রাষ্ট্র যখন ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার: মুক্তি কিরূপে?

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 ফিতনা: মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর

রাষ্ট্র ও রাজনীতি যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমলের হাতিয়ার হতে পারে, তেমনি হতে পারে অতি নিকৃষ্ঠ ও অতি ভয়াবহ পাপ কর্মের হাতিয়ার। সে অতি জঘন্য পাপ কর্মটি হলো ফিতনা। পবিত্র কুর’আনে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ রূপে চিহ্নিত করেছেন। সে বিষয়ে সুস্পষ্ট বয়ান এসেছে পবিত্র কুর‌’আনে। বলা হয়েছে:

وَٱلْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ ٱلْقَتْلِ ۚ وَلَا تُقَـٰتِلُوهُمْ عِندَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَـٰتِلُوكُمْ فِيهِ ۖ فَإِن قَـٰتَلُوكُمْ فَٱقْتُلُوهُمْ ۗ كَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلْكَـٰفِرِينَ

অর্থ: “ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। তোমরা তাদের সাথে মাসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধ করবে না -যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ করে।  যদি তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ করে তবে তোমরা তাদেরনকে হত্যা করবে। কাফিরদের জন্য সেটিই পরিণাম।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ১৯১)।  একই রূপ কুর’আনী ঘোষণা এসেছে এভাবে:

وَٱلْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ ٱلْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَـٰتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ ٱسْتَطَـٰعُوا۟

অর্থ: “হত্যা অপেক্ষা ফিতনা অধিক অন্যায় কর্ম। তারা অর্থাৎ কাফিরগণ সর্ব-অবস্থায় তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না নেয় -যদি সেটি সম্ভব হয়। -(সুরা বাকারা, আয়াত ২১৭)।

সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা ফিতনাকে কেন মানব-হত্যার চেয়ে অধিকতর গর্হিত অপরাধ বললেন -সে বিষয়টি গভীর ভাবে ভাববার বিষয়। মহান আল্লাহতায়ালার এ বয়ানের মাঝে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়। সে বিষয়টি বুঝতে হলে ফিতনার অর্থ বুঝতে হবে। ফিতনার অর্থ বহুবিধ। ফিতনা শব্দের উৎপত্তি ফাতানা ক্রিয়াপদ থেকে। J.G. Hava রচিত  Arabic English Dictionery for Advanced Learners অনুসারে ফাতানার অর্থ হলো: to rouse anyone to rebellion, to seduce, to allure, to decieve anyone. অন্য অর্থ হলো কাউকে পরীক্ষায় ফেলা। ফিতনা বলতে বুঝায় allurement, rebellion, impiety, unbeleif, sin, disorder, civil war. মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুশক্তির প্রিয় হাতিয়ারটি হলো ফিতনা।

পৃথিবীপৃষ্ঠে রাষ্ট্রই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করার চুড়ান্ত সামর্থ্য রাখে রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। রাষ্ট্রের শাসকগণ চাইলে মুসলিম নাগরিকদের ধর্মপালন অসম্ভব করতে পারে -যেমনটি এক সময় দেখা গেছে সোভিয়েত রাশিয়ায়। এখন সেটি দেখা যাচ্ছে চীনে। মুসলিমদের জান-মাল, ইজ্জত-আবরু ও মসজিদ-মাদ্রাসা হামলার মুখে পড়ছে ভারতে। মুসলিমগণ রাষ্ট্র গড়ে এ লক্ষ্যে যে, পূর্ণ ইসলাম পালনে ও পূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার কাজে রাষ্ট্র সহায়ক ও সম্পূরক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। রাষ্ট্র সে কাজটি করে যেমন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা দিয়ে, তেমনি কুশিক্ষা, অপসংস্কৃতি, পাপ কর্ম ও দুর্বৃত্তি নির্মূল করে। তখন রাষ্ট্র  পরিণত হয় ব্যক্তি ও সমষ্ঠির পরিশুদ্ধির হাতিয়ারে। এবং পরিণত হয় জান্নাতের বাহনে। অথচ সে রাষ্ট্র যদি দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হয় তখন সে রাষ্ট্র দারুল ফিতনা বা ফিতনার ভূমিতে পরিণত হয়। তখন সে রাষ্ট্রের পলিসি হয় জনগণকে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করা। সেটি করে শিক্ষানীতি, মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মের মধ্য দিয়ে। এমন রাষ্ট্র পরিণত হয় শয়তানের হাতিয়ারে।

ফিতনা সৃষ্টিকারীদের দখলে রাষ্ট্র গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠাগুলির পক্ষ থেকে বিরামহীন যুদ্ধ শুরু হয় মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে। ইসলামী পরিভাষায় যুদ্ধরত এমন রাষ্ট্রকে বলা হয় দারুল হারব।  সে রাষ্ট্র অসম্ভব করে আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। এভাবে অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম-পালন।  ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের এমন শত্রুতামূলক এবং বিদ্রোহাত্মক অবস্থান অসম্ভব করে পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠা। এমন রাষ্ট্র আল্লাহতায়ালার বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে শেখায় অর্থাৎ কাফিরে পরিণত করে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সম্মিলিত ক্ষমতা বিশাল। রাষ্ট্রের হাতে থাকে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, প্রচারযন্ত্র ও প্রশাসন। লক্ষ লক্ষ মসজিদ এবং হাজার হাজার মসজিদ গড়েও সে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোকাবেলা করা সম্ভব হয়না। রাষ্ট্র যে দিকে নিতে চায়, জনগণকে সে দিকেই যেতে হয়। সেটির প্রমাণ, কম্যুনিস্ট বিপ্লবের পর সোভিয়েত রাশিয়ার মসজিদগুলি আর মসজিদ থাকেনি, সেগুলি ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত হয়েছে। এবং তার ফল হলো, মুসলিম অধ্যুষিত বিশাল এলাকার মুসলিমগণ আর মুসলিম থাকেনি, নামাজ-রোজা ছেড়ে তাদেরকে কম্যুনিস্টে পরিণত হতে হয়েছে। তেমনি বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গান গাইতে হয় মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের -এমন কি দ্বীনি মাদ্রাসাতেও। মাদ্রাসার কক্ষে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি টানাতে হয়।  মহান আল্লাহতায়ালা চান নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্য ভাতৃসুলভ একতা। কিন্তু ফিতনার প্রচারক সেক্যুলারিস্টগণ প্রতিষ্ঠা দেয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চলের নামে বিভক্তির দেয়াল এবং অসম্ভব করে একতার প্রতিষ্ঠাকে। মহান আল্লাহতায়ালা চান মানুষ চলবে সিরাতাল মুস্তাকীম তথা কুর’আনী রোডম্যাপ বেয়ে। চলবে জান্নাতের পথে। কিন্তু ফিতনা সৃষ্টিকারীরা নেয় জাহান্নামের দিকে। এভাবেই রাষ্ট্র পরিণত হয় ফিতনা সৃষ্টির হাতিয়ারে ও জাহান্নামের বাহনে।  

খুনিরা মানুষ খুন করে, কিন্তু তারা কাউকে জাহান্নামে নেয় না। খুনিরা সেরূপ নিয়েত নিয়ে কাউকে খুন করেনা।। সেটি তাদের এজেন্ডাও নয়। কিন্তু জাহান্নামে নেয়ার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে শয়তানের অনুসারী ফিতনা সৃষ্টিকারীরা। এবং এটিই হলো পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে বড় অপরাধ। তারা সে অপরাধটি করে মানবকে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে। সেটি করে পূর্ণ ইসলাম-পালন ও পূর্ণাঙ্গ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে অসম্ভব করে। এমন এক ফিতনা সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রের মডেল হলো বাংলাদেশ। এদেশে পরিকল্পিত ভাবে অসম্ভব করা হয়েছে পূর্ণ ইসলাম পালন এবং সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। পূর্ণ ইসলাম পালন করতে হলে তো কুর’আনী জ্ঞান চাই, আদালতে চাই শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, শাসনতন্ত্রে চাই মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, মুসলিমদের মাঝে চাই প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব এবং চাই দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ। কিন্তু বাংলাদেশে এগুলি পালন করা অসম্ভব। এদেশে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণীত হয় হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়দের খুশী করতে; আল্লাহকে খুশি করতে নয়।  হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়দের খুশী করতেই এদেশে ইসলামপন্থীদের ফাঁসিতে চড়ানো হয়। এবং নিবন্ধন দেয়া হয় না ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলিকে। আগ্রাসী ভারতকে খুশি করতে শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামপন্থীদের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করে।    

 

স্বৈরশাসক: সবচেয়ে গুরুতর নাশকতার নায়ক

মুসলিম উম্মাহর শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন হওয়ার মূল কারণ জনশক্তির কমতি ও সম্পদের ঘাটতি নয়। বরং সেটি হলো মুসলিম বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসকদের সম্মিলিত নাশকতা। তারা সে নাশকতাটি ঘটায় গোত্র, ভাষা, অঞ্চল ও অঞ্চলভিত্তিক জাতীয়তার নামে ফিতনা সৃষ্টি করে। তারা গোত্রবাদী, বর্ণবাদী, জাতীয়তাবাদী এবং রাজতন্ত্রী। তাদের কারণে রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচার, প্রশাসন, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি পরিণত হয়েছে ফেতনা সৃষ্টির হাতিয়ার। স্বৈরশাসকদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় তাদের নিজ গদীর সুরক্ষা। তাদের রয়েছে প্রচণ্ড ইসলামভীতি। কারণ, ইসলামের স্বৈরশাসনের কোন স্থান নাই। রাজার পুত্র রাজা হবে -সে বিধান ইসলামে নাই। তার প্রমাণ, হযরত আবু বকর (রা:), হযরত উমর (রা:), হযরত উসমান (রা:) এবং হযরত আলী (রা:)’য়ের ন্যায় খলিফাদের কেউই রাজপুত্র ছিলেন না। শাসকের আসনে বসেননি তাদের সন্তানগণও। ইসলামের রয়েছে শুরার বিধান। এখানে রক্তের উত্তরাধিকারের স্থলে গুরুত্ব পায় তাকওয়া ও যোগ্যতা। কিন্তু স্বৈরশাসকগণ খোলাফায়ে রাশেদার সে সূন্নতের কাছে আত্মসমর্পণে রাজী নয়; তারা বিদ্রোহী সে ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে। বরং ফিরাউনের নীতিই তাদের নীতি। মুসলিম উম্মাহর বুকে যে কুফুরী ধারাটির শুরু এজিদের হাতে এবং আজও সে ধারা প্রবল ভাবে বেঁচে আছে প্রতিটি স্বৈরশাসকের মাঝে।  

অথচ ইসলাম বলতে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত বুঝায় না, বুঝায় খোলাফায়ে রাশেদার শাসনব্যবস্থাও। খোলাফায়ে রাশেদাগণ অনুসরণ করেছিলেন নবীজী (সা:)কে। আর যারা নবীজী (সা:)কে অনুসরণ করে, তারাই অনুসরণ করে আল্লাহতায়ালাকে -যা বলা হয়েছে সুরা নিসার ৮০ আয়াতে।  বলা হয়েছে:

مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَ

অর্থ: “যে অনুসরণ করে রাসূলকে, সেই অনুসরণ করলো আল্লাহকে।” 

বুঝতে হবে, ইসলামের বিষয় আবিস্কারের বিষয় নয়, এটি অনুসরণের বিষয়। অনুসরণ সেটিকেই করতে হয় যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল নবীজী (সা:)’র হাতে বা নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের হাতে। তাই যারা নবীজী (সা:)’র সত্যিকার অনুসারী হতে চায়, তাদের অনুসরণ করতে হয় খোলাফায়ে রাশেদার অনৃসৃত ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। সে নীতির অনুসরণ ছাড়া পূর্ণ মুসলিম হওয়া অসম্ভব। অথচ আজ মুসলিম বিশ্বে নবীজী (সা:)’র সূন্নত বেঁচে নাই, বেঁচে আছে এজিদের সূন্নত। তাই স্বৈরশাসনের নির্মূল এবং খোলাফায়ে রাশেদার প্রতিষ্ঠা ছাড়া পূর্ণ ইসলামের প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা যায়না। এজন্যই মুসলিম ভূমিতে নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলামের শত্রু বিদেশী কাফিরগণ নয়, বরং স্বদেশী স্বৈরশাসকগণ। তারা ইসলামের উত্থানকে নিজ গদীর জন্য বিপদজনক মনে করে। ফলে স্বৈরশাসক মাত্রই ঘোরতর ইসলামবিরোধী। নিজেদের গদী বাঁচাতে তারা পৌত্তলিক কাফির শক্তির সাথে কোয়ালিশন গড়তেও রাজী -যেমনটি শেখ মুজিব করেছিল এবং এখন করছে শেখ হাসিনা। তারা ঘোরতর বিরোধী মুসলিম উম্মাহর একতার। কারণ, একমাত্র বিভক্তি বাঁচলে তাদের শাসন বাঁচে। ফলে মুসলিম রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করার মধ্যেই তাদের আনন্দ। স্বৈরাচারী মুজিব তাই পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। এবং আরব স্বৈরশাসক ২২ টুকরোয় ভেঙ্গেছে আরব ভূমিকে। যেখানেই কিছু তেলের কূপ আবিস্কৃত হয়েছে -সেখানেই স্থানীয় এক স্বৈরশাসকের জন্য রাষ্ট্র নির্মাণ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর আজকের বিপন্ন দশার মূল কারণ তো এই স্বার্থান্বেষী স্বৈরশাসকগণ। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় নাশকতাটি ঘটেছে তো তাদের হাতেই। এবং সেটি মুসলিম ভূমিকে খণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে। তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নয়, বরং নিজেদের শাসন বাঁচানো। বিশাল ভূ-খণ্ডের একতাবদ্ধ ভূ-রাজনৈতিক শক্তিরূপে মুসলিম উম্মাহর উম্মেষ ঘটলে ক্ষুদ্র চিন্তার এসব ছোটলোক স্বৈরশাসকগণ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে যেত।

স্বৈরশাসকদের প্রতিদিন কাটে প্রচণ্ড গণভীতি নিয়ে। তাদের ভয়, এই বুঝি বিক্ষুব্ধ জনগণ তীব্র রোষ নিয়ে প্রাসাদ ঘিরে ধরলো। জনগণের হাত থেকে নিজেদের শাসন বাঁচতেই শেখ মুজিব বিশাল রক্ষি বাহিনী গড়েছিল।  হাসিনা সমগ্র সেনা বাহিনীকেই রক্ষি বাহিনী বানিয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে পরিণত করেছে তার ব্যক্তিগত লাঠিয়াল বাহিনীতে। এবং সমগ্র দেশকে পরিণত করেছে জেলখানায়। সব দেশে সব স্বৈরশাসকদের একই রীতি। জনগণকে বন্দী ও শক্তিহীন করা হলে সমগ্র জাতি বন্দী ও শক্তিহীন হয়। অথচ সে নাশকতার কাজটিই করে স্বৈরশাসকগণ। ৩৫ কোটি আরবদের সম্পদ কি কম? কিন্তু তারা পদানত ৭০ লাখ ইসরাইলীদের হাতে। এমন পরাজয়ের মূল কারণ, ইসরাইলীগণ মুক্ত, কিন্তু ৩৫ কোটি আরব নিজ দেশে বন্দী। তাদের সে বন্দীদশা ইতিহাসের অতি নৃশংস স্বৈরশসকদের হাতে। প্রতিটি আরব রাষ্ট্রই হলো যেন দেয়াল ঘেরা বিশাল কারাগার; শাসকগণ হলো সেসব রাষ্ট্রের কারাপ্রধান মাত্র। এবং বন্দী হলো প্রতিটি আরব নাগরিক। বন্দী মানুষদের পানাহারে বেঁচে থাকার অধিকার থাকে মাত্র, কিন্তু অধিকার থাকে না স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার। বন্দী মানুষের অবস্থা হাত-পা বাধা মানুষের মত। ফলে বন্দী মানুষদের সংখ্যা যত বিশালই হোক মুষ্টিমেয় স্বাধীন মানুষের বিরুদ্ধেও তারা জিততে পারেনি। এ জন্যই মুক্ত ও স্বাধীন ইসরাইলীদের কাছে বিশাল আরব জনগোষ্ঠি নিয়মিত পরাজিত ও নিগৃহীত হচ্ছে।

ইসরাইলের অভ্যন্তরে আরবদের যেরূপ মিছিল, মিটিং ও পত্রিকা প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সেরূপ স্বাধীনতা নাই সৌদি আরব, মিশর, আরব আমিরাত, কুয়েত, জর্দান, মরক্কো, কাতারের ন্যায় দেশগুলিতে। এসব স্বৈর-কবলিত দেশগুলিতে মিছিল, মিটিং করার শাস্তি জেল নয়, বরং মৃত্যুদণ্ড। মিশরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট রূপে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডক্টর মুহাম্মদ মুরসী। মুসলিমদের এরূপ গণতন্ত্রপ্রেম ও জনগণের এরূপ শক্তিবৃদ্ধি গণতন্ত্রের চিহ্নিত শত্রুদের ভাল লাগেনি। ভাল লাগেনি সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের শাসকদের ন্যায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহদেরও। ফলে প্রেসিডেন্ট ডক্টর মুহাম্মদ মুরসীকে সরাতে আয়োজন করা হয় সামরিক অভ্যুত্থানের। এরই ফলে স্বৈরশাসন মিশরে আবার ফিরে এসেছে। নিরস্ত্র প্রেসিডেন্ট মুরসীকে তাঁর পদ থেকে হটিয়ে কারাগারে নেয়া হয় এবং সেখানে তার মৃত্যু ঘটানো হয়। এবং দেশটির সর্বময় ক্ষমতার মালিকরূপে আবির্ভুত হয় সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দাল ফাতাহ আল-সিসি। সে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে ২০১৩ সালে কায়রোর আল-আদাবিয়ার ময়দানে জমা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ও শিশু। কিন্তু সে শান্তিপূর্ণ ধর্না অপরাধ রূপে গণ্য হয় এবং ১২ শতের বেশী নিরস্ত্র নাগরিককে মেশিন গান ও কামান দেগে হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনী পরিচালিত সে গণহত্যায় যারা সেদিন বেঁচে গিয়েছিল তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হয়। বহু বছর যাবত তারা কারাবন্দী। সে বন্দীদের মধ্য থেকে ৭৫ জনকে ফাঁসির হুকুম শুনিয়েছে স্বৈরাচারের তল্পিবাহক আদালত। জনগণের ন্যায্য অধিকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাশাসকগণ যে কতটা নৃশংস -এ হলো তার নজির।

স্বাধীনতা না থাকার অর্থ: নিজ প্রতিভা, নিজ সামর্থ্য ও নিজ সৃষ্টিশীলতা নিয়ে বেড়ে উঠায় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। প্রশ্ন হলো, মৌলিক মানবিক গুণ নিয়ে বাঁচা ও বেড়ে উঠা অসম্ভব করা হলে কি কখনো মানবতা বাঁচে? সেটি তো মানবতাশূণ্য করার অসভ্য চেষ্টা। এটি তো মানবতা বিরোধী অপরাধ। স্বৈরশাসক মাত্রই তাই মানবতাবিরোধী অপরাধী। এরা জনগণের পরম শত্রু। পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশ শাসিত হচ্ছে এ শত্রুদের দ্বারা। মুসলিম উম্মাহর  পরাধীনতা, শক্তিহীনতা ও ইজ্জতহীনতার মূল কারণ এই স্বৈরশাসন। স্বৈরশাসকগণ জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, ফলে তাদের শাসন-নীতির মূল লক্ষ্য, জনগণকে শক্তিহীন রাখা। জনগণকে শক্তিহীন রাখার মধ্যেই তারা নিজেদের গদীর নিরাপত্তা ভাবে। ফলে স্বৈর শাসনের বিরামহীন যুদ্ধটি জনগণের বিরুদ্ধে।

 

ঔপনিবেশিক শক্তির নাশকতা

মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তির নাশকতার শুরুটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার পর থেকে। সে নাশকতা ছিল যেমন অর্থনৈতিক অঙ্গণে, তেমনি ছিল আদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক অঙ্গণে। অধিকৃত মুসলিম দেশগুলিতে সে বিদেশী শক্তিবর্গ নাশকতাকে অব্যাহত রাখার একটি শক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলে। এরই ফলে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হলেও বেঁচে আছে তাদের ঔপনিবেশিক শোষণ প্রক্রিয়া। এরই প্রমাণ হলো মুসলিম দেশগুলি তেল, গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদে তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার সামর্থ্য, স্বাধীনতা ও ইজ্জত না বাড়লেও জৌলুস বেড়েছে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের। মুসলিম উম্মাহকে আজও যেসব শত্রু শক্তিগণ বিভক্ত, শক্তিহীন, পরাধীন ও ইজ্জতহীন দেখতে চায় -তাদের সর্বপ্রকার মুসলিম দেশগুলিকে পাশ্চাত্যের প্রতি অনুগত স্বৈরশাসকদের হাতে অধিকৃত রাখা। তাদের স্বৈরশাসন বাঁচাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির আয়োজন এবং বিনিয়োগও বিশাল।  কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে তারা ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে।

মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ উম্মাহ রূপে গড়ে উঠতে না দেয়া এবং মুসলিম দেশগুলিতে স্বৈরাচার বিরোধী গণশক্তির বিস্ফোরণ রুখার লক্ষ্যেই সাম্রাজ্যবাদী শাসকচক্র মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চার ভয়ানক শত্রু। ভোটডাকাত শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পক্ষে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় শাসক চক্রের সমর্থন এজন্যই এতো প্রবল। শেখ হাসিনা ভোটডাকাতি করলেও ভারত সে ডাকাতিকে পূর্ণ সমর্থন দেয়। লক্ষ্য, বাংলাদেশের বুকে ইসলামের উত্থানকে প্রতিহত করা। একই কারণে মিশরের প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ মুরসীর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্য শক্তি সমর্থন দিয়েছিল। একই কারণে ১৯৯১ সালে আলজিরিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের আসন্ন বিজয়কে বানচাল করতে সেখানে সামরিক ক্যু ঘটানো হয়। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সংসদীয় নির্বাচনে হামাস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে সরকার গঠন ও শাসন কার্য পরিচালনার সুযোগ দেয়নি। ইসলামের শত্রুপক্ষ গণতন্ত্র নির্মূল করতে চায় তুরস্কেও। তাই সামরিক বাহিনী দিয়ে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব আর্দোগানকে ক্ষমতাচ্যুৎ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের একই নীতি পাকিস্তানেও। সে দেশটিতে গণতন্ত্র চর্চা বিলুপ্ত করতে অতীতে প্রতিটি সামরিক অভ্যুত্থানকে তারা সমর্থন দিয়েছে।     

গণতন্ত্র জনগণকে দেয় নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠার পূর্ণ স্বাধীনতা। এতে জনগণের জীবনে ঘটে বিপুল ক্ষমতায়ন। জনগণের সে শক্তিকে স্বৈরশাসকগণ ভয় পায়। ভয় পায় ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুগণও। এজন্যই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসকদেরই একার নয়, সে অভিন্ন যুদ্ধটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরও। বরং মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি স্বৈর শাসক বেঁচে আছে চিহ্নিত ইসলাম বিরোধী পাশ্চাত্য শক্তির লাইফ-সাপোর্টে। দেশী ও বিদেশী –এ উভয় জাতের শত্রু শক্তির লক্ষ্য মুসলিম উম্মাহর বিভক্তিকে শুধু বাঁচিয়ে রাখা নয়, বরং সে বিভক্তিকে আরো গভীরতর করা। তারা জানে, বিভক্তি বাঁচলে মুসলিম উম্মাহর শক্তিহীনতা এবং পরাধীনতাও বাঁচে। সে লক্ষ্য অর্জনে এক ও অভিন্ন আরব ভূমিকে বিভক্ত করা হয়েছে ২২ টুকরোয়।  এবং বিভক্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতিটির উপর শাসক রূপে বসানো হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অতি পছন্দের তাঁবেদার ব্যক্তিকে। এসব স্বৈরশাসকদের মূল রক্ষক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলি। গণতন্ত্রের শত্রুদের সে কোয়ালিশনে শামিল হয়েছে ইহুদীবাদী ইসরাইলও। তবে লক্ষণীয় হলো, সিরিয়ার স্বৈর শাসক বাশার আল-আসাদকে বাঁচাতে সে দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে ভ্লাদিমির পুটিনের রাশিয়া। এবং বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক হাসিনাকে প্রহরা দিতে হাজির হয়ছে নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী ভারত। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প প্রচুর মিথ্যা কথা বলার জন্য বহুল পরিচিত। তবে শত শত মিথ্যার মধ্যও কিছুদিন আগে তিনি একটি চরম সত্য কথা বলেছেন। সেটি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোর শাসকদের একদিনও টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তবে সত্য শুধু এটুকুই নয়। বরং আরো সত্য হলো, নিজেদের গদি বাঁচাতে সাম্রাজ্যবাদীদের যে বিশাল সাহায্যটি অপরিহার্য -সেটি পেতে স্বৈরশাসকদের পক্ষ থেকে কোনরূপ দেন-দরবারের প্রয়োজন পড়ে না। সে সাহায্য অতি সহজেই তারা পেয়ে যায়। কারণ, পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ জানে, এ স্বৈর-শাসকগণ বাঁচলে, পাশ্চাত্যের স্বার্থও বাঁচে। স্বৈরশাসক পাশ্চাত্যের প্রটেকশন নেয় এ কথা বলে, “তোমাদের স্বার্থ ও ইসরাইলের অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে আমাদেরকে বাঁচাও।” ইসলামের শত্রুপক্ষ বিষয়টি শতভাগ বুঝে। তাই প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের হাতে কুয়েতের স্বৈরশাসক গদিচ্যুৎ হলে তাকে সেই হারানো গদি ফিরিয়ে দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের দেশগুলি তাদের অনুগত সাথীদের নিয়ে প্রকাণ্ড একটি যুদ্ধ লড়েছিল।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গ জানে, মুসলিম ভূমির উপর পাশ্চাত্যের সাহায্য-নির্ভর স্বৈর-শাসকদের অধিকৃতির অর্থ তাদের নিজেদের অধিকৃতি। একারণেই তাদের গদি বাঁচাতে যুদ্ধ করতেও তারা রাজি। সেরূপ যুদ্ধে তাদের প্রস্তুতির আলামত হলো, পারস্য উপসাগরে ও ভূমধ্যসাগরে বিমানবাহী মার্কিন নৌবহর। এছাড়া এ এলাকায় রয়েছে অনেকগুলি মার্কিন ঘাঁটি। লক্ষ্যণীয় হলো, আরব স্বৈর-শাসকদের বাঁচাতে তাদের আয়োজনটি বিশাল হলেও সামান্যতম আগ্রহ নাই মজলুম ফিলিস্তিনীদের দুঃখ লাঘবে। বরং তারা দাঁড়িয়েছে আগ্রাসী  ইসরাইলের পক্ষে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের পক্ষ থেকে গাজার উপর চলছে নৃশংস ধ্বংস প্রক্রিয়া। ২৫ হাজারের বেশী নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে -নিহতদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই শিশু। গাজার শতকরা ৮০ ভাগ আবাসিক ভবনকে ধ্বংস করা হয়েছে। এরপরও যুদ্ধ থামাতে রাজী নয় ইসরাইল ও তার মিত্র দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা অরক্ষিত ফিলিস্তিনে আরো মৃত্যু ও আরো ধ্বংস চায়। ফলে অবিরাম চলছে ধ্বংস প্রক্রিয়া। এ যুদ্ধ অবশ্যই থেমে যেত যদি ফিলিস্তিনীদের হাতে উন্নত অস্ত্র ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকতো। গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা প্রমান করে দিল, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে সামরিক শক্তির বিকল্প নাই। সামরিক বল না থাকলে স্বাধীনতা হারিয়ে গোলামী নিয়ে বাঁচতে হয়। স্বাধীনতা কখনো ভিক্ষায় মেলে না;  স্রেফ আল্লাহর দরবারে দোওয়াতেও জুটে না। এজন্য  বীর-বিক্রমে লড়াই করতে হয়। একাজে জান ও মালের কুরবানী দিতে হয়। এজন্যই ইসলামী এমন লড়াই পবিত্র জিহাদ তথা সর্বোচ্চ ইবাদত। স্বাধীন ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের এ জিহাদ হলো হাতিয়ার।  সে সামর্থ্য না থাকার কারণে ৬ লাখের বেশী ফিলিস্তিনী বিগত ৭০ বছরের বেশী কাল যাবত ঘরছাড়া; জাতিসংঘের প্রস্তাবে তাদের ঘরে ফেরার প্রতিশ্রুতি থাকলেও পালিত হচ্ছে না সে প্রতিশ্রুতি। বরং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গ ইসরাইলকে নিঃশর্ত সাহায্য দানের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনীদের দুঃখকে বাড়িয়েই চলেছে। একেই বলে নিরেট স্বার্থবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের রাজনীতি। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা সামরিক ভাবে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়াকে ফরজ করেছেন। সে হুকুম এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। 

 

 ভারতের দখলদারী ও নাশকতা

দিল্লির আগ্রাসী শাসকগোষ্ঠির কাছে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। ফলে তাঁর স্বৈরশাসন বাঁচাতে ভারত বেপরোয়া। হাসিনার পরাজয় তাদের কাছে অসহ্য। ভারতীয়রা জানে, একমাত্র শেখ হাসিনার শাসন বাঁচলেই বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ বাঁচবে। ১৯৭১’য়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ জন্য যুদ্ধ করেনি যে, দেশটির পূর্ব প্রান্তে পাকিস্তানের ন্যায় এক স্বাধীন দেশ জন্ম নিবে। বরং সেটি ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও প্রতিরক্ষার উপর ভারতীয় দখলদারীর প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৫’য়ে মুজিবের মৃত্যুর পর ভারতীয় আধিপত্যের বেষ্টনী ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা হয়েছিল; কিন্তু হাসিনার ক্ষমতায় আসার পর খাঁচার ঘুঘু আবার খাঁচায় ফিরে গেছে। ফলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে ভারতের। ভারত পদ্মা ও তিস্তার পানি দিতে রাজী না হলে কি হবে, শেখ হাসিনার রাজনীতির এজেন্ডা হলো ভারত যা চায় -তা দেয়া। কারণ, তাকে ক্ষমতায় থাকতে হয় ভারতের সাহায্য নিয়ে। ভারতের নিরঙ্কুশ সাহায্য পাওয়াতে হাসিনার আর জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়ে  না। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জীর কথা, বাংলাদেশকে ভারতীয় রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার পর ভারতের অর্জনটি বিশাল। ১৮ কোটি মানুষের বাজার ভারতের জন্য বিশাল বাজার। পশ্চিম বাংলা, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, উড়িষ্যা, বিহার ও মধ্য প্রদেশ -এরূপ ভারতীয় প্রদেশ একত্রিত করলেও বাংলাদেশের সমান অর্থনৈতিক বাজার হবে না। বাংলাদেশ হলো ভারতীয় পণ্যের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার। তাছাড়া ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ইচ্ছামত করিডোর; সে সাথে পেয়েছে বাংলাদেশের বন্দরগুলিতে অবাধ প্রবেশাধিকার। অথচ এরূপ প্রবেশাধিকার ভারত বাংলাদেশকে নেপাল ও ভূটানে যেতে দিতে রাজী নয়। এছাড়া বাংলাদেশ হলো, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বিশাল রেমিট্যান্স অর্জনের খাত। বাংলাদেশে শিল্প ও বানিজ্য খাতে কাজ করে ৬ বিলিয়ন ডলার কামাই করে নিয়ে যাচ্ছে বহু হাজার ভারতীয় নাগরিক। অথচ ভারত এমন সুযোগ নিজ দেশে বাংলাদেশীদের দিতে রাজী নয়।

ফলে ভারতীয় বিদেশ নীতির মূল কথা, যে কোন ভাবে হোক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতটুকু বা তার জনপ্রিয়তা কিরূপ -তা নিয়ে হাসিনার ফিকর নেই। তেমনি তা নিয়ে ফিকর নেই ভারতীয়দেরও। তাদের কথা, শেখ হাসিনাকে মেনে নেয়া ছাড়া ভারতীয়দের সামনে বিকল্প পথ নেই। ফলে হাসিনার পরাজয় মেনে নেয়া তাদের জন্য কোন অপশন নয়। তাছাড়া এ প্রমাণ তো সুস্পষ্ট, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে থাকলে শতকরা ৫ ভাগের বেশী ভোটার ভোট না দিলে বা সংসদের ১৫৩ সিটে ভোটাভুটি না করেও ক্ষমতায় থাকা যায়। এমন কি নির্বাচন না করেও ক্ষমতায় থাকা যায়। শেখ মুজিব তো আজীবন ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন নির্বাচন না করেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তখন মুজিবের ইশারায় ধ্বনি তুলেছিল, “এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।”  তখন মুজিবের সে নীতির পক্ষে সমর্থন দিয়েছেল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী ভারত। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গর্ব শুধু ব্যক্তি মুজিবকে নিয়ে নয়, বরং তাঁর বাকশালী আদর্শকে নিয়েও। মুজিব না থাকলেও মুজিব কন্যা হাসিনা আছে। “এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” এর বদলে “এক নেত্রীর এক দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা না দিলে শেখ মুজিবের আদর্শের অনুসরণ হয় করে? ভারত সে নীতির বাস্তবায়নে যে সর্বাত্মক সহায়তা দিবে তাতে কি সন্দেহ আছে? ভারত এভাবেই নিজেকে স্থাপন করেছে বাংলাদেশী জনগণের ও গণতন্ত্রের শত্রু রূপে।  

উপার্জনের সামর্থ্য না থাকলেও সম্পদের পাহাড় গড়া যায় যদি চুরি-ডাকাতির সামর্থ্য থাকে। তেমন জনপ্রিয়তা না থাকলেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়া যায় ভোট ডাকাতির সামর্থ্য থাকলে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ ও মিশরের হুসনী মোবারক তাই শতকরা ৯৫ ভাগের বেশী ভোট নিয়ে বিজয়ী হতেন। এমন ক্ষমতাসীন ভোট-ডাকাতদের নির্বাচনে পরাজিত করা তাই অসম্ভব। হাসিনাও পরিচিত ভোট ডাকাতদের পথ ধরেছে। দিল্লির শাসকচক্র নিজ দেশে যে ধরণের নির্বাচন আশা করে সে ধরণের নির্বাচন বাংলাদেশে চায় না। বাংলাদেশে তারা কিরূপ নির্বাচন চায়, সেটির প্রকাশ ঘটেছে ২০১৪, ২০১৮ ও  ২০২৪ সালের ভোট-ডাকাতি ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে। তবে তার কারণও রয়েছে। কারণ তারা জানে, তাদের খেলোয়ার শেখ হাসিনার সামর্থ্য নাই নির্বাচনী লেভেল ফিল্ডে বিজয়ী হওয়ার। ফলে তাদের স্ট্রাটেজি হলো, বিরোধী দলকে খেলা শুরুর আগেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বিদায় করে দেয়া এবং খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে খেলতে দিয়ে বিজয়ী ঘোষণা দেয়া। তেমন একটি দুষ্ট লক্ষ্যে নির্বাচনী ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের কাজটি শুধু নির্বাচনে দিন ঘটে না, বরং সেটির পরিকল্পনা এবং সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন  শুরু হয় ক্ষমতা হাতে নেয়া সাথে সাথে। তাই ২০১১ সালের নির্বাচনী বিজয়ের পর যে চিন্তাটি শেখ হাসিনা তাঁর মগজ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় দেন -সেটি হলো ২০১৪ সালে নির্দলীয় কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ। সে লক্ষ্য পূরণে তখন থেকেই শুরু হয় কেয়ার টেকার সরকার বিলুপ্তির লক্ষ্যে ইঞ্জিনীয়ারিং। সে কাজে খুঁঝে বের করা হয় এবং কাজে লাগানো হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে আবুল খায়েরকে। যে নির্দলীয় কেয়ার টেকার সরকারের জন্য ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা নিজে লড়াই করেছেন এবং সংবিধানের পরিবর্তন এনেছেন -সে বিধানকে বিচারপতি আবুল খায়েরকে দিয়ে কলমের এক খোঁচায় বাতিল করা হয়। কেয়ার টেকার সরকারের সে বিলুপ্তি তার কাছে উৎসবের কারণ গণ্য হয়। রাজনৈতিক সুবিধাবাদ স্বার্থান্বেষীদের যে কতটা নীতিহীন ও স্বার্থপর করতে পারে -এটি হলো তারই উদাহরণ। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব –সেটি ছিল শেখ হাসিনার নিজের যুক্তি। এখন তিনি নিজেই সেটি প্রমাণ করে দেখাচ্ছেন। নির্বাচনে কাউকে লাল কার্ড দেখাতে সে ক্ষমতাটি এখন তিনি তার আস্থাভাজন লোকের উপর ন্যস্ত করেছেন। বিরোধী দলীয় নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দেয়া হয়। এবং সেটি করা হয় আজ্ঞাবহ পুলিশ ও আদালতকে দিয়ে। এভাবে রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে প্রতারণা ও শাস্তিদানের হাতিয়ারে। নির্বাচনী দিনক্ষণ ঘোষণার বহু আগেই লাল কার্ড দেখানা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। লাল কার্ড দেখানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে এবং বিএনপি নেতা তারিক জিয়াকেও।

স্বৈরশাসকগণ গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের বিদায়ের পথটি কখনোই খোলা রাখে না। শেখ মুজিব ও এরশাদের সময় যেমন খোলা ছিল না, তেমনি খোলা নয় হাসিনার আমলেও। একই ভাবে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনী অভিযানকে কাজে লাগিয়েছে পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজে। শেখ মুজিবের উদ্দেশ্য কখনোই পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়া ছিল না, বরং লক্ষ্য ছিল, নির্বাচনে অংশ নেয়ার  মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তীব্রতর করা এবং প্যান-ইসলামীক চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর শিকড় কাটা। এভাবে দেশটিকে বিভক্ত করা। ভারতে পক্ষ থেকে এটিই ছিল শেখ মুজিবের উপর অর্পিত দায়ভার –যা প্রকাশ পায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। প্রায় এক বছর যাবত চলা নির্বাচনী অভিযান তিনি সুযোগ পান জনগণের সাথে সংযোগ গড়ার এবং গড়ে তুলেন লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক ক্যাডার। মূল এজেন্ডাটি পাকিস্তান ভাঙ্গা হওয়ায় দলের নির্বাচনী প্রচারকে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে নেননি। ফলে নির্বাচনের পূর্বে যে দেশ এক ছিল তার নির্বাচনের পর দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায়। নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে এভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। অপরদিকে নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় শক্তিশালী নেতা হওয়া সত্ত্বেও ভাষানীর রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাপ নানা উপদলে লণ্ডভণ্ড হয়ে অবশেষে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। 

 

স্বৈরশাসকের নির্মূল কেন নির্বাচনে অসম্ভব?  

গণতন্ত্রের শাসকের শক্তির উৎস হলো জনগণের ভোট। আর স্বৈরশাসকদের শক্তির উৎস্য হলো অস্ত্র ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। স্বৈরশাসকগণ জনগণের দুর্বলতাও বুঝে। তারা জানে, তাদের সামরিক শক্তির সামনে দাঁড়ানোর সামর্থ্য জনগণের নাই। এজন্যই যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের ন্যায় শেখ হাসিনা ও তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্ধত ভাবটা এমন, বিরোধীদলের যদি মুরোদ থাকে তবে শক্তির জোর তাকে সরিয়ে দিক। কারণ হাসিনা জানে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি নিরস্ত্র জনগণের নেই। বাংলাদেশে সে শক্তির মালিক তো একমাত্র সে। তার পিতার হাতে ছিল একটি মাত্র রক্ষিবাহিনী। হাসিনার হাতে সেরূপ অনুগত রক্ষিবাহিনী ৪টি। সেগুলি হলো: সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী এবং RAB। সে সাথে রয়েছে বিশাল দলীয় ক্যাডার বাহিনী। এখানেই সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে শক্তির প্রচণ্ড অসমতা। ফলে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ কোন নিরস্ত্র বিরোধী দল বা জনগণ বেছে নিতে পারে না।

স্বৈর-সরকারের দুর্বলতা হলো, জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে তারা যুদ্ধ করতে পারে না। রাজনীতির লড়াই যখন জনগণের কাতারে চলে যায়, তখন সে লড়াই কামান দেগে জেতা যায় না। ডাঙ্গায় পড়লে বিশাল মাছ কিছুক্ষণ ছটফট করতে পারে, কিন্তু মৃত্যুকে এড়াতে পারে না। জনগণের কাতারে একই অবস্থা হয় স্বৈরাচারী শাসকের। তখন স্বৈর-শাসকের পতন ঘটাতে অস্ত্র হাতে নেয়া লাগে না। স্বৈরাচার থেকে মুক্তির এ নিরস্ত্র পথই হলো সহজতর পথ। সেটি গণবিপ্লবের পথ। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না করে ক্ষমতায় যাওয়াই হলো স্বৈর সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ। প্রতিটি ভোট-ডাকাত সরকারই তাই অপরাধী ও অবৈধ সরকার। অপরাধ এখানে স্বাধীন ভাবে ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নেয়ার। তারা যে জনগণের স্বাধীনতার শত্রু -সেটি প্রমাণে বিরোধী দলকে তাই মাঠে-ময়দানে নেমে বক্তৃতা দেয়া লাগে না। ডাকাত সরকার ভোট-ডাকাতির মাধ্যমে নিজেই সেটি বুঝিয়ে দেয়। তাই ভোট ডাকাতীর নির্বাচনে বিজয় যত বিশালই হোক তাতে স্বৈরসরকারের বৈধতা বাড়ে না; বরং বৈধতা দেয় গণআন্দোলনের।

                                                      

 কেন এবং কিরূপে গণবিপ্লব?

স্বৈরাচার বিরোধী এ যুদ্ধে জিততে হলে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে জনগণের। এ যুদ্ধ যে জনগণের নিজস্ব যুদ্ধ –সেটি জনগণের মনে সুস্পষ্ট ও বদ্ধমূল করতে হয়। তাদের চোখের সামনে তাদের স্বাধীনতার শত্রুদের ভোটডাকাত রূপে ধরিয়ে দিতে হয়। তখন জনগণ জেগে উঠে, এবং চেতনায় সৃষ্টি হয় স্বৈরাচার বিরোধী প্রবল ঘৃণা। এ ঘৃণা যতই তীব্রতর হয় ততই সুযোগ সৃষ্টি হয় জনগণকে সাথে নিয়ে গণবিপ্লবের। দুর্বৃত্ত স্বৈরসরকার ও তাদের সহযোগী বুদ্বিজীবীদের বাইরেও দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস -যারা গণতন্ত্রের মূল শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও চায়। কারণ, দুর্বৃত্ত স্বৈরসরকারের বিরুদ্ধে লড়াইটি স্রেফ বিরোধী দলের লড়াই নয়, এ লড়াইটি জনগণের। কারণ, এটি তাদের নিজেদের ভোটের ইজ্জত রক্ষার লড়াই। বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো স্বৈরাচার বিরোধী চলমান যুদ্ধে দেশের জনগণকে যেমন সাথে নেয়া, তেমনি সে যুদ্ধে তাদের চেতনায় বুদ্ধিবৃত্তিক গোলাবারুদের জোগান। সে সুযোগটি আসে স্বৈরশাসককে গণশত্রু ও ভোটডাকাত রূপে জনসম্মুখে হাতেনাতে ধরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়ে এটিই হলো গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। তাছাড়া এটিও জরুরি যে, রাজনীতির ময়দানে বিজয়ী হতে হলে প্রথমে বিজয়ী হতে হয় বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে।

ভোটডাকাত অবৈধ হাসিনার সরকারের দুর্বলতাটি বিশাল। সাম্রাজীবাদী ব্রিটিশ বা ইরানের মহম্মদ রেজা শাহের চেয়ে তাঁর সরকার শক্তিশালী নয়। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে তারাও টিকতে পারিনি। স্বৈরাচার বিরোধী এ নিরস্ত্র যুদ্ধের বিকল্প হলো সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ। কিন্তু সে পথে স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটনা যায়না। কারণ ভারী অস্ত্রের বিশাল ভান্ডার তো সরকারের হাতে। তাদের রয়েছে বিশাল সামরিক ও পুলিশ বাহিনী। এজন্যই স্বৈরাচারী সরকার মাত্রই চায়, বিরোধী পক্ষ অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামুক। তাতে সরকারের পক্ষে সহজ  হয় বিরোধী পক্ষের নির্মূল। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের সরকারের ভয় জনগণের নিরস্ত্র আন্দোলন। বিশ্বের বড় বড় স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনে, সশস্ত্র পথে নয়। দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, পূর্বজার্মানী, পোলান্ড, মিশর, তিউনিসিয়া, নেপালসহ বিশ্বের বহু দেশে স্বৈরাচারের নিপাতে জনগণকে অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নামতে হয়নি। নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনই সেগুলির পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারী সরকার মিছিলের উপর গুলি চালাতে পারে। কিন্তু লাখ লাখ লোকের জনস্রোতে যখন রাজধানীর সবগুলো রাস্তাঘাট প্লাবিত হয় তখন কোন স্বৈরাচারী সরকারই সেটি রুখতে পারিনি। সে গণজোয়ার ইরানে শাহ রুখতে পারিনি, মিশরের হোসনী মোবারক রুখতে পারিনি। জেনারেল এরশাদও রুখতে পারিনি।

বিরোধী দলকে অবশ্যই জনগণের সে শক্তিকে বুঝতে হবে। জনগণ শক্তি পায় রাজনৈতিক সচেতনা থেকে। বিরোধী দলগুলোকে একাত্ম হতে হয় জনগণের সাথে। জালেম স্বৈর-শাসকের সে সুযোগ থাকে না। কারণ, তাদের থাকে নিরাপত্তার ভয়। চোরডাকাতদের ন্যায় তারাও জনগণের কাতারে নামতে ভয় পায়। সেটি ভোট-ডাকাতির অপরাধের কারণে । স্বৈরশাসক ভোটডাকাতিতে জিতলেও তারা নৈতিক ভাবে পরাজিত হয়। সে নৈতিক পরাজয় থেকেই জন্ম নেয় রাজনৈতিক পরাজয়ের।

                                         

মূল হাতিয়ারটি একতা

স্বৈরাচার নিপাতে জনগণের মূল হাতিয়ারটি হলো একতা। অনৈক্যে আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য। স্বৈরসরকারের কৌশলটি হলো সবদলকে তারা এক সাথো ধরে না। হিংস্র শিকারী পশুর ন্যায় একটি একটি করে ধরে। আর বিরোধী দলগুলির সমস্যা হলো, যখন কোন একদলের কর্মীগণ নিহত ও নির্যাতিত হতে থাকে, অন্যরা তখন নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে দূরে অবস্থান নেয়। একই কায়দায় শেখ হাসিনা একে একে ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, হিফাজতে ইসলাম ও বিএনপি -সবাইকেই ঘায়েল করেছে। ২০১৩ সালে হিফাজতে ইসলামের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ, সকল বিরোধী দলকে তারা কাছে টানতে পারিনি। একই কারণে ব্যর্থ হয়েছে জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনও। এ অবধি তাদের সকল ব্যর্থতার কারণ, তাদের অনৈক্য।  

বিরোধীদলগুলি একতার গুরুত্ব না বুঝলে কি হবে, মহাজোট গড়েছে আওয়ামী লীগ  ও তার বাকশালী মিত্ররা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থই সকল বিরোধী দলগুলিকে পরস্পরে দূরে রেখেছে। দলীয় স্বার্থ নয়, স্বৈরশাসক নির্মূলের লড়াই যে এ মুহুর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা -সেটিও তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার শুধু জামায়াত ইসলামী বা বিএনপির শত্রু নয়। শত্রু হিফাজতে ইসলামসহ সকল বিরোধী শক্তি ও জনগণের। এ সরকারের হাতে জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির শত শত নেতাকর্মী যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি হিফাজতে ইসলামেরও বহু হাজার নেতাকর্মী নিহত ও আহত হয়েছে। তাই গণ-আন্দোলনের লক্ষ্য হতে হবে মাত্র একটি। সেটি বিএনপি, জামায়াত বা অন্যকোন দলকে বিজয়ী করা নয়; বরং স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নিপাত। হাসিনার স্বৈরসরকার উৎখাত হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। তাতে বিজয়ী হবে জনগণ। তখন সবাই অধিকার পাবে রাজপথে মুক্ত ভাবে রাজনীতির স্বাধীনতা। এজন্য নির্বাচন আসন নিয়ে বিবাদ করাটি আত্মঘাতী। স্বৈরাচার নির্মূল হলে সবচেয়ে বেশী লাভ হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তাই সবচেয়ে বেশী ছাড় দিতে হবে তাদের। কারণ তাদের ছাড় দেয়ার মাঝেই তাদের বিজয়। কিন্তু সিট বন্টন নিয়ে বিরোধী দল বিভক্ত হলে সবচেয়ে বড় পরাজয়টিও হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর। তখন স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতনের নির্মম জোয়ালটি আগামী  ৫ বছরের জন্য আবার তাদের ঘাড়ে চাপানো হবে। সে বিষয়টি অবশ্য বুঝতে হবে। তাই তাদের মাঝে বিভেদ বাড়ানোর স্ট্রাটেজি তো স্বৈরাচারী সরকারের।

স্বৈরাচার নির্মূলের  যুদ্ধে একতার কোন বিকল্প নেই। সকল বিরোধী দল নিয়ে একটাই মাত্র জোট গড়তে  হবে। কথা হলো, দুর্বৃত্ত ভোট-ডাকাতদের বিরুদ্ধে জনগণ না দাঁড়ালে দেশের স্বাধীনতা ও সম্পদকে কে বাঁচাবে? এমন একটি দুর্বৃত্ত সরকারকে সরাতে হলে তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিবাদী করতে হয়। বুঝাতে হয়, তারা জনগণের ভয়ানক দুশমন। জনগণ ইচ্ছামত ভোট প্রয়োগ করুক সেটি স্বৈর-শাসকগণ কখনোই চায় না। ডাকাতগন যেমন সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ছিনিয়ে নেয়, ভোট-ডাকাতগণও তেমনি রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সন্ত্রাস দেখিয়ে ভোট ছিনিয়ে নেয়। এভাবে ভোটের মালিক হওয়াতে ভোট-ডাকাতেদর পক্ষে রাষ্ট্রের ব্যাংক, সরকারি কোষাগার, শেয়ার মার্কেট, সরকারি ভূমি, বিদেশীদের দেয়া অর্থ –সবকিছুর উপর মালিক হওয়া যায়। অন্যান্য দেশে রাস্তাঘাট গড়তে যে খরচ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী বাজেট বরাদ্দ হয় বাংলাদেশে। তবে সেটি ভাল রাস্তাঘাট তৈরীর জন্য নয়, বরং অতিরীক্ত সে বরাদ্দটি হয় সরকারি দলের ক্যাডারদের পকেট ভর্তির জন্য। ফলে সাধারণ চোর-ডাকাতদের চেয়ে বহুহাজার গুণ বেশি ডাকাতি করে স্বৈরাচারী ভোট ডাকাত। সে ডাকাতির অর্থে ভাগ নিতে সাধারণ ডাকাতগণ গ্রাম-গঞ্জে ডাকাতিতে না নেমে সরকারি ডাকাত দলে যোগ দেয়। এজন্যই শেখ হাসিনার দলে বিরোধী দলের কর্মীদের নিষ্ঠুর ভাবে পেটাতে পুলিশের পাশে সিভিল লেবাসধারী লোকের অভাব হয়না। তাই সচেতন নাগরিকদের দেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয় এরূপ ভোট-ডাকাত নির্মূলে। কারণ ভোট-ডাকাতদের জন্য ক্ষমতার শীর্ষে উঠার এটাই হলো সিঁড়ি। তাই এ ডাকাতদের থেকে মুক্তি পেতে হলে জরুরি হলো, এ সিঁড়ির নির্মূল।  জনগণের হাতে টিভি ও পত্র-পত্রিকা না থাকলেও আছে মোবাইল, ফেস বুক, ইউ টিউব, হোয়াটসএ্যাপ এক্স এবং ইমেল। এগুলো কাজে লাগিয়েও ভোট ডাকাতদের অপরাধকে দেশবাসী এবং সে সাথে বিশ্ববাসীর সামনে আনা যায়।

বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি অর্থনীতি, কৃষি বা শিল্পের নয়। ভূমি বা জলবায়ুরও নয়। সমস্যাটি ড্রাগ বা মাদকাসক্তিরও নয়। বরং সেটি হলো স্বৈরশাসন। স্বৈরশাসকদের ক্ষমতার প্রতি আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ানক। বস্তুত মানব জাতির বড় বড় ক্ষতিগুলো কখনোই মাদকাসক্তির কারণে হয়নি। সে বর্বরতাগুলি হয়েছে স্বৈরশাসকের ক্ষমতাসক্তির কারণে। ক্ষমতার নেশায় উমত্ত হিটলার, স্টালিন, মাও সে তুঙের কারণে তাদের দখলকৃত দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরাই উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদের ন্যায় নানারূপ প্রাণনাশী ভয়ানক মতবাদের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতাসক্ত এ মানুষেরা যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পায় তখনই সে দেশে অতি নিষ্ঠুর স্বৈরাচারের জন্ম নেয়। বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতিত হচ্ছে, রাজপথে হাজার হাজার মারা পড়ছে ও নিরাপরাধ কারাবন্দী হচ্ছে পাওয়ার-এ্যাডিক্ট হাসিনার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়ীত করার প্রয়োজনে। অতীতে এ শ্রেণীর স্বৈরশাসকগণ নবী-রাসূলদেরও হত্যা করেছে এবং আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করেছে।  

 

যে পথে মুক্তি আসে

রাজনৈতিক অঙ্গণে চলমান এ যুদ্ধটি কাউকে বিজয়ী করা নিয়ে নয়। বরং অতি দুর্বৃত্ত এক স্বৈর শাসককে পরাজিত করা নিয়ে। দেশে যখন ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি বা মহাপ্লাবনের আঘাত আসে, সে মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো জনগণের একতা। বিপদের সে মুহুর্তে জনগণ যদি কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় তখন আরেক মহাবিপর্যয় ঘটে। সে মহা বিপদ থেকে কোন একক দল বা গোষ্ঠি দেশকে উদ্ধার করতে পারেনা। বাংলাদেশের ন্যায় স্বৈর-শাসনের কবলে পড়া দেশগুলির বিপদ ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি বা মহাপ্লাবন নয়, বরং  সে বিপদ তার চেয়েও বহুগুণ গুরুতর। সেটি স্বৈরাচারী শাসকের দুঃশাসনের। ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি বা মহাপ্লাবনে একটি জাতি কখনোই ধ্বংস হয় না। সে বিপদগুলি বছরের পর বছর বা দিনের পর দিন সরকারি বাহিনীর হাতে মৃত্যু, গুম,রিমান্ড ও জেল-জুলুমের ন্যায় নানারূপ অসভ্য ও অসহনীয় বিভিষীকা নিয়ে হাজির হয়না। জনগণকে তখন বছরের পর বছর প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকতে হয়না। সে বিপদে মানবতা, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলি বিলুপ্ত হয়না। সে দুর্যোগে যেমন ভোট ডাকাতি হয়না, তেমনি গণতন্ত্রেরও মৃত্যু হয়না। ফলে তাতে ব্যহত হয়না সভ্যরূপে বেড়ে উঠাও। ফলে অসংখ্য ভূমিকম্প আসা সত্ত্বেও জাপান বা ইতালি ধ্বংস হয়ে যায়নি। তাদের মুখে অসম্মানের কালিমাও লাগেনি। বরং জাপান আজ এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি। এবং ভূমিকম্পের দেশ ইতালি জন্ম দিয়েছিল রোমান সাম্রজ্যের ন্যায় এক বিশাল বিশ্বশক্তির।

চোর-ডাকাতদের গ্রামে বা পতিতাপল্লীতে জন্ম নেয়া ও সেখানে বসবাসের একটি অসহনীয় গ্লানি আছে। সে গ্রামের ঘরবাড়ি ও অর্থসম্পদের দিকে মানুষ নজর দেয়না। বরং নজর দেয় কিরূপ অসভ্য রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে সেখানকার মানুষ বসবাস করে সেটির দিকে। সভ্যতার বড় পরিচয় দালান-কোঠা নয়; সেটি হলো জীবনের নিরাপত্তা, সম্মান ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাসের পরিবেশ। স্বৈরাচারী শাসনে সে অধিকার থাকেনা বলেই একটি জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় অসভ্যতাটি হলো স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে বসবাস। তাই অর্থচুরি বা অর্থ ডাকাতির চেয়ে বড় অপরাধ হলো ভোটচুরি বা ভোট ডাকাতি। কারণ ভোটডাকাতির অর্থ নাগরিকের স্বাধীনতা ডাকাতি হয়ে যাওয়া। তখন সমগ্র দেশ চোর-ডাকাতদের হাতে অধিকৃত হয়ে যায়। তখন ডাকাতি হয়ে যায় দেশের ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট, সরকারি ট্রেজারিসহ জাতীয় সম্পদ। তাই একটি দেশে সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের সাধারণ চোর-ডাকাত বা সন্ত্রাসী নয়, বরং তারা হলো ভোট-ডাকাতগণ। তাই সভ্য দেশগুলি চোরডাকাতদের নির্মূলের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দেয় ভোটচোর বা ভোট-ডাকাতদের নির্মূলে। একমাত্র এপথেই নির্মূল হয় স্বৈরাচারের দুর্বৃত্তি। একটি সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মিত হয় তো তাদের নির্মূলের মধ্য দিয়েই।  ০৮/০১/২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *