আবারো ভোটডাকাতি হলে অনিবার্য হবে গৃহযুদ্ধ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on September 23, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
গৃহযুদ্ধ কেন হয়?
সবদেশে গৃহযুদ্ধ হয়না। কিন্তু কোন কোন দেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে? মানব জাতির ইতিহাসে এমন গৃহযুদ্ধের নজির বহু -যা ভয়ানক নাশকতা ঘটিয়েছে জান ও মালের। বহু রাষ্ট্র তাতে বীভৎস রূপে রক্তাক্ত হয়েছে এবং ভেঙ্গে গেছে। প্রশ্ন হলো, কেন গৃহযুদ্ধ হয়? প্রতিটি রোগের যেমন কারণ রয়েছে, তেমন কারণ রয়েছে প্রতিটি গৃহযুদ্ধেরও। রোগ থেকে বাঁচতে যেমন রোগের কারণ জানতে হয়, তেমনি গৃহযুদ্ধের নাশকতা থেকে বাঁচতে হলে গৃহযুদ্ধের কারণও জানতে হয়। জানার সে কাজটি চাঁদে রকেট প্রেরণের ন্যায় কোন জটিল বিজ্ঞান নয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে যে কোন সুবুদ্ধির মানুষ সেটি সহজেই জানতে পারে। ঝড় শুরুর আগে যেমন আকাশে কালো মেঘ জমে, গৃহযুদ্ধ শুরুর বহু আগে দেশ তেমনি বিবাদমান দুটি দলে খণ্ডিত হয়ে যায়। দুই পক্ষের মানুষের মনে জমা হতে থাকে একে-অপরের প্রতি বারুদের ন্যায় বিস্ফোরণ-উম্মুখ তীব্র ঘৃণা। এক পক্ষ তখন অপর পক্ষকে নিজ অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে। প্রতিটি গৃহযুদ্ধের জন্য উর্বর ভূমি তৈরী করে স্বৈরাচারি জালেম শাসক। তখন এক পক্ষে থাকে ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্ত-জালেম শাসক ও তার সুবিধাভোগী স্তাবক শ্রেণী। বাংলাদেশে সে ক্ষমতাসীন নৃশংস জালেম শাসক হলো শেখ হাসিনা। এবং তাকে সহায়তা দিচ্ছে তার দল আওয়ামী লীগ। হাসিনা নিজেই একজন গুরুতর অপরাধী, সে ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করে। তার প্রতিপক্ষ হলো অধিকার-বঞ্চিত শোষিত জনগণ।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণ মনে করে বাংলাদেশকে শাসন করার অধিকার একমাত্র তাদেরই। তাদের দাবী, এ দেশটি একমাত্র তাদের সৃষ্টি। কোন জনসভায় তারা এ কথা কখনোই বলে না, বাংলাদেশের মাটি, নদ-নদী, আলো-বাতাস ও জলবায়ু সর্বসৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। সেটি বললে তাদের সেক্যুালারিজম বাঁচে না। তাদের দাবী, বাংলাদেশের স্রষ্টা শেখ মুজিব। তাদের কাছে গণতন্ত্রের হত্যাকারি বাকশালী মুজিব হলো জাতির পিতা। পিতা যেমন সন্তান জন্ম দেয়, তেমনি মুজিব যেন বাংলাদেশকে জন্ম দিয়েছে। এমন এক বিশ্বাসের কারণে তারা বলে, এ দেশে বাসের অধিকার একমাত্র মুজিবের অনুসারিদের। যারা মুজিবকে পিতা মানে না তাদেরকে তারা দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে বলে -যেন মুজিববিরোধী সকল বাংলাদেশীদের আগমন পাকিস্তান থেকে হয়েছিল। এমন নির্মূলমুখী ফ্যাসিবাদী চেতনার কারণে বিরোধীদের গুম করা, হত্যা করা, কারাবন্দী করা ও তাদের উপর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধর্ষণ অপরাধ গণ্য হয় না। তাই ফ্যাসিস্ট শাসকেরা এসব অপরাধ কর্মের বিচার করেনা। শাপলা চত্বরের খুনিদের তাই বিচার হয়নি। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর যেসব খুনিরা লগি বৈঠা নিয়ে বায়তুল মোকারমের উত্তর গটে বহু নিরীহ মানুষকে লাশ বানালো এবং মৃত লাশের উপর নাচানাচি করলো -তাদেরও বিচার হয়নি। বিচার হয়নি ২০১৮ সালের ভোটডাকাতদের। এসব খুনীগণ নেকড়ের চেয়েও অধিক নৃশংস ও বর্বর। কোন হিংস্র পশু জনপদে এরূপ হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের তান্ডব গড়ে না। অথচ এরা করে। জনগণ এসব নেকড়ে নির্মূলের রাস্তা খুঁজবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? ভয়ানক একটি গৃহযুদ্ধের এটিই হলো পারফেক্ট রেসিপি। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সেরূপ একটি দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে রীতিমত যুদ্ধ চলছে শুধু ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পক্ষ থেকে নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে। জনগণ প্রতিরোধ খাড়া হলেই সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে পরিণত হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ দেশের সম্পদ, সুযোগ-সুবিধা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজস্বভান্ডার, সরকারি প্রকল্প, আবাসিক প্লট, উন্নয়ন বাজেট, ব্যাংক-বীমা, ট্রেজারি ইত্যাদির উপর পূর্ণ দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলি থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে। চুরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের বিদেশী মুদ্রা। দেশজুড়ে ভোটডাকাতির পর দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের উপর ডাকাতিকে তারা নিজেদের কর্মীদের বৈধ অধিকার মনে করে। ডাকাতগণ শুধু ডাকাত প্রতিপালন করতে জানে, ডাকাতদের বিচার বা শাস্তি নয়। দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরাই তাই ডাকাতে পরিণত হয়েছে । যে পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনী হাসিনার হাতে ক্ষমতা দিতে জনগণের ভোটডাকাতি করে দিল তারাও এখন জনগণ ও রাষ্ট্রের অর্থের উপর ডাকাতি অবাধ অধিকার চায়। তাই সম্প্রতি দেখা গেল দুই জন পুলিশকে পুলিশের লেবাস পড়ে রাজপথে ডাকাতি করতে।
ডাকাত হাসিনা চায়, জনগণ বিনা বাক্য তার বশ্যতা মেনে নিক। তার প্রচণ্ড ঘৃণা, আক্রোশ ও প্রতিশোধের স্পৃহা তো ঐসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যারা বশ্যতা স্বীকার না করে রাস্তায় প্রতিবাদে নামে। তার অনুগত পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রতিবাদী মানুষদের গুম করে, হত্যা করে এবং ঘর থেকে তুলে নিয়ে তাদের উপর নির্যাতন করে। রাষ্ট্রের প্রশাসন, পুলিশ, আদালত, সেনাবাহিনী বিরোধীদের উপর নির্যাতন করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। জালেম শাসক ও মজলুল শাসিতের এরূপ বিভাজন বস্তুত গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরী করে। বাংলাদেশ সে পর্যায়ে বহু আগেই পৌঁছে গেছে। স্তুপীকৃত ঘৃণার বারুদে এখন শুধু আগুন দেয়ার পালা। আবারো ভোটডাকাতি হলে আগুন দেয়ার কাজটিই দ্রুত ত্বরান্বিত হবে।
গৃহযুদ্ধ কেন অনিবার্য?
ডাকাতরা শক্তির জোরে ডাকাতি করে নেয়। কিন্তু ডাকাতির নৃশংসতা ডাকাতিতে শেষ হয়না। বরং যাদের গৃহে ডাকাতি হয় তাদের মনে গভীর ক্ষত ও ঘৃণার পাহাড় সৃষ্টি করে । অপরাধীর অপরাধকে ভূলে যাওয়াটি কোন সভ্য মানুষের মানবিক গুণ নয়। অপরাধীকে ঘৃণা করা ইসলামে ফরজ। ফরজ হলো অপরাধ কর্মের নির্মূল ও অপরাধীকে শাস্তি দেয়া। সেজন্য প্রতিষ্ঠা দিতে হয় ন্যায় ও সুবিচারকে। অপরাধীকে ভালবাসা ও তাকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলা ইসলাম হারাম। এজন্যই ইসলামী রাষ্ট্র ও সুবিচারের অবকাঠামো নির্মাণ করা ফরজ। এ ভাবেই তো সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ হয়। যার মনে চোরডাকাত-জালেম-দুর্বৃত্তদের প্রতি ঘৃণা নেই, বুঝতে হবে তার ঈমানও নেই। ইসলাম ফরজ করেছে, অপরাধীর অপরাধকে শক্তির জোরে রুখা। সে দৈহিক সামর্থ্য না থাকলে কথা দিয়ে রুখতে হয়। কথা বলার সে সামর্থ্য না থাকলে মন থেকে অপরাধীকে ঘৃণা করতে হয়। এটিই ঈমানের সর্বনিম্ম স্তর। এটি নবীজী (সা:)’র হাদীস। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, কারো মনের গভীরে এ ঘৃণাটুকু না থাকলে বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তির মনে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নাই। সে নিরেট বেঈমান।
তাই কোন সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত ও দূর্বৃত্ত-জালেম-স্বৈরাচারী শাসককে কখনোই সম্মান দেখায় না। তাকে ঘৃণা করাটাই ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। তাই যারা ভোটডাকাত হাসিনাকে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলে এবং মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, নৃশংস স্বৈরাচারি ও ভারতের সেবাদাসকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলে -তারা কি ঈমানদার? নামাজী, রোজাদার ও হাজী তো সূদখোর, ঘুষখোর, প্রতারক ও নিষ্ঠুর স্বৈরাচারিও হতে পারে। কিন্তু ঈমানদার হতে হলে তো দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা এবং দুর্বৃত্তের নির্মূলে এবং ন্যয় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাগাতর জিহাদ থাকতে হয়। নবীজী (সা:) জালেম শাসকের বিরুদ্ধে হক কথাকে উত্তম জিহাদ তথা শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলেছেন। ফলে এটাই স্বাভাবিক যে, ঈমানের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তি বাঁচে হাসিনার বিরুদ্ধে ঘৃণার পাহাড় নিয়ে। সে গভীর ঘৃণা আজ বিস্ফোরণ-উম্মুখ বারুদের স্তুপে পরিণত হয়েছে -যা সুযোগ পেলেই বিস্ফোরিত করবে হাসিনার জ্মসনদকে। দেশে দেশে স্বৈরাচারি শাসকদের মসনদ এভাবেই বিস্ফোরিত হয়েছে এবং তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইতিহাসে সে প্রমাণ অনেক। বাংলাদেশ সেদিকেই দ্রুত এগিয়ে চলছে। একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশকে এমন বিস্ফোনরণ থেকে বাঁচাতে পারে। ডাকাত হাসিনা ও তার স্তাবকেরা সে আসন্ন বিপদ না বুঝলেও এমনকি বিদেশীরা বুঝছে। তারাও জনগণের রায়কে ইজ্জত দিতে বলছে। এবং সে লক্ষ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী করছে। কিন্তু হাসিনা সে ন্যায্য দাবী মানতে রাজী নয়। কারণ সে জানে, নির্বাচনে তার পরাজয় সুনিশ্চিত। এজন্যই ডাকাত হাসিনা দেশে অশান্তি ও রক্তপাত মেনে নিতে রাজী, কিন্তু নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে নিতে রাজী নয়। ক্ষমতালোভী হাসিনার এরূপ গোয়ার্তুমির জন্যই দেশ ধেয়ে চলছে গৃহযুদ্ধের দিকে।
দেশের জনগণ কখনোই আশা করে না, সরকার তাদের মুখে খাবার তুলে দিবে বা তাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দিবে। তবে এটুকু অবশ্যই আশা করে, সরকার তাদের ভোটের তথা রায়ের ইজ্জত দিবে। এমন ইজ্জত পাওয়াটি জনগণের মৌলিক অধিকার। জনগণের রায়ের প্রতি এমন ইজ্জত দেয়াই একটি সভ্য রাষ্ট্রের মূল চরিত্র। গণতান্ত্রিক শাসনের এটিই তো সবচেয়ে বড় কল্যাণ। অথচ স্বৈরাচারি শাসিত অসভ্য ও বর্বর রাষ্ট্রে জনগণের সে ইজ্জত থাকে না। এমন অসভ্য রাষ্ট্রে জনগণের রায়ের প্রতি ইজ্জত না দিয়ে সেটির উপর ডাকাতি করা হয়। এবং এমন রাষ্ট্রে ভোটডাকাতদের শাস্তি না দেয়াই আরেক অসভ্যতা। এমন রাষ্ট্রে জনগণ দারুন বঞ্চনা ও বেইজ্জতি নিয়ে বাঁচে। ভোটডাকাত হাসিনা তো বাংলাদেশক তো তেমনি এক অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ভোটের উপর ডাকাতি করে হাসিনা জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে চরম অবমাননা দেখিয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশী আর কত কাল চোর-ডাকাতের হাতে বেইজ্জতির শিকার হবে? পদ্মা ব্রিজ, মেট্রো রেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ে কি জনগণকে সে ইজ্জত দিবে?
জিহাদ যখন অপরিহার্য
শত্রুর বর্বর জুলুম-নির্যাতন সভ্য মানুষের জীবনে যুদ্ধ ডেকে আনে। সভ্য মানুষ শুধু বনের হিংস্র পশুদের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে বাঁচে না। বাঁচে জালেম শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়েও। এমন যুদ্ধের মাঝেই মানবিক পরিচয় মেলে। ইসলামে এমন অনিবার্য যুদ্ধকে জিহাদ বলা হয়। এ জন্যই ঈমানদার ব্যক্তির বৈশিষ্ঠ হলো জালেমের সাথে সে আপোষ করতে জানে না; বরং খাড়া হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও জিহাদ নিয়ে। কারণ, দূর্বৃত্ত জালেমকে নির্মূল করা ইসলামে ফরজ। নইলে আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা শুধু কুর’আনে থেকে যায়। তাই এটি নিছক রাজনীতি নয়, বরং সবচেয়ে বড় ইবাদত। এটি পবিত্র জিহাদ। এমন জিহাদে কোন দল বা ব্যক্তি সঙ্গি রূপে শামিল না হলে ঈমানদারকে সে জিহাদ একাকীই শুরু করতে হয়। ঈমাদারদের প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার সে নির্দেশটি এসেছে সু সাবা’র ৪৬ আয়াতে। বলা হয়েছে:
۞ قُلْ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا۟ لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا۟ ۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ لَّكُم بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍۢ شَدِيدٍۢ ٤٦
অর্থ: বলুন (হে নবী), তোমাদের জন্য আমার একটিই মাত্র ওয়াজ; সেটি হলো, তোমরা আল্লাহর জন্য (অবিচার ও অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচার ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জিহাদে) খাড়া হয়ে যাও। সঙ্গী পেলে দুইজন-দুইজন করে, নইলে একাই। অতঃপর মনোনিবেশ করো গভীর চিন্তায়, জেনে রেখো তোমাদের সঙ্গী উম্মাদ নন, তিনি তো আসন্ন কঠিন আযাবের বিষয়ে তোমাদের জন্য সতর্ককারি মাত্র।” –(সুরা সাবা, আয়াত ৪৬)।
নবী-রাসূলগণ তাই মিথ্যা ও জুলুমের বিরুদ্ধে খাড়া হতে কোন দল বা সেনাদলের অপেক্ষা করেননি। নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে তারা একাই খাড়া হয়েছেন। উপরুক্ত আয়াতে সেটিরই নির্দেশ এসেছে। তাই নমরুদের দরবারে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ:) কোন বিশাল দলের অপেক্ষায় থাকেননি, তিনি একাই খাড়া হয়েছিলেন। তিনি একাই ছিলেন এক মিল্লাত। তেমনি প্রবল প্রতাপশালী ফিরাউনে দরবারে হকের পক্ষে খাড়া হতে হযরত মূসা (আ:)ও কোন বাহিনীর অপেক্ষা করেননি, তিনি হাজির হয়েছেন একমাত্র সাথী তাঁর ভাই হযরত হারুন (আ:) সাথে নিয়ে। নবীজী (সা:)ও কোন বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করেননি। তিনিও মিথ্যার বিরুদ্ধে একাই যুদ্ধ শুরু করেছেন। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনা হাজির হয়েছে শয়তানের এজেন্ডা নিয়ে। হাসিনার যুদ্ধটি যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে, তেমনি জনগণ, গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকারের বিরুদ্ধে। সে যেমন জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করে, তেমনি রুখে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে। কোন ঈমানদার কি এ অবস্থায় নিরব ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে? ইসলামের তাবত শত্রুরা যেখানে সক্রিয়, ঈমানদার সেখানে নিষ্ক্রিয় হয় কি করে? ভোটডাকাত হাসিনার বিরুদ্ধে খাড়া হওয়া তাই প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। তারা আর কতকাল দূরে থাকবে এ দায়িত্বপালন থেকে?
প্রতিটি দেশেই নানা মত, নানা ধর্ম ও নানা গোত্রের মানুষ বসবাস করে। সভ্য সমাজের রীতি হলো, নিজে বাঁচো এবং অপরকে বাঁচতো দাও। কিন্তু অসভ্য ও বর্বর সমাজে শক্তিধর দুর্বৃত্ত ব্যক্তিটি নিজের বাঁচাকে নিরাপদ ও বিশাল করতে গিয়ে অন্যদের শান্তিতে বাঁচাকে অসম্ভব করে। তাদেরকে দমিয়ে রাখে বা হত্যা করে। শান্তি তো একমাত্র সে সমাজেই আসে যে সমাজে সবার মতামতের ইজ্জত দেয়া হয়। অন্যদেরও বাঁচার এবং দেশের উন্নয়নে অংশ উন্নয়নে অংশ নেয়ার পূর্ণ সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু হাসিনার স্বৈর শাসনে বাংলাদেশে সে সভ্য রীতি বেঁচে নাই। অসম্ভব করা হয়েছে সভ্য ভাবে বাঁচাকে। দেশ-শাসন, চাকরি-বাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য, কথা বলা, পত্রিকায় লেখালেখি -এসবে অংশ নেয়ার স্বাধীনতা একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের স্তাবকদের। যারা নিজ অর্থব্যয়ে কিছু জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠা নির্মাণ করেছিলেন সেগুলিকেও হাসিনার দুর্বৃত্ত সরকার হাইজ্যাক করে নিয়েছে। তাই হাইজ্যাক করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক, পিস টিভ, ইসলাম টিভ এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পরাধীন বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার আরেকটি যুদ্ধ
বার বার ভোটডাকাতি করে হাসিনা ভাবছে, ভোট ডাকাতি করে আবারো ক্ষমতায় আসলে আন্তর্জাতিক মহল তাকে আবারও মেনে দিবে -যেমনটি মেনে নিয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটডাকাতিকে । তবে আবার ভোট ডাকাতি হলে ভয়ানক বিপদটি ঘটবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বাংলাদেশের মানুষ আর কতকাল সহ্য করবে? এমন ডাকাতকে আর কতকাল মেনে নিবে? জনগণ হাসিনাকে ১৫ বছর দেখলো, এখন পরিবর্তন চায়। নির্বাচন হলো পরিবর্তনের একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ। এটিই হলো সবচেয়ে কম খরচের পথ। এ পথে ভোট দিলেই চলে; রাস্তায় আন্দোলন, গৃহযুদ্ধ ও জানমালের কুরবানী নাই। কিন্তু হাসিনা সে পথটিই বন্ধ করে দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন যে দেশে অসম্ভব হয় সে দেশেই গৃহযুদ্ধের উর্বর ভূমি। জনগণ তাই অধীর আগ্রহে আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। এ নির্বাচনেও জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে সরকার বদলের সুযোগ না পেলে জনগণ ভোটের উপর আস্থা হারাবে। জনগণ তখন আর নির্বাচনের দিকে তাকাবে না। এমন দেশেই গণঅভ্যুত্থান বা গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে।
সব কিছুরই একটা সীমা আছে। ধৈর্যের একটি বাঁধ আছে। সব বাঁধ ও সব সীমা তখন ভেঙ্গে যাবে। তখন গণরোষের সুনামী শুরু হবে। প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান বা গৃহযুদ্ধে তো সেটি ঘটে। তেমন একটি সুনামী শুরুর আগেই মুজিবের পতন ঘটেছিল। ফলে আওয়ামী লীগের ডাকাত বাহিনী সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু এবার কি তারা বাঁচবে? এ বোধ না থাকার কারণে জালেম শাসকগণ নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়ে। বাংলাদেশের কৃষকগণ অতীতে হিন্দু জমিদারদের হাতে নানা ভাবে নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছে। জনগণের কল্যাণের কথা তারা ভাবতো না। কিন্তু অবশেষে হিন্দু জমিদারদের জন্য সে স্বার্থপর নীতির পরিণতি আদৌ ভালো হয়নি। এ দেশে তাদের স্থান হয়নি। এদেশ ছেড়ে তাদের পালাতে হয়েছে। মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার স্তাবকেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। এমন কি তারা মুজিবের পরিণতি থেকেও কোন শিক্ষা নেয়নি। মুজিবকে ভোট দিয়ে বাংলার মানুষ বিজয়ী করেছিল। কিন্তু মুজিব পরিণত হয়েছে নৃশংস ডাকাতে। সে ডাকাতি করেছে জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকারের উপর । কথা বলা, দল গড়া ও রাস্তায় প্রতিবাদ করার অধিকার মুজিব কেড়ে নিয়েছিল। একমাত্র নিজের দল বাকশাল ছাড়া সব দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল। মুজিব ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের রক্ষি বাহিনী দিয়ে হত্যা করেছিল।
ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের নির্দেশে মুজিবের যুদ্ধটি শুধু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল ইসলামের বিরুদ্ধেও। সকল ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে এবং ইসলামপন্থী দলগুলোর অফিসে তালা ঝুলিয়েছিল। ভারতকে খুশি করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশীদের দুর্ভিক্ষে হত্যা করেছিল। কিন্তু এতো কিছু করেও মুজিব নিজে বাঁচেনি। জনগণের ঘৃণার সুনামীতে সে ভেসে গেছে। খুনি মুজিবের পথেই চলছে ভোটডাকাত হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনা শেখ মুজিবের চেয়ে অধিক জনপ্রিয় নয়। হিন্দু জমিদারদের ন্যায় ডাকাত হাসিনা জমিদার সেজেছে। কিন্তু হিন্দু জমিদারদের চেয়ে সে অধিক শক্তিশালী নয়। তাই যে পথে মুজিব ও হিন্দু জমিদারগণ বাঁচেনি, সে পথে কি হাসিনা বাঁচবে? জালেমদের মাঝে যাদের মগজ আছে তারা ক্ষমতা হারানোর সে ভয়াবহ বিপদটি বুঝে। সেটি বুঝা যায় তাদের সাম্প্রতিক কথাবার্তা থেকে।
হাসিনার প্রতিপক্ষ শুধু বাংলাদেশের মজলুম জনগণ নয়, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালাও। কারণ মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোই আল্লাহতায়ালার সূন্নত। যারা গুম, খুন, জুলুম ও নির্যাতনে লিপ্ত হয় এবং বিচারের নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করে মহান আল্লাহতায়ালার যুদ্ধ এমন জালেমদের বিরুদ্ধে। বনি ইসরাইলের নিরপরাধ লোকেরা ফেরাউনের হাতে নিহত হয়েছে ও নৃশংস জুলুমের শিকার হয়েছে। নিরস্ত্র মজলুম মানুষেরা সেদিন ফেরাউনকে পরাজিত করতে পারিনি। কিন্তু বদলা নিয়েছেন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা। তিনি ফিরাউন ও তার বাহিনীকে সাগরে ডুবিয়ে মেরেছেন। হাসিনাও মহান আল্লাহতায়ালার রাডারের বাইরে নয়। তিনি দেখছেন এই নব্য ফিরাউনের জুলুম, অত্যাচার ও বর্বর শাসন। তিনি তার প্রতিটি জুলুমের খবর রাখেন। সোভিয়েত রাশিয়ার হাতে পারমানবিক বোমা ছিল। হাজার হাজার মিসাইল ছিল, লক্ষ লক্ষ সৈন্যের সেনাবাহিনীও ছিল। কিন্তু সেগুলি সোভিয়েত রাশিয়াকে আফগানিস্তানে বাঁচাতে পারিনি। মজলুম আফগানদের ঘৃণার সুনামীতে তারা ভেসে গেছে। শুধু সময় লেগেছে মাত্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরাজিত হয়েছে আফগানিস্তানে। ডাকাত হাসিনা সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। বাংলাদেশের মানুষ খাড়া হলে ডাকাত হাসিনা পালানোর পর পাবে না। পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীর যে ডাকাতেরা হাসিনার ভোটডাকাতিকে সমর্থন দিচ্ছে তারাও সেদিন রেহাই পাবেনা। এসব ডাকাতদের সবাই সুরক্ষিত ক্যান্টনমেন্টে বাস করে না। তাছাড়া যে সেনাবাহিনী পিলখানায় তাদের ৫৭ জন্য সহকর্ম অফিসারদের বাঁচাতে পারলো না তারা কি পারবে হাসিনাকে বাঁচাতে?
বাংলাদেশে স্বাধীনতা নিয়ে ধুমধামের উৎসব হয়। কিন্তু কোথায় সে স্বাধীনতা? ভোট দেয়া, কথা বলা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে সেটি আবার কিসের স্বাধীনতা? স্বৈর শাসক মাত্রই জালেম। তারা শুধু স্বাধীনতা কেড়ে নিতে জানে, দিতে জানে না। তারা মনে করে ক্ষমতার মালিক একমাত্র তারাই। নিরস্ত্র জনগণের বাধা দেয়ার সামর্থ্য থাকে না, তাই তাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়। তাদের জবাবদিহিতাও নেই। কিন্তু সবার উপরও সর্বশক্তিমান একজন আছেন। তিনি হলেন মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা। তিনি মজলুমদের প্রতিটি ফরিয়াদ শোনেন, জালেমের প্রতিটি অত্যাচারও দেখেন। জনগণ জালিমকে শাস্তি দিতে না পারলেও তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দেন। তাই তাঁর শাস্তি থেকে ফেরাউন-নমরুদ বাঁচেনি। মুজিবও বাঁচেনি। হাসিনাও যে বাঁচবে না -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? সন্দেহ করাই বেঈমানীর লক্ষণ। আল্লাহতায়ালা কখনোই জালেমদের উপর রহম করেন না। কখনো কখনো তিনি জালেমকে ত্বরিৎ মৃত্যু না দিয়ে তার গলার রশি ঢিল করে দেন যেন জাহান্নামের সবচেয়ে কঠোরতম শাস্তির জন্য সে নিজেকে তৈরী করতে পারে। অতএব নৃশংস স্বৈরাচারির দীর্ঘায়ু দেখে বুঝতে হবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য কঠিনতম শাস্তি প্রস্তুত করছেন।
হাসিনার জুলুমে খতিয়ান তো বিশাল। হাজার হাজার মানুষকে সে গুম ও খুন করেছে। বহু নিরপরাধ মানুষকে সে ফাঁসিতে চড়িয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে সে জেলে তুলেছে। শত শত আলেম এখনো জেলে। মুজিবের ন্যায় তার যুদ্ধটিও শুধু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, ইসলামের বিরুদ্ধেও। এতো জুলুম করে কি হাসিনা রেহাই পেতে পারে? হাসিনা ভেবেছে ভারতের শাসকগণ তাকে রক্ষা করবে। ভারত মুজিবকেও রক্ষা করতে পারেনি। হাসিনা ভেবেছে রাশিয়া এবং চিন তাকে রক্ষা করবে। রাশিয়া নিজেই রক্ষা পায়নি আফগানিস্তানে। আর চিন? চিন অন্য দেশে হস্তক্ষেপে এগিয়ে আসেনা। জনগণের জন্য সুবিধা হলো, হাসিনার রাজনৈতিক নেতাকর্মী, পুলিশ, প্রশাসনের লোক -এদের কেউই ক্যান্টনমেন্টে বাস করে না। জনগণ ইতিমধ্যই তাদের চিনে ফেলেছে। হাসিনার সেবাদাস এই জালেমদের গৃহগুলি মজলুম জনগণের গৃহের আশেপাশেই। ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এরা কি বাঁচবে জনগণের হাত থেকে? তাছাড়া লাখো লাখো মানুষের রাস্তায় নামায় এবং বিদেশী শক্তির চাপে হাসিনার গদি ইতিমধ্যেই কিছুটা হেলে গেছে। আর যখন হেলে পড়ে, বুঝতে হবে তা অচিরেই ঢলে পড়বে। ফলে আরেকটি অভ্যুত্থান বা স্বাধীনতার যুদ্ধের এখনই তো মোক্ষম সময়। ২৩/০৯/২০২৩।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018