আধ্যাত্মিক বিপ্লবে রোযা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 26, 2018
- ইসলাম
- No Comments.
আয়োজন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণের
আধ্যাত্মিকতার অর্থ সংসারত্যাগী বৈরাগ্য নয়,পানাহার পরিত্যাগও নয়। বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ ও পরকালে জবাবদেহীতার ভয়।স্মরণ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমানি দায়বদ্ধতার। ইসলামে এটিই যিকর। জবাবদেহীতা হলো নিজের আমলনামাহ নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে খাড়া হওয়ার।ভয় সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি ও জাহান্নামের আগুণে পড়ার। এরূপ ভয়ই ব্যক্তিকে প্রতিপদে পাপাচার থেকে বাঁচায় এবং জান্নাতমুখি করে। তখন তার চথচলাটি সবসময় সিরাতুল মুস্তাকীমে হয়।মানব জীবনের এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবও। এরূপ আধ্যাত্মিক বিপ্লবে রোযার ভূমিকাটি বিশাল ও অনন্য। সমগ্র মানব ইতিহাসে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ।মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণের মূল আয়োজক এখানে খোদ মহান আল্লাহতায়ালা।লক্ষ্য,মানব মনে তাকওয়া বৃদ্ধি।তাকওয়ার অর্থ ভয়। মানব চরিত্রের এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। ভয় এখানে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার এবং সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত হওয়ার। ভয়,মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদেহীতার।
মানব সৃষ্টি নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের ঘোষনাটি হলো,“ওমা খালাকতুল জিন্নাহ ওয়াল ইনসানা ইল্লা লিইয়াবুদুন” –(সুরা জারিয়া,আয়াত ৫৬)। অর্থঃ “এবং আমি জ্বিন ও ইনসানকে এছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করেনি যে তারা আমার ইবাদত করবে।” অতএব প্রতিটি নরনারীর উপর অর্পিত মূল দায়ভারটি হলো সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহতায়ালার সে অভিপ্রায়টি পূরণে তথা তাঁর ইবাদতে লেগে থাকা।মু’মিনের জীবনে সবচেয়ে বড় যিকর তো সর্বাবস্থায় ইবাদত আদায়ের ফিকর। সে তখন পরিপূর্ণ একাত্ম হবে কোরআনে ঘোষিত সে মিশনের সাথেঃ “নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার বেচেথাকা ও মৃত্যু রাব্বুল আলামিনের জন্য।” মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ও সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হলো ইবাদতে তথা আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনে ব্যর্থতা।ব্যবসা-বানিজ্য,রাজনীতি বা পেশাদারিতে বিশাল সফলতা দিয়ে সে ব্যর্থতার ক্ষতি পরকালে পোষানা যাবে না। ইবাদতের যে ব্যক্তি যতটা সফল,এ জীবনে বাঁচাটিও তার জন্য ততটা সার্থক। এজন্যই শহীদগণ মহান আল্লাহর দরবারে শ্রেষ্ঠ। তাদের ইবাদতের মানই ভিন্ন। আল্লাহর রাস্তায় তারা নিজের প্রিয় জীবনকেও বিলিয়ে দেয়।পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন বিজয়ী হয়,শরিয়ত প্রতিষ্ঠা পায় এবং শত্রুর হামলা থেকে মুসলিম ভূমি প্রতিরক্ষা পায় তো এরূপ শহীদদের কোরবানীতে;জিহাদবিমুখ কোটি কোটি নামাযী,রোযাদার,হাজি,সুফি,দরবেশ,আলেম ও আল্লামাদের কারণে নয়। মহান আল্লাহতায়ালা শহীদদের জীবনে তাই কবরের আযাব,আলমে বারযাখ,পুল সিরাত রাখেননি। রোজ-হাশরের বিচার দিনের জন্য তাদের একটি দিন বা মুহুর্তও অপেক্ষায় থাকতে হয় না। শহীদ হওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য জান্নাতের দরওয়াজা খুলে দেন ও অফুরন্ত নেয়ামতের ভান্ডার পেশ করেন।পবিত্র কোরআনে সে বর্ণনা কি কম?
মানব জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ তো তাই যা ব্যক্তির জীবনে সর্বোত্তম ইবাদতের সামর্থ বাড়ায়।রোযার প্রশিক্ষণ এক্ষেত্রে অনন্য। মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদতে মধ্যে থাকার অর্থ হলো মহান আল্লাহতায়ালার যিকরের মধ্যে থাকা। নামাযকেও তাই পবিত্র কোরআনে যিকর বলা হয়েছে। যিকর বলা হয়েছে কোরআন পাঠকেও। রোযাদারের মনে সে যিকর থাকে মাসব্যাপী। রোযাতে মু’মিনের যিকর হয় শুধু মন দিয়ে নয়,দেহ দিয়েও।সারা দিনের রোযাতে যে যিকর -তারই ধারাবাহিকতা চলে তারাবির নামায,সেহরী ও ইফতারিতে।খাদ্য-পানীয় দেখলে রোযাদারের মনে সে যিকর বা স্মরণ আরো বেড়ে যায়।যিকরের সবচেয়ে বড় ফায়দাটি হলোঃ মু’মিনের যিকরের জবাবে মহান আল্লাহতায়ালা নিজেও তাকে স্মরণ করেন। পবিত্র কোরআনে সে প্রতিশ্রুতিটি এসেছে এভাবেঃ “ফাযকুরুনি আযকুরকুম”।অর্থঃ তোমরা আমার যিকর করো,আমিও তোমাদের যিকর করবো।-(সুরা বাকারা)।হাদীসে পাকে বর্ণিত হয়েছেঃ মহান রাব্বুল আলামীন তার যিকরকারি মু’মিন বান্দাদের স্মরণ করেন ফেরেশতাদের মজলিসে।এভাবে বান্দার সাথে বাড়ে মহান রাব্বুল আলামীনের সরাসরি সংযোগ।মু’মিনের জীবনে এটি এক বিশাল অর্জন। এমন সংযোগে পুষ্টি পায় ব্যক্তির আত্মা।রোযা সে পুষ্টি জোগায় পুরা একটি মাস ধরে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বা যাকাতে দীর্ঘকাল লাগে না।ফলে দীর্ঘকালীন সংযোগও গড়ে উঠে না। হজে দীর্ঘকাল লাগলেও রোযার মত প্রতিবছর আসেনা।মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে আত্মিক সংযোগটিই মু’মিনের জীবনে আধ্যাত্মিকতা।এরূপ আধ্যাত্মিক বিপ্লবে রোযার ভূমিকাটি অনন্য।রোযা মাসব্যাপী ফরজ করে মহান আল্লাহতায়ালা এভাবে তার বান্দাকে পুরা এক মাস তাঁর নিজ স্মরনে থাকার ফুরসত দিয়েছেন।অন্য কোন ইবাদতে সে দীর্ঘকালীন সুযোগটি নেই।এভাবে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণে থাকার অর্থই হলো,লাগাতর তাঁর করুণা লাভ ও মাগফেরাত লাভ।রোযা এভাবে মানব জীবনে মহাকল্যাণের সুযোগ করে দেয়। সুফি দরবেশদের মাজারে বা খানকাতে কি সে সুযোগ জুটে? মহান নবীজী (সাঃ)তাই এ মহাকল্যাণময় মাসটির প্রস্তুতি এক মাস পূর্ব থেকেই নেয়া শুরু করতেন।যে ব্যক্তি এ মাসটি হাতে পেয়েও তা থেকে লাভবান হলো না তার জন্য এটিকে এক ভয়ানক ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেছেন।এ ব্যর্থতা কি বছরের অন্য কোন মাসের ইবাদতে পূরণ করা সম্ভব?
বাড়ায় আধ্যাত্মীক সংযোগ
তাযকিয়ায়ে নাফস বা আধ্যাত্মীক উৎকর্ষের জন্য নির্জনে ধ্যানমগ্ন হওয়াটি জরুরী। হাদীসে বলা হয়েছে,শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো চিন্তা-ভাবনা করা।কারণ,চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমেই তো মহান আল্লাহতায়ালার সাথে ব্যক্তির আধ্যাত্মীক সংযোগটি বাড়ে।যারা চিন্তা-ভাবনা করে না পবিত্র কোরআনে তাদেরকে পশু বলে অভিহিত করা হয়েছে।সেটি একবার নয়,বহুবার। ভাবনা শূণ্য মন মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এতটাই অপছন্দের যে আফালা তাফাক্কারুন (কেন চিন্তাভাবনা করো না?),আফালা তাদাব্বারুন (কেন গভীর ভাবে মনোনিবিষ্ট করোনা?),আফালা তাক্বিলূন (কেন আক্বলকে কাজে লাগাও না?)–এরূপ প্রশ্ন পবিত্র কোরআনে তিনি বার বার রেখেছেন। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে নবীজীও নির্জনে চিন্তা-ভাবনার লক্ষ্যে হিরা পর্বতের গুহায় ছুটে যেতেন। ঘর-সংসার ছেড়ে অনেকেই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বনজঙ্গল নিরাপদ নয়,সেখানে থাকে হিংস্র পশু ও বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের কামড়ে প্রাণনাশের আশংকা। ফলে সেখানে নেয়া মহান আল্লাহতায়ালার রীতি নয়,বান্দাকে তিনি নিজ ঘরের পবিত্র ও নিরাপদ আশ্রয়ে ডাকেন। সেটি যেমন প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযে ও তারাবিতে,তেমনি রামাদ্বানের ই’তিক্বাফে। ই’তেক্বাফে মু’মিন পায় ঘর-সংসার ও কাজকর্ম থেকে দূরে সরে নির্জনে আল্লাহকে ডাকার সুযোগ। এভাবে মু’মিন পায় একাকী আত্মসমালোচনা ও আত্ম-উপলদ্ধির ফুরসত।পায় বেশী বেশী নফল নামায,কোরআন পাঠ ও কোরআনের আয়াতগুলোর উপর একক মনে ভাববার সুযোগ। রমাদ্বানে এভাবেই বাড়ে তাকওয়া ও তাজকিয়ায়ে নাফস। হজে গিয়ে ক্বাবার তাওয়াফ এবং আরাফা,মিনা ও মোজদালিফায় অবস্থানও সে সুযোগ দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “নিশ্চয়ই নামায অন্যায় কর্ম ও অশ্লিলতা থেকে দূরে রাখে।” কথা হলো,অন্যায় ও অশ্লিলতা থেকে যে ব্যক্তি দূরে থাকে তাঁর কাছে কি পাপ বা অপবিত্রতা আসতে পারে? পাপের পথে যাত্রা শুরু হয় তো অশ্লিলতা ও অন্যায় কর্মের মধ্য দিয়ে।
ইবাদত দর্শনীয় হলে তাতে রিয়াকারির সুযোগ থাকে।রিয়াকারি তো শিরক।ফলে এমন লোক দেখানো ইবাদতে বাড়ে আযাব। নামায,হজ ও যাকাত নির্জনে হয় না,অন্যরাও তা দেখতে পায়। যাকাত দিলে যে ব্যক্তি যাকাতের অর্থ পায় সে ব্যক্তি তা টের পায়। যে ঘরে নামায পড়া হয় সে ঘরের অন্যরা বাসিন্দা সেটি দেখে। হজও ঘটে প্রকাশ্যে। ফলে এরূপ প্রকাশ্য ইবাদতে লোকদেখানো ভাবটাও আসতে পারে। কিন্তু রোযা দর্শনীয় নয়,পালিত হয় গোপনে। গোপনে পানাহার করলে সেটি কে দেখবে? কিন্তু রোযাদার সেটি করে না একমাত্র আল্লাহর ভয়ে। মহান আল্লাহ তাই বলেন,“রোযা আমার জন্য,আমিই তার পুরস্কার দিব।”-সহীহ আল বোখারী ও মুসলিম। ক্ষুদার্ত এবং পীপাসার্ত ব্যক্তির পানাহারের ভাবনা স্মরণ করিয়ে দেয় সে রোযা আছে। তখন তার মনে জাগে মহান আল্লাহর ভয়। মু’মিনের জীবনে সে ভয়টুকুই তো প্রকৃত তাকওয়া এবং মহান আল্লাহর যিকর। রামাদ্বানের একমাস ব্যাপী রোযার মধ্য দিয়ে সে ভয় ও যিকর মু’মিনের জীবনে অভ্যাসে পরিণত হয়। বছরের বাকী সময়টা চলে সে অভ্যাসের উপর। রোযা এভাবেই মানুষের প্রবৃত্তির গলায় লাগাম পড়িয়ে দেয়। একবার গলায় লাগাম নিয়ে চলতে অভ্যস্থ হলে পরে আর সেরূপ চলতে অসুবিধা হয় না। রোযা তো মাসব্যাপী সে অভ্যাসই গড়ে। সে অভ্যাস নিয়ে বাঁকি ১১ মাস কাটিয়ে দেয়া তার জন্য সহজ হয়ে যায়। ইমাম আল গাজ্জালী (রহঃ)বলেন,রোযাদারের উচিত দিনে না ঘুমিয়ে বরং জেগে ক্ষুধা ও পীপাসার কষ্ট অনুভব করা। এরূপ কষ্টে থাকার মধ্যেই বাড়ে আধ্যাত্মিকতা। ঘুমিয়ে থাকলে সে সুযোগ মেলে না।
আঘাত শয়তানী হাতিয়ারগুলির উপর
রোযা আঘাত হানে শয়তানের মূল হাতিয়ারগুলির উপর। সে হাতিয়ারগুলি হলো পানাহারের মোহ,অশ্লিলতা ও যৌনতার লিপ্সা,অহেতুক কথা এবং কুৎসা ও গীবত রটনার নেশা। মানব জীবনে বড় বড় পাপকর্মগুলো তো ঘটে প্রবৃত্তির এরূপ নেশাগ্রস্ততা থেকে। এরূপ নেশাগ্রস্ত মানুষেরা মূলত শয়তানের দ্বারা অধিকৃত। কুৎসা ও গীবত মানব সমাজের পারস্পারিক বন্ধন থেকে সিমেন্ট খুলে দেয়। ফলে সমাজে কলহ-বিবাদ ও সংঘাত বাড়ে। দেহের ক্ষুধা বা প্রবৃত্তির নেশা জীবনের চালিকা শক্তি হলে সে জীবনে আধ্যাত্মিকতা স্থান পায় না। মানব তখন পশুতে পরিণত হয়। আধ্যাত্মিক বিপ্লবের মূল চাবিটি হলো এরূপ জৈবিক প্রবৃত্তিগুলির উপর নিয়ন্ত্রন। রোযা এক মাস এগুলিকে দাবীয়ে রাখে। রোযা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে ক্রোধ,ইর্ষা ও মনের লাগামহীন খায়েশাতের উপর।রোযাদারের চোখ,জবান,কান,হাতপা এবং হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়াও তখন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত হয়। রোযাদারের জীবনে এভাবেই আসে আধ্যাত্মিক বিপ্লব। কিন্তু যার জীবনে সে বিপ্লব ঘটে না তার রোযা অকেজো বা ব্যর্থ হয়ে যায়। নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ “যে ব্যক্তি রমযানে মিথ্যা ও গুনাহ পরিত্যাগ করতে পারলো না আল্লাহতায়ালা তার পানাহার পরিত্যাগও চান না।” -সহিহ আল বোখারি। এমন ব্যর্থ রোযাদারদের সম্মদ্ধে নবীজী (সাঃ) বলেছেন,“রোযা থেকে অনেকে শুধু ক্ষুধা ও পীপাসা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করে না।”
মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতির কল্যাণে শুধু কোরআনই নাযিল করেননি,কোরআনের আলোকে মানুষ গড়ার জন্য বিস্তারিত এক ম্যানুয়্যাল বা প্রশিক্ষণের পদ্ধতিও দিয়েছেন।নামায-রোযা-হজ-যাকাত তো সে প্রশিক্ষণেরই অংশ। তবে প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় আয়োজন রামাদ্বানে।এ প্রশিক্ষণ আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধির,প্রবৃত্তির উপর আত্মার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার। কোন বিপ্লবই নিছক কোন বিপ্লবী দর্শনের গুণে প্রতিষ্ঠা পায় না।সে জন্য লোকবল চাই,সংগঠন চাই,রাষ্ট্র চাই এবং বিপ্লবী লোক গড়ার লাগাতর প্রশিক্ষণও চাই। চাই,মানুষের ভিতর থেকে আমূল পরিবর্তন। তবে শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাতের মধ্যেই সে প্রক্রিয়া সীমিত নয়,বরং সে মহান বিপ্লবের লক্ষ্যে মসজিদ-মাদ্রাসার পাশাপাশি সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ সংশ্লিষ্টতার নির্দেশও রয়েছে।সেরূপ সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে মহান নবীজী (সাঃ)ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে।ধর্মকর্ম ও ইসলামি জ্ঞান বিতরনের কাজ তখন মসজিদ-মাদ্রাসায় সীমিত থাকেনি। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিও তাতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। ফলে সে সময় অতি দ্রুত মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মান সেদিন সম্ভব হয়েছিল।কিন্তু পরবর্তীতে সে প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয়েছে,বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে ইসলামের প্রতিপক্ষ রূপে খাড়া করা হয়েছে। ফলে তখন থেকেই শুরু হয়েছে মুসলমানদের নীচে নামা।এবং আজও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
উচ্চতর মানব নিছক মানব ঘরে জন্ম নেয়া বা উন্নত পানাহার ও আলোবাতাসের কারণে গড়ে উঠে না। এমনকি আলেম বা দরবেশের ঘরে জন্ম নেয়াতেও সে সম্ভাবনাটি বাড়ে না। সে জন্য চাই নিবীড় প্রশিক্ষণ। এমন প্রশিক্ষণ অন্য জীবজন্তু বা কীটপতঙ্গের জীবনে প্রয়োজন পড়ে না। বাঘ জন্মের পর থেকেই বাঘ। কিন্তু মানুষকে মানবিক পরিচয় পেতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দীর্ঘ স্তর অতিক্রম করতে হয়। শিক্ষা লাভের সে স্তরগুলি বাধাগ্রস্ত হলে মানুষ রূপে বেড়ে উঠাতেই ছেদ পড়ে। পাপুয়া নিউগিনি বা আন্দামানের দ্বীপে বহু মানব সন্তান আজও পশুর ন্যায় জঙ্গলের গুহায় উলঙ্গ ভাবে বাঁচে মূলতঃ শিক্ষার সে প্রক্রিয়া পাড়ি না দেয়ার কারণে। অথচ অন্য মানুষদের থেকে দৈহীক ভাবে তাদের মাঝে কোন ভিন্নতা নেই। এমন কি যারা নিছক বাঁচার স্বার্থে বাঁচে তেমন মানুষরূপী বহু ভদ্রবেশী পশুও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ লাভের গুরুত্ব বুঝে না। এরাই অস্ত্র হাতে পেলে পশুর চেয়েও হিংস্রতর হয়ে উঠে। বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে এদের হাতেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৃত্যু। সকল পশুকুলও এত মানুষের হত্যা করতে পেরেছে? যেসব ধর্ম বা মতবাদগুলি উচ্চতর মানব বা সভ্যতা নির্মাণের স্বপ্ন দেখে না সেসব ধর্ম ও মতবাদের অনুসারিদের কাছেও ধর্মীয় শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গুরুত্ব পায় না। অথচ ইসলামে রয়েছে ওহীর জ্ঞান বিতরণের বিশাল গুরুত্ব ও আয়োজন। নামায-রোযা, হজ-যাকাত ফরজ করার আগে ফরজ করা হয়েছে কোরআনের জ্ঞানার্জনকে।কোরআন নাযিল শুরু হয়েছে “ইকরা” অর্থ পড় দিয়ে।মানব চরিত্রে বিপ্লবের মূল এবং প্রধান হাতিয়ারটি হলো ওহীর জ্ঞান।জ্ঞানের সাথে চাই,মহান আল্লাহর নির্দেশিত প্রশিক্ষণ।মহান আল্লাহতায়ালা তাই মানব চরিত্রে বিপ্লব আনার কাজকে শুধু ওহীর জ্ঞানদানের মাঝে সীমিত রাখেননি।দিয়েছেন,নামায-রোযা,হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতের বিধান।ডাক্তার,ইঞ্জিনীয়ার,বিজ্ঞানী বা অন্য কোন পেশাদার হওয়ার জন্য ছাত্রকে শুধু বই পড়লে চলে না তাকে সে পেশায় বছরের পর বছর প্রশিক্ষনও নিতে হয়।কিন্তু মুসলমান রূপে গড়ে তোলার কাজ তো বিশাল। একাজটি পেশাদারি দক্ষতার বিষয় নয়।পেশাদার ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার তো অতি ব্যভিচারি ও মদ্যপায়ী এক দৃর্বৃত্তও হতে পারে।পেশাদারি ট্রেনিংয়ের লক্ষ্য স্রেফ ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার গড়া;ধর্ম বা দর্শন শেখানো নয়,নীতিবান মানব গড়াও নয়।কিন্তু মুসলমান হ্ওযার জন্য চাই ঈমান-আক্বীদা,চেতনা-চরিত্র ও কর্ম জুড়ে এক আমূল বিপ্লব।ফলে এখানে শুধু জ্ঞান হলে চলে না,চাই অবিরাম ধ্যানমগ্নতা (যিকর),চাই সিরাতুল মুস্তাকীমের চলার আগ্রহ, চাই পরকালে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদেহীতার ভয় (তাকওয়া।
কার্ল মার্কসের “ডাস ক্যাপিটাল” ও “কম্যুনিষ্ট পার্টির মেনিফেস্টো” আজ থেকে শত বছর আগে যেমন ছিল তেমনি আজও আছে।কিন্তু কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্বের ন্যায় উদ্বুদ্ধ লোক নাই,সংগঠন নাই এবং মানুষের মনকে আন্দোলিত করার মত প্রশিক্ষণও নাই।ফলে কোন দেশে কম্যুনিষ্ট বিপ্লবও নাই। ফলে পুঁজিবাদের বিপরীতে কম্যুনিজম আজ আর তাই কোন শক্তিই নয়।কম্যুনিষ্টদের লক্ষ্য সর্বমুখি ছিল না,ছিল সীমিত।তারা চেয়েছিল উংপাদনের প্রক্রিয়া ও সম্পদের বন্টনে বিপ্লব। চেয়েছিল ভূমি ও কলকারখানার উপর শ্রমিকের মালিকানা প্রতিষ্ঠা। মানুষের আধ্যাত্মিক,নৈতীক ও চারিত্রিক বিপ্লব নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা ছিল না।ভাবনা ছিল না নাগরিকগণ পরকালে জান্নাত পাবে,না জাহান্নাম পাবে -তা নিয়েও। কিন্তু এরপরও সে সীমিত লক্ষ্যের বিপ্লবের জন্যও তাদেরকে নিজস্ব ধারার বিপুল সংখ্যক মানুষ গড়তে হয়েছে।দেশে দেশে কম্যুনিষ্ট পার্টি গড়তে হয়েছে এবং কম্যুনিজমের প্রচারে বিশাল সাহিত্যও গড়ে তুলতে হয়েছে। সে সাথে রাশিয়ার মত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। সে দখলদারির ফলে কম্যুনিজম রাতারাতি বিশ্বশক্তিতে পরিনত হয়।এবং যখন সে রাষ্ট্র হাতছাড়া হয়েছে তখন বিলুপ্ত হয়েছে বিশ্বশক্তির সে মর্যাদা। একই ভাবে ইসলাম শক্তিহীন হয়েছে মুসলিম ভূমিগুলি দেশী ও বিদেশী শত্রুদের হাতে অধিকৃত হওয়ায়।শত্রুশক্তির দখলকারির কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয়েছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।পরিকল্পিত ভাবে বন্ধ করা হয়েছে মুসলিম জীবনে ইসলামি শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক বিপ্লবের প্রশিক্ষণ।বরং রাষ্ট্রের সকল সামর্থের বিনিয়োগ হচ্ছে মুসলমানদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে। ফলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়লেও ইসলামের প্রতিষ্ঠা বাড়েনি। মুসলমনাদের শক্তি ও ইজ্জতও বাড়েনি।
মহান আল্লাহতায়ালার ভিশন
মানবসৃষ্টি নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব ভিশন রয়েছে। রোযার মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বুঝতে হলে মহান আল্লাহতায়ালার সে মহান ভিশনটি অবশ্য বুঝতে হবে। সে ভিশনটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি পূরণে মুসলমানদের জন্য তিনি একটি মিশনও নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তাদের জন্য লাগাতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।শুধু রোযা নয়,নামায-হজ-যাকাতও সে প্রশিক্ষণের অংশ। পবিত্র কোরআনে তাঁর সে ভিশনটি তিনি বার ঘোষিত হয়েছে।সেটি “লিহুযহিরাহু আলাদ্দীনি কুল্লিহি” অর্থাৎ সকল ধর্ম ও মতাদর্শের উপর তাঁর দ্বীনের বিজয়। বিজয় আনার কাজে ঈমানদারগণ তাঁর খলিফা রূপে কাজ করবে সেটিই মহান আল্লাহতায়ালার প্রত্যাশা। রোযা ফরয করার লক্ষ্যে মহান আল্লাহতায়ালা মাত্র দুটি আয়াত নাযিল করেছেন সেটি সুরা বাকারার ১৮৩ ও ১৮৫ নম্বর আয়াত। তাতেই বিশ্বের শত কোটির বেশী মানুষ রোযা রাখে। কিন্তু ইসলামকে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী করার লক্ষ্যে মহান আল্লাহর যে নির্দেশ সেটি পূরণে মুসলিমদের মাঝে সে আয়োজন কই?
মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর ভিশন পূরণে মু’মিনের জীবনে যে মিশনটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেটি হলোঃ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সেটি “আ’’মিরু বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার”। এ কাজ যেমন বিশাল,তেমনি এ কাজের পুরস্কারও বিশাল। একাজ চায় জানমালের বিশাল বিনিয়োগ।সাহাবাদের বেশীর ভাগ এ কাজে শহীদ হয়ে গেছেন। এ মিশন পালনে মু’মিনদের সামর্থ বাড়াতে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণের আয়োজনও বিশাল। পবিত্র কোরআনের ছত্রে ছত্রে সে প্রস্তুতির তাগিদ। এবং সে প্রস্তুতির শুরুটি কোরআন বুঝার মধ্য দিয়ে। মু’মিন রূপে বেড়ে উঠার এটিই ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিমূল। এখানে ব্যর্থ হলে মিশনের বাঁকি কাজেও সে ব্যর্থ হতে বাধ্য।মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত সিরাতুল মুস্তাকীমে চলায় পবিত্র কোরআন হলো রোডম্যাপ। এ রোডম্যাপই জান্নাতের পথ দেখায়। ফলে সে কোরআনি রোডম্যাপের জ্ঞান ছাড়া পথ চলা যে নিশ্চিত ভ্রান্ত পথে হবে এবং জাহান্নামে পৌঁছাবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ চলে? কোরআন বুঝার এ ব্যর্থতা ব্যক্তিকে যে জাহেলে পরিণত করে ও জাহান্নামের আযাব ডেকে –সেটি যেমন নবীজী (সাঃ)র আমলে যেমন সত্য ছিল তেমনি আজও তো সত্য। আধুনিক যুগের জাহেলগণ বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে চমক সৃষ্টি করতে পারে, চাঁদেও নামতে পারে,কিন্তু ওহীর জ্ঞানের অজ্ঞতায় তারা কি আদিম জাহেলদের থেকে আদৌ ভিন্নতর? এরূপ জাহেলগণ নবেল প্রাইজ পেলেও কি মহান আল্লাহতায়ার ভিশন পূরণে সহায়ক হতে পারে? পবিত্র জান্নাতে কি এমন জাহেলগণ কোন কালেও প্রবেশাধিকার পাবে?
অন্য কোন ধর্মে সর্বাত্মক রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের কোন ধারণা নাই,কর্মসূচীও নাই। ফলে ইসলামের ন্যায় অন্য ধর্মে প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতির আয়োজনও নাই। ইসলাম এজন্যই অনন্য। অন্যধর্মে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয়; গীর্জা,মন্দির বা মঠের মন্ত্রপাঠ সাধারণ খৃষ্টান,হিন্দু ও বৌদ্ধকে না জানলেও চলে। তাদের পক্ষ থেকে গীর্জার পাদ্রী,মন্দিরের ঠাকুর বা মঠের ভিক্ষুকগণ করলেই চলে।ফলে অন্যকোন ধর্মগ্রন্থে কেউ হাফেজ হয় না। অথচ পবিত্র কোরআন শিক্ষা করা,কিছু সুরা মুখস্থ করা,আলেম হওয়া এবং নিজের ইবাদত নিজে করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ। নইলে মুসলমান হওয়াই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইসলাম ব্যক্তিকে তার নিজ নিজ কাজকর্ম,শয়ন বা বিশ্রাম থেকে উঠিয়ে প্রত্যহ ৫ বার মসজিদে নামাযে ডাকে।অন্য ধর্মগুলি দিনে ৫ বার কেন,একবারও ডাকে না। অন্য কোন ধর্মে মাসভর রোযার ন্যায় প্রশিক্ষণের আয়োজনও নাই।নিজ-কষ্টে উপার্জিত অর্থ থেকে যাকাত,ফিতরা,ওশর ও সাদকা রূপে অন্যদের ভাগ দিতেও বলে না।বহুশত বা বহুহাজার মাইল অতিক্রম করে হজে যেতেও নির্দেশ দেয় না। ভাষা,বর্ণ,ভৌগলিকতা ও আঞ্চলিকতার নামে গড়া বিভক্তির দেয়ালগুলো ভেঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় বিশ্বভ্রাত্বের বন্ধন গড়ার যে কঠোর নির্দেশটি ইসলাম দেয়,অন্য ধর্ম সেটিও দেয় না।ভিশন যত উন্নত হয়,মিশন ও প্রশিক্ষণের মাত্রাও তত উন্নত হয়।ইসলামের যা কিছু মহান তার মূলে তো মহান রাব্বুল আলামীন ও তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআন।। তাই ইসলামের সাথে কি অন্য কোন ধর্মের তূলনা হয়? ফলে ইসলাম যে মাপের চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লব আনে সেটি কি অন্য ধর্মের অনুসারিগণ কল্পনা করতে পারে?
মাহে রামাদ্বানের ন্যায় বছরের আর কোন মাসেই এত কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন নাই। এ মাসে খতম তারাবিহ হয় মসজিদে মসজিদে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত উমর (রাঃ)এর কল্যাণময় অবদান অনেক।বহু নেক কর্মের মাঝে তাঁর আরেক বিশাল নেক কর্ম হলো,তারাবীর নামাযকে তিনি জামাতে পড়ার রেওয়াজটি চালু করেন। ফলে মুসলমানগণ অন্তুতঃ বছরে একবার পুরা কোরআনপাকের আবৃত্তি শুনতে পায়। অথচ বহু কোটি মুসলিমের জীবনে নিজ উদ্যেোগে সেটি কি সারা জীবনে একবারও ঘটে? সে আমলে সেটি ছিল অসম্ভব। বর্তমান যুগে অতি সহজ হলো একখন্ড কোরআন সংগ্রহ করা।অনেক সময় বিনমূলেও মেলে। কিন্তু সে আমলে সে সুযোগ ছিল না। প্রথমবার মাত্র ৪ খন্ড কোরআন সংকলিত হয় হযরত উসমান (রাঃ)র আমলে। তখন পবিত্র কোরআন ছিল হাফিজদের স্মৃতিতে। জ্ঞানের এ সর্বশ্রেষ্ঠ ভান্ডারের সাথে সাধারণ মানুষের সংযোগের আয়োজনটি শুরু হয় তারাবিতে কোরআন খতমের মধ্য দিয়ে।অন্য কোন ধর্মে সাধারন মানুষের মাঝে কি ধর্মীয় জ্ঞান বিতরণের এরূপ আয়োজন আছে? নবীজী (আঃ)ও সাহাবায়ে কেরামদের যুগে এমনকি ফজর,মাগরিব ও এশার নামাযেও দীর্ঘ ছুরা পাঠ করা হতো। যারা কোরআনের ভাষা বুঝে তাদের জন্য এ হলো বিশাল নেয়ামত।ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাধারণ মানুষ এভাবে ওহীর জ্ঞান পেয়েছে ইমামের তেলাওয়াত থেকে,মাদ্রাসা বা মকতব থেকে নয়। জ্ঞানের রাজ্যে বিপ্লবে ও সমাজ পরিবর্তনে তেলাওয়াতের গুরুত্ব তাই বিশাল। আজও আরব বিশ্বে ইসলামের পক্ষে যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে তার মূলে তো দেশের প্রতি কোণে ব্যাপক কোরআন তেলাওয়াত। মানব মনকে আন্দোলিত করতে ও এক আমূল বিপ্লবে দীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে কোরআনের সামর্থ তো অতূলনীয়। বীজ সর্বত্র ছিটালে কিছু বীজ যে উর্বর ভূমিতে পড়বে ও বিশাল বৃক্ষের জন্ম দিবে -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? কোরআনের তেলাওয়াতও তাই আরবী ভাষীদের মাঝে বিপুল কাজ দিচ্ছে।রামাদ্বানের তারাবি তো সে কাজটিই করে মাসভর।
যে ব্যর্থতা মুসলিমের
মাহে রামাদ্বান কোরআন নাযিলের মাস। মানব জাতির ইতিহাসে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে কল্যাণকর ঘটনা। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের কথাগুলো তাঁর বান্দাহর কাছে নেমে এসেছে। জান্নাতের পথে পথচলার এটিই তো একমাত্র পথ। এ পথ না পাওয়ার অর্থ তো নিশ্চিত জাহান্নামের আগুণে গিয়ে পৌঁছা।তাতে এ জীবনে সমগ্র বাঁচাটাই ভয়ানক আযাবের কারণ হয়। মানব ইতিহাসে কোরআন নাযিল তাই মামূলী বিষয় নয়। মহান আল্লাহতায়ালা এ পবিত্র ও অতি গুরুত্বপূর্ণ মাসকে সম্মানিত করেছেন এক মাস রোযা ফরজ করে। সম্মানিত করেছেন হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লায়লাতুল ক্বদর দিয়ে।সে সাথে এ মাসে পালনকৃত প্রতিটি ইবাদতের ফজিলত বহুগুণ বাড়িয়ে।এভাবে মহান রাব্বুল আলামীন প্রমাণ করেছেন,মাহে রামাদ্বানের গুরুত্ব তাঁর কাছে কত বেশী। কিন্তু প্রশ্ন হলো,এ মাসের সন্মানে বিশ্ব-মুসলিমের নিজেদের আয়োজনটি কতটুকু? সেটি কি স্রেফ না বুঝে বার বার কোরআন খতমে? কিন্তু কোরআনের নাযিলের মূল উদ্দেশ্যটি বার বার কোরআন খতম? এ মাসটি হলো কোরআন থেকে শিক্ষা নেয়া এবং কোরআনের নির্দেশিত পথে চলার মাস। কিন্তু কোথায় সে পথ অনুসরণে আগ্রহ? মুসলমানদের জীবনে এখানেই ঘটছে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা -যা তাদের অন্য সকল ব্যর্থতার কারণ।এটি গুরুতর অপরাধও।
আজ কের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি কৃষি বা শিল্পে নয়। সম্পদের আহরনেও নয়। বরং সেটি মহান আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত থেকে হিদায়েত লাভে।ফলে তারা আজ ভয়াবহ পথভ্রষ্টতার শিকার। রামাদ্বানের তারাবি নামাজে মসজিদে মসজিদে কোরআন খতম করা হয়। কিন্তু ক’জন সারা জীবনে একবারও এ মহান গ্রন্থটিকে শুরু থেকে শেষ অবধি একবার অর্থসহ পড়েছে? ডাক্তারি, ইঞ্জিনীয়ারিং ও কৃষিবিদ্যার ন্যায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি শাখাতেই রয়েছে অসংখ্য বই। কিন্তু কখনই কি সেগুলি অর্থ না বুঝে পড়া হয়? কোন শিক্ষকই কি ছাত্রকে সেরূপ তেলাওয়াতে পরামর্শ দেয়? না বুঝে কিতাব পাঠেও পরীক্ষায় কাজ দিবে –এমন কথা বললে সে শিক্ষককে কেউ কি মানসিক ভাবে সুস্থ্য বলবে? অথচ আলেমদের পক্ষ থেকে এমন ছবক দেয়া হচ্ছে না বুঝে কোরআন পাঠের ক্ষেত্রে!তারা বলছে,এতে পরাকালে সওয়াব মিলবে। শিশুও কোন বই না বুঝে পাঠ করে না। কিন্তু আজকের প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানরা পবিত্র কোরআন না বুঝে পাঠ করে।ভাল মুসলমান গড়ে তোলার জন্য তো চাই কোরআনের গভীর জ্ঞান,এবং প্রতিক্ষেত্রে সে জ্ঞানের প্রয়োগ। কিন্তু পবিত্র কোরআনের সাথে সেটি ঘটছে না।শুধু তেলাওয়াতই হচ্ছে,কিন্তু জ্ঞানলাভ হচ্ছে না।ফলে কোরআনের পাঠক বাড়ছে,আলেম নয়।এখানেই সংঘটিত হচ্ছে মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধ।ওহীর জ্ঞানের অজ্ঞতা ও ধর্মের নামে নানা রূপ মিথ্যা দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বিবেককে। সংঘটিত হচ্ছে মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামতের সাথে সবচেয়ে বড় গাদ্দারি। কেউ কেউ কোরআন তেলাওয়াতকে বেছে বেছে কিছু ছুরার মধ্যে সীমিত রাখছে। ফলে গুরুত্ব হারাচ্ছে সমগ্র কোরআন। প্রেসক্রিপশনের কোন একটি ঔষধকেও কি বাদ দেয়া যায়? তাতে কি রোগ সারে? মহান আল্লাহর হেদায়েতের বানি তো ছড়িয়ে রয়েছে তো সমগ্র কোরআন জুড়ে। ফলে কোন একটি সুরা বা কোন একটি আয়াতকেও কি বাদ দেয়ার সুযোগ আছে?
মুসলিম দেশগুলোতে আজ সবচেয়ে বড় অভাব কোরআনী জ্ঞানের।সাহাবাদের আমল থেকে আজকের মুসলমানদের মূল পার্থক্যটি বস্তুত এখানে।সেদিন এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি কোরআনের জ্ঞানার্জনকে গুরুত্ব দেননি।দীর্ঘ মরুর বুক অতিক্রম করে অতি কষ্টে তারা নবীজী (সাঃ)র দরবারে বার বার ছুটে এসেছেন কোরআনের একটি আয়াত বা নবীজী(সাঃ)র একটি হাদীস শোনার জন্য। ফলে সবাই গড়ে উঠেছিলেন আলেম রূপে। বিগত ১৪ শত বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আলেম তো তারাই। আর সত্যিকার আলেম হলে সে তো মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায় প্রকৃত মুজাহিদও হয়।কারণ গাড়ীর দুটি চাকার ন্যায় ইলম ও জিহাদ তো একত্রে চলে। তাদের কারণেই ইসলাম সেদিন বিজয়ী বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।অথচ আজ অধিকাংশ মুসলমানই পরিণত হয়েছে নিরেট জাহেলে। অথচ জিহাদহীন ও আমলহীন আলেমে। সেটি টের পাওয়া যায় জাহিলিয়াত যুগের ন্যায় ইসলাম থেকে দূরে সরার মাঝে। গোত্রপুজা, জাতিপুজা,ভাষাপুজা, মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ ও অশ্লিলতার ন্যায় জাহিলিয়াত যুগের নানা পাপাচার তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। জাহেল মানুষের কাছে অজ্ঞতাকে ধরে রাখা এবং অজ্ঞতার পথে পথ চলাই তাদের সংস্কৃতি। ফলে মূল্য পাচ্ছে না মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কোরআন থেকে শিক্ষালাভ।
ব্যর্থতা রোযার নয়
রোযা বার বার ফিরে এলেও আধ্যাত্মিক বিপ্লব আসছে কতটুকু? মুসলিমেরা আজ ইতিহাস গড়ছে দুর্বৃত্তি,ব্যর্থতা ও লাগাতর পরাজয়ে। এগুলি কি আধ্যাত্মিক বিপ্লবের লক্ষণ? পরিশুদ্ধ ও তাকওয়াসমৃদ্ধ মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে মাসব্যাপী রোযা যে কতটা ব্যর্থ হচ্ছে -এ হলো তার নমুনা। তবে এখানে ব্যর্থতাটি রোযার নয়। বরং ব্যর্থতা তাদের যারা রামাদ্বানে রোযা রাখাকেই শুধু গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ব্যর্থ হচ্ছে ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠতে। তাছাড়া কোরআনী জ্ঞানের অজ্ঞতা নিয়ে কি ঈমানদার হওয়া যায়? ইসলাম ও কোরআনী জ্ঞানের এ বিশাল অজ্ঞতা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রিতে দূর হচ্ছে না। তবে মুসলিম বিশ্বজুড়ে আজ যে হাজার হাজার স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সেগুলি কোরআনী জ্ঞানের অজ্ঞতা দূরীকরণের জন্য প্রতিষ্ঠিতও হয়নি।বরং এগুলি পরিণত হয়েছে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে। মুসলিম মনে আধ্যাত্মিক বিপ্লবকে বলা হচ্ছে মৌলবাদ বা সন্ত্রাসী চেতনা রূপে। প্রতিটি মুসলিম দেশে সরকারি উদ্যোগে চলছে সেক্যুলাইরেজশন এবং ডি-ইসলাইজেশন প্রজেক্ট। একই লক্ষ্যে বিদেশীদের অর্থায়নে মাঠে নেমেছে হাজার হাজার এনজিও ও তাদের বহুলক্ষ ক্যাডার। নবীজী (সাঃ)র যুগের ইসলামে ফিরে যাওয়ার আগ্রহটি চিত্রিত হচ্ছে দণ্ডনীয় অপরাধ রূপে। এমন একটি ইসলামবৈরী ধারণা নিয়েই সুপরিকল্পিত ভাবে বিলুপ্ত করা হচ্ছে কোরআনী জ্ঞানের ক্ষুধা। এটির শুরু মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক কাফের শাসনের শুরু থেকে;এবং বর্তমান সেক্যুলারিস্ট শাসকদের কাজ হয়েছে কাফেরদের প্রবর্তিত সে ধারাকেই আরো বলবান করা। ফলে নিজ ঘরে একাধিক কোরআন শরীফ থাকলেও বড় বড় ডিগ্রিধারি মুসলিম সন্তানদের মনে সেটি বুঝে পড়াতে আগ্রহ জাগছে না। ফলে কোনটি সিরাতুল মুস্তাকিম আর কোনটি সিরাতুশ শায়তান –সেটি বুঝার সামর্থই অধিকাংশ মুসলিমের নাই।রোযা রাখছে,তারাবি পড়ছে,ফিতরা দিচ্ছে,ঈদের জামায়াতে হাজির হচ্ছে সে অবুঝ ও বেহুশ অবস্থা নিয়েই।শরিয়তের পথ ছেড়ে তারা যে পথটি ধরেছে সেটি যে কুফরির পথ –সে জ্ঞানই বা ক’জনের? পতিতাবৃত্তি,ব্যাভিচার,অশ্লিলতা,মদ্যপান,জুয়া,ঘুষ ও সূদিব্যংকের ন্যায় নানারূপ হারামকর্মও তাই মুসলিম দেশে আইনগত বৈধতা পেয়েছে। ইহুদী-খৃষ্টানদের ন্যায় তারা নিজেরাই পরিণত হয়েছে পথভ্রষ্ট দোয়াল্লিনে।আর পথভ্রষ্টদের উপর আযাব নাযিলই তো মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত।আজকের মুসলমানদের উপর সে আযাব কি কম? মুসলিম দেশগুলি যেরূপ দেশী ও বিদেশী শত্রুদের হাতে অধিকৃত,দেশে দেশে ঝরছে যেরূপ মুসলিমের রক্ত,লক্ষ লক্ষ যেভাবে উদ্বাস্তু হচ্ছে এবং দেশ ছাড়তে গিয়ে সাগরে ভাসছে –তা কি রহতের আলামত?
প্রশ্ন হলো,আদৌ সফল হচ্ছে কি মাহে রামাদ্বান? অর্জিত হচ্ছে কি আধ্যাত্মিক বিপ্লব? অথচ সে বিপ্লবের লক্ষ্যে মাসটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউশন।আধ্যাত্মিক বিপ্লবে রামাদ্বানের রোযা যেখানে বিশাল সাফল্য দেখিয়েছিল তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ সে প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সাথে একাত্ম ছিল।রাষ্ট্রের বিশাল প্রশাসনিক অবকাঠামো,রাজনীতি,সংস্কৃতি,মিডিয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যেখানে কাজ করে ইসলাম থেকে জনগণকে দূরে সরানোর কাজে সেখানে কি মাহে রামাদ্বানের এ প্রশিক্ষণ আধ্যাত্মিক বিপ্লব অর্জনে সফল হতে পারে? তাকওয়া বাড়ানোর লক্ষ্যে সুরা বাকারার যে আয়াতটিতে রোযা ফরয ঘোষিত হয়েছে সে আয়াতটির মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল ঈমানদারগন। কিন্তু যারা ধরেছে জাহিলিয়াতের পথ,শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিরোধই যাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি -তাদের উপর কি রোযার কার্যকারিতা থাকে? ঔষধ মৃত মানুষদের উপর কাজ করে না। তেমনি রোযাও কাজ করে না ঈমানশূর্ণ জাহেলদের উপর। কোটি কোটি মানুষের মাসব্যাপী রোযাপালন তাই ব্যর্থ হচ্ছে আধ্যাত্মিক বিপ্লব আনতে। ব্যর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় আনতে।বাংলাদেশে যত মানুষ রোযা রাখে ও তারাবিহ নামায পড়ে তা বিশ্বের শতকরা ৯৫% ভাগ দেশে নাই। কিন্তু দেশটি দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের সবাইকে অতিক্রম করে ৫ বার প্রথম হয়েছে। ক্ষমতালোভী দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারিদের হাতে এমন দেশ অধিকৃত হবে এবং দেশের সরকার নৌকায় ভাসা ও প্রাণ বাঁচাতে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের নৌকাগুলাকে সমূদ্রতীর থেকে আবার সমূদ্রে ফিরে যেতে বাধ্য করবে,ভারত থেকে আশ্রয় নেয়া বিহারীদের বাড়ি-ঘর,দোকান-পাট কেড়ে নিয়ে তাদের বস্তিতে পাঠাবে এবং শত শত নিরস্ত্র মুসল্লিদের রাজপথে হতাহত করে লাশগুলোর ময়লা গাড়িতে গায়েব করবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? জনগণের তাকওয়া যখন নীচে নামে তখন কি সেদেশে এর চেয়ে ভিন্ন কিছু আসা করা যায়? তখন নামাযী ও রোযাদার হয়েও এরূপ কোটি কোটি মুসলিম যে দেশের উপর ইসলাম বিরোধীদের এ বর্বর অধিকৃতি সয়ে যাবে -সেটিও কি স্বাভাবিক নয়।
রোযার মাসটি জিহাদের মাসও
আধ্যাত্মিকতার শুরুটি নামায-রোযা দিয়ে হলেও চুড়ান্ত পর্যায়টি হলো জিহাদ। মহান আল্লাহতায়ালা সাথে আত্মিক সংযোগ মজবুত হলে বান্দা তখন তাঁর রাস্তায় শধু অর্থ,শ্রম ও মেধা নয় নিজের প্রাণও পেশ করে। সে তখন জিহাদের ময়দান খোঁজে। বদরের যুদ্ধ হয়েছিল রোযার মাসে।এ মাসটিতে ঘটেছিল মক্কা বিজয়। সেদিনের মুসলমানগণ শুধু নামায-রোযা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন না,প্রবল বিক্রমে জিহাদও করেছেন।মহান আল্লাহতায়ালার অধিকৃত ভূমি তো এভাবেই শয়তানী শক্তির কবজা থেকে মূক্ত হয়েছে এবং বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শরিয়তি আইন।।নামায-রোযা,হজ-যাকাত,কোরআন পাঠের ন্যায় প্রতিটি ইবাদতের লক্ষ্য তো মু’মিনের জীবনে আধ্যাত্মিক বিপ্লব আনা।ইসলামের প্রাথমিক যুগে তো সেটিই হয়েছিল। তাদের মাঝে তখন প্রবল তাড়ানা ছিল জিহাদের নিত্য-নতুন ফ্রন্ট খোলার। এখানে কাজ করতো মহান আল্লাহতায়ালার অধিকৃত ভূমিকে মূক্ত করার চেতনা। সে চেতনা নিয়ে তূর্কী বীর ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বাংলাতেও ছুটে এসেছেন। হিন্দু রাজা দাহিরের নির্যাতন থেকে হিন্দুদের বাঁচাতে মুহম্মদ বিন কাসিম সুদূর ইরাক থেকে এসে সিন্ধুর জমিনে জিহাদ করেছেন।
অথচ রাজা দাহিরের চেয়েও নিষ্ঠুর শাসক বসে আছে বাংলাদেশে। তার হাতে নির্যাতিত ও নিহত হচ্ছে খোদ মুসলমানেরা। বাংলাদেশে আজ ১৫ কোটি মুসলমান। দেশটিতে লাখ লাখ আলেম ও মসজিদের ইমাম এবং কোটি কোটি নামাযী ও রোযাদার।অথচ দেশটি অধিকৃত ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে।শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলাও দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু কোথায় বিন কাসিমের মত মোজাহিদ? কোথায় সে জিহাদ? কোটি কোটি রোযাদারের তাকওয়ার এই কি নমুনা? এই কি আধ্যাত্মিকতা? আধ্যাত্মিকতার অর্থঃ অধীনতা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার।এবং গোলামী একমাত্র তাঁরই হুকুমের।এরূপ আধ্যাত্মিকতায় তো মু’মিনের জীবনে জীহাদও এসে যায়।অথচ আজকের কোটি কোটি মুসলমানের জীবনে সে অধীনতা তো স্বৈরাচারি শাসকের। এমন পরাধীনতা নিয়ে নিয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালার অধীন হওয়া যায়? অথচ মুসলিম শব্দের অর্থঃ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পিত অধীনতা।সে আত্মসমর্পণ নিয়ে সেকালের মুসলমানগণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। অথচ বাংলাদেশে নির্মিত হচ্ছে দুর্বৃত্তিতে প্রথম হওয়ার রেকর্ড।অথচ প্রতিটি দুর্বৃত্তি বা দূর্নীতি হলো মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ফলে যে দেশ দুর্বৃত্তিতে প্রথম হয় সে দেশটি প্রথম হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহতেও। এ নিয়ে কি বিতর্ক চলে? কোটি কোটি মানুষের নামায-রোযার এই কি অর্জন? ব্যর্থতার এরূপ বিশ্বরেকর্ড নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কি মাগফেরাত জুটবে? বিচার দিনে জুটবে কি নবীজী(সাঃ)র সুপারিশ? কোন ন্যায়বিচারক কি কখনো দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়?
মু’মিনের জীবনে ইঞ্জিন
মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা,“নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনলো ও ন্যায় কাজ করলো তারাই পৃথিবীপৃষ্ঠে শ্রেষ্ঠ।”–(সুরা বাইয়্যানাহ,আয়াত ৭)।ঈমান ও নেক আমলের এটিই তো কাঙ্খিত ফল। গাড়ি না চললে বুঝতে হবে ইঞ্জিনে সমস্যা আছে। তেমনি ইবাদতকারির উন্নত চরিত্র সৃষ্টি না হলে বুঝতে হবে নিদারুন সমস্যা আছে তার ঈমান ও আমলে। ঈমান ও আমলে সফল হওয়ার জন্য অতি অপরিহার্য হলো ওহীর জ্ঞান। মু’মিনের জীবনে সেটিই তো মূল ইঞ্জিন। তবে ওহীর জ্ঞানার্জনে যা অপরিহার্য তা হলো অর্থ বুঝে কোরআন পাঠ অথবা সুযোগ্য আলেমের সাহচর্যে থেকে পবিত্র কোরআনের গভীর জ্ঞানলাভ।পবিত্র কোরআনের ঘোষণাঃ“ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহা মিন ইবাদিহিল উলামায়ু” অর্থঃ বান্দাকুলের মাঝে একমাত্র আলেমগণই আমাকে ভয় করে” –(সুরা ফাতির,আয়াত ২৮) মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা;এবং সে সাথে ঈমানের মূল রোগের ডায়াগনসিস।যারা প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠতে চায় তাদের জন্য এ আয়াতে রয়েছে অতিশয় সতর্কবানী। ঈমানদার বা মুসলমান হওয়ার জন্য অতি অপরিহার্য হলো মহান আল্লাহতায়ালার ভয়।এ ভয়ই হলো মু’মিনের তাকওয়া। যাদের মনে সে ভয় নাই,আল্লাহর অবাধ্য বা বিদ্রোহী হওয়াটা তাদের জন্য অতি সহজ হয়ে পড়ে। মুসলিম বিশ্ব জুড়ে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মূল কারণ তো নামধারি মুসলমানদের ভয়শূণ্য মন।মুসলিম দেশগুলিতে আজ যারা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখছে এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকামীদের হত্যা করছে বা তাদেরকে কারারুদ্ধ করছে তারা কাফের বা মুশরিক নয়।কাফের দেশের নাগরিকও নয়। বরং নিজ দেশের মুসলিম নামধারি এসব বিদ্রোহীরা। অথচ তাদেরও অনেকে নামায পড়ে,রোযা রাখে এবং হজও আদায় করে।অনেকে ইসলামি লেবাসও পরিধান করে। উপরুক্ত আয়াতটির মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কোরআনী জ্ঞানের অজ্ঞতা নিয়ে নামাযী,রোযাদার বা হাজির বেশ ধরা সম্ভব,কিন্তু তাকওয়াসম্পন্ন মু’মিন হওয়া অসম্ভব।জাহেলদের রোযাপালন,নামায আদায়,হজ পালন তো এজন্যই ব্যর্থ হয়। তাদের জীবনে বার বার রামাদ্বান এলেও কি কোন কল্যাণ হয়? এবং কল্যাণ যে হচ্ছে না -তা নিয়েও সন্দেহ জাগে? দ্বিতীয় সংস্করণ:২৯/০৬/২০১৫(১২ই রামাদ্বান ১৪৩৫);প্রথম সংস্করণ:১১/০৮/১২ (২৩শে রামাদ্বান ১৪৩৩)
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018