ডাকাতদের দখলে বাংলাদেশ এবং এখনই সময় ডাকাত তাড়ানোর
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 1, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ডাকাতের দখলে দেশ
বাংলাদেশ এখন নৃশংস এক পাল ডাকাতের দখলে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তারা ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় আসে। দেশের রাজস্ব ভান্ডার, রিজার্ভ ভান্ডার, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানীসহ পুরা দেশই এখন ডাকাতদের দখলে। ক্ষমতায় বসার পরই তারা দেশের সম্পদের উপর ডাকাতি শুরু করে। প্রথমে শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিঃস্ব বানিয়েছে। ৭ বিলিয়ন ডলার ডাকাতি হয়ে গেছে রিজার্ভ থেকে। হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করায় দেশের সরকারি ব্যাংকগুলি পুঁজিশূণ্য হয়েছে। পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে ১০টি ব্যাংক এখন পুঁজি সংকটে ভুগছে। ব্যাংক গুলিতে বিদেশী মুদ্রা নাই এলসি খোলার।
সরকারি ব্যাংকগুলি লুটের পর ডাকাতেরা হাত দেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলির উপর। লুটে নিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে। সবচেয়ে অর্থশালী এই ব্যাংকটি এখন দেউলিয়া। এবং ডাকাতির লক্ষ্যেই এই ব্যাংকটি হাসিনা সরকার জোর করে দখলে দেয়।
বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সকল চোর-ডাকাত মিলে যত অর্থ চুরি-ডাকাতি করেছে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশী ডাকাতি করেছে হাসিনার ডাকাত বাহিনী গত ১৪ বছরে। তাদের ডাকাতির এ ইতিহাস শত শত বছর বেঁচে থাকবে। অথচ একাত্তরের চেতনাধারীরা বলে, এই ডাকাতরা্ই নাকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাদের যুক্তি, তারা মুজিবের তথা স্বাধীনতার চেতনাধারী। স্বাধীনতাটি যেন এখানে অবাধ চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির।
গত ২৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো রিপোর্ট প্রকাশ করে, ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ভূয়া কোম্পানীর নামে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে লুট করে নেয়া হয়েছে। শুধু সাম্প্রতিক নভেম্বর মাসেই লুট হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, দেশের তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে সা্ড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে।
যে কোন দেশে ব্যাংকগুলি হলো অর্থ গচ্ছিত রাখার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। নিজ গৃহে অর্থ রাখলে চুরি বা ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলি এখন সবচেয়ে অনিরাপদ স্থান। সেগুলি এখন চোর-ডাকাতদের দখলে। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখার অর্থ, সে অর্থ চোর-ডাকাতদের হাতে তুলে দেয়া।
ডাকাতি হচ্ছে উন্নয়নের নামে
দেশের সম্পদ লাগাতর ডাকাতি হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে। এগুলি হলো ডাকাতির হাতিয়ার। বিশ্বব্যাংক ২০০৮ সালেই মাত্র ১০ হাজার টাকায় পদ্মা ব্রিজ করে দেয়ার জন্য ঋণ বরাদ্দ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু সে ঋণের টাকার উপর আওয়ামী দলের ডাকাতদের থাবা পড়ায় বিশ্বব্যাংক তার বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে ফিরে যায়। সে দুর্নীতির খবর পত্রিকায় প্রকাশ পেলে তৎকালীন সড়ক-যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল খায়েরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থের উপর ডাকাতদের হামলা না হলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই ব্রিজ নির্মিত হয়ে যেত। এবং ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে যেত।
কিন্তু শেখ হাসিনার কথা হলো, শুধু ব্রিজ হলে চলবে না, তার ডাকাত দলকেও ডাকাতির সুযোগ থাকতে হবে। এজন্যই হাসিনা ডাকাতির নতুন পথ আবিষ্কার করে। হাসিনা চীনের দ্বারস্থ হয়। কারণ, চীন তার অর্থ ফেরত পেলেই খুশী। সে অর্থ লুট হলেও চীনের আপত্তি নাই। একই স্থানে সে পদ্মা ব্রিজটি করতে চীনা সহায়তায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু এখনোও ব্রিজের কাজ শেষ হয়নি। শেষ করতে আরো আড়াই হাজার কোটি টাকার নতুন বরাদ্দ দিয়েছে।
সরকার ঢাকা থেকে মাওয়া অবধি ৪ লেনের ৫৫ মাইল রাস্তা নির্মাণে ব্যয় করেছে ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাইলে ব্যয় করেছে ২০০ কোটি টাকা। পৃথিবীর আর কোন দেশেই কোন রাস্তা নির্মাণে এতো অর্থ ব্যয় হয়নি। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বিস্ময়কর রেকর্ড গড়েছে। অথচ বাংলাদেশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে কম শ্রম-মুজুরীর দেশ। এখন পদ্মা ব্রিজের উপর দিয়ে রেল লাইন নেয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এটিও এক বিশাল বাজেট। এটিও হাসিনার ডাকাত দলের ডাকাতির জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে। পরিতাপের বিষয় হলো, ডাকাতগণ এভাবে ডাকাতি করতেই থাকবে। এবং জনগণ বাঁচবে মাথার উপর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধের দায় নিয়ে। ডাকাত না তাড়ানোর এই হলো কাফ্ফারা।
বরাদ্দ ডাকাত প্রতিপালন
হাসিনা সরকারের এরূপ বিশাল ব্যয় বরাদ্দের কারণ শুধু নির্মাণ ব্যয় নয়, বরং সেটি ডাকাত প্রতিপালন ব্যয়। আওয়ামী লীগ এখন আর কোন রাজৈতিক দল নয়। এটি এখন এক বিশাল ডাকাত দল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে এ ডাকাত দলকে আরো শক্তিশালী করেছে। তাদের দিয়েই ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করে নেয়। এসব ডাকাতগণ যেমন আওয়ামী লীগে আছে, তেমনি অনুগত ডাকাতেরা আছে পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতেও।
সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সৈনিক পালনে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার খরচ আছে, তেমনি বহু হাজার কোটি টাকার খরচ আছে দলীয় ডাকাত দলের ডাকাত প্রতিপালনেও। সেনাবাহিনীর খরচ জোগাতে দেশের বাজেটে বহু হাজার কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ থাকে। কিন্তু হাসিনার দলীয় ডাকাত প্রতিপালনের জন্য সেরূপ কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। দলীয় ডাকাত প্রতিপালনের সেই বিশাল খরচ জোগাতে তাকে নতুন কৌশল বেছে নিতে হয়। সেটি হলো, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নানা প্রকল্পে নির্মাণ খরেচের চেয়ে দুই বা তিন গুণ বেশী অর্থের বরাদ্দ দেয়া। এবং সে বরাদ্দের অর্থ থেকে ইচ্ছামত ডাকাতি করে দলীয় ডাকাত প্রতিপালন করা। সে ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকেই হাসিনা কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সেসব দুর্বৃত্ত অফিসারদের -যার তার পক্ষে ভোটডাকাতি করে দেয়। হাসিনা বহু লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে বিচারপতি আবুল খায়েরকে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে এক রায়ে বে-আইনী ঘোষণা দেয়।
কথা হলো, সম্পদের উপর লাগাতর ডাকাতি হতে থাকলে কি ভান্ডারে অর্থ থাকে? এমন দেশ রিজার্ভশূণ্য হবে ও দেউলিয়া হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এমন দেশেই দুর্ভিক্ষ আসে। বাংলাদেশ তো সে পথেই ধেয়ে চলেছে। মুজিব আমলেও এমনটিই হয়েছিল। তখন দেশ দুর্ভিক্ষ এসেছিল এবং তাতে ১৫ লাখ প্রাণ হারিয়েছিল। তেমন একটি দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস হাসিনাও দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু এ দুর্ভিক্ষের জন্য যে হাসিনা দায়ী –সে কথা হাসিনা কোথাও বলছে না।
মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা
প্রতি দেশেই হিংস্র জীব ও বিষাক্ত কীট জন্মায়। তেমনি প্রতি দেশে চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী এবং নানারূপ দুর্বৃত্তও থাকে। কোন রাষ্ট্রকে শান্তিময় করার জন্য অতি অপরিহার্য হলো চোর-ডাকাত ও দুর্বৃত্ত-নির্মূল প্রকল্প। নইলে পৃথিবী দ্রুত বসবাসের অযোগ্য হয়। মহান আল্লাহতায়ালা তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে দুর্বৃত্তদের নাশকতা থেকে মুক্তি দিতে চান। কারণ, প্রতি্টি দুর্বৃত্তই হলো শয়তানের সৈনিক এবং তারা মহান আল্লাহতায়ালার শত্রু। তাই আল্লাহতায়ালা চান, সকল দুর্বৃত্তদের নির্মূল। তিনি চান সুনীতির প্রতিষ্ঠা। বস্তুত সেটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার মূল এজেন্ডা। এবং সেটি মুসলিম জীবনের এজেন্ডাও। এবং এ এজেন্ডা থেকেই জন্ম নেয় মুসলিমের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি।
মহান আল্লাহতায়ালার সে দুর্বৃত্ত নির্মূলের এজেন্ডার কথাটি ঘোষিত হয়েছে সুরা হাদীদের ২৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে। এবং তাদের উপর নাযিল করেছি কিতার ও দাঁড়িপাল্লা -যাতে তাঁরা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “(হে মুসলিমগণ) তোমরাই হলে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়ছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। তোমরা হুকুম তথা প্রতিষ্ঠা দাও ন্যায়ের এবং নির্মূল করো অন্যায়কে।”
উপরুক্ত দুটি আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাটি অতি সুস্পষ্ট ভাবেই ব্যক্ত হয়েছে। সেটি দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং ন্যায়, সুশাসন ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতটিতে বুঝানো হয়েছে, মুসলিমগণ তাদের নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনের জন্য শ্রেষ্ঠ উম্মাহর মর্যাদা পায় না। সে মর্যাদাটি পায় অন্যায় ও দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দেয়ার কারণে। অপরদিকে উক্ত আয়াত থেকে এটিও বুঝা যায়, কোনটি সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হওয়ার পথ। যারা দুর্বৃত্তিতে বার বার বিশ্বে প্রথম হয়, ভোট ডাকাতি ইতিহাস গড়ে ও প্লাবন আনে গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের -তারাই পরিণত হয় সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সেদিকেই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবও বাংলাদেশীদের সে পথেই নিয়ে গিয়েছিল। সে নীচে নামার পথে ধাবিত হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতেই অতীতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে।
ঈমানদারের এজেন্ডা
মুসলিম বা ঈমানদার হওয়ার অর্থ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সে কুর’আনী ঘোষিত এজেন্ডার সাথে পুরোপুরি একাত্ম হওয়া। মুসলিমের এ ছাড়া কোন ভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকতে পারে না। যারা সে কুর’আনী এজেন্ডার সাথে একাত্ম হবে তাদেরকেই পুরস্কৃত করা হবে জান্নাত দিয়ে। এজন্য শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নিয়ে বাঁচলে চলে না, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিতে হয়। তা থেকেই অনিবার্য হয়ে উঠে দুর্বৃত্তির নির্মূলে ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিমের রাজনীতি।
দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুশাসন ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার কাজটি একমাত্র রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলির হাতে। সে কাজটি মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে হয়না। কোন ব্যক্তি বা দলের হাতেও থাকে না। এজন্যই নবীজী (সা:)কে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হয়েছে এবং ১০টি বছরে সে রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে বসতে হয়েছে। কোন মুসলিম কি তাই নবীজী (সা:)’র সে সূন্নতকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করতে পারে? সেরূপ করলে কি সে মুসলিম থাকে?
বাংলাদেশের বহু আলেম সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, তারা আছেন ধর্মীয় মাদ্রাসায় ধর্ম শিক্ষাদান নিয়ে এবং রাজনীতিতে নাই। রাজনীতিতে না থাকাটি তারা নিজেদের তাকওয়া ও ধার্মিকতা রূপে জাহির করেন। এবং রাজনীতি খারাপ এবং রাজনীতিতে থাকাকে তারা দুনিয়াবী বিষয় বলে মত দেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, তাদের ইসলাম কি নবীজী (সা:)’র ইসলাম? নবীজী (সা:) তো রাজনীতিতে ছিলনে এবং রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। যে ইসলামে রাজনীতি নাই সে ইসলাম আবার নবীজী (সা:)’র ইসলাম হয় কি করে? রাজনীতির অঙ্গন অতি নোংরা ও অপবিত্র –এটি ঠিক। কিন্তু মুসলিমের উপর রাজনীতি ফরজ তো এ রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়োজনে।
রাজনীতিই হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত
অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর রাজনীতি ফরজ নয়, কিন্তু ইসলামে রাজনীতি ফরজ ইবাদত। অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকে তাদের নিজ ধর্মের শরিয়ত তথা ধর্মীয় আইনকে প্রতিষ্ঠা দিতে হয় না। রাজনীতিতে যোগ না দিলে অন্য ধর্মে ধর্মাদ্রোহীতা হয় না। কিন্তু মুসলিমের রাজনীতি হলো: শয়তানের এজেন্টদের নির্মূল এবং ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই। ইসলামে এ লড়াই হলো পবিত্র জিহাদ। রাজনীতির লক্ষ্য এখানে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন ও তাঁর শরিয়তকে বিজয়ী করার পবিত্র যুদ্ধ। অথচ অমুসলিমদের কাছে রাজনীতি হলো ভাষা, বর্ণ, গোত্র, দল বা জাতির নামে ক্ষমতা দখলের লড়াই। এটি ক্ষমতালিপ্সুদের হাতিয়ার। অথচ মুসলিমদের জন্য রাজনীতি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। বস্তুত রাজনীতির মধ্যে ধরা পড়ে মুসলিমের মুসলিমত্ব।
নামাজ-রোজা না পড়লে মানুষ কাফির হয়। তবে নামাজ-রোজা নিয়মিত পালন করেও কেউ যদি ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতিতে না থাকে -তবে বুঝতে হবে সে মুনাফিক। বুঝতে হবে, মন থেকে সে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় চায়না। এমন মুনাফিকগণ দলে ভারী হওয়াতেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে বিশাল বিজয়টি শয়তান ও তার অনুসারীদের। পবিত্র কুর’আনে মুনাফিকদের কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এরাই মুসলিমদের ঘরের শত্রু। তাদের স্থান হবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্থানে।
রাজনীতির জিহাদ না থাকার বিপদ
কোটি কোটি মানুষের নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদে দেশ থেকে চোর-ডাকাতদের শাসন বিলুপ্ত হয়না। তাতে বিজয়ী হয় না মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন। এবং বিলুপ্ত হয় না মিথ্যা ধর্ম ও মিথ্যা মতবাদ। দেশে তখন শান্তি আসে না। দুর্বৃত্তদের নির্মূলে খোদ নবীজী (সা:)কে তাই বদর, ওহুদ, খন্দকের ন্যায় বহু জিহাদের নামতে হয়েছে। এটিই হলো নবীজী (সা:)’র দেখানো ইসলামের পথ। আবর্জনা নির্মূলের কাজটি না হলে গৃহ আবর্জনায় ভরে উঠে। সে গৃহ তখন বাসে অযোগ্য হয়। তেমনি দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি না হলে দেশ দুর্বৃত্তদের দিয়ে ভরে উঠে। তখন দেশও বাসের অযোগ্য হয়।
বাংলাদেশের মসজিদের সংখ্যা বহু লক্ষ। নামাজ-রোজা পালন করে এমন মানুষের সংখ্যা বহু কোটি। ২০ লাখ জমা হয় তাবলিগের ইজতেমায়। কিন্তু তাতে কি বাংলাদেশ থেকে ভোটডাকাত হাসিনার সরকারের বিলুপ্ত ঘটেছে। দেশের সকল মানুষ যদি রাত-দিন নফল নামাজ-রোজা পালন করতে থাকে -তাতে কি দুর্বৃত্ত শাসন নির্মূল হবে? নামাজ-রোজা ও দোয়া-দরুদ দুর্বৃত্ত নির্মূলের হাতিয়ার নয়। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত সে হাতিয়ারটি হলো জিহাদ।
নামাজ-রোজা এবং দোয়া-দরুদ সূদখোর, মদখোর, মিথ্যবাদীও পালন করতে পারে। এখানে অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের বিনিয়োগ নাই। তাই নামাজ-রোজা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নয়। রাজনীতির গুরুত্ব বুঝতে হলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বুঝতে হবে। পবিত্র কুর’আন সে এজেন্ডাটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে: “লি’ইউয হিরাহু আলাদ্বীনি কুল্লিহি।” অর্থ: সকল মিথ্যা মতবাদ ও সকল মিথ্যা ধর্মের উপর আল্লাহর দ্বীনের তথা ইসলামের বিজয়।
আন্দোলনকে জিহাদে পরিণত করতে হবে
বাংলাদেশ এখন এক মহা সংকটের মুখে। দেশ নৃশংস ডাকাত বাহিনীর দখলে। ডাকাতি হয়ে গেছে জনগণের ভোট, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেউলিয়া হতে বসেছে দেশ। ১৭ কোটি বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, দীর্ঘ ১৪ বছরেও তারা ব্যর্থ হয়েছে মাথার উপর থেকে হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ডাকাত নামাতে। একটি জাতির জন্য এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মাঝে বাংলাদেশই হলো একমাত্র দেশ যা অধিকৃত হয়ে আছে ডাকাতদের হাতে।
সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, বিগত ১৪ বছরে বিরোধী দলগুলি কোন শক্তিশালী আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারিন। জনগণের ব্যর্থতা তারাও এতোকাল রাস্তায় নামেনি। অথচ কোন সভ্যদেশের নাগরিক কি এক দিনের জন্যও কোন ডাকাতকে শাসক রূপে মেনে নেয়? বরং চোরের মাজায় দড়ি বেঁধে হাজতে উঠায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮ সালে যখন ভোট ডাকাতি হয়ে গেল। কিন্তু বিরোধী দল তখন রাজপথ ছেড়ে ঘরে গিয়ে উঠেছিল। সেটি দেখা গেছে ২০১৩-১৪ সালেও। আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিএনপিসহ সকল বিরোধী দল হঠাৎ রাজপথ ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ডাকাতগণ সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় থাকার।
তবে আশাবাদের কথা, জনগণ এখন রাস্তায় নেমেছে। বিএনপি’র বিভাগীয় শহরের মিটিংগুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি অভূতপূর্ব জাগরণ। এর জন্য কৃতিত্বটি শুধু বিএনপি’র নয়, জনগণেরও। যারা বিএনপি’র জনসভায় হাজির হচ্ছে তারা দলটির দলীয় কর্মী নয়। তারা হলো সাধারণ জনগণ। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিলুপ্ত আইনের শাসন, সন্ত্রাসে তাণ্ডব ও উচ্চ দ্রব্যমূল্য তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করেছে। দেশ পরিণত হয়েছে আগ্নেয়গিরিতে। দেশ এখন বিস্ফোরণের মুখে। বুঝা যাচ্ছে, ময়দানে নামার জন্য জনগণ বহুকাল আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলি এতো কাল তাদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেনি। পরিতাপের বিষয় হলো, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলি এখনো রাস্তায় নামিনি।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো, দুর্বৃত্ত নির্মূলের এ রাজনীতিকে অবশ্যই জিহাদে পরিণত করা। তখন মিলবে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য। এবং আসবে বিজয়। গণ আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান, বিপ্লব – এগুলি সেক্যুলার শব্দ। আন্দোলনে বা অভ্যুত্থানে প্রাণ গেলে কেউ শহীদ হয় না। সে প্রাণদান তখন পরকালে পুরস্কার দেয় না। পরকালে পুরস্কার পেতে হলে নিয়তটি সঠিক হতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালা প্রতিটি আমলের নিয়েত দেখেন। নিয়ত দেখেন নিহত ব্যক্তিটিরও। এজন্যই ঈমানদারের নিয়েতটি হতে হয় শয়তানী শক্তির নির্মল ও মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনার আবির্ভাব হয়েছে শয়তানের খলিফা রূপে। এজন্যই তারা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের অতি কাছের। এবং এজন্যই তাদের আক্রোশ দেশের ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। হাসিনার মনে এজন্যই আনন্দের হিল্লোল শুরু হয় ইসলামীপন্থী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলালে, শাপলা চত্বরে মুসল্লীদের উপর গণহত্যা চালালে এবং আলেমদের জেলে তুললে। হাসিনার এজেন্ডা, ইসলামকে পরাজিত রাখা এবং তার চোরতন্ত্রকে বিজয়ী রাখা। তাই শুধু হাসিনা সরকারের নির্মূল লক্ষ্য হলে সেটি জিহাদ হবে না। জিহাদে রূপ দিতে হলে লক্ষ্য হতে হবে হাসিনার নির্মূলের সাথে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিজয়। হাসিনা সরকারের নির্মূলটি দ্বীনের বিজয়ের পথে একটি অপরিহার্য ধাপ মাত্র।
এখনই সময় হাসিনার হেলে পড়া মসনদে শক্ত ধাক্কা দেয়ার
সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে হাসিনার মসনদ অনেক খানি হেলে পড়েছে। হেলে পড়া এ মসনদে এখন শক্ত ধাক্কা দেয়ার সময়। হাসিনা তখন উল্টে পড়বে। ধাক্কা দেয়ার কাজটি সবগুলি দলের এবং সকল দেশবাসীর। চোর-ডাকাত কারো বন্ধু নয়। তারা সকলের শত্রু। তাই ডাকাত তাড়ানোর কাজটি শুধু বিএনপি’র নয়, সেটি সকল জনগণের। নিজেরা বিভক্তি হলে তাতে হাসিনার আয়ু বাড়বে।
গ্রামে ডাকাত পড়লে বা আগুন লাগলে গৃহে বসে থাকা বা নিষ্ক্রিয়টি থাকাটি হারাম। সেটি শুধু অনৈতিকই নয়, অমার্জনীয় অপরাধও। যার যা সামর্থ্য আছে তা নিয়ে প্রতিরোধে নামা এখন ফরজ। তেমনি দেশ ডাকাতের হাতে অধিকৃত হলে নিষ্ক্রিয় থাকাটি মুনাফিকি। নামাজ-রোজা পালন করে সে মুনাফিকি থেকে মুক্তি মেলে না। হাসিনা শুধু নৃশংস ফ্যাসিস্ট, ভোটডাকাত ও লুণ্ঠনকারী নয়, তার বিরামহীন যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধেও। তাই গুরুতর অপরাধ হলো তাকে মেনে নেয়া। হিংস্র নেকড়ের সাথে আপোষ চলে না, তেমনি আপোষ চলে না ফ্যাসিস্ট ও ভোটডাকাত দুর্বৃত্তের সাথে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা পেতে পারে তার মত এক নৃশংস দুর্বৃত্তের উৎখাতের মধ্য দিয়েই। ০১/১২/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018