গণশত্রু নির্মূল হয়নি: প্রতিবিপ্লব রুখতেই হবে
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on August 10, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
আশংকা প্রতিবিপ্লবের
ইতিহাসের শিক্ষা হলো, প্রতিটি বিপ্লবের মধ্যেই থাকে প্রতি বিপ্লবের বীজ। গণশত্রুগণ বিপ্লবের মুখে পলায়ন করলেও তারা আবার বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে। কারণ, তারাও বন্ধুহীন নয়। তাদের থাকে বিদেশী প্রভু। তাছাড়া স্বৈরাচারী শাসক নির্মূলের অর্থ তাদের স্থাপিত স্বৈরাচারী সিস্টেমের নির্মূল নয়। রাষ্ট্রের বুকে সে সিস্টেম বেঁচে থাকায় স্বৈরশাসকের আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। উদাহরণ হলো, সাম্প্রতিক কালে আরব দেশগুলিতে ঘটে যাওয়া স্বৈরাচারবিরোধী আরব বসন্ত। তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলি থেকে স্বৈরশাসকেরা অপসারিত হলেও বেঁচে ছিল স্বৈরাচারী শাসন প্রক্রিয়া। ফলে সে প্রক্রিয়ায় স্বৈরাচার আবার ফিরে এসেছে। ফলে গণতন্ত্র আবার কবরে ফিরে গেছে। তাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসীকে হটিয়ে সেদেশের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। সেদেশে চলছে জেনারেল আব্দুল ফাতাহ সিসির স্বৈরশাসন -যা সাবেক স্বৈরশাসক হুসনী মোবারকের চেয়েও নৃশংস। জনগণের নির্বাচিত সরকার থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে তিউনিসিয়াতেও। তাই শুধু স্বৈরশাসক নির্মূল করলে চলেনা, যে প্রক্রিয়ায় তারা জন্ম নেয় ও বেড়ে উঠে সে প্রক্রিয়া বা সিস্টেমকেও নির্মূল করতে হয়।
বাঙালি মুসলিমদের ঘাড় থেকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সামরিক স্বৈরশাসন নির্মূ্ল হয়েছে, কিন্তু সে ঘাড়ে চেপে বসেছে মুজিবের বাকশালী ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন। তখন দেশে বিরোধীদের সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছিল একদলীয় স্বৈরশাসন। ১৯৭৫ সালে মুজিবের বাকশালী ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মূল হয়েছিল; কিন্তু মুজিবের চেয়েও অধিক নৃশংসতা নিয়ে ফিরে আসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে স্বৈরশাসন ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করেছে স্বৈরশাসকদের বন্ধু ও গণতন্ত্রের শত্রু সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জর্দান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলি। এ দেশগুলি চায় না, মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পাক। তাদের রয়েছে গণতন্ত্রভীতি। স্বৈরশাসন বাঁচলে নিরাপত্তা পায় স্বৈরশাসকগণও। তাই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ২২টি আরব রাষ্ট্রই একতাবদ্ধও। অপরদিকে বাংলাদেশে স্বৈরশাসন ফিরিয়ে আনতে ও সেটিকে শক্তিশাকলী করতে সাহায্য করেছে ভারত।
প্রতিবিপ্লবের প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়ে গেছে বাংলাদেশেও। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের দলের বিপুল সংখ্যক লোক দেশের প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, আদালত, মিডিয়া, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক জগতে রয়ে গেছে। তারা এখন ফনা তুলতে শুরু করেছে। হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়া ও প্রতিশোধ নেয়ার আস্ফালন করছে। তাছাড়া হাসিনার পাশে রয়েছে ভারতের ন্যায় চক্রান্তকারী আগ্রাসী প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এ দেশটি রয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা।
হাসিনার পতনের পর বিপদে পড়েছে ভারতের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা। দেশ থেকে লেজ গুটিয়ে হঠাৎ চলে যাওয়াটি যাওয়াটা হাসিনার কাছেও যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনই সেটি মেনে নিতে পারছে না ভারত। তাই প্রতিশোধ নিতে চায় শুধু হাসিনা নয়, ভারতও। ভারত সে উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই কলকাঠি নাড়ানো শুরু করেছে। ভারতীয় মিডিয়া প্রচারে নেমেছে এই বলে, বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্মূলের মুখে। হাসিনা পুত্র জয় ভারতীয় মিডিয়াতে ঘন ঘন সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজের রাজনৈতিক মতলব জাহির করছে।
এ বিপ্লব বাঁচাতে হলে ভারতের মতলব বুঝতে হবে। কারণ, বাঙালি মুসলিমদের মূল যুদ্ধটি আগ্রাসী ভারতের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা ছিল শেখ মুজিবের ন্যায় ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাস মাত্র। বুঝতে হবে ভারত কখনোই বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা চায়না। ভারত ভালই জানে, গণতন্ত্র মানেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধীদের বিজয়। ভারত এটাও চায়না যে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের কোন রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকুক। কারণ ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকলে বাংলাদেশ দ্রুত পরিণত হবে ইসলামের ঘাঁটিতে। সে ঘাঁটি ভারতের ২২ কোটি মুসলিমকেও জাগিয়ে তুলবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের নীতি নির্মিত হয় বস্তুত এরূপ গণতন্ত্রভীতি ও ইসলামভীতি থেকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে ভারতীয় রাজনীতির এ স্ট্রাটেজীকে সবসময় মনে রাখতে হবে।
৯ আগস্ট হাসিনার পুত্র সাজিদ ওয়াজেদ জয় সংবাদ সংস্থা রয়টারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছে, তার মা হাসিনা নাকি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেনি। এ কথা বলে সে বুঝাতে চেয়েছে, হাসিনা এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। তাই বাংলাদেশের নতুন সরকারের পক্ষ থেকে তার মা’য়ের বিরুদ্ধে যা কিছু করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আদালতের সাহায্য নেয়ার হুমকি দিয়েছে। শংকার কারণ হলো, আদালতের প্রায় সকল বিচারকগণ হলো বিগত ১৫ বছর ধরে হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। হাসিনার প্রতি অনুগত নয় এমন কোন ব্যক্তিকে বিগত ১৫ বছরে বিচারক পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতের এসব বিচারকগণ হাসিনার পাশে দাঁড়াবে সেটিই স্বাভাবিক। সেটি প্রকাশ পায় যখন ১০ আগস্ট শনিবার ছুটির দিনে প্রধান বিচারপতি আদালতের এজলাস ডেকে প্রফেসর ইউনুসের সরকারকে অবৈধ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়ার মধ্য দিয়ে। খুশির বিষয় হলো, বিচারকদের এ উদ্যোগ প্রচার পাওয়ায় ছাত্ররা আদালত ঘেরাও করেছে এবং প্রধান বিচারপতিসহ ৫ জন বিচারককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে।
শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ প্রতিক্ষণের
বুঝতে হবে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুর যুদ্ধটি প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণ। তেমন একটি বিরামহীন যুদ্ধ বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধেও। তাই শত্রুর প্রতিরোধে ঈমানদারের যুদ্ধকেও হতে হয় প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণ। ইসলামে নামাজের ওয়াক্ত প্রতিদিন পাঁচবার, কিন্তু জিহাদের ওয়াক্ত সর্বক্ষণ এবং সর্বাবস্থায়। সে নির্দেশ এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
অর্থ: “এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বসামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুত হও; প্রস্তুত করো তোমাদের অশ্ববাহিনীকে। তা দিয়ে তোমরা সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের।”
মুসলিমের নামাজ বা রোজা কাজা হলে তাতে শত্রুর কোন বিজয় ঘটে না। কিন্তু জিহাদ কাজা হয়ে গেলে তাতে শত্রুশক্তি বিজয়ী হয়। তাই জিহাদে কোন কাজা নেই। বরং জিহাদরত অবস্থায় রোজা ভাঙ্গা যায় -যেমন বদরের যুদ্ধে ঘটেছিল। মুসলিমদের পরাজয়ের শুরু তখন থেকেই যখন তারা বাঁচতে শুরু করেছে জিহাদ ও জিহাদের প্রস্তুত ছাড়াই। ফলে বার বার বিজয় এসেও সে বিজয়গুলি হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বুঝতে হবে, গাছ লাগালেই দায়িত্ব শেষ হয় না। সে গাছকে পাহারা দেয়ার দায়িত্বও হাতে নিতে হয়। নইলে ঝড় ঝঞ্ঝায় ও পদপিষ্ঠ হয়ে সে গাছ মারা যায়। তাই বিপ্লব করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না; বরং সে বিপ্লবকে প্রতিক্ষণ পাহারা দিতে হয়। অতীতের বহু বিপ্লব মাঠে মারা পড়েছে বিপ্লবকে পাহারা না দেয়ার কারণে। তাই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে বিপ্লবকে সফল করেছে -সে বিপ্লবের বিজয়কে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।
তাছাড়া আজ আলামত তো প্রচুর যে, গণবিপ্লবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালা বাঙালি মুসলিমদের বার বার ভাগ্য পাল্টানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। তাদের জীবনে বিপ্লব এসেছে, কিন্তু সে বিপ্লব মাঠে মারা গেছে। স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা পরাধীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। বাঙালি মুসলিমগণ প্রথম স্বাধীনতা পায় ১৯৪৭ সালে। সে স্বাধীনতার ফলে বাঙালি মুসলিম প্রজাগণ জমিদারের বদলে নিজেরা জমির মালিক হয়। অন্য কোন বিদেশী শক্তি বাঙালি মুসলিমদের ঘরে সেদিন স্বাধীনতা তুলে দেয়নি। তারা নিজ হাতে সে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই সময় বাঙালি মুসলিমদের চেতনার মান আজকের চেয়ে অনেক উঁচু মাত্রায় ছিল। কিন্তু আজকের বাঙালি মুসলিমগণ বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ভাবতে রাজি নয়। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী। সে সাথে সেক্যুলারিস্টও।
কিন্তু ১৯৪৭’য়ের বাঙালি মুসলিমগণ ইসলামের অধিক নিকটবর্তী। তারা সেদিন বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ওঠে পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি ও বিহারী নানা পরিচয় মুসলিমদের সাথে একতাবদ্ধ হওয়ার সামর্থ্য দেখিয়েছিল। ফলে তার উপনিবেশিক ব্রিটিশ ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির সম্মিলিত বিরোধীতার মুখে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিল। তাই সেদিন তারা প্রতিষ্ঠা দিতে সমর্থ হয়েছিল বিশ্বের সর্ব বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের। সেটিই ছিল বাঙালি মুসলিমের হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম। সে রাষ্ট্রে বাঙালি মুসলিমগণ পেয়েছিল যে দেশের সর্ববৃহত্তম জনগোষ্ঠির রূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ। আজ অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো ভারত এবং চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং সে সাথে হতো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারি। বিশ্ব রাজনীতিতে তখন বাঙালি মুসলিমগণ প্রভাব ফেলার সুযোগ পেত। পাকিস্তানের সমস্যা ছিল সামরিক বাহিনীর স্বৈরাচার এবং আঞ্চলিক বৈষম্য। এ দুটি মূল সমস্যার সমাধান দেশ ভাঙ্গার মধ্য ছিল না। দেশ না ভেঙ্গেও সে দুটি সমস্যার সমাধান করা যেত। পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল ভারতে এজেন্ডা। অথচ মুজিব সে ভারতীয় এজেন্ডাকে বিজয়ী করে এবং বাঙালি মুসলিমদের হাতে থেকে কেড়ে নেয় বিশ্বের তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সুযোগ।
আল্লাহ তা’য়ালার ইচ্ছা এবং শয়তানের ইচ্ছা
বুঝতে হবে, মুসলিম রূপে বাঁচতে হলে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালার এজেন্ডা ও তাঁর পছন্দের ও অপছন্দের বিষয়গুলিকে অবশ্যই জানতে হয়। জানতে হয় শয়তানের এজেন্ডা তথা শত্রুর এজেন্ডা। সে জ্ঞানটুকু অর্জন করা ফরজ। নইলে নিজের রাজনীতির লক্ষ্য ও এজেন্ডা নির্ধারণে ভূল হয় এবং পথভ্রষ্ট হতে হয় এবং জাহান্নামে পৌঁছতে হয়। বুঝতে হবে, মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালা প্রচণ্ড ভাল বাসেন মুসলিমদের একতাকে। কারণ, একতা ছাড়া বিজয় জুটে না। এজন্যই একতাকে তিনি ফরজ করেছেন। এবং তিনি পুরস্কৃত করেন তাদের যারা একতাবদ্ধ হয়। তিনি প্রচণ্ড অপছন্দ করেন বিভক্তিকে; কারণ বিভক্তি নিশ্চিত পরাজয় আনে। তাই কঠোর শাস্তি দেন তাদের যারা বিভক্তির পথ বেছে নেয়।
তাই নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুধু নামাজের জামাতে দাঁড়ালে চলে না, তাকে একতাবদ্ধ হয়ে রাজনীতিও করতে হয় এবং বৃহৎ মুসলিম দেশ গড়তে হয়। সেটিই তো নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামদের সূন্নত। মুসলিমদের গৌরবকালে তো সেটিই হয়েছে। তখন আরব, ইরানী, কুর্দি, তুর্কী একত্রে এক রাষ্ট্রে বসবাস করেছে। ফলে তারা বিজয় ও ইজ্জত পেয়েছে। মুসলিমগণ আজ নবীজী (সা:) দাড়ি, টুপি, পাগড়ি ও মিষ্টি খাওয়ার সূন্নত গ্রহন করলেও পরিত্যাগ করেছে একতাবদ্ধ হওয়ার সূন্নত। মুসলিমদের পরাজয়ের শুরু তখন থেকেই যখন তারা বিভক্তির পথ বেছে নিয়েছে।
মুসলিমদের বিভক্তি একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারীদের খুশি করে। পরিতাপের বিষয় হলো বাঙালি মুসলিমগণ শয়তান ও তার অনুসারীদের খুশি করার পথকেই বেছে নিয়েছে। সেটি দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে। ১৯৭১’য়ে তারা পাকিস্তান ভেঙ্গে পৌত্তলিক ভারতের এজেন্ডাকে সফল করেছে এবং তাদেরকে প্রচণ্ড ভাবে খুশি করেছে। তাই শেখ মুজিব ও তার অনুসারীগণ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এতো প্রিয়। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়াতে তাই ভারতের শাসক মহলে আজ এতো বিষাদ।
অর্জিত হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা
১৯৭১’য়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ স্বাধীনতা পায়নি। বরং স্বাধীনতা পেয়েছিল গণতন্ত্রের খুনি, ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট ও দুর্বৃত্তদের লালনকর্ত শেখ মুজিব ও তার অনুসারীগণ। সেটি লাগামহীন ভাবে। স্বাধীনতা পেয়েছিল কম্যুনিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, হিন্দুত্ববাদী ও নানা দলের ইসলামবিরোধীগণ। সেদিন গোলামীর জিঞ্জির পড়ানো হয়েছিল ইসলামপন্থীদের গলায়। ইসলামপন্থী দলের নেতাকর্মীদের সেদিন জেলে তোলা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন হয়ে লাগামহীন স্বাধীনতা ভোগ করেছে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা ও তার অনুসারীগণ। অপরদিকে পরাধীন ও জিম্মি হয়েছে বাঙালি মুসলিমগণ। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছে।
মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালা বাঙালি মুসলিমদের অতীতে ভাগ্য পাল্টানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। সফল বিপ্লব করার সুযোগও তিনি দিয়েছেন। কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতার কারণে সে বিপ্লব মাঠে মারা গেছে। স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা পরাধীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। বাঙালি মুসলিমগণ প্রথম স্বাধীনতা পায় ১৯৪৭ সালে। সে স্বাধীনতা অন্য কোন বিদেশী শক্তি বাঙালি মুসলিমদের ঘরে তুলে দেয়নি। সে স্বাধীনতা সেদিন তারা নিজ হাতে অর্জন করেছিল। সেই সময় বাঙালি মুসলিমদের চেতনার মান আজকের চেয়ে অনেক উচ্চ মাত্রায় ছিল। আজকের বাঙালি মুসলিমরা বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ভাবতে রাজি নয়। তারা চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী। কিন্তু ১৯৪৭’য়ে বাঙালি মুসলিমরা ছিল ইসলামের অধিক নিকটবর্তী। তারা ছিল প্যান-ইসলামিক। সেদিন বাঙালি পরিচয়ের বাইরে উঠে তারা পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি ও বিহারী নানা পরিচয় মুসলিমদের সাথে একতাবদ্ধ হওয়ার সামর্থ্য দেখিয়েছিল। তাই সেদিন তারা বিশ্বের সর্ববৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিতে সমর্থ হয়েছিল। সে রাষ্ট্রে বাঙালিগণ পেয়েছিল দেশটির সর্ববৃহত্তম জনগোষ্ঠির রূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ। কিন্তু বাঙালি মুসলিমের সে স্বাধীনতাকে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ এবং বাঙালি বামপন্থীগণ মেনে নিতে পারিনি। তাই মুজিবের নেতৃত্বে এবং ভারতকে সাথে নিয়ে সে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয় -যা একাত্তরে সফল হয়।
আজ অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো ভারত এবং চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং সে সাথে হতো পারমানবিক অস্ত্রের অধিকারি। বিশ্ব রাজনীতিতে তখন বাঙালি মুসলিমগণ পেত প্রভাব ফেলার সুযোগ। কিন্তু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ভারতসেবী ফ্যাসিস্টগণ সে মহাসুযোগ কেড়ে নিয়েছে। বুঝতে হবে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’য়ালা মুসলিমদের একতাকে ভাল বাসেন। তিনি পুরস্কৃত করেন তাদের যারা একতাবদ্ধ হয়। তিনি অপছন্দ করেন মুসলিমদের বিভক্তিকে; এবং কঠোর শাস্তি দেন তাদের যারা বিভক্ত হয়। তাই নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মুসলিমদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুধু নামাজের জামাতে দাঁড়ালে চলে না, একই রূপ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একতার রাজনীতি করতে হয় এবং বৃহৎ মুসলিম দেশ গড়তে হয় -এটিই তো নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের সূন্নত। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ নবীজী (সা:)’র সে সূন্নত অনুসরণ করেনি। বাঙালি মুসলিমদের এখানে চরম ব্যর্থতা। তারা শেখ মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি ও ভারতসেবী ফ্যাসিস্টের নেতৃত্বে ১৯৭১’য়ে বিভক্তির পথকেই বেছে নেয়। বাঙালি মুসলিমগণ এভাবেই জিম্মি হয়ে যায় মুজিবের ন্যায় এক অপরাধীর রাজনীতির কাছে। এবং অর্জন করে বিভক্তি গড়ার শাস্তি।
স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার সুযোগ এসেছিল ১৯৭৫’য়ে। সে সুযোগও আমরা হেলায় হারিয়েছি। ১৯৭৫’য়ের পরাজিত শক্তি আবার ক্ষমতায় এসে বাঙালির মুসলিমদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে ভোটদানের অধিকার। ২০২৪ সালের আগস্ট আমরা বাঙালি মুসলিমগণ নতুন বিজয় পেলাম। প্রশ্ন হলো, এই বিজয় কি আমরা ধরে রাখতে পারবো? সে প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? এজন্য প্রস্তুতি চাই সার্বক্ষণিক জিহাদের। সে জিহাদ যেমন রাজনৈতিক, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক। জিহাদ ছাড়া স্বাধীনতা বাঁচে না। কিন্তু সে জিহাদের প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? মনে রাখতে হবে, আমরা যতক্ষণ না আমাদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছি, ততক্ষণ ভাগ্য পরিবর্তনে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন না।
এজেন্ডা শুধু মুসলিম রূপে বেড়ে উঠানো নিয়ে নয়, বরং সেটি হতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া নিয়ে। লক্ষ্য তাঁর মাগফিরাত পাওয়া এবং জান্নাতের যোগ্য রূপে বেড়ে ওঠা। সে সামর্থ্য সৃষ্টি হয় জিহাদে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে। আমাদের সুবিধা হলো, আমরা আমাদের শত্রুদের সঠিক ভাবে চিনি। কোথায় তাদের অবস্থান সেটিও আমরা জানি। কোথায় থেকে আমাদের উপর হামলা আসছে ও আসবে সেটাও আমাদের জানা। এখনো এরা নিরাপদে বসে আছে আমাদের আদালত, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সেনাবাহিনী, র্যাব এবং বিজিবিতে। এরাই আমাদের যোদ্ধাদের হত্যায় নেমেছিল। কেউ নেমেছিল সশস্ত্র হত্যায়, কেউ বা বৈচারিক হত্যায়। তারা এখনো নিরাপদে নিজ নিজ বাংকারে বসে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এরূপ নিরাপদে থাকতে দিয়ে কি আমরা আরামে ঘুমুতে পারি?
রাষ্ট্র নির্মাণ এবং বাঙালি মুসলিমের ঈমানী দায়বদ্ধতা
বাংলাদেশের বর্তমান যুদ্ধটি শুধু রাজনৈতিক নয়; বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধটি হলো বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে। এ যুদ্ধ অনেক দিন চলবে। এ ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল চাকুরির কোটা সংস্কারের দাবীতে। শুরুতে এর চেয়ে অধিকতর বড় লক্ষ্য এ আন্দোলনের ছিল না। এখন এ আন্দোলন পরিণত হয়েছে দেশ পুনঃনির্মাণের। কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল একটি স্বার্থ আদায়ের আন্দোলন মাত্র। এমন আন্দোলনে দর্শন লাগে না; দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলেই চলে। কিন্তু রাষ্ট্র গড়তে দর্শন লাগে। এটি একটি বিশাল কাজ। রাষ্ট্রনির্মাণের বিভিন্ন মডেল আছে। সেটি যেমন জাতীয়তাবাদী-সেক্যুলার মডেল হতে পারে, হতে পারে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী মডেল। হতে পারে ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক।
রাষ্ট্র নির্মাণের এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গণে ঈমানদারের কিছু ঈমানী দায়বদ্ধতা থাকে। সে জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার হতে পারেনা। সেটি হারাম। সে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদীও হতে পারে না। সেটিও হারাম। তাকে অনুসরণ করতে হয় নবীজী (সা:)’র সূন্নত। কারণ নবীজী (সা:) ১০টি বছর মদিনা-কেন্দ্রীক একটি রাষ্ট্রের ১০ বছরে রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। মুসলিমকে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে নবীজী (সা:)’র সূন্নত মানলে চলে না, তাকে সূন্নত মানতে হয় রাষ্ট্র নির্মাণ বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও। এবং যারা নবীজী (সা:)কে অনুসরণ করে, একমাত্র তারাই অনুসরণ করে মহান আল্লাহতায়ালাকে -এ কথা বলা হয়েছে সুরা নিসা ৮০ নম্বর আয়াতে। এবং যারা বিদ্রোহ করে বা অমান্য করে নবীজী (সা:)’র রাষ্ট্র নির্মাণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার সূন্নতকে তারা বস্তুত বিদ্রোহ করে ও অমান্য করে মহান আল্লাহতায়ালাকে। সে বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে।
বিজয় কি ব্যর্থ হয়ে যাবে?
পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে তারাই দলে ভারী -যারা বাঙালি বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সেক্যুলার রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। এরা ইসলামবিরোধী। রাষ্ট্র পরিচালনার উগ্র স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী মডেলটি ছিল শেখ হাসিনার তথা আওয়ামী লীগের। এটিও ইসলাম বিরোধী। তবে এ শক্তিটি আজ পরাজিত শক্তি। তাই রণাঙ্গণে যুদ্ধ হবে বাঙালি বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের সাথে ইসলামপন্থীদের। এ যুদ্ধটি হবে যেমন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার চেতনার ভূবনে, তেমনি রাজনৈতিক ভূবনে। সুরা ফুরকানে ৫২ নম্বর আয়াতে এমন বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদকে বলা হয়েছে জিহাদে কবিরা। এ জিহাদের অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন। নবীজী (সা:) ১৩ বছর সে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি করেছেন মক্কার বুকে।
বাংলাদেশে তেমন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ কখনোই সফল ভাবে লড়া হয়নি। কারণ এ যুদ্ধে লড়াই করার মত বুদ্ধিবৃত্তিক যোদ্ধা ইসলামী শিবির যেমন পূর্বে ছিল না, এখনও নাই। ইসলামের নামে যেসব নেতা-কর্মী রাজনীতিতে আছে তাদের হাতে নাই কুর’আনী জ্ঞানের অস্ত্র। দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ বইয়ের লেখক সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী, হিন্দুত্ববাদী তথা ইসলাম থেকে দূরে সরা লোক। নামাজী জনগণও কুর’আন তেলাওয়াতে রাজী,কিন্তু কুর’আন বুঝতে রাজী নয়। ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে ইসলামপন্থীগণ বিজয়ী হতে পারিনি। বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে এ পরাজয়ের কারণে তারা ব্যর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গণে বিজয়ী হতে। এখানেই বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের মূল ব্যর্থতা।
তাই যারা বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায় তাদের উচিত এ বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের মুজাহিদ হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রথম কাজ হতে হবে, কুর’আনের জ্ঞানে নিজেদের শিক্ষিত করা। এবং সে জ্ঞানকে ছাত্র-জনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিজে সর্বাত্মক অংশ নেয়া। এ জিহাদে আজ পরাজিত হলে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজ বহু বছরের জন্য পিছিয়ে যাবে। তাতে অসম্ভব হবে বাংলার বুকে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। এবং দেশ অধিকৃত রয়ে যাবে ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। তখন ব্যর্থ হয়ে যাবে আজকের এ গণবিপ্লব। ১০/০৮/২০২৪
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018