আওয়ামী শাসনে গণহত্যা ও নাশকতা এবং ব্যর্থ জনগণ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 17, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
রাষ্ট্র যেখানে জুলুমের হাতিয়ার
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় অপ্রিয় সত্যটি একবার বললে দায়িত্ব শেষ হয়না। চলমান নাশকতা ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে সব কথা বলাও হয় না। তাছাড়া দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধটি তো অবিরাম; তাই সে যুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে সত্য কথাটি বার বার বলতে হয়। তাতে যেমন সত্য বলার সওয়াব মিলে, তেমনি বাঁচা যায় সত্য লুকানোর কবিরা গুনাহ থেকে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অতি অপ্রিয় সত্য কথাটি হলো, দেশটিতে জুলুম-নির্যাতনের সবচেয়ে নৃশংস ও সবচেয়ে বড় অপরাধী শক্তিটি পেশাদার চোর-ডাকাত বা খুনি-সন্ত্রাসীগণ নয়। বরং সেটি খোদ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ। সভ্য দেশের সরকারি প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালত জনগণকে অপরাধী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জনগণের জান, মাল ও ইজ্জতকে প্রতিরক্ষা দেয়। এবং অসভ্য দেশে এরাই জনগণের উপর চড়াও হয় জঘন্য অপরাধী রূপে। তখন জনগণ এসব রাষ্ট্রীয় আপরাধীদের হাতে জিম্মি হয়। রাজপথে ও জেলে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। বিচার-বহির্ভুত ভাবে হত্যা করা হয়। এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। বাংলাদেশে এরূপ নৃশংস রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তির মূল নায়ক হলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ। তাদের নেতৃত্বে দেশের পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আদালতবাহিনী পরিণত হয়েছে নাশকতা ও দুর্বৃত্তির হাতিয়ারে।
নাশকতার কাজে ও নিরস্ত্র মানুষ হত্যায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি যে কতটা জোটবদ্ধ, নৃশংস ও বর্বর হতে পারে সেটির প্রমাণ মেলে ২০১৩ সালের ৫’মের রাতে। সে রাতে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে তারা শত শত নিরস্ত্র মানুষ নিহত ও আহত করেছিল। এটি ছিল নিরেট গণহত্যা্। বাংলাদেশের সকল ডাকাত বা সকল খুনি-সন্ত্রাসী সারা বছরে যত মানুষকে হত্যা করতে পারিনি সেখানে সরকারি এ খুনি বাহিনীগুলি একরাতে তা করেছে। ৫/০৫/১৩ তারিখে ছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী। এ অবরোধ কর্মসূচী ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১৩ দফা দাবী আদায়। অথচ শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় নৃশংস গণহত্যা। দৈনিক যুগান্তর ১২/০৫/২০১৩ তারিখে খবর ছেপেছিল, শেখ হাসিনার সরকার ৭, ৫৮৮ জন্য অস্ত্রধারি সেপাইকে এ কাজে নামিয়েছিল। তাদের ১,৩০০ জন এসেছিল র্যাব থেকে, ৫,৭১২ জন পুলিশ থেকে এবং ৫৭৬ জন বিজিবী থেকে। যেন প্রকাণ্ড এক যুদ্ধ। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, তারা এক লাখ ৫৫ হাজার গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। প্রশ্ন হলো ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে বা ২৪ বছরের পাকিস্তান আমলে কোনদিনও কি এতবড় বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামানো হয়েছে? এবং এতগুলি ছোড়া হয়েছে? সরকারি বাহিনী আরেকটি অপরাধ কর্ম ঘটালো ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। এবং সেটি নির্বাচনে চুরির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের সকল চোর মিলে যতবড় চুরির কর্ম এ অবধি করতে পারিনি -তা করলো দেশের সরকারি বাহিনী। তাতে চুরি হয়ে গেছে সকল দেশবাসীর ভোটদানের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ কি জঙ্গল?
বনেজঙ্গলে মানুষের জীবনের জানমালের নিরাপত্তা থাকে না। কারণ সেখানে চলে পশুর রাজত্ব। সেখানে কোটকাচারি যেমন থাকে না, তেমনি পুলিশও থাকে না। খুনের দায়ে বন্য বাঘ-ভালুককে হাজতে তোলা বা তাদের বিরুদ্ধে বিচার বসানোর রীতিও বনে জঙ্গলে নাই। পশু তাই অন্যের প্রাণনাশ করেও হুংকার দিয়ে চলা ফেরা করে। কিন্তু মানুষ তো পশু নয়; নিজেদের জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে তারা রাষ্ট্র গড়ে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও পালে। সে রাষ্ট্র পরিচালনায় সভ্য ও দায়িত্ববান সরকারও নির্বাচন করে। কিন্তু বাংলাদেশে কোথায় সে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা? বাংলাদেশ কি জঙ্গল থেকে আদৌ ভিন্নতর? জঙ্গলে যেমন খুন হলে বিচার হয় না, সেটি বাংলাদেশেও হয় না। তাই শাপলা চত্ত্বরে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হলেও কোন খুনিকে আদালতে তোলা হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। জঙ্গলে তো সেটিই হয়।
একটি সরকার কতটা সভ্য বা অসভ্য -সেটি কোন সরকারেরই গায়ে লেখা থাকে না। সেটি নির্ভূল ভাবে ধরা পড়ে জনগণের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে সরকার কতটা তৎপর ও সফল তা থেকে। তাই যে কোন সভ্য সরকারের রীতি হয়, কোন নাগরিক দেশে বা বিদেশে, গভীর সমুদ্রে বা গহীন জঙ্গলে হঠাৎ হারিয়ে গেলে -তার জীবন বাঁচাতে দিবারাত্র তল্লাশী করা। তেমনি কোন ব্যক্তি খুন হলে সে খুনের বিচারে বছরের পর বছর -এমন কি দশকের পর দশক ধরে লাগাতর তদন্ত করে। সরকার কতটা সভ্য ও জনদরদী, সে বিচার হয় জনগণের নিরাপত্তায় এরূপ আপোষহীন অঙ্গিকারে। কিন্তু যে দেশের সরকার লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবী ও র্যাবকে রাতের আঁধারে ব্রাশফায়ারে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অনুমতি দেয়, তাকে কি আদৌও সভ্য বলা যায়? এমন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে কি আদৌও সুস্থ্য বলা যায়? এমন সরকার প্রধান ও তার মন্ত্রীদের পশু বললেও তো পশুর অবমাননা হয়। কারণ আফ্রিকা বা আমাজানের গহীন বনে সকল বন্য পশুরা মিলেও কি কোন কালে এক রাতে এতো মানুষকে বধ করেছে? তাছাড়া পশু ক্ষুধার্ত না হলে শিকার ধরে না। ধরলেও এক সাথে একটার বেশী নয়। তাই মতিঝিলে যেরূপ শত শত লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল -সেটি কোন জঙ্গলে কোন কালেই দেখা যায়নি। বিশ্বের কোন জঙ্গলে এ অবধি এরূপ অসভ্য বর্বরতাটি ঘটেনি। অথচ সেটিই বাংলাদেশে প্রকান্ড ভাবে ঘটালো হাসিনা সরকার।
অবাধ স্বাধীনতা দুর্বৃত্তিতে
ডাকাত দলের সর্দার তো নিজ দলের ডাকাতের বিচার করে না। সেটি করলে তো তার দল বাঁচে না। বরং ডাকাত সর্দারের এজেন্ডা হয়, দলের সদস্যদের ডাকাতির পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া এবং সবচেয়ে বড় ডাকাতদের আরো পুরস্কৃত করা। সে অভিন্ন রীতি দুর্বৃত্ত শাসকদের। হালাকু-চেঙ্গিসেরা কি তাদের দলের কোন খুনিকে বিচার করেছে? শেখ মুজিবের আমলে ৩০ হাজারের অধিক মানুষ খুন হলেও একটি খু্নেরও কি বিচার হয়নি। বরং সিরাজ শিকদারকে খুন করার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে উল্লাসভরে বলেছেন, “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” সে অভিন্ন নীতি শেখ হাসিনারও। ফলে হাসিনার দলীয় ক্যাডারগণ পেয়েছে গুম, খুন, ধর্ষণ, ও নির্যাতনের পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ ক্যাডার ধর্ষণে সেঞ্চুরি করলেও হাসিনা তার বিচার করেনি। বিনা বিচারে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে এরূপ দুর্বৃত্তদের শাসনে প্লাবন আসে দুর্বৃত্তিতে। সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তখন গুম, নির্যাতন ও মানব খুনের হাতিয়ারে পরিণত হয় । প্রতিযুগের হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলারেরা বেছে বেছে সমাজের সবচেয়ে ভয়ানক চরিত্রের খুনিদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বসিয়েছে। সেটি ঘটেছে মুজিব ও হাসিনার আমলেও। তাই নিরীহ নাগরিক হত্যার কাজটি এখন আর শুধু পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী বা বিজিবীর মধ্যে সীমিত নয়। বরং নৃশংসতায় নেমেছে প্রশাসনের কর্মকর্তা, দলীয় নেতানেত্রীর সাথে আদালতের বিচারকগণও। বিচারে সরকারি দলের কোন ক্যাডারের শাস্তি হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের কাজ হয়েছে তাকে মাফ করে দেয়া এবং দ্রুত জেলের বাইরে নিয়ে আসা। সম্প্রতি (ফেব্রেয়ারি, ২০২১) সেটির এক প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরেছে আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল। কোন সভ্য দেশে কি এমনটি ভাবা যায়?
মশকরা মদিনা সনদ নিয়ে!
দেশে এতো খুন, এতো গুম, এতো জুলুম, পত্রিকা ও টিভি অফিসগুলোতে এতো তালা ও এতো চুরিডাকাতির পরও শেখ হাসিনার দাবী, দেশ চলছে মদিনা সনদ অনুযায়ী। মশকরা আর কাকে বলে! প্রশ্ন হলো, মদিনা সনদ কি -সেটি কি তিনি বুঝেন? গণতন্ত্রের সাথে তার পিতার মশকরা জনগণ দেখেছে। গণতন্ত্রের কথা বলে ১৯৭০’য়ে ও ১৯৭৩’য়ে ভোট নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। অথচ উপহার দিয়েছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দল ও বিরোধী পত্র-পত্রিকা। স্বাধীনতার নামে মুজিবের মুখে খই ফুটতো। অথচ তিনিই ডেকে এনেছিলেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অধীনতা। দেশের অভ্যন্তরে হাজার হাজার বিদেশী সৈন্য থাকলে কি স্বাধীনতা থাকে? মুজিব স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসত্ব চুক্তি। সে চুক্তির বদৌলতে ভারত পেয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যখন ইচ্ছা তখন সৈন্য সমাবেশের অধিকার। একমাত্র সে অধিকার পাওয়ার পরই ভারত ১৯৭২ সালে নিজ সৈন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে সরিয়ে নিতে রাজী হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের বিশ্বাসঘাতকতা কি কম? ১৯৭০ সত্তরের নির্বাচনে মুজিব ভোট নিয়েছিলেন এ ওয়াদা দিয়ে যে, কোরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না। অথচ ক্ষমতায় এসেই সে ওয়াদা তিনি ভূলে যান। কোরআন সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ দূরে থাক, কোরআনী বিধানের প্রতি অঙ্গিকার নিয়ে রাজনীতিকেই তিনি নিষিদ্ধ করেন। তালা ঝুলিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ সবগুলো ইসলামী দলের অফিসে। অপর দিকে হাসিনাও তার পিতার ন্যায় গণতন্ত্রের নিজস্ব মডেল পেশ করে। সেটি হলো, নির্বাচনের আগের রাতের ভোট ডাকাতি। সেটি হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে।
মদিনা সনদের নিজস্ব একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে এ ভূপৃষ্ঠে নবীজী (সাঃ)র আগমনেরও। ইতিহাস আছে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার। নবীজী (সা:) শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত প্রতিষ্ঠার মাঝে নিজের কাজকে সীমিত রাখেননি। নবীজী (সা:)’র মিশন ছিল, আল্লাহর জমিনকে শয়তানি শক্তির দখলদারি থেকে মুক্ত করা। এ লক্ষ্য অর্জনে তাঁর জীবনে ছিল আমৃত্যু যুদ্ধ। তাছাড়া ইতিহাসের জ্বাজল্যমান শিক্ষাটি হলো, ইসলামের বিরুদ্ধে শয়তানের যুদ্ধে কোন বিরতি নাই। নমরুদ-ফিরাউন মারা যায়, কিন্তু তাদের শিক্ষা নিয়ে অন্যরা জেগে উঠে। এজন্যই বিরতি থাকতে পারে না, শয়তানের বিরুদ্ধে ঈমানদারের যুদ্ধেও। সেরূপ যুদ্ধ নিয়ে বাঁচাটাই প্রতিটি মু’মিনের আমৃত্যু জিহাদ। তাই যেখানেই শয়তানি শক্তির দখলদারি, সেখানেই শুরু হয় এ জিহাদ। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো, জান ও মাল দিয়ে সে জিহাদে অংশ নেয়া। জিহাদশূণ্যতার অর্থ তাই ঈমানশূণ্যতা। সাহাবাদের যুগে কি এমন একজন সাহাবীও খুঁজে পাওয়া যাবে -যার জীবনে জিহাদ ছিল না? বোখারি শরীফের প্রসিদ্ধ হাদীস: “যে ব্যক্তি মৃত্যবরণ করলো অথচ জিহাদ করলো না এবং জিহাদের নিয়তও কোনদিন করলো না -সে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলো মুনাফিক রূপে।” তবে বেঈমানদের জীবনেও যুদ্ধ আছে। লাগাতর যুদ্ধ আছে হাসিনার জীবনেও। তবে সেটি ইসলামের পক্ষে নয়; বরং সেটি ইসলামপন্থিদের নির্মূলে এবং ইসলামকে পরাজিত রাখার।
প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের নীতি
নবীজী(সা:) যখন ইসলামের প্রচার শুরু করেন তখন কাফেরগণ পদে পদে তাঁকে বাধা দেয়। সর্বশেষে পরিকল্পনা নেয় নবীজী (সা:)’র প্রাণনাশের। সে মুহুর্তে নবীজীর উপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুকুম আসে মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের। তখন তিনি মদিনায় চলে যান। সাহাবাদের অনেকেই ইতিমধ্যে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। মদিনা ও তার আশে পাশে বসবাসকারী মুষ্টিমেয় মুসলিমদের পাশে ছিল বহু কাফের, ইহুদী ও খৃষ্টান গোত্রের বসবাস। গোত্রগুলির মাঝে ছিল শতাধীক বছরব্যাপী চলা গোত্রীয় সংঘাত। নবীজী (সা:) উদ্যোগ নেন সে গোত্রগুলির মাঝে সংঘাত থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার। কারণ, ইসলামের সদ্য রোপণ করা বৃক্ষের নিরাপদে বেড়ে উঠার স্বার্থে শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ জরুরী ছিল। তাছাড়া এমন একটি সমাঝোতা জরুরী ছিল বহিঃশক্তির হামলা থেকে ক্ষুদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠির প্রতিরক্ষার স্বার্থেও। তেমন একটি প্রেক্ষাপটেই মদিনা ও তার আশে পাশে বসবাসরত গোত্রগুলোকে নিয়ে নবীজী (সা:) পারস্পারীক শান্তি, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তাতে ছিল সকলের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার। সেটিই হলো মদিনা সনদ। নিজ ধর্ম পালনে সেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা মুসলিমগণ মক্কাতে পাননি।
প্রশ্ন হলো, মদিনার সনদে মুসলিমগণ ধর্ম পালনে যে অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, সে স্বাধীনতা কি হাসিনা সরকার বাংলাদেশের মুসলিমদের আদৌ দিচ্ছে? ইসলাম পালনের অর্থ তো শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন নয়, বরং সেটি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ইসলাম পালন। সে ধর্মপালনে অপরিহার্য হলো রাজনীতিতে জিহাদ, আদালতে শরিয়ত ও হুদুদ, বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতিষ্ঠা। অথচ হাসিনার রাজনীতিতে এর কোনটাই নাই। বরং আছে ইসলাম-বিরোধীতা। আদালতে শরিয়ত পালন না করাটি কবিরা গুনাহ। ফলে রোজ হাশরের বিচার দিনে মহান আল্লাহতায়ালার সামনে যার জবাবদেহীর ভয় আছে -সে কি শরিয়ত পালন থেকে কি সামান্য ক্ষণের জন্যও দূরে থাকতে পারে? এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: “যারা আমার নাযিলকৃত বিধান অনুসরারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না -তারা কাফের .. তারা জালেম .. তার ফাসেক।” –(সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কিন্তু মহান আল্লাহর নাযিলকৃত সে শরিয়ত পালন আজ অসম্ভব করা হয়েছে বাংলাদেশে। সেটি সরকারের পক্ষ থেকে। ঔপনিবেশিক কাফের সরকার সেটি অসম্ভব করেছিল, আর পরবর্তী সরকারগুলো সেটিকেই চালু রেখেছে। অথচ মদিনার মুসলিমগণ পরিপূর্ণ ইসলাম পালনের সে সুযোগটি প্রথম দিন থেকেই পেয়েছিলেন। মদিনা সনদ অনুসারে সেখানে বসবাসরত অমুসলিমগণ মুসলিমদের সে পরিপূর্ণ ধর্মপালনে কোনরূপ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটি। এদেশে অমুসলিমগণ তাদের ধর্ম পালনে পুরা সুবিধাগুলো পেলেও সে সুযোগ পাচ্ছে না মুসলিমগণ। তারা আপোষহীন অবস্থান নিয়েছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনা যে নীতি অনুসরণ করছেন সেটি তো মক্কার কাফেরদের নীতি। সেটি শরিয়তের প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধের নীতি। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় নাশকতা আর কি হতে পারে? যারা ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ চায় তাদের জন্য নিরাপত্তা না বাড়িয়ে তিনি বরং নানা ভাবে বিপদ বাড়িয়ে চলেছেন। সে নীতির বাস্তবায়নের তিনি পূর্ণ সহায়তা নিচ্ছেন ভারতীয় কাফেরদের। তাই তার সরকার বাংলাদেশে কোর’আনের তাফসির বহুস্থানে বন্ধ করেছে, এবং ফাঁসির হুকুম শুনিয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রখ্যাত তাফসিরকারকের বিরুদ্ধে। অনুমতি দিচ্ছে না ইসলামি দলগুলোরে সমাবেশের। এরই প্রমাণ, ০৫/০৫/২০১৩ তারিখে নির্বিচারে গুলি চালানো হয় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে। শাহবাগের মোড়ে নাস্তিক ব্লগারদের মাসের পর মাস লাগাতর সমাবেশের অধিকার দিলেও সে অধিকার হাসিনা ইসলামপন্থীদের দেননি। ইসলামপন্থী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ইতিমধ্যেই জেলে তোলা হয়েছে। বহু শত নিরস্ত্র মানুষকে শহীদ করা হয়েছে। সরকার শত শত মানুষের ঘরে পুলিশ ও র্যাব নামিয়েছে জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করার কাজে। এমনকি ইসলাম বিষয়ক বইপত্র রাখার অপরাধে সরকার হেজাবধারি মহিলাদের ও ছাত্রীদের হাজতে তুলেছে। প্রশ্ন হলো, এই কি মদিনার সনদ অনুযায়ী দেশ-শাসন? কিন্তু আলেম-উলামাদের এ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে সরকার হাজার হাজার পুলিশ লেলিয়ে দেয়। পুলিশের পাশাপাশি ছিল সরকারি দলের বিশাল গুন্ডাবাহিনী। এমন অসভ্য শাসনকে কি মদিনা সনদের শাসন বলা যায়?
সভ্য ভাবে বাঁচার খরচ ও ঈমানদারের জিহাদ
অসভ্য ভাবে বাঁচায় খরচ লাগে না। এটি স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দেয়ার মত। কিন্তু স্বাধীনতা ভাবে ও সভ্য ভাবে বাঁচার খরচটি বিশাল। তখন জনগণের সভ্য রুচি ও ঈমানের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় পাশের তাড়নায় মুসলিম জীবনে তাই জিহাদ আসে। এবং সে জিহাদে জান ও মালের বিনিয়োগও আসে। তাই একটি দেশে দুর্বৃত্তদের অসভ্য শাসন দেখেই বলা যায়, সে দেশের মানুষ সভ্য শাসন প্রতিষ্ঠার খরচটি দেয়নি। এরই ফলে বাঁচছে অসভ্য শাসনের যাতনা নিয়ে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ যেরূপ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলেন তার খরচটি ছিল বিশাল। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবাকে সে কাজে শহীদ হয়েছেন। বুঝতে হবে, মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ তাজমহল, পিরামিড বা চীনের দেয়াল গড়া নয়। বরং সেটি সভ্য মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার নির্মাণ। একাজের জন্যই পরাকালে জান্নাত মিলবে। এবং সমগ্র মানব ইতিহাসে এ কাজে মুসলিমদের তূলনা নেই। লাগাতর জিহাদ এবং সে জিহাদে জান ও মালের বিপুল কোরবানীর মাধ্যমে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ সমগ্র আরব ভূমিকে দুর্বৃত্ত শক্তির অধিকৃতি থেকে পূর্ণভাবে মুক্তি দিয়েছিলেন। নিজে রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসে খোদ নবীজী (সা:) সে জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতির অঙ্গণে এটিই হলো নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত।
মুসলিম জীবনে যে জিহাদ, সেটি শুধু নবীজী(সা:)’র আমলে সীমিত ছিল না। সীমিত ছিল না স্রেফ আরব ভূমিতেও। বরং যেখানেই তারা দেখেছেন কাফের শক্তির দখলদারি, সেখানেই শুরু করেছেন সে দখলদারি থেকে মুক্তি দেয়ার লড়াই। সে মিশন নিয়ে যেমন পৃথিবীর নানা প্রান্তে গেছেন, তেমনি এক সময় বাংলাদেশেও পৌছেছেন। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলি আজ আবার অধিকৃত হয়ে গেছে দুর্বৃত্ত শক্তির হাতে। এ দুর্বৃত্ত শক্তিই নবীজী(সা:)’র শরিয়ত ভিত্তিক শাসনকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলছে। অথচ তারা ভূলে যায়, মুসলিম ইতিহাসের সকল গৌরব অর্জিত হয়েছিল তো সে মধ্যযুগে। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, ইসলামের এ শত্রুপক্ষটি সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর আস্থার করতে চায়না। এ দুর্বৃত্ত শক্তির দখলদারীর কারণেই শরিয়তি বিধান আজ আস্তাকুঁড়ে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রশ্ন হলো, ইসলামের এ পরাজিত দশা কি কোন মুসলিম মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তার ঈমান থাকে? মুসলিম তো ইসলামের বিজয় নিয়ে বাঁচে। বিজয় না থাকলে লড়াই নিয়ে বাঁচে। কিন্তু পরাজয় নিয়ে বাঁচার কথা কি কো ঈমানদার ভাবতে পারে?
শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করতেন। সে দাবী শেখ হাসিনাও করেন। ৪/৫/২০১৩ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, তার দাদার মুখে দাড়ি ছিল। নিজেকে মুসলিম রূপে জাহির করার জন্য তিনি এখন দাদার দাড়ির উল্লেখ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নিজের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়ার জন্য কি দাদার মুখে দাড়ি থাকাটি জরুরী। শেখ, সৈয়দ বা চৌধুরী পরিবারে পরিবারে জন্ম নিলে যে কেউ শেখ, সৈয়দ বা চৌধুরী হতে পারে। সেজন্য কোন যোগ্যতা লাগে না। সে পরিবারের পাগল এবং চোর-ডাকাতেরাও সে উপাধি পায়। কিন্তু মুসলিম হওয়ায় জন্য তো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস এবং ইসলামের লক্ষ্য পুরণে আপোষহীন অঙ্গিকার চাই। সে লক্ষ্যে জান ও মালের কোরবানীও চাই। কাফের ব্যক্তির পুত্রও মুসলিম হতে পারে -যদি তাঁর মধ্যে সে অঙ্গিকার ও কোরবানী থাকে। নবীজী(সা:)’র প্রথম সারির সাহাবাদের পিতামাতা কি মুসলিম ছিলেন? প্রশ্ন হলো শেখ মুজিব, হাসিনা বা আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবনে কোথায় সে অঙ্গিকার?
যুদ্ধে-বিগ্রহ ও রাজনীতিতে অর্থদান, শ্রমদান ও প্রাণদান বহু কাফেরও করে থাকে। কিন্তু তাদের সে ত্যাগে কি মহান আল্লাহর লক্ষ্য পূরণের নিয়েত থাকে? সে নিয়েত না থাকার কারণেই তাদের সকল ত্যাগ ও কোরবানী ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে তারা পৌঁছবে জাহান্নামে। কিন্তু আল্লাহকে খুশি করার নিয়েত থাকাতে ঈমানদার ব্যক্তি শহীদ হলে বিনা বিচারে জান্নাত পায়। শেখ মুজিব আজীবন রাজনীতি করেছেন। জেলও খেটেছেন। রাজনীতি করছেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীগণও। কিন্তু কোথায় মহান আল্লাহতায়ালার লক্ষ্য পূরণের সে নিয়েত? কোথায় সে অঙ্গিকার? কোথায় আল্লাহর জমিন থেকে শয়তানি শক্তির দখলদারি মুক্তির লড়াই? এ তো ক্ষতির ব্যবসা। সুরা আছরে কি মহান আল্লাহতায়ালা কি সে মহাক্ষতির কথাটিই শুনিয়ে দেননি। বরং শেখ মুজিব তো ভারতের কাফের সৈন্যদের সাথে কাঁধ মিলিয়েছেন। তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডেকে এনেছেন। মুজিবের রাজনীতিতে অঙ্গিকার ছিল সমাজতন্ত্র ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা, মহান আল্লাহকে খুশি করা নয়। তাঁর শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রচন্ড ধর্ম-বিরোধীতা। ইসলামের বিরুদ্ধে সে অঙ্গিকার নিয়ে যেখানেই তিনি কোরআনের আয়াত ও ইসলাম দেখেছেন সেখান থেকেই তা সরিয়েছেন। তাই তার হাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত বাঁচেনি। বাঁচেনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল বা জাহাঙ্গির নগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মুসলিম শব্দ। তেমনি বাঁচেনি ঢাকার নজরুল ইসলাম কলেজের ইসলাম শব্দটি। প্রশ্ন হলো, এমন চেতনাধারী নেতাদের হাতে কি ইসলাম বাঁচে? রক্ষা পায় কি মুসলিম স্বার্থ? আল্লাহর দ্বীনের এমন চিহ্নিত শত্রুকে বাঙালী মুসলিমের বন্ধু বলা যায়? বলা যায় কি জাতির পিতা বা বন্ধু? সেটি যে কোন হিন্দু বা বৌদ্ধ বলতে পারে, নাস্তিক বা কাফেরও বলতে পারে। কিন্তু কোন মুসলিমও কি বলতে পারে? কোন মুসলিম বললে কি তার ঈমান থাকে? মুখের কথার মধ্য দিয়ে যেমন ঈমানের প্রকাশ ঘটে, তেমনি বেঈমানিও ধরা পড়ে। আল্লাহর দ্বীনের শত্রুকে বন্ধু বলা যে ঈমানদারী নয় -সেটি বুঝা কি এতোই কঠিন?
কবিরা গুনাহর রাজনীতি
মুজিবের অনুসারিরা একাত্তরে ভারতীয় কাফেরদের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে কাফেরদেরই এজেন্ডা পূরণ করেছে। তাতে উৎসব বেড়েছে দিল্লির শাসক মহলে। আর মাতম বেড়েছে সমগ্র মুসলিম জাহানে। মুসলিম উম্মাহকে এভাবেই মুজিব কাঁদিয়েছেন এবং হাঁসি ফুটিয়েছেন ভারতের কাফেরদের মুখে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহগর বিরুদ্ধে এটিই ছিল মুজিবের বড় অপরাধ। তাই ভারত ও ভূটানের ন্যায় অমুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এলেও কোন মুসলিম রাষ্ট্র এগিয়ে আসেনি। মুজিব ও তার অনুসারিরা একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে ভেঙ্গেছে। অথচ ইসলামে এটি শতভাগ হারাম। ইসলামে এটি কবিরা গুনাহ। অন্যের পকেটে হাত দেয়াই শুধু কবিরা গুনাহ নয়, কবিরা গুনাহ হলো মুসলিম দেশের ভূগোলে হাত দেয়াও। ইসলামে এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কবিরা গুনাহ যে শুধু শিরক, মুর্তিপুজা, সূদ-ঘুষ, ব্যাভিচার, অশ্লিলতা,মদ্যপান. চুরি-ডাকাতি তা নয়,বরং তার চেয়েও বড় কবিরা গুনাহ হলো ভাষা, বর্ণ বা ভৌগলিক পরিচয় নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের সংহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা। পবিত্র কোরআনে এমন কবিরা গুনাহর বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর হুশিয়ারি। কিছু লোকের ব্যাভিচার ও মদ্যপানে মুসলিমদের ঘাড়ে কাফের শত্রুদের গোলামী চেপে বসে না। অথচ সেটি হয় মুসলিম ভূমিতে কাফেরদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা পেলে। মুসলিমগণ তাই ঈমানহীন, শক্তিহীন ও মর্যাদাহীন হয়। একাত্তরে মুজিব বাংলাদেশের উপর কাফের ভারতের অধিকৃতিকেই নিশ্চিত করেছিল। এখানেই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুজিব ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মূল নাশকতা।
দলিল জনগণের ব্যর্থতার
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তি ও নাশকতার খতিয়ানটি বিশাল। তবে জনগণের ব্যর্থতাও কি কম? দেহ থাকলে রোগভোগ থাকে। তেমনি দেশ থাকলে দেশের শত্রুও থাকে। জনগণকে তাই শুধু প্রাণনাশী বিষ, বিষাক্ত শাপ ও হিংস্র পশুদের চিনলে চলে না। চিনতে হয় দেশের ভয়ানক শত্রুদেরও। এবং লাগাতর লড়তে হয় সেসব শত্রুদের বিরুদ্ধেও। জাতি তো এভাবেই শত্রুদের হাতে অধিকৃত হওয়া থেকে বাঁচে। এজন্যই আমৃত্যু লড়াই দেখা গেছে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবীদের জীবনে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে সে চেনার কাজটি হয়নি। লড়াইয়ের কাজটিও হয়নি। চেনার কাজটি হলে কি যে ব্যক্তি ও যে দল জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিল, প্রতিষ্ঠা দিল নৃশংস বাকশালী স্বৈরাচার, হত্যা করলো ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, প্রতিষ্ঠা দিল ভারতের গোলামী এবং নাশকতা ঘটালো ইসলাম ও ইসলামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে -তাকে কি জনগণ কখনো জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলতো? অনেকে আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীও বলে। সভ্য জনগণ তো এমন নৃশংস অপরাধীদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ফেলে; মাথায় তোলে না। মুখের কথার মধ্য দিয়ে তো ব্যক্তির কথা বলে। কথার মধ্যেই তো মানুষের ঈমানদারী ও বেঈমানী। তখন ধরা পড়ে চেতনার অসুস্থ্যতা। শত্রু ও চিহ্নিত অপরাধীকে পিতা ও বন্ধু বলার মধ্যে কোথায় সে বিবেকবোধ? কোথায় সে ঈমানদারী? কোথায় সে চেতনার সুস্থ্যতা? এটি তো শয়তানকে মহাত্ম বলা! আর লড়াইয়ের কাজটি হলে তো দুর্বৃত্ত শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হতো।
গরু-ছাগলের পানাহার ছাড়া কোন সামাজিক বা নৈতিক দায়িত্ব নাই। কিন্তু মানুষের দায়িত্ব তো বিশাল। তাকে তো বহুবিধ নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যার জীবনে সে দায়িত্বপালন নাই -তাকে কি গরু-ছাগলের চেয়ে উন্নততর বলা যায়? ইসলামে দায়িত্ব পালনের সে মূল হাতিয়ারটি হলো জিহাদ। এ ইবাদতে ঈমানদার ব্যক্তি লাগাতর বিনিয়োগ ঘটাতে হয় তাঁর মেধা, শ্রম, সময়, অর্থ ও রক্তের। নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলে এমন নিবিড় বিনিয়োগ হয় না। এজন্য জিহাদই হলো ঈমানদারের সর্বোচ্চ ইবাদত। ঈমানের আসল পরীক্ষা হয় জিহাদের এ অঙ্গণে। এ পবিত্র ইবাদতের মাধ্যমেই ঈমানদারগণ রাষ্ট্র থেকে দুর্বৃ্ত্তদের নির্মূল করে এবং প্রতিষ্ঠা দেয় ইনসাফ ও ন্যায়ের। এবং বিজয় আনে ইসলামের। তখন নির্মিত হয় সভ্যতর ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র। যে সমাজে জিহাদ নাই সে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্তদের শাসন। তখন বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। বাংলাদেশ তো তারই প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। তাই বাংলাদেশ শুধু আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তি ও নাশকতার দলিলই নয়, এটি জনগণের বেঈমানী ও নিদারুন ব্যর্থতার দলিলও। ১ম সংস্করণ ১২/০৫/১৩; ২য় সংস্করণ ১৭/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018