ, জিহাদ শুরু হয়েছে বিশ্বের নানা প্রাপ্তে। সে সব জিহাদে যোগ দিচ্ছে হাজার হাজার মোজাহিদ। ইসলামের শত্রু মহলে আজ যে রূপ ইসলামভীতি -তার মূলে তো নবীজী (সা:)’র ইসলাম।  

মহান আল্লাহতায়ালার রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি নিয়ে যারা অজ্ঞ -তারা ভাবতেই পারে না জিহাদে এত বিপুল সংখ্যক মুজাহিদ আসে কীরূপে? ইসলামের শক্তি কোথায় –তারা এরা জানে না। এরাই এককালে আফগান মুজাহিদদের মার্কিনীদের সৃষ্ট বলেছে। অথচ হাজার হাজার আরব, চেচেন, পাকিস্তানী, বাংলাদেশী প্রাণদানের প্রস্তুতি নিয়ে যোগ দিয়েছে আফগানিস্তানের জিহাদে। হাজির হয়েছে নিজ খরচে। এরূপ অজ্ঞরাই সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামের পক্ষের সৈনিকদেরকে ইসরাইল ও মার্কিনীদের সৃষ্ট বলে প্রচার চালায়। তাদের ধারণা, বিদেশীদের উস্কানি ও অর্থ ছাড়া কেউ যুদ্ধে নামে না। প্রাণও দেয় না। অথচ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত রাষ্ট্রে জিহাদ না থাকায় প্রকাশ পায় এক নিদারুন ব্যর্থতা। এর অর্থ: সে রাষ্ট্রে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সুরা তাওবার ১১১ আয়াত মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ ঈমানদার নাই। ফলে শত্রুর হামলার মুখে জিহাদও নেই। এমন রাষ্ট্র সহজেই অধিকৃত হয়ে যায় ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। একই রূপ অবস্থা অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে। সে অধিকৃতির কারণেই মুসলিম ভূমিতে শরিয়তি বিধান আজ পরাজিত। সাহাবায়ে কেরামের আমলে মুসলিমদের সংখ্যা অতি নগন্য ছিল। কিন্তু সেদিন ইসলামের এরূপ পরাজিত অবস্থার কথা কি ভাবা যেত? মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আজ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত। প্রশ্ন হলো এরূপ অধিকৃত অবস্থায় জিহাদ কি আর ফরযে কেফায়া থাকে? তখন তো সেটি ফরযে আইনে পরিণত হয়।          

 

শত্রু শিবিরের এজেন্ডা ও যুদ্ধ

রাজনীতির অঙ্গণে প্রতিটি পক্ষেরই যুদ্ধ থাকে। বাংলাদেশে যারা ইসলামের শত্রু পক্ষ, তাদের জীবনেও যুদ্ধ আছে। বস্তুত দেশটির উপর তাদেরই দখলদারী। তাদের এজেন্ডা দ্বিমুখী: নিজেদের নিরেট স্বৈরাচারকে বাঁচিয়ে রাখা এবং ইসলামের বিজয়রোধ। সে এজেন্ডা পূরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দখলে নিয়েছে দেশের সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠান। অন্যদের –বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের তারা মাঠেই নামতে দিচ্ছে না। রাজনীতির ময়দানে খেলছে একটি মাত্র দল; এবং সেটি সরকারি দল। প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশের প্রধান, সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, আদালতের বিচারক, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ও সরকারি মিডিয়াকর্মী রূপে যারা ময়দানে -তাদের সবাই স্বৈরাচারি শাসকের আজ্ঞাবহ। শেখ হাসিনার দলীয় ক্যাডারগণ যেমন রাজপথে লগিবৈঠা নিয়ে বিরোধী দলের কর্মীদের খুন করে, একই উদ্দেশ্যে  আদালতের বিচারকগণও ফাঁসির রায় শোনায়। সে অভিন্ন লক্ষ্যে পুলিশ এবং RAB’এর সেপাহীগণও সরকার-বিরোধীদের উপর গুলি চালায়।

কোন টিমের খেলোয়াড় কি নিজ দলের গোলপোষ্টে গোল দেয়? এমন আত্মঘাতি খেলোয়াড় কি কোন দলে স্থান পায়? একারণেই সরকারি পুলিশ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অপরাধের তদন্ত করে না। তাদের বিচার করে না আদালতের বিচারকগণও। কারণ, এরা সবাই একই দলের। অপরদিকে সরকার-বিরোধীদের ক্রস ফায়ারে দিয়ে হত্যা করছে RAB’য়ের সেপাহীরা। বিচার শুরুর বহু বছর পূর্ব থেকেই বন্দী করে হাজতে রাখা হচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। তাদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরীর কারখানা বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বদলে পুলিশ ব্যবহৃত হচ্ছে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনে। পুলিশ, RAB ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণও সে অভিন্ন পলিসি নিয়েই মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতে মেশিন গান দিয়ে গুলি চালিয়েছিল ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে। ইসলামপন্থিদের লাশ করা হচ্ছে আদালতের রায়েও। এসবই হচ্ছে একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে। লক্ষ্য এখানে  প্রতিপক্ষ নির্মূল। তেমন একটি  রাজনৈতিক লক্ষ্যে রাজস্বের অর্থে প্রতিপালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারিদেরকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করা হয়েছে। দলে এমন আজ্ঞাবহ খুনি থাকায় হিটলারের ন্যায় গণহত্যার নিষ্ঠুর নায়কদেরও নিজ হাতে মানুষ খুন করতে হয়নি। শেখ মুজিবকেও করতে হয়নি। শেখ হাসিনাকেও করতে হয় না। রাজনৈতিক শত্রুহত্যার সে কাজটি সুচারু ভাবে করার জন্য দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি রয়েছে পুলিশ বিভাগ, RAB, আদালত বাহিনী ও সেনা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক অনুগত লোকবল। সরকার পরিণত হয়েছে এক মাফিয়া গ্যাঙ্গের সরকারে।

 

অধিকৃত দেশ: বাঁচবে কি আত্মসমর্পণ নিয়ে?

মুসলমান পৃথক মানচিত্র বা পতাকার জন্য যুদ্ধ করে না। কোন ব্যক্তি বা দলের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেয়ার লক্ষ্যেও নয়। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালার একমাত্র আগ্রহ তাঁর দ্বীনের বিজয় নিয়ে; কোন ভাষা, বর্ণ বা ভূগোলভিত্তিক রাজনীতির বিজয় নিয়ে নয়। আর যে বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার আগ্রহ নেই তা নিয়ে ঈমানদারগণ যুদ্ধ করে কি করে? ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধকেই জিহাদ হতে হয়। যে যুদ্ধ জিহাদ নয়, সে যুদ্ধে কি কোন ঈমানদার যোগ দেয়? জান, মাল, মেধা ও দৈহীক বল তো মহান আল্লাহর আমানত। সেগুলো মহান আল্লাহর পথ ছাড়া অন্য কোন পথে ব্যয় করাটি খেয়ানত। এ খেয়ানতের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। একারণেই জাতীয়তাবাদী বা সেক্যুলারিস্ট যুদ্ধে অর্থদান, প্রাণদান ও শ্রমদানে কোন ঈমানদারের সামান্যতম আগ্রহ থাকতে পারে না। সেটি শতভাগ হারাম। এজন্যই একাত্তরে কোন ইসলামপন্থি দল, কোন আলেম, মসজিদের কোন ইমাম এবং মাদ্রাসার কোন ছাত্র ভারতে যায়নি, ভারতের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধও করেনি। সেটি ছিল আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থি মোজাফ্ফর ন্যাপ, চীনপন্থি ভাষানী ন্যাপ ও কম্যুনিষ্টপার্টির ন্যায় ইসলামবিরোধী দলগুলোর পাকিস্তান ভাঙ্গার যুদ্ধ। এবং তাদের পক্ষে যুদ্ধ জয় করে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের ইতিহাসে মিথ্যাচার প্রচুর। তবে বড় মিথ্যাচারটি হলো আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থি ন্যাপ, চীনপন্থি ন্যাপ ও কম্যুনিষ্টপার্টির যুদ্ধকে সকল বাঙালী মুসলিমের মুক্তিযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া। পাকিস্তান ভাঙ্গা যদি এতই জনপ্রিয় হতো তবে শেখ মুজিব একাত্তরের ৭ই মার্চ এবং সত্তরের নির্বাচনি জনসভাগুলোতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনি তুলতো না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতাহারে আওয়ামী লীগ অখন্ড পাকিস্তানের সুরক্ষায় অঙ্গিকারের ঘোষণা দিত না।  

যে কোন ঈমানদারের ন্যায় বাঙালী মুসলিমদের দায়ভারটিও বিশাল। জনসংখ্যায় আরব, ইন্দোনেশীয়ান ও পাকিস্তানীদের পরই তাদের অবস্থান। দায়ভারটি শুধু বিপুল সংখ্যায়ে বেড়ে উঠা নয়, বরং ঈমান ও ঈমানসমৃদ্ধ আমল নিয়ে বেড়ে উঠায়। যেখানে আগুন থাকে, সেখানে উত্তাপও থাকে। তেমনি যে প্রাণে ঈমান থাকে, সে প্রাণে আল্লাহতায়ালার প্রতি তীব্র দায়বদ্ধতাও থাকে। সে দায়বদ্ধতার কারণে মু’মিনের জীবনে লাগাতর জিহাদও থাকে। ঈমানদারদের দেশে এ কারণেরই ইসলামের বিজয় আসে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের তো সেটিই ইতিহাস। কিন্তু এক্ষেত্রে বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। তারা ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের পথ অনুসরণ করতে। বরং মাথায় তুলেছে ইসলামের শত্রুদের –যাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ইসলামকে পরাজিত রাখা।

স্রেফ শিল্প-উন্নয়ন, কৃষি-উন্নয়ন, পোষাক ও চিংড়ি রপ্তানী এবং দেশে-বিদেশে চাকুরি-বাকুরিতে জীবন কাটানোর মাঝে প্রকৃত কল্যাণ নেই। মূল কাজ তো মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে দায়ত্বপালন। মু’মিন ব্যক্তি বাঁচে ও প্রাণ দেয় তো সে দায়ভার নিয়ে। সেটিই তো জান্নাতের পথ। মহান আল্লাহতায়ালা তো মু’মিনের এমন আত্মত্যাগেই খুশি হন। দেশে কতটা দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ বা কলকারখানা নির্মিত হলো -রোজ হাশরের বিচার দিনে সে হিসাব চাওয়া হবে না। বরং চাওয়া হবে সে দেশে বসবাস সে দেশে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী নিযাম প্রতিষ্ঠায় তাদের নিয়ত, প্রচেষ্টা ও কোরবানি কতটুকু? পৃথিবী পৃষ্ঠে এ কাজের জন্যই সে আল্লাহর খলিফা। এমন রাষ্ট্র নির্মাণই তো মানব ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম।

তাই বাঙালী মুসলিমদের মূল লড়াইটি গণতন্ত্র বাঁচানোর নয়। এ যুদ্ধ নিছক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও নয়। এ যুদ্ধ শুধু ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে স্বাধীনতা বাঁচানোরও নয়। বরং এ লড়াই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। মু’মিনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো এটি। এ জিহাদে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ঈমানদার মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে চুক্তিবদ্ধ –যে চুক্তির কথা সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সে চুক্তি পালনে অবহেলা জাহান্নামের রাস্তাই খুলে দিবে।

দ্বীনকে বিজয়ী করার এ জিহাদে অংশ না নেয়ার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এমন বিশ্বাসঘাতকের ধর্মীয় বিশ্বাস ও তার ধর্মকর্মের কি কোন মূল্য থাকে? এ এরূপ গাদ্দারেরা পরকালে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুখ দেখাবে কি করে? জবাবদেহীতার ভয় এবং মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার চেতনা নানা দেশে আজ  তীব্রতর হচ্ছে। জেগে উঠছে মুসলিমগণ। কিন্তু বাঙালী মুসলিমদের মাঝে সে জাগরণ আসবে কবে? তারা কি বাঁচবে দেশের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে ইসলামের শত্রুদের কাছে লাগাতর আত্মসমর্পণ নিয়ে? ১ম সংস্করণ ১২/১১/২০১৪; ২য় সংস্করণ ০১/০২/২০২১।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *