জিহাদ ও সন্ত্রাস

সন্ত্রাসের নাশকতা ও ঈমানী দায়ভার

ঈমানদারকে শুধু হারাম-হালাল ও হিংস্র জন্তু-জানোয়ারদের চিনলে চলে না, চিনতে হয় সমাজের অতি হিংস্র সন্ত্রাসী জীবদেরও। চিনতে হয় কোনটি জিহাদ এবং কোনটি সন্ত্রাস। তাকে সঠিক ভাবে চিনতে হয় কোনটি মহান আল্লাহতায়ালার পথ, এবং কোনটি শয়তানের। কারণ, প্রতি সমাজে এরাই সন্ত্রাসের মূল নায়ক। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্পূর্ণ ও সবচেয়ে উপকারী হলো এই জ্ঞান। মানব সমাজে সবচেয়ে বড় অভাব এইজ্ঞানের। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সেরূপ জ্ঞানবানদের সংখ্যা। ফলে বাড়েনি সত্যকে চেনার সামর্থ্য। কোনটি জিহাদ এবং কোনটি সন্ত্রাস – তা নিয়ে গভীর অজ্ঞতার কারণে মানুষ তখন দলে দলে স্বৈরাচারী জালেম, কাফের ও ফাসেকদের পক্ষে ভোট দেয়, অর্থ দেয়, লেখালেখি করে, এমনকি যুদ্ধও করে। সে যুদ্ধে অনেকে প্রাণও দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ এভাবে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের হাতে অধীকৃত হয়; এতে পরাজিত হয় ইসলাম; এবং বিলুপ্ত হয় শরিয়তী বিধান। তাদের মূল যুদ্ধটি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। ফলে তাদের বিজয়ে ব্যর্থ হয় মানব জাতিকে জান্নাতে নেয়ার মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব প্রজেক্ট। মানব শিশুগণ তখন বেড়ে উঠে শয়তানের দলের নৃশংস সন্ত্রাসী রূপে। এমন অধিকৃত দেশ তখন দুর্বৃত্তি ও নৃশংস সন্ত্রাসে রেকর্ড গড়ে। শয়তানী শক্তির পক্ষে জানমালের এরূপ বিনিয়োগে সমাজে শান্তি আসে না, বরং যেটি সুনিশ্চিত হয় সেটি জাহান্নামের আযাব। পবিত্র কোর’আনে সে কঠোর হুশিয়ারীও বার বার এসেছে।

কোনটি জিহাদ আর কোনটি সন্ত্রাস -তা নিয়ে অজ্ঞতায় যা অসম্ভব তা হলো প্রকৃত মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠা। কারণ, ঈমানদার ও বেঈমান –উভয়ের জীবনেই লাগাতর যুদ্ধ আছে। বেঈমানের যুদ্ধটি শয়তানের এজেন্ডা পূরণে, সে অভিন্ন অঙ্গণে ঈমানদার যুদ্ধ করে মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাপূরণে। পবিত্র কোর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “যারা ঈমান এনেছে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহতায়ালার পথে এবং যারা কাফের তথা আল্লাহর অবাধ্য তারা যুদ্ধ করে শয়তানের পক্ষে; অতঃপর তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল দুর্বল।” –(সুরা নিসা, আয়াত ৭৬)। এজন্যই যুদ্ধরত প্রতিটি সৈনিকের জন্য যা জরুরী তা হলো তার নিজের বাহিনী বা পক্ষটিকে সঠিক  ভাবে চেনা। এখানে ভূল হলে ভূল হয় যুদ্ধে জানমালের বিনিয়োগে। বিভ্রান্ত সে ব্যক্তিটি কাফের বাহিনীকে আপন মনে করে তাদের বিজয়ে যুদ্ধ করবে এবং প্রাণ দিবে -সেটিই স্বাভাবিক। মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করতে এমন বিভ্রান্ত ব্যক্তিগণই অতীতে ইংরেজদের পক্ষে লড়েছে, এবং ১৯৭১’য়ে লড়েছে ভারতীয় কাফেরদের পক্ষে। ভারতীয়দের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে তারা বাংলাদেশের উপর ভারতীয় অধিকৃতিকে সুনিশ্চিত করেছে। এটিই হলো অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের সবচেয়ে বড় নাশকতা। প্রশ্ন হলো, এরূপ অজ্ঞতা বা জাহিলিয়াত নিয়ে কি ইসলাম পালন বা সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা সম্ভব? পবিত্র জিহাদ তখন সন্ত্রাস মনে হবে এবং সন্ত্রাসী নেতা-নেত্রীও তখন নির্বাচিত হবে –সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এমন অজ্ঞতার কারণেই অতীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ নমরুদ, ফিরাউন, হিটলার, স্টালীন ও মুজিবের ন্যায় নৃশংস সন্ত্রাসীদের বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদী নির্মূল, গণহত্যা, বিশ্বযুদ্ধ, গ্যাস চেম্বার, ড্রোন হামলা, ক্লাস্টার বোমা, ব্যারেল বোমা ও পারমানবিক বোমার ব্যবহারীগণও বৈধ শাসক রূপে গন্য হয়েছে।

জিহাদ জান্নাতের পথ; এবং সন্ত্রাস জাহান্নামের পথ। মু’মিনের প্রতিটি যুদ্ধই জিহাদ; এবং শয়তানের প্রতিটি যুদ্ধই সন্ত্রাস। বেঈমানের সন্ত্রাসে থাকে আল্লাহর শরিয়তী বিধানকে পরাজিত করার খায়েশ। অপরদিকে জিহাদে থাকে মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাপূরণের নিয়েত। থাকে, তাঁকে খুশি করার বাসনা। ফলে জিহাদে থাকে, ইসলামকে বিজয়ী করার যুদ্ধে মু’মিনের জান-মাল কোরবানীর পবিত্র আয়োজন। আভিধানিক অর্থে ত্রাস সৃস্টির প্রতিটি প্রয়াসই হলো সন্ত্রাস। ত্রাস সৃষ্টির মূল লক্ষ্যটি এখানে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত রাখা। রাখাল যেমন লাঠির ভয় দেখিয়ে ভেড়ার পালকে নিয়ন্ত্রনে রাখে, তেমনি জনগণের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসী শক্তির মূল হাতিয়ারটি হলো সন্ত্রাস। বিশ্বব্যাপী ত্রাস সৃস্টির লক্ষ্যে সন্ত্রাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতে পারমানবিক বোমাও ব্যবহার করেছে। মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাস। হিরোশিমা ও নাগাসাকীর প্রায় দেড় লক্ষ মানবকে তারা নিমিষের মধ্যে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসের সে নৃশংস মাত্রা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারিনি। বিশ্বশক্তি রূপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও দাপটের মূল কারণ সন্ত্রাস সৃষ্টির সর্বাধিক সে সামর্থ্য।  দেশটি সে অবস্থানটি হারাতে চায় না। ফলে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস সৃষ্টির সে স্ট্রাটেজী এখনো  মার্কিন রাজনীতির মূল নীতি। ফলে দেশে দেশে তারা ব্যবহার করছে হাজার হাজার ক্লাস্টার বোমা, মিজাইল হামলা, বিমান ও ড্রোন হামলা। ত্রাস সৃষ্টির সে অভিন্ন লক্ষ্যে তারা বিশ্বব্যাপী স্থাপন করেছে অসংখ্য সামরিক ঘাঁটি এবং প্রতিষ্ঠা করেছে ন্যাটোর ন্যায় সামরিক জোট। এবং সে লক্ষ্যেই ক্ষুধার্ত কুমিরের ন্যায় তাদের অসংখ্য ডুবো জাহাজ ও বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ নানা দেশের উপকুলে ঘুরে।

রাজনৈতীক এজেন্ডা পূরণে সন্ত্রাস হলো সহিংস সেক্যুলার শক্তির হাতিয়ার। অথচ মু’মিনের মনে কাজ করে জাগতিক স্বার্থের উর্দ্ধে আল্লাহ-সচেতন এক পবিত্র ধর্মীয় চেতনা। সন্ত্রাসীর মনে তেমন কোন উচ্চতর বা পবিত্রতর চেতনা থাকে না। পবিত্রতার বদলে সন্ত্রাসে থাকে পার্থিব স্বার্থ পূরণের সহিংস খায়েশ। অস্ত্রের বলই তাদের একমাত্র বল; এবং নৃশংসতার মাঝেই তাদের উৎসব। সন্ত্রাসীদের মনে তাই নিরস্ত্র জনগণের উপর পারমানবিক বোমা, ক্লাস্টার বোমা, নাপাম বোমা ও ড্রোন হামলার মধ্যেও তীব্র আনন্দবোধ থাকে। কারণ, তাদের সেক্যুলার মনে থাকে না পরকালে জবাবদেহীতার ভয়। মার্কিনীগণ তাই আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় বিজয়ের নামে শহরের পর শহর ধ্বংস করেছে। অথচ জিহাদে থাকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে  পরকালে জবাবদেহীতার ভয়, ফলে থাকে আত্মত্যাগের মাধ্যেম মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার আগ্রহ। জিহাদ এভাবেই পরিণত হয় উচ্চতর ইবাদতে। তাই ঈমানদারদের জিহাদে কোন শহর বা জনপদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় না।  জিহাদ ও সন্ত্রাসের মাঝে এটিই হলো মূল পার্থক্য। সন্ত্রাসীদের কারণেই ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও ইয়েমেনের অসংখ্য শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এবং একই রূপ সেক্যুলার সন্ত্রাসীদের হাতে রক্তাত্ব হয়েছে ঢাকার শাপলা চত্ত্বর, ইসলামাবাদের হাফসা মাদ্রাসা ও কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া অঙ্গণ।

 

পরিণতি ঈমানশূন্যতার

অতীতে অনেকেই নিজেদের মুসলিম পরিচিতি নিয়ে শত্রুপক্ষের সাথে সন্ত্রাসে নেমেছে। সন্ত্রাসের সীমিত, স্থানীয় ও দেশীয় রূপটি হলো ডাকাতী, রাহাজানী ও ফ্যাসীবাদী স্বৈরাচার। আর আন্তর্জাতীক রূপটি হলো দুর্বল দেশের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশীক আগ্রাসন এবং সামরিক অধিকৃতি। বিবেকমান মানুষ মাত্রই যেমন ডাকাতী ও রাহাজানীতে অংশ নেয় না, তেমনি তারা সাম্রাজ্যবাদী সন্ত্রাসীদের দলে সৈনিক রূপেও যোগ দেয় না। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কবিরা গুনাহ ও অপরাধ কর্ম। এমন কবিরা গুনাহ ও অপরাধ কর্মে অংশ নেয়া একমাত্র ঈমানশূন্যতাতেই সম্ভব। কিন্তু মুসলিম ইতিহাসে এমন অপরাধীদের সংখ্যা অসংখ্য। তারা সাম্রাজ্যবাদী সন্ত্রাসীদের সেনাদলে যোগ দিয়ে মুসলিম দেশে শুধু ধ্বংস ও গণহত্যাই বাড়ায়নি, মুসলিম ভূমিকে তাদের পদনতও করেছে। উদাহরণ দেয়া যাক। ১৯১৭ সালে ঔপনিবেশিক কাফের শক্তির হাতে অধিকৃত হয় ইসলামের পবিত্র ভুমি জেরুজালেম। সে ঔপনিবেশিক অধিকৃতিরই ভয়াবহ পরিণতি হলো আজকের ইসরাইল। সে পবিত্র ভূমিতে উসমানিয়া খলিফার সেনাদলকে পরাজিত করতে আগ্রাসী ব্রিটিশ বাহিনীতে যতজন ইংরেজ সৈনিক ছিল তার চেয়ে বেশী ছিল অইংরেজ। তাদের মাঝে বহু হাজার ছিল মুসলিম। বাঙালী মুসলিমের দ্বারা সেরূপ অপরাধ কর্ম যে শুধু ১৯৭১’য়ে হয়েছে তা নয়। তার পূর্বেও হয়েছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে ১৯১৭ সালে অধীকৃত হয় মুসলিম সভ্যতার কেন্দ্রভুমি ইরাক। ইরাক দখলের লক্ষ্যে হানাদার সে ব্রিটিশ বাহিনীতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ন্যায় বহু বাঙালী মুসলিমও স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছিল। তারা যুদ্ধ করেছিল খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং কাফেরদের এজেন্ডা পূরণে। সে ঔপনিবেশিক হানাদার ব্রিটিশ বাহিনীতে মনের আনন্দে অফিসার হয়েছিল আরেক অতি পরিচিত বাঙালী ব্যক্তি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী। আগরতলা ষড়যন্ত্রকে সফল করতে ভারতকে কোন বাঙালী হিন্দুর ঘাড়ে দায়িত্ব দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে মুসলিম হত্যায় এবং উম্মাহর বিরুদ্ধে নাশকতায় ইসলামের শত্রুগণ যুগে যুগে এভাবেই মুসলিমদের মধ্য থেকেই কলাবরেটর বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে সেটি যেমন ইংরেজদের হাতে হয়েছে, তেমনি ১৯৭১’য়ে ভারতীয় হিন্দুদের হাতেও হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ বহু মুসলিম দেশে সে অভিন্ন ধারাই অব্যাহত রেখেছ মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। শত্রুগণ এভাবেই কই’য়ের তেলে কই ভাজার সুযোগ পেয়েছে।

মুসলিমদের জন্য আরো বিপদের কারণ, এরূপ হারাম অপরাধ-কর্ম নিয়ে দুঃখবোধও নাই। এবং আগ্রহ নাই সে নৈতীক রোগ থেকে আরোগ্য লাভে। বিবেকমান মানুষ মাত্রই দেহে রোগ দেখা দিলে চিন্তিত হয়। এবং সে রোগের চিকিৎসায় যত্নবান হয়। কিন্তু সেরূপ আগ্রহ বিবেকশূন্য মানুষের থাকে না। মুসলিমদের মাঝে সেরূপ বিবেকশূন্যতা ভর করেছে চেতনার রোগ নিয়ে। তাই নিজেদের চেতনার মারাত্মক রোগ নিয়ে তাদের দুঃখবেোধ হয় না। রোগাগ্রস্ত অপরাধীদের মাথায় তুলতে তাদের বিবেকে দংশনও হয়না। বরং ইতিহাসের বইয়ে ঈমানশূণ্য সে অপরাধীদের জাতির গৌরব গণ্য করা হয়। এবং এরই ফলে জনগণের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে, এ অপরাধীদের অনুকরণে শত্রুর দলের সৈনিক হওয়ায়। তাই বাংলাদেশের উপর রাজনৈতীক, অর্থনৈতীক ও সাংস্কৃতীক অধিকৃতি বজায় রাখতে ভারতকে তার কাফের সৈন্যদের ব্যবহার করতে হয় না। হাজার হাজার বাঙালী মুসলিম সে কাজটি নিজ খরচে করে দিতে রাজী। এমন মানসিক দাসদের কারণেই বাংলার বুকে ঔপনিবেশিক কাফের শাসন ১৯০ বছর যাবৎ বলবৎ থেকেছে। আর এখন স্থায়ীত্ব পাচ্ছে ভারতের রাজনৈতীক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও অর্থনৈতীক অধিকৃতি। অথচ শরিয়তের বিধান হলোঃ মুসলিম ভূমিতে অমুসলিম সৈন্যের প্রবেশের সাথে সাথে জিহাদ আর ঐচ্ছিক থাকে না, সেটি তখন ফরজে আইনে পরিণত হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে আগ্রাসী অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক রাখাটি হারাম; এবং সেটি গোমরাহী তথা পথভ্রষ্টতার দলীল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশটি হলো, “হে মু’মিনগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। … তোমাদের মধ্যে যে এটি করে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত। তোমাদের কাবু করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং (তোমাদের বিরুদ্ধে নাশকতায়) তারা প্রসারিত করবে তাদের হাত ও রসনা। এবং চাইবে, তোমারাও (তাদের মত) কাফের হয়ে যাও।” –(সুরা মুমতেহানা আয়াত ১-২)।

 

হার মানায় পশুকেও

ঈমান না থাকলে মানুষ পশুর চেয়েও হিংস্রতর জীবে তথা সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে মানব চরিত্রের সে ভয়ানক নৃশংস দিকটি তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহতায়ালা।[FK1] পবিত্র কোর’আনের ভাষায় “উলায়িকা কা’ আল অআনাম, বাল হুম আদাল”। অনুবাদঃ “ওরাই হলো পশু, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট”। তখন পশুর চেয়েও মানুষের সে নিকৃষ্ট রূপটি প্রকাশ পায় সন্ত্রাসে। সমগ্র মানব ইতিহাসে যত নর-নারী ও শিশুর প্রাণনাশ বন্য পশুদের হাতে হয়েছে তার চেয়ে বহু হাজার গুণ বেশী হয়েছে মানব রূপী এসব হিংস্র পশুদের হাতে। তারা মাত্র দুটি বিশ্বযুদ্ধে হত্যা করেছে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে। সর্বকালের সকল পশু মিলেও এর শতভাগের এক ভাগকেও হত্য করতে পারিনি। এরূপ মানব রূপী পশুদের হাতে সন্ত্রাসের মোক্ষম ক্ষেত্র গণ্য হয় দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধবিগ্রহ ও আইন-আদালত। তখন জনগণের জানমাল, মেধা, শ্রম ও সময়ের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি হয় সন্ত্রাস তথা ত্রাস সৃষ্টির অবকাঠামো নির্মাণে -তথা পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়াতে। এমন বিনিয়োগের কারণে গণহত্যা বা হলোকাস্ট যে শুধু হিটলারের হাতে হয়েছে -তা নয়। মানব ইতিহাসে –বিশেষ করে পাশ্চাত্য ইতিহাসে এরূপ হিটলারের সংখা অসংখ্য। তাদের ভাণ্ডারে মানুষ পুরিয়ে মারার গ্যাসচেম্বার না থাকলেও মানবতাধ্বংসী অস্ত্রের কোন কমতি ছিল না। তাই জার্মানীর হলোকাস্টে যত ইহুদীর মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী রেড ইন্ডিয়ানের মৃত্যু হয়েছে ইউরোপীয় খৃষ্টানদের সৃষ্ট আমেরিকার হলোকাস্টে। ইংরেজদের হাতে অধিকৃত হওয়ার সাথে সাথে ভয়ানক হলোকাষ্ট তথা এথনিক ক্লিন্জিং নেমে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের লক্ষ লক্ষ আদি বাসীর জীবনে। নৃশংস হলোকাস্ট নেমে এসেছিল স্পেনে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ  মুসলিমের জীবনেও। সে নৃশংস হত্যাকান্ডে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ৭ শত বছর ধরে গড়ে উঠা মুসলিম সভ্যতা। খৃষ্টান হওয়াতে তাই ইউরোপীয়দের স্রেফ লেবেল বদলিয়েছে, কিন্তু সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে হওয়াতে কোন সহায়তা মেলেনি। বরং মানবতাশূণ্য করেছে। তাই সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ, ঔপনিবেশবাদ, ফ্যাসীবাদ, নাযীবাদ ও বর্ণবাদের ন্যায় হিংস্র মতবাদের উৎপত্তি কোন বনে জঙ্গলে বা ডাকাত পুরীতে হয়নি, হয়েছে ইউরোপের খৃষ্টান ভূমিতে। হলোকাস্ট, বর্ণবাদী নির্মূল, দাস-রপ্তানী, বিশ্বযুদ্ধ ও যুদ্ধে পারমানবিক বোমা, রাসায়নিক বোমা, ক্লাস্টার বোমার ব্যবহারের ন্যায় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছে এই খৃষ্টানদের হাতেই।

 

বেঈমানের যুদ্ধই সন্ত্রাস

বেঈমানের যুদ্ধ মাত্রই সন্ত্রাস তথা ত্রাস সৃষ্টির নৃশংস হাতিয়ার। নিজেদের সে যুদ্ধগুলিকে তারাও কখনো জিহাদ বলে না। সেসব যুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার কোন নিয়েত থাকে না। বরং লক্ষ্য, প্রতিপক্ষের নির্মূল। ফলে তাতে মানবিকতা বা জাগতিক চেতনা-উর্দ্ধ কোন পবিত্রতাও থাকে না। অথচ ঈমানদারের যুদ্ধের ধারণাটাই সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার জানমাল গণ্য হয় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আমানত রূপে। জানমালের মালিক যেহেতু মহান আল্লাহতায়ালা, তাই সে জানমালের বিনিয়োগটিও হতে হয় একমাত্র তাঁরই এজেন্ডা পূরণে। ফলে মু’মিনের প্রতিটি যুদ্ধই মহান আল্লাহতায়ালার পথে তথা পবিত্র জিহাদ। এরূপ জিহাদে থাকে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার নিয়েত। থাকে জালেম শক্তির নির্মূলের চেতনা; ফলে তাতে গণহত্যা বা হলোকাস্ট নেমে আসে না। তাই মুসলিম ইতিহাসে শত শত জিহাদ হলেও কোথাও হলোকাস্ট বা গণহত্যা নেমে আসেনি। তাই ঐতিহাসিক মক্কা ও জেরুজালেম বিজয়ের দিনে কোন প্রাণহানি হয়নি। অথচ বেঈমানের সন্ত্রাসে গণহত্যা হওয়াটিই রীতি। মার্কিনীদের হাতে অধিকৃত হওয়ায় এ জন্যই বিশাল গণহত্যা নেমে এসেছে ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাকে। রোমান রাজা কন্সটান্টিনোপলের খৃষ্টান হওয়ার সাথে সাথে তার রাজ্যে কাউকে খৃষ্টান ধর্মের বাইরে থাকার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। তখন প্রজাদের সামনে মাত্র দুটি পথ খোলা রাখা হয়। হয় খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষা নেয়া, নতুবা মৃত্যুকে বেছে নেয়া। বেঈমানের দেশে এজন্যই রাজা বা শাসকের চেয়ে বড় কোন সন্ত্রাসী থাকে না। অথচ জিহাদে কোন জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে নির্মূলের এজেন্ডা থাকে না, এজেন্ডা স্রেফ জালেমের জুলুম ও মিথ্যা নির্মূল। ফলে ইসলামী সরকার কখনোই সন্ত্রাসের হাতিয়ারে পরিণত হয় না। তাই ৭ শত মুসলিম শাসনের পরও স্পেনের সংখ্যাগরিষ্ট জনগন নিজ নিজ ধর্ম নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার পেয়েছিল; এবং হলোকাস্ট আসেনি সংখ্যাগরিষ্ঠ খৃষ্টানদের জীবনে। অথচ খৃষ্টান রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার হাতে স্পেন অধিকৃত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম রূপে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়া হয় স্পেনের বহুলক্ষ মুসলিমের জীবন থেকে। একই রূপ চিত্র দেখা যায় ভারতে। সেখানে ৭ শত বছরের মুসলিম শাসনের পরও সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ হিন্দু রয়ে গেছে। মুসলিম শাসনামলে হিন্দুদের জীবনে হলোকাস্ট এসেছে -সে ইতিহাস নেই্। অথচ ভারতে মুসলিম নির্মূলের লাগাতর দাঙ্গা শুরু হয়েছে মুসলিম শাসন বিলুপ্তির সাথে সাথে। এবং অতীতে হিন্দু শাসনে হলোকাস্ট এসেছে লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধদের জীবনে।

 

পরকালীন পুরস্কারের ভাবনা ও জিহাদ

জীবনের সফলতা ও বিফলতা নিয়ে যে যাই ভাবুক, তা নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার রয়েছে নিজস্ব বিচার ও মানদণ্ড। জীবনের চুড়ান্ত সে সফলতাটি হলো, আখেরাতে অনন্ত-অসীম কালের জান্নাতী জীবন। পবিত্র কোরআনে সে বিশাল প্রাপ্তিকে বলা হয়েছে “ফাউজুন আজীম” অর্থঃ বিশাল বিজয়। সে বিজয়ের তূলনায় দুনিয়ার জীবন এতই তুচ্ছ যে, তাঁর নিজের শত্রু  কাফেরদের পার্থিব আরাম-আয়েশ বাড়াতে তাদের ঘরবাড়ী, দালান-কোঠা এবং ঘরের দরজা, সিঁড়ি ও খাট-পালং সোনা-রূপা দিয়ে গড়ে দিতেও মহান আল্লাহতায়ালার কোনরূপ আপত্তি ছিল না। কিন্তু সেগুলি তাদেরকে এজন্য দেননি যে, কাফেরদের সে বিশাল পার্থিব প্রাপ্তি দেখে আশংকা ছিল সকল মানুষের কাফের হয়ে যাওয়ার। সে বর্ণনাটি এসেছে পবিত্র কোর’আনের সুরা জুখরুফের ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর আয়াতে। মহান নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পার্থিব জীবনের গুরুত্ব যদি মশার একটি ডানার সমানও গণ্য হত তবে তিনি কাফেরদের এ দুনিয়ায় কিছুই দিতেন না। এক ফোটা পানির সাথে সকল সাগর-মহাসাগরের পানির তূলনা হয়। কারণ সকল সাগর-মহাসাগরের সমুদয় পানি যত বিশালই হোক, তা অসীম নয়। ফলে তূলনা চলে দুই সসীমের মাঝে। কিন্তু  আখেরাতের জীবন তো অন্তহীন। ফলে দুনিয়ার অর্জন -তা যত বিশালই হোক, আখেরাতের জান্নাতী অর্জনের সাথে তার কোনরূপ তূলনাই হয় না। তাই পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের বার বার আখেরাতের সফলতায় মনযোগী হতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে সাথে এ কথাও বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আখেরাতে সে বিশাল প্রাপ্তির জন্য ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করাটি অপরিহার্য। জীবনের এ চুড়ান্ত পরীক্ষায় কোনরূপ ফাঁকি বা সুপারিশ চলে না। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অপার রহমত ও পুরস্কার জুটে একমাত্র সে পরীক্ষায় পাশের পর, পূর্বে নয়। নবী-রাসূল ও তাঁদের সাথীদেরও সে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়েছে। পবিত্র কোর’আনে সে হুশিয়ারিটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে, “মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করেই অব্যাহতি দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ  অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।” –(সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩)।

মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান আনার অর্থ, মু’মিনের জীবনে পরীক্ষা যে অনিবার্য -সেটির উপরও ঈমান আনা। পরীক্ষার সে ক্ষেত্রটি হলো জিহাদ। সাচ্চা ঈমানদারদের বাছাইয়ে জিহাদ ফিল্টারের কাজ করে। বেছে নেয়া হয় জান্নাতের উপযোগী যোগ্যবান বাসিন্দাদের। সে বাছাই থেকে তখন বাদ পড়ে ভীরু-কাপুরুষ ও ঈমানের দাবীতে মিথ্যুক তথা মুনাফিকগণ। মদিনার ৩০০ জন মুনাফিক তাই জায়নামাজে তাদের মুনাফেকী দিনের পর দিন লুকিয়ে রাখতে পারলেও ওহুদের যুদ্ধ কালে সেটি লুকাতে পারিনি। যাচাই-বাছাইয়ের সে কাজে মুসলিম সমাজে জিহাদের প্রেক্ষাপট লাগাতর তৈরী করা হয় মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব পরিকল্পনার অপরিহার্য অংশরূপে। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার সে পরিকল্পনার কথাটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে, “(হে ঈমানদারগণ!) তোমাদের উপর দুর্দিন যদি আঘাত হেনে থাকে (তাতে বিস্ময়ের কি আছে?), সেরূপ আঘাত তো তাদের (কাফেরদের) উপরও এসেছে। আমি মানুষের মাঝে কালের আবর্তন ঘটাই এজন্য যে, যাতে জানতে পারি কারো (প্রকৃত) ঈমানদার।এবং তোমাদের মধ্য থেকে বেছে নেই্ শহীদদের। আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।” -(সুরা আল –ইমরান আয়াত ১৪০)।

 

জিহাদেই বিজয়

ইসলামের বিজয়ে জিহাদের গুরুত্ব অন্য কারণেও। জিহাদের অঙ্গণে যেমন ঈমানের পরীক্ষা হয়, তেমনি সে পবিত্র অঙ্গণেই প্রাপ্তি ঘটে মহান আল্লাহতায়ার গায়েবী মদদ। আসে বিজয়। ফলে জিহাদ বন্ধ হলে মহান আল্লাহতায়ার পক্ষ থেকে সাহায্য লাভও বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালা তার নিজের পক্ষ থেকে সাহায্যদানের পূর্বে মু’মিনের নিজের বিনিয়োগটি দেখতে চান। মু’মিনগণ যখন মহান আল্লাহতায়ালার পথে তাঁদের প্রিয় জীবনের কোরবানী পেশে জিহাদের ময়দানে হাজির হন, তখন সে ময়দানে তারা একাকী থাকেন না। তাদের সাহায্যে হাজির হন মহান আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাগণও। ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাহিনীও তখন বিশাল বিশাল বাহিনীর উপর বিজয়ী হয়। ইসলামের ইতিহাস তো সেরূপ ঘটনায় ভরপুর। মুসলিমদের পক্ষ থেকে জানমালের সে নিজ বিনিয়োগটি বন্ধ হলে বন্ধ হয়ে যায় মহান আল্লাহর বিনিয়োগও। আর মহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কি বিজয় সম্ভব? ফলে শুরু হয় লাগাতর পরাজয়। সে বিষয়টি ইসলামী আক্বীদার এতটাই মৌলিক বিষয় যে, জিহাদ তথা মহান আল্লাহতায়ালার গায়েবী সাহায্য লাভের সে পথটি অতীতে কখনোই বন্ধ করা হয়নি। গায়েবী সাহায্য লাভ ও জান্নাতের সে দ্বারটি খোলা রাখতে খোলাফায়ে রাশেদার আমলেই শুধু নয়, উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া আমলেও সরকারি নীতি ছিল ইসলামের শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবছর জিহাদ সংগঠিত করা। সে সাথে জনগণকে মুসলিমদের মুজাহিদ রূপে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। তাছাড়া যুক্তি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে কাফের তথা অবাধ্য-বিদ্রোহীদের দখলদারী থাকবে অথচ মু’মিনদের পক্ষ থেকে সে দখলদারী মুক্তির যুদ্ধ থাকবে না সেটিই বা কীরূপে ভাবা যায়?  মুসলিমের জীবনে এটিই তো প্রকৃত মুক্তযুদ্ধ। মুসলিম ভূমি থেকে যখনই লুপ্ত হয়েছে জিহাদ, তখনই শুরু হয়েছে দ্রুত নীচে নামার পালা। পতনের সে ধারা বস্তুত এখনও অব্যাহত রয়েছে।

 

চুক্তি মহান আল্লাহতায়ালার সাথে

মহান আল্লাহতায়ালার কাছে নবী-রাসূলদেরই পরই ছিদ্দীকীন ও শহীদদের মর্যাদা। হযরত মহম্মদ (সাঃ) এর পর আর কেউ নবীর মর্যাদা পাবেন না। কিন্তু শহীদের মর্যাদা পাবেন অনেকেই। শহীদগণ নিহত হয়েও জীবিতের সন্মান পান। পান বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের সন্মানিত পুরস্কার। মহান আল্লাহতায়ালা সে মহান শহীদদের বেছে নেয়া হয় জিহাদের ময়দান থেকে; মসজিদ-মাদ্রাসা, জায়নামাজ বা আরাফার মাঠ থেকে নয়। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে মু’মিনদের সম্পর্ক যে কত গভীর এবং শহীদ হওয়াটি তাদের জীবনে যে কতটা স্বাভাবিক -সে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট ভাষায় এসেছে পবিত্র কোর’আনে। বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের থেকে কিনে নিয়েছেন তাদের জীবন ও সম্পদ; সেটি এ শর্তে যে বিনিময়ে তারা পাবে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়; তারা নিধন করে (ইসলামের শত্রুদের) এবং নিজরাও নিহত হয়। (আল্লাহর পক্ষ থেকে) এ বিষয়ে দৃঢ় ওয়াদা ব্যক্ত হয়েছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোর’আনে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা আর কে শ্রেষ্ঠতর? তোমরা (আল্লাহর সাথে) ক্রয়-বিক্রয়ের যে চুক্তি করলে তাতে আনন্দ প্রকাশ করো। এটিই তো মহা সাফল্য। -(সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১)।

একটি দেশে কতজন প্রকৃত ঈমানদারের বসবাস -সেটি সেদেশে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বা নামাজে ও তাবলীগ জামাতের এজতেমায় লোকসমাগম দেখে বুঝা যায় না। সেটি বুঝা যায় জিহাদের ময়দানে লড়াকু মুজাহিদদের সংখ্যা দেখে। বুঝা যায় শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেখে। ইসলামের শত্রুশক্তি তাই দেশে দেশে বিপুল সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসা বা তাবলীগ জামাতের এজতেমায় বিশাল লোক-জমায়েত দেখে ভয় পায় না। ভয় পায় জিহাদের ময়দানে হাজিরা দেখে। ফলে প্রচারণা শুরু হয় জিহাদের ন্যায় ইসলামের সনাতন ইন্সটিটিউশনের বিরুদ্ধে। জিহাদকে তখন সন্ত্রাস বলা হয়। তখন জিহাদ রুখতে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গড়ে উঠে পূর্ব ও পশ্চিমের ৬০’য়ের অধীক দেশ নিয়ে –যেমনটি দাবী করে থাকেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরী। অথচ এতবড় কোয়ালিশন অতীতের দুটি বিশ্বযুদ্ধে কোন বিশ্বশক্তির হামলা রুখতেও গড়ে উঠেনি। জিহাদের মধ্যেই যে ইসলামের শক্তি এবং মুসলিমের বিজয় ও মর্যাদা –সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে? জিহাদের মধ্যে থাকে যে মহান আল্লাহতায়ালার অপ্রতিরোধ্য শক্তি -সেটি তারা রুখবে কেমনে? ২৯/০৮/২০১৬

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *