আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ: অভাব যেখানে শিক্ষা ও দর্শনের
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 15, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
চলছে আত্মঘাত
বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে বিতর্ক নেই। শয্যাশায়ী রোগীর গায়ে যখন পচন ধরে এবং সে পচন যখন দুর্গন্ধ ছড়ায় – সে রোগ তখন শুধু ঘরের লোকই নয়, প্রতিবেশীও টের পায়। বাংলাদেশের বেলায় সেটিই ঘটেছে। দেশটির পচন মূলতঃ নৈতিক। সে নৈতিক পচনের বড় আলামত হলো চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের প্লাবনে ভাসা বাংলাদেশ। নানা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের মডেল রূপে যেখানে আলোচিত হয় জাপান, কোরিয়া বা সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ সেখানে দূর্নীতির মডেল। দূর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের পরিচিতি আজ বিশ্বময়। সম্প্রতি (ফেব্রেয়ারী, ২০২১) প্রখ্যাত টিভি চ্যানেল আল-জাজিরা প্রামাণ্য দলিল পেশ করে, দুর্বৃত্ত প্রতিপালনে কীরূপ সচেষ্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধান। দেখায়, খুনের অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও কীরূপে দেশের কারাগার থেকে প্রেসিডেন্টের সুপারিশে বের করা হয়। দেখায়, দেশটিতে খুনির ভাই এবং একটি অপরাধী পরিবারের সদস্য কীরূপে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়। এবং সে সেনাপ্রধান কীরূপে খুনের আসামীকে দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করে। এবং আরো দেখায়, খুনের আসামীকে দেশের পুলিশ খুঁজে না পেলে কি হবে, দেশটির রাজধানীর অভিজাত মহলে প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর প্রধানের সাথে সে পলাতক অপরাধী বিয়ের আসরে ফুর্তি করে। অতিশয় বিশাল হয়েও ডায়নোসর যেমন বিশ্ব থেকে হারিয়ে গিয়ে ইতিহাস গড়েছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠি তেমনি ইতিহাস গড়েছে নীতি-নৈতিকতার অঙ্গণ থেকে দ্রুত নীচে নেমে। দেশটি সবচেয়ে তলায় নেমেছে এ শতাব্দীর শুরুতে দূর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এতো ব্যর্থতা? অনেকেই ভাবেন এ ব্যর্থতার মূল কারণ বিশাল জনসংখ্যা। বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও বুদ্ধিবৃত্তি মূলত এ মতের ধারকদের দখলে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যসব উন্নয়ন পরিকল্পনার চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় জন্মনিয়ন্ত্রণকে। তাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প বা কৃষির গুরুত্ব বুঝাতে ঘরে ঘরে কোন সরকারি কর্মচারির পদধুলি না পড়লেও কনডম বা জননিয়ন্ত্রন বড়ি হাতে প্রতিমাসে কেউ না কেউ পৌঁছবেই। বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে স্বচ্ছল বিভাগ হলো এটি। বিদেশী ঋণদাতাদেরও সর্বাধিক নজর এ বিভাগটির উপর। বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ অবধি যত বিদেশী অর্থ এ বিভাগটি পেয়েছে তা আর কোন বিভাগ পায়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতো বিনিয়োগ ও এতো মেহনতের পরও দেশ কি সামনে এগিয়েছে? প্রশ্ন হলো, জনসংখ্যাবৃদ্ধিকে সমস্যা মনে করা কি ইসলামে জায়েজ? এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ মুসলিমের ঈমান শুধু হালাল পানাহারে বাঁচে না, ধ্যান-ধারণা ও দর্শনকেও এজন্য হালাল হতে হয়। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্নটি নিছক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমাজনীতির বিষয় নয়, এটি অতি আক্বিদাগত বিষয়ও। এর সাথে জড়িত মুসলিম থাকা না থাকার প্রশ্ন। কারণ হারাম তথা অসিদ্ধ আক্বিদা নিয়ে তো মুসলিম হওয়া যায় না।
মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তথা আশরাফুল মাখলুকাত হলো মানুষ; সোনা-রূপা, তেল-গ্যাস বা কোন জীবজন্তু নয়। মানুষ শুধু শ্রেষ্ঠ-সৃষ্টিই নয়, বরং এ পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফাও। আল্লাহর এ খলিফার মর্যাদা ফেরেশতার চেয়েও উর্দ্ধে। তাই প্রতিটি ঈমানদারকে নামায-রোযার ন্যায় এ বিশ্বাসটিকে হৃদয়ে ধারণ করে বাঁচতে হয়। এ বিশ্বাস না থাকলে মুসলিম হওয়া যায় না। নইলে সে শয়তানের খলিফায় পরিণত হয়। তাছাড়া কোন শিল্পির শ্রেষ্ঠ শিল্পকে তুচ্ছ বলার অর্থ সে শিল্পিকে অবমাননা করা। তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে আপদ বললে অবমাননা হয় মহান আল্লাহতায়ালার। তাতে হেয় করা হয় তার মহান কুদরত ও হিকমতকে। নামায পড়ে বা রোযা রেখে কি সে অবমাননার গোনাহ থেকে মুক্তি মেলে? তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির প্রতি এমন অবজ্ঞা নিয়ে কি কোন মুসলিম আল্লাহতায়ালার রহমত পেতে পারে? এমন কদর্য চিন্তা বিবেকের পচনেই সম্ভব, সুস্থ্যতায় নয়। এবং সে পচনে বাংলাদেশী মুসলিমগণ যে বহুদূর এগিয়েছে সে প্রমাণই কি কম? এ পচনের কারণে সূদ-ঘুষ-দূর্নীতির ন্যায় হারাম কর্ম বাংলাদেশে আচারে পরিণত হয়েছে। পাপকে বৈধতা দিয়ে পতিতাপল্লি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সে পাপের আইনগণ বৈধতাও দেয়া হয়েছে।
সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে কি হবে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয় ব্যভিচারের ন্যায় পাপাচারের পাহারাদারীতে। ফলে ব্যভিচার, ধর্ষণ, গণধর্ষন উপচে পড়েছে জনপদে। পকেটমার গণপিটুতি মারা পড়লে কি হবে, পাপের ব্যবাসায়ী ব্যভিচারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাই। গবাদি পশুকে আপদ ভাবা হয় না; বরং সবাই গবাদী পশুর বংশ-বিস্তার চায়। কিন্তু সে মর্যাদা মানুষের নেই। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে জন্মানোর আগেই। গর্ভপাতের নামে দেশজুড়ে চলছে নীরব গণহত্যা। দেশী-বিদেশী অর্থে অসংখ্য এনজিও কর্মী একাজে নৃশংস খুনীর বেশে নেমেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার অমুসলিম দেশেগুলিতেও গর্ভপাতের নামে এরূপ মানবহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। আন্দোলনও হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি নেই। সরকার, জনগণ, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব জেনেও না জানার ভান করে। বরং জনসংখ্যা এভাবে কমানোতে অনেকেই খুশি। সরকার বিশ্বময় এটিকে তাদের সফলতা বলে প্রচার করছে। ফলে জন্ম নিচ্ছে না মায়ের পেটে জন্ম নেওয়া শিশুদের বাঁচানোর পক্ষে আন্দোলন। এমন মৃত বিবেক ও বিকৃত চেতনার ফলে মানুষ হারিয়েছে তার নিজের মূল্যমান। শিশুহত্যার পাশাপাশি খুনীদের হাত পড়ছে এখন জীবিতদের গলায়ও। ফলে বেড়ে চলেছে হত্যা, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস। আগুণ দেওয়া হচ্ছে যাত্রীভর্তি বাসে। ধর্ষণেও উৎসব হচ্ছে। মানুষ বিবস্ত্র ও লাঞ্ছিত হচ্ছে প্রকাশ্য রাজপথে-যেমন হরতাল কালে রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে হয়েছে।
মূল কারণ জাহেলিয়াত
দারিদ্র্য তথা সম্পদের অভাবকে যারা সকল ব্যর্থতার কারণ বলেন, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তিও কি কম? তাদের কথা, অভাব থেকেই স্বভাব নষ্ট হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সবচেয়ে নষ্ট চরিত্র ও নষ্ট স্বভাব হলো তাদের যারা ধনী। দেশের অধিকাংশ ঘুষখোর, সূদখোর, মদখোর, ব্যভিচারি, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও ঋণখেলাফী এসেছে তাদের মধ্য থেকে। অথচ তাদের পাশে বহু অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি স্বভাব-চরিত্রে অতি উত্তম দৃষ্টান্ত রাখছে। কথা হলো, দর্শন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির অঙ্গণে যারা কর্মহীন বা সৃষ্টিহীন -তারা কি সম্পদ সৃষ্টি করে? বরং আনে দারিদ্র্য। সম্পদ মানুষের সৃষ্টি এবং এ জন্য চাই সৃষ্টিশীল মানুষ। এমন মানুষ গড়ে উঠে শুধু দেহের গুণে নয়, মনের গুণে। আর এমন মানবিক গুণে বেড়ে উঠার জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা ও দর্শন। অশিক্ষা, অপসংস্কৃতি ও দূর্নীতি একটি জনগোষ্টিকে শুধু সৃষ্টিহীনই করে না, অনাসৃষ্টিপূর্ণ দুর্বৃত্ত রূপেও গড়ে তুলে। দারিদ্র্য ও দূর্ভিক্ষ এমন দেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের বেলায় সেটিই হয়েছে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের জন্ম জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতা থেকে। জনসংখ্যা থেকেও নয়; ক্ষুদ্র ভূগোল থেকেও নয়। বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ হলো সিঙ্গাপুর। আয়তন মাত্র ২৪০ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ৫৭ লাখ। আয়তনে ও লোকসংখ্যায় ঢাকা শহরের অর্ধেকের চেয়েও কম। প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের চেয়ে অধিক। অথচ দেশটির বাৎসরিক বৈদেশিক রফতানি ৩৯০.৩ বিলিয়ন ডলার (২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে)। অথচ ২০১৯ সালে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের মোটি বৈদেশিক রফতানি ছিল মাত্র ৪৬.৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সিঙ্গাপুরের তূলনায় প্রায় ৩০ গুণ। অথচ সিঙ্গাপুরের রফতানি বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৮ গুণ অধিক। সোনার খনি বা তেলের খনি নিয়ে সিঙ্গাপুর এ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেনি। বরং এ সাফল্য এনেছে দেশটির সৃষ্টিশীল মানুষ। মানুষকে তারা আপদ ভাবেনি বরং সোনার বা তেলের খনির চেয়েও মহামূল্যবান ভেবে তাদের উন্নয়নে মনযোগী হয়েছে। ফলে সিঙ্গাপুরের একজন নাগরিকের যে উৎপাদন ক্ষমতা তা বাংলাদেশের বহু হাজার মানুষের মধ্যেও সৃষ্টি হয়নি।
অভাব দর্শন বা ফিলোসফির
বাংলাদেশের অভাব মূলত দর্শন বা ফিলোসফিতে। একটি দেশের অগ্রগতি বা বিজয় শুরু হয় দর্শন থেকেই। খাদ্য যেমন দেহের শক্তি বাড়ায়, দর্শন তেমনি মনের শক্তি বাড়ায়। মানুষ সৃষ্টিশীল হয় তো মনের শক্তির কারণেই, দেহের শক্তির কারণে নয়। তাই যারা দেশ গড়তে চায় তারা মানুষের বিশ্বাসে বা দর্শনে হাত দেয়। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিস্কার হলো পারমানবিক শক্তি। সে শক্তি বলে আলোকিত হয় কিছূ শহর, চালিত হয় কিছূ কলকারখানা, জাহাজ বা সাবমেরিন। অথচ দর্শন আলোকিত করে এবং পাল্টে দেয় কোটি কোটি মানুষের মনের জগত। পাল্টে দিতে পারে বিশ্বের মানচিত্র। এক্ষেত্রে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ পেশ করেছে ইসলাম। ইসলামের আগমনে আরবের ভূগোলে বা জলবায়ুতে পরিবর্তন আসেনি। মাটির তলায় সোনার খনি বা তেলের খনিও আবিস্কৃত হয়নি। পরিবর্তন আসেনি মানুষের দৈহিক আকার-আকৃতি বা অবয়বে। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের জীবন দর্শনে। পরিবর্তন এসেছিল চিন্তার মডেলে। সে পরিবর্তনের ফলে জীবন ও জগত নিয়ে মানুষের ধ্যান-ধারণাই পাল্টে যায়। পরিবর্তন আসে তাদের কর্মে ও আচরণে। সে পরিবর্তনের পথ ধরে পাল্টে গিযেছিল মধপ্রাচ্যের ভূগোল, ভাষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি তথা সবকিছূ। দর্শনের বলেই নিঃস্ব আরবেরা বিশ্বের সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছিল।
ইসলামের পূর্বে আরবের মানুষ ভাবতো জীবনের শুরু ও শেষ ইহলোকেই, পরকাল বা বিচার দিন বলে কিছু নেই। ভাবতো, মৃত্যুর পর তাদের হাড্ডি-মাংস মাটিতে মিশে যাবে এবং ধুলায় হারিয়ে যাবে চিরতরে। ফলে তারা তাদের সকল প্রচেষ্টা ও মেধা নিয়োজিত করতো এ দুনিয়ার জীবনকে আনন্দময় করতে। বাংলাদেশে আজ যারা ঘুষ খায়, সূদ খায়, ব্যভিচারি করে বা গর্ভপাত ঘটিয়ে নিজ সন্তান হত্যা করে -তাদের মত তারাও সেদিন সন্ত্রাস করতো, মদ খেতো ও ব্যভিচারি করতো। এমনকি নিজ সন্তানদেরকেও জীবন্ত করব দিত। যে দর্শনটি আরবদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তার মূল উপাদানটি ছিল মানব জীবনের সঠিক পরিচিতি। কোথায় এ জীবনের শেষ ঠিকানা তা নিয়ে সম্যক ধারণা। তাদের চেতনায় কাজ করেছিল পরকালের ভয়। পরকালের ভয় তাদের চেতনা ও চরিত্রে আনে আমূল বিপ্লব। সে আমলে গ্রহ-নক্ষত্রের পরিচয় না জানলেও তারা নিজ জীবনের পরিচয় ও পরিণতিকে জেনেছিলেন অতি সঠিক ভাবেই। এবং সেটি জেনেছিলেন সেই মহান সত্ত্বা থেকে যিনি স্বয়ং এ জীবন ও জগতের স্রষ্টা। জেনেছিলেন তাঁর প্রেরীত মহান নবী (সা:) থেকে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের সাফল্যের মূল কারণ, মহান আল্লাহতায়ালা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান -যা তাদের মুক্তি দিয়েছিল জাহলিয়াত থেকে এবং দেখিয়েছিল আলোকিত পথ। উচ্চতর সভ্যতার নির্মাণ কি এছাড়া সম্ভব?
এ জীবন পরীক্ষাপর্ব
যে দর্শনসুলভ প্রজ্ঞা মুসলিম জীবনের মোড় পাল্টে দেয় তা হলো, ইহকালীন এ জীবনখানি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় না। পার্থিব এ জীবন অন্তহীন এক জীবনের শুরুর পর্ব মাত্র। এ পর্বে কৃতকার্যতা ও পুরস্কার যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতা এবং শাস্তিও আছে। এবং পাশ ও ফেল নির্ধারণে লাগাতর পরীক্ষাও আছে। দুনিয়ার এ জীবন মূলত সেই পরীক্ষাকেন্দ্র। সে পরীক্ষা মৃত্যু অবধি নেওয়াটিই হলো -এ ইহকালীন জীবনের মূল লক্ষ্য। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরীক্ষার সমাপ্তি হয় বটে, তবে তাতে জীবনের সমাপ্তি ঘটে না। পরকালে শুরু হয় পরীক্ষায় পাশ বা ফেলের ফলাফল ভোগের পালা। মহান আল্লাহতায়ালার সে ঘোষনাটি এসেছে এভাবে: “আল্লাযী খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা লি ইয়াবলুয়াকুম আইয়োকুম আহসানা আমালা” -(সুরা মুলক, আয়াত-১)।” অর্থ: “তিনি মৃত্যু ও জীবনকে এ জন্য সৃষ্টি করেছেন যে তিনি পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে কে আমলের দিক দিয়ে উত্তম।” বস্তুত মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠটি হলো পবিত্র কোর’আনের ঘোষিত এ হুশিয়ারি। এবং সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা হলো, জীবনের প্রতি মুহুর্ত এ বোধ নিয়ে বাঁচা। এ বোধটুকু হৃদয়ে স্থান না পেলে জীবনে ব্যক্তির সকল জ্ঞানগরিমা, মেধা ও জানমালের বিনিয়োগ ব্যর্থ হতে বাধ্য। পরীক্ষার হলকে তখন নাট্যশালা, পানশালা বা কর্মশালা মনে হয়। মানুষ তখন মত্ত হয় ফূর্তিতে। কর্মজীবী, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী বা পেশাদার রূপে জীবনে সফল হওয়াটাই জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়। উপার্জন, আনন্দ-উৎসব বা নিছক সময় কাটানোই তখন বাঁচবার মূল উদ্দেশ্য মনে হয়। এমন আত্মমগ্নতায় জানাই হয় না যে, এ জীবন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র মাত্র। এবং অন্তহীন এক জীবন অপেক্ষা করছে পরীক্ষার পর। তখন গভীর অজ্ঞতা থেকে যায়, কিসে সফলতা এবং কিসে বিফলতা -সে বিষয়েও। এ পৃথিবী পৃষ্টে লক্ষাধিক নবী-রাসূল আগমনের মূল কারণটি মানুষকে কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শেখানো ছিল না; বরং সেটি ছিল এ জীবনে যে পরম সত্যটি সবচেয়ে বড় কল্যাণটি দেয় -সে সত্যটি শেখাতে। তাদের কাজ ছিল জান্নাতের পথ দেখানো। মানুষ জাহান্নামের আগুণে যাবে কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান বা বাণিজ্যে ব্যর্থতার কারণে নয়, বরং সে পরম সত্যটিকে না জানার কারণে। সে সত্যকে জানাতে নাযিল হয়েছিল অন্যান্য আসমানি কিতাব।
পরীক্ষা চলাকালে কেউ নাচগান, আমোদ-ফুর্তি করে না। অলস অবকাশে অনর্থক সময়ও কাটায় না। বরং পাায়খানা প্রশ্রাবের ন্যায় জরুরী কাজ আটকিয়ে রেখে পুরা সময়কে পরীক্ষার কাজে লাগায়। এ ভয়ে না জানি প্রশ্নপত্র অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তখন প্রতি মুহুর্তের চেষ্টাটি হয়, পরীক্ষার খাতায় কি করে নাম্বার বাড়ানো যায়। সাহাবায়ে কেরাম এ জীবনকে পরীক্ষাপর্ব রূপে গ্রহন করেছিলেন বলেই তারা দিবারাত্র নেক আমলে ব্যস্ত থাকতেন। নেক আমলে তাড়াহুড়া ছিল তাদের সর্ব-অস্তিত্ব জুড়ে। পবিত্র কোরআনেও সেটিরই তাগিদ এসেছে এভাবে, “সা’রিয়ু ইলা মাগফিরাতিম মির রাব্বিকুম” -(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩৩)। অর্থ: “তাড়াহুড়া কর তোমাদের রব থেকে মাগফিরাত লাভে।” সুরা হাদিদে বলা হয়েছে, “সা’বেকু ইলা মাগফিরাতিম মির রাব্বিকুম” অর্থ: “তোমরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো তোমাদের রব থেকে মাগফিরাত লাভে।” তাড়াহুড়া এজন্য যে, পরীক্ষার শেষ ঘন্টা যখন তখন বীনা নোটিশে বেজে উঠতে পারে। তাই সন্যাসী সেজে সমাজ-সংসার, অর্থনীতি-রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, দাওয়াত ও জিহাদের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ ইসলামে নেই। পরীক্ষায় পাশে এমন কি খোদ নবীজী (সা:)কেও নামতে হয়েছে; তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। বার বার জিহাদের ময়দানেও তাঁকে হাজির হতে হয়েছে। এমনকি রণাঙ্গণে নিজে আহতও হয়েছেন। নবীজী (সা:)’র সে সূন্নত মেনে সাহাবায়ে কেরাম যেমন অবিরাম দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তেমনি রাজনীতি ও প্রশাসনেও নেমেছেন। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশী জিহাদেও নেমেছেন। তারা কর্মময় ছিলেন জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে। রাতে না ঘুমিয়ে অভাবী মানুষ খুঁজেছেন। খলিফা হয়েও পিঠে আটার বস্তা নিয়ে গরীবের ঘরে ছুটেছেন। উটের পিঠে চাকরকে বসিয়ে নিজে রশি টেনেছেন। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, মরুভূমি ও সাগর অতিক্রম করেছেন। যখন কাগজ-কলম আবিস্কৃত হয়নি তখনও তারা জ্ঞানচর্চায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
প্রতিটি সৃজনশীল কর্মই ইবাদত
ঈমানদারের কল্যাণধর্মী প্রতিটি কর্মই হলো ইবাদত। এগুলো হলো নেক আমল। এতে সঞ্চয় বাড়ে আখেরাতের এ্যাকাউন্টে। প্রতিটি মুসলিম এভাবেই পরিনত হয় সৃষ্টিশীল কর্মের শক্তিশালী পাওয়ার হাউসে। মানুষ শুধু বই পড়ে শেখে না, শেখে কর্ম থেকেও। সে যেমন নিজে শেখে, তেমনি অন্যকেও শেখায়। কাজ করা, শেখা ও শেখনো যখন জনগণের সংস্কৃতিতে পরিণত হয় -তখন লাগাতর মূল্য সংযোজন হয় জনগণের জীবনে। মূল্য সংযোজন হয়, নানারূপ কৃষি ও খনিজ পণ্যের উপরও। এমন ঈমানদারদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিপুল সমৃদ্ধি আসে দেশের অর্থনীতিতে। তখন বাড়ে দেশের জিডিপি। প্রকৃত ঈমানদারের এ সৃষ্টশীলতা বলিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরেছেন আল্লামা ইকবাল তার ফার্সি কবিতায়। লিখেছেন, “হরকে উ’রা লিয্যাতে তাখলিক নিস্ত, পিশে মা জু’জে কাফির ও যিনদিক নিস্ত।’ অর্থ: “যার মধ্যে নাই সৃজনশীলতা, আমাদের কাছে সে কাফির ও নাস্তিক ভিন্ন অন্য কিছু নয়।” পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “ওয়া লি কুল্লি দারাজাতিন মিম্মা আমেলু” অর্থ: “এবং মানুষের সকল মর্যাদা নির্ধারিত হবে তার কর্মের মধ্য দিয়ে।” অর্থাৎ যার জীবনে কর্ম নেই (আল্লাহর কাছে) তার মর্যাদাও নেই। তাই কর্মহীন পরগাছা জীবন দ্বীনদারি নয়, এটি ঈমানহীনতা। মুসলিম তো মহান আল্লাহতায়ালার নামের যিকর করবে কর্মের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখে, আলস্যে সময় কাটিয়ে নয়। উত্তম চাষ ও বীজ ছিটানোর পরই রেযেক বৃদ্ধিতে সে তার মহান প্রভুর কাছে রহমত চাইবে। প্রকৃত ঈমানদার তাই মহান আল্লাহর কাছে বিজয় চায় জিহাদের ময়দানে দাঁড়িয়ে, ঘরে বা মসজিদে বসে নয়। কারণ, সাহায্যদানের পূর্বে মহান আল্লাহতায়ালা বান্দাহর নিজের প্রস্তুতি বা বিনিয়োগ কতটুকু -সেটি দেখতে চান।
মুসলিমগণ তখনই শত্রুর বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন যখন সে লক্ষ্যে নিজেদের প্রাণ কোরবানীতে দু’পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মুসলিমদের এমন প্রস্তুতি দেখে মহান আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়ার জবাব দিয়েছিলেন ফেরেশতা পাঠিয়ে। জিহাদ ছেড়ে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে মুসলিমগণ যখন বিজয় চাওয়া শুরু করেছে –তখন থেকেই পরাজয় শুরু হয়েছে। আজ মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের দোয়া আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মির ও চেচনিয়ার মুসলিমদেরকে জালেমদের হাত থেকে বাঁচাতে যে ব্যর্থ হচ্ছে -তার কারণ তো এটি। মুসলিমের যুদ্ধবিগ্রহ, জ্ঞানার্জন, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ, শিক্ষকতা, চিকিৎস্যকতা, লেখালেখি আদৌ দুনিয়াদারি নয় বরং এর প্রতিটিই হলো নেক আমল বা ইবাদত। পথের কাঁটা সরানো যেখানে উত্তম নেক আমল, সেখানে গলার কাঁটা এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের নানা কোন থেকে কাঁটা সরানো কি দুনিয়ারি হতে পারে? ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবের বিরান মরুভূমিতে যে বিশ্ব-শক্তি জন্ম নিয়েছিল সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে আজও সেটিই সর্বাধিক গৌরবের। সেটি সম্ভব হয়েছিল কয়েক লাখ সৃষ্টিশীল মানুষের কারণে। তাদের একজনের সৃষ্টির সামর্থ্য বাংলাদেশের একটি জেলাতেও সৃষ্টি হয়নি। তারা শুধু সম্পদেই সমৃদ্ধি আনেননি, বিপুল সমৃদ্ধি এনেছিলেন জীবনদর্শন তথা ফিলোসফিতে। আজকের দেড়শত কোটি মুসলমানের অর্জন সে তুলনায় অতি তুচ্ছ। দর্শনই দেয় দূর্নীতির বিরুদ্ধে ইম্যুউনিটি বা প্রতিরোধশক্তি। দেয় চারিত্রিক বল। নির্মাণ করে নৈতিক মেরুদন্ড। নিছক উৎপাদন বাড়িয়ে দর্শনের এ দারিদ্র্য দূর হয়না। অর্জিত হয় না চারিত্রিক সুস্থ্যতা।
মূল ব্যর্থতাটি শিক্ষাখাতে
বাংলাদেশ কৃষি ও শিল্পের অঙ্গণে উৎপাদন বাড়লেও ডুবছে দূর্নীতির প্লাাবনে। ফলে ধ্বসেছে দেশবাসীর নৈতিক মেরুদণ্ড। নৈতিক মেরুদণ্ড কৃষি ক্ষেত বা কল-কারখানাতে নির্মিত হয় না, নির্মিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বই, পত্র-পত্রিকা, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বুদ্ধিজীবীদের হাতে। কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানার্জনের সে কাজটিই হয়নি। অথচ ইসলামে জ্ঞানার্জন ফরয করার মূল উদ্দেশ্যই হলো, পুষ্টি পাবে জনগণের চেতনা, দর্শন ও ঈমান। তখন ব্যক্তি পাবে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়। জ্ঞান ছাড়া ব্যক্তির রুহ যেমন পুষ্টি পায় না, তেমনি তাঁর ঈমানও বাঁচে না। নবীপাক (সা:) এজন্যই এক মুহুর্তের জ্ঞানার্জনকে সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। জ্ঞানীর কলমের কালীকে শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া এজন্যই শ্রেষ্ঠ সাদকায়ে জারিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের এটিই হলো সবচেয়ে ব্যর্থ খাত।
সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি রাস্তাঘাট, প্রাসাদ ও কলকারখানা গড়া নয়; সেটি জনগণকে জাহান্নামে আগুণ থেকে বাঁচানো। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ নাই। এ কাজ নবী-রাসূলদের। তাদের অবর্তমানে এ কাজ ইসলামী রাষ্ট্রের। কাউকে হাজার কোটি টাকা দান করে এ কল্যাণটি করা যায় না। এ কাজটি সুচারু ভাবে করতেই নবীজী (সা:) রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিজে হাতে নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, জনগণকে জাহন্নামের আগুণ থেকে বাঁচানোর কাজে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি হলো রাষ্ট্র। এ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি শয়তান ও তার অনুসারিদের হাতে পড়লে বিপদটি ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও সে বিপদ থেকে বাঁচা যায় না। রাষ্ট্র হলো সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। নবীজী (সা:) ও খোলাফায়ে রাশেদা রাষ্ট্রকে যেভাবে সে লক্ষ্যে ব্যবহার করেছেন -সেটিই প্রতি যুগের মুসলিমদের জন্য শ্রেষ্ঠ অনুকরণীয় সূন্নত। মুসলিমদের আজকের পরাজয়ের মূল কারণ, তাদের জীবনে সে সূন্নত বেঁচে নাই।
রাষ্ট্র ভোটডাকাত, চোর-ডাকাত ও নানারূপ দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বৃত্তায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তখন জনগণকে জাহান্নামের পথে টানে। বাংলাদেশে তো সেটিই হচ্ছে। ফলে দেশের চাষিরা ও শ্রমিকেরা ক্ষেতে খামারে ও কারখানায় যতটুকু সৃষ্টিশীলতা এনেছে, দেশের বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকেরা তা দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে আনতে পারিনি। অথচ দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দেশে প্রচুর বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষিতের হারও। কিন্তু জনমন সমৃদ্ধ হয়নি সুস্থ্য দর্শনে। বাড়িনি চরিত্র। প্রশ্ন হলো, যে শিক্ষা দূর্নীতি, সন্ত্রাস ও পাপাচার বাড়ায় তাকে কি শিক্ষা বলা যায়? বিষপানে দেহের মৃত্যু ঘটে। কুশিক্ষায় মৃত্যু ঘটে বিবেক ও ঈমানের। ফলে অতি নাশকতা মূলক অপরাধ হলো কুশিক্ষা দান। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষালয়গুলোতে সে অপরাধকর্মই হচ্ছে। এটি তো পাপের বাণিজ্য। অথচ বাংলাদেশে শিক্ষার নামে সে পাপের বাণিজ্যই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
অথচ ইসলামের নিজে শেখা যেমন ইবাদত, তেমনি ইবাদত হলো অন্যকে শেখানো। এবং উত্তম দান হলো জ্ঞানদান। নবীজী (সা:)’র হাদীস: “যারা কোর’আন শিখে এবং অন্যকে শেখায় তারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ।” তিনি আরো বলেছেন, যারা জ্ঞানার্জনের পথে ঘরে থেকে বের হয় তাদের উদ্দেশ্যে শুধু ফিরেশতারা নয়, অন্য জীবেরাও দোয়া করে। শিক্ষার গুরুত্ব মুসলিমগণ বুঝেছিল বলেই মুসলিমগণ তাদের গৌরবকালে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শিক্ষিত জাতি ছিল। আর আজ অশিক্ষায় ও কুশিক্ষায় কাফেরদেরকেও তারা হারিয়ে দিয়েছে। এবং সে ব্যর্থতার উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জীবনকে রঙ্গশালা রূপে ভাবতে শিখিয়েছে। উৎপাদন বাড়িয়েছে অসংখ্য দুর্বৃত্তের যারা দখল জমিয়েছে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে। ফলে ব্যর্থতা বেড়েছে সর্বস্তরে।
প্রচণ্ড ভ্রষ্টতার শিকার দেশের আলেম, ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মী, পীর, সুফি, মসজিদের ইমামগণও। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ইসলামে ফরয। শরিয়ত ভিন্ন অন্য কোন আইন মেনে বিচার করা শতভাগ কুফরি। এটি জাহান্নামের পথ। অথচ সে কুফরি বিচার ব্যবস্থাই বাংলাদেশে বিজয়ী। অথচ ইসলামপন্থীদের মাঝেও সে কুফরি নির্মূলের জিহাদ নাই। নবীজী (সাঃ)র এমন কোন সাহাবী পাওয়া যাবে না যারা জনগণকে জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দিতে অর্থদান, শ্রমদান এমনকি জীবন দানে জিহাদে নামেননি। অথচ আজ বহু পীর, আলেম ও মোল্লা-মৌলবী সে রাজনীতিকে দুনিয়াদারী বলছে। এবং দ্বীনদারী বলছে ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তদের সাথে আপোষ ও সহযোগিতাকে। দেশ পরিণত হয়েছে জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার বাহনে। এমূহুর্তে বাঁচতে হলে জাতিকে ফিরিয়ে নিতে জীবনের মূল পাঠের দিকে -যা আল্লাহপাক নবীদের মারফত শিখিয়েছেন। সেটি হলো পবিত্র কোর’আনে বর্ণীত সিরাতুল মুস্তাকীমের পথ। আত্মাবিনাশী আরবরা এ পথেই বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের সামনেও এ ছাড়া ইজ্জত নিয়ে বাঁচার ও জান্নাতে পৌঁছার ভিন্ন কোন পথ খোলা আছে কি? ১ম সংস্করণ ১০/১০/২০০৪; ২য় সংস্করণ ১৫/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
As Salamu Alaikum.
Thanks for your timely article.
Lets work together for the betterment of Bangladesh.