জাতীয় সঙ্গীতের নামে বাংলাদেশে পৌত্তলিকতার জয়গান

 ফিরোজ মাহবুব কামাল

যে পাপ বাংলাদেশী মুসলিমদের কথায় ও গানে

সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধগুলো শুধু খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস বা চুরি-ডাকাতি নয়। মানুষ কাফির  হয় এবং জাহান্নামের যোগ্য গণ্য হয় মুখের কথায়, গানের ভাষায় এবং চেতনায় ধারণকৃত ধ্যান-ধারণার কারণে। মহান আল্লাহতায়ালাকে যে ব্যক্তি অবিশ্বাস করে বা তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, জাহান্নামের আগুনে পৌঁছতে তাকে খুন, ধর্ষণ বা চুরি-ডাকাতিতে নামার প্রয়োজন পড়ে না। বিদ্রোহের ঘোষণাটি মুখে একবার দেয়াই সে জন্য যথেষ্ঠ। অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হতে ইবলিসকে তাই খুন বা ব্যভিচারে নামতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তাকে নাস্তিক হতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া একটি মাত্র হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই তাকে লানতপ্রাপ্ত শয়তানে পরিণত করেছে। সে হুকুমটি ছিল হযরত আদম (আ:)কে সিজদার। তাই বক্তৃতায় কি বলা হয়, সঙ্গীতে কি গাওয়া হয় বা সাহিত্যের নামে কি লেখা হয় –সেগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাথে সাথে সেগুলি রেকর্ড হয় এবং তা নিয়ে বিচার বসবে রোজ হাশরের বিচার দিনে। মু’মিন ব্যক্তিকে তাই শুধু উপার্জন, কর্ম ও খাদ্য-পানীয়’র ক্ষেত্রে হারাম-হালাম দেখলে চলে না। নিজের কথাবার্তা, সাহিত্য, লেখালেখি বা ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রেও অতি সতর্ক হতে হয়। বুঝতে হবে, প্রতিটি নারী-পুরুষই প্রতি মুহুর্তে মহান আল্লাহতায়ালার নজরে রয়েছে।

নবীজী(সা:)’র হাদীস: “অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের দ্বারা কৃত অপরাধের কারণে।” তেমনি বহু মানুষ জান্নাতেও যাবে সত্য দ্বীনের পক্ষে জিহ্বাকে কাজে লাগানোতে তথা সাক্ষি দেয়ার কারণে। ফিরাউনের দরবারে যে কয়েকজন জাদুকর হযরত মূসা (আ:)’র সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে মুসলিম হয়েছিলেন -তারা জীবনে এক দিনও নামাজ বা রোজা পালন করেননি। তাদের সারা জীবন কেটেছে যাদু’র ন্যায় হারাম কাজে। “মুসা (আ:) ও হারুনে (আ:)’র রবের উপর ঈমান আনলাম” –তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত এই একটি মাত্র বাক্যই তাদেরকে জান্নাতের যোগ্য করেছে। ঈমানের প্রবল বিস্ফোরণ ঘটেছিল তাদের সেই উচ্চারণে। একটি মাত্র বাক্যের মাঝে ঈমানের যে প্রকাশ ঘটেছিল ফিরাউনের কাছে তা সহ্য হয়নি। তাদেরকে যখন হাত-পা কেটে নির্মম ভাবে হত্যার হুকুম শুনানো হয়, তখন তারা জবাবে বলেছিলেন, “যা খুশি তোমরা করো, আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাচ্ছি। আশাকরি আমাদের রব আমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।” মানব ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অতি শিক্ষনীয় এই ঘটনাটির রিপোর্টিং অন্য কেউ করেননি, করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা এবং সেটিকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর পবিত্র কুর’আনে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সাক্ষদানে তারা এতোটাই অটল ও সাহসী ছিলেন যে, সে নির্মম হত্যাকান্ডের মুখেও তারা একবিন্দু বিচলিত হননি। তাদের সে সাহসী উচ্চারনের সাক্ষী খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। তাদের সে সাক্ষ্য দানে তিনি এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে, পবিত্র কুর’আনের একাধিক স্থানে তিনি নিজ কালামের পাশে তাদের সেই বলিষ্ঠ ঘোষণাকেও লিপিবদ্ধ করেছেন। এবং তাদের সে ঈমানী প্রত্যয়কে ক্বিয়ামত অবধি সকল নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষ্যনীয় করে রেখেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, মু’মিনের কীরূপ ঈমান তাঁকে খুশি করে। কোটি কোটি টাকার দান নয়, মুখ থেকে উচ্চারিত একটি মাত্র বাক্যও যে ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালার কতটা কাছে পৌঁছে দেয় -এ হলো তার নজির।

ব্যক্তির ঈমান কখনোই বন্দুকের গুলি বা মিজাইলে মারা পড়ে না। ঈমান মারা যায় তখন, যখন গান, সঙ্গীত, বিদ্যাশিক্ষা ও সাহিত্যের নামে চেতনার ভূবনে লাগাতর বিষ ঢালা হয়। শয়তানের হাতে এগুলিই হলো অতি শক্তিশালী ঈমানধ্বংসী হাতিয়ার। শয়তানের স্ট্রাটেজী সবাইকে বেশ্যালয়ে, মদ্যশালায়, জুয়ার আসরে বা চুরিডাকাতিতে নামানো নয়। বরং ঈমান ধ্বংসের কাজটি মহা ধুমধামে এবং অতি সফলতার সাথে করে নানারূপ গীত, গান, স্লোক, মিথ্যা ধর্মগ্রন্থ ও বিচিত্র সাহিত্য পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে শয়তানী শক্তির হাতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ পুরোহিত, হাজার হাজার ভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবী, মন্দির ও পূজামন্ডপ, ধর্মগ্রন্থ এবং হাজারো গান ও উপন্যাস। বাংলার বুকে ইসলামের যখন প্রচণ্ড জোয়ার, সে জোয়ার ঠেকাতে শয়তান যে অস্ত্রটি বেছে নিয়েছিল সেটিও কোন মুসলিমবিনাশী মারণাস্ত্র ছিল না। ইসলামবিরোধী বইপুস্তকও ছিল না। মুসলিমদের বিরুদদ্ধে হিন্দুদের সম্মিলিত কোন যুদ্ধও ছিল না। সেটি ছিল ভাববাদী গান। ইসলামের প্রসার রুখতে ভাববাদী গান ও হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তখন মাঠে নেমেছিল চৈতন্য দেব ও তার শিষ্যরা। তার গানের আবেগ এতোটাই প্রবল ছিল যে তাতে বাংলার বুকে হিন্দুদের ইসলাম কবুলের জোয়ার দ্রুত থেমে যায়। ফলে বাঙালি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মুর্তপূজারী কাফের থেকে যায়। এরাই আজকের বাঙালি হিন্দু।

আজও বাংলাদেশের বুকে শয়তানের স্ট্রাটেজীটি অবিকল অভিন্ন। তবে শয়তানের আজকের এজেন্ডাটি শুধু হিন্দুদের মুসলিম হওয়া থেকে রুখা নয়। বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাটি হলো মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো তথা ডি-ইসলামাইজেশন। বিশ্বজুড়ে আজ ইসলামের জাগরণ শুরু হয়েছে। সে জাগরণ রুখতে বাংলার বুকে আজ চৈতন্য দেব ও তার ভাববাদী গান নাই। তবে শয়তান ও তার অনুসারীগণ হাতের কাছে পেয়েছে আরেক গুরুদেব। তিনি হলেন মুর্তিপূজারী আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সকল ইসলামবিদ্বেষী শক্তি ও শয়তানের অনুসারীগণ তাকে গুরু বা অবতার রূপে বেছে নিয়েছে। চৈতন্য দেবও এতো পূজা ও এতো অনুসারী পায়নি, যা পাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করার প্রেক্ষাপট তো সেটাই। এটি ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিজয়ের অন্যতম লিগ্যাসি।

 

বিজয় পৌত্তলিক চেতনার

বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমিতে ঈমানবিনাশী বিষ ঢালার কাজের শুরু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের শাসনামলে। সে সময় সাংস্কৃতিক হামলা হয়েছে ইংরেজ শাসক ও প্রতিবেশী হিন্দু –এ উভয় শক্তির পক্ষ থেকেই। হিন্দুদের পক্ষ থেকে সে হামলটি হয় সাহিত্যের অঙ্গণে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের গাইতে বাধ্য করা হতো উগ্র পৌত্তলিক সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জির রচিত “বন্দেমাতরম’ গান। এ গানের মাধ্যমে পূজনীয় দেবতা রূপে খাড়া হয় দেশ ও দেশের মাটিকে। বাঙালি হিন্দুগণ সে গানকে অবিভক্ত বাংলার সকল স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ পৌত্তলিকদের সে ঈমানবিনাশী ষড়য্ন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফলে সেদিন হিন্দুত্ববাদীদের প্রকল্প সেদিন ব্যর্থ হয়। বাঙালি মুসলিমদের সেদিনের সাফল্যের মূল কারণ, মুসলিম রাজনীতির নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের চেতনার ভূমিতে ইসলামের অবস্থান মজবুত ছিল। কোনটি হারাম ও কোনটি হালাল বাক্য -সে হুশ তাদের ছিল। তাদের রাজনীতি সেদিন শেখ মুজিবের ন্যায় ভারতপন্থীদের হাতে হাইজ্যাক হয়নি। অপর দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিমও সেদিন হিন্দুদের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়নি। মুসলিম নেতাদের ও জনগণের ছিল মুসলিম স্বার্থ ও ইসলামের প্রতি গভীর অঙ্গীকার। তাছাড়া তারা বন্ধুহীনও ছিলেন না। সেদিন বাঙালি মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষার বহুকোটি অবাঙালি মুসলিম।

কিন্তু ১৯৭১’য়ে বাংলার রাজনীতির চিত্রই পাল্টে যায়। দেশ অধিকৃত হয় প্রায় দেড় লক্ষ ভারতীয় সৈন্যের হাতে। বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গণ তখন অধিকৃত হয় ইসলামী চেতনাশূণ্য ও ইসলামে অঙ্গীকারহীন বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের হাতে। ধুমধামে শুরু হয় ইসলামপন্থীদের ও অবাঙালি মুসলিমদের প্রাণনাশ ও তাদের সম্পত্তির উপর জবরদখলের তাণ্ডব। নিষিদ্ধ করা হয় সকল ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন। ভারতসেবী বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ ইতিমধ্যেই ইসলাম থেকে দূরে হটে দীক্ষা নিয়েছিল জাতিপূজায়। তাদের লক্ষ্য হয়, সকল বাংলাদেশীদের সে চেতনায় দীক্ষা দেয়া। একাত্তরে ভারতে অবস্থানকালে তাদের পেটে যায় ভারতের প্রচুর নিমক। একাত্তরের পর শুরু হয় ভারতের প্রতি নিমকহালালীর রাজনীতি। এবং প্রতিষ্ঠা পায় ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। ভারতের প্রতি অঙ্গীকারটি শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারীদের মাঝে এতোটাই তীব্র যে, একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বহু হাজার কোটি টাকার যুদ্ধাস্ত্র ভারতের হাতে ডাকাতি হওয়াতেও তাদের মনে সামান্যতম দুঃখবোধ জাগেনি। ডাকাতি হয়ে যায় অফিস-আদালতের আসবাবও। সে ডাকাতি রোধে তারা কোন চেষ্টাও করেনি। অথচ সে অস্ত্র ও আসবাব কেনায় ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীদের অর্থ।

বাস্তবতা হলো, প্রভুর অপরাধ রুখার সামর্থ্য ও আগ্রহ –কোনটাই দাসদের থাকে না। তেমন এক দাসসুলভ মানসিকতার কারণে শুধু অস্ত্র লুন্ঠন নয়, বাংলাদেশের সম্পদ লুন্ঠনও বাধাবিপত্তিহীন করা হয়। এর প্রমাণ, সীমান্ত বাণিজ্যের নামে শেখ মুজিব বিলুপ্ত করে দেয় অর্থনৈতিক সীমান্ত। একটি দেশের সীমান্ত সে দেশের অর্থনীতির তলা রূপে কাজ করে। সেটি ধ্বসিয়ে দেয়ার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশ চিত্রিত হয় তলাহীন ভিক্ষার পাত্র রূপে। বিদেশী ত্রাণসামগ্রীও তখন ভারতে চলে যেত। তলাহীন ভিক্ষার পাত্রের খেতাবটি দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী (সেক্রেটারি অব স্টেট) হেনরি কিসিঞ্জার। ভারতীয় লুণ্ঠনের ফলেই ১৯৭৪’য়ে নেমে আসে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ; তাতে মৃত্যু হয় ১৫ লক্ষ নর-নারীর। একাত্তরের যুদ্ধে ভারতের বিজয়ের পর তেমনি এক পরাজয় ও অধিকৃতি নেমে আসে বাংলার মুসলিম জীবনে।

একাত্তরের বাস্তবতা হলো, মুক্তিবাহিনী কোন একটি জেলা দূরে থাক, কোন একটি মহকুমা বা থানাকেও পাকিস্তান আর্মির হাত থেকে মুক্ত করতে পারিনি। এমন দুর্বলতা নিয়ে কি দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। স্বাধীনতা তো নিজ শক্তিতে অর্জনের বিষয়। কারো দয়া-দাক্ষিণ্যের পাওয়ার বিষয় নয়। কিন্তু একাত্তরে সেটি ঘটেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪৫ হাজার সৈনিককে পরাজিত করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ১৫০ হাজার সৈনিক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়টি ভারতের পক্ষ থেকে অর্জিত হওয়ার কারণে ভারতের প্রতি শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতাটিও অতি বিশাল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারতের প্রতি কোন রাজনৈতিক দলের দায়বদ্ধতা ছিল না। কিন্তু একাত্তরে বাংলার মাটিতে ভারতের যুদ্ধজয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্রই পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল চরিত্রটি হয়, ভারতের প্রতি নতজানু দায়বদ্ধতা ও আত্মসমর্পণ। সেটি যেমন মুজিবের আমলে ছিল, সেটি চলেছে হাসিনার আমলেও।

কথা হলো, কোন আগ্রাসী বিদেশী শক্তির প্রতি প্রতিক্ষণ দায়বদ্ধতা ও আত্মসমর্পণ নিয়ে কি স্বাধীনতা বাঁচানো যায়? পদে পদে তখন প্রভুর ইচ্ছাই মেনে নিতে হয়। এটিই বাংলাদেশের আজকের বাস্তবতা।এটিই একাত্তরের অর্জন। দাসগণ প্রভুভক্তির প্রতিদান স্বরূপ সব সময়ই আশা করে মনিব তাদেরকে প্রতি মুহুর্তে সুরক্ষা দিবে। তেমন একটি চেতনা নিয়েই বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতের কাছে আবেদন রাখেন, যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনার সরকারকে যেন ক্ষমতায় রাখা হয়। ২০২২ সালে জুলাই মাসে সে কথা তিনি বলেন চট্টগ্রামে হিন্দুদের জন্মোষ্টমী অনুষ্টানে বক্তৃতা কালে। বিশ্বের কোন স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরূপ কথা বলে না। যে কোন স্বাধীন দেশের আইনে সেটি গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহীতা। অপরাধ এখানে বিদেশী শক্তিকে নিজ দেহে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে আহবান করার। কিন্তু দাস-প্রভুর সম্পর্কের ক্ষেত্র কোন সভ্য আইন কাজ করে না। কাজ করে স্রেফ প্রভুভক্তি ও দাসত্ব।

দাসদের বাঁচতে হয় মনিবের পদতলে পরাধীনতা নিয়ে। সে পরাধীনতাটি দেখা যায় শুধু রাজনীতিতে নয়, চেতনার ভূমিতে মনিবের দখলদারীত্বে। ভারতের নির্দেশাবলী, দখলদারী ও ভারতীয় লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস ভারতের প্রতি দায়বদ্ধ ও আত্মসমর্পত মুজিবের ও তাঁর অনুসারীদের ছিল না। ফলে ভারত যা চেয়েছে -তাই করতে পেরেছে। স্কুলে কি গাইতে হবে, ক্লাসে কি পড়তে হবে, শাসনতন্ত্রে কি লিখতে হবে –সেগুলি নির্ধারণ করে দেয় ভারত। ফলে বাদ পড়ে পাকিস্তান আমলের “দ্বীনিয়াত” নামক বইটি –যা স্কুলের ছাত্রদের ইসলামের বুনিয়াদী বিষয়গুলি শেখাতো। শাসতন্ত্রের মূলনীতিগুলি কি হবে -সেটিও নির্ধারণ করে দেয় ভারত। জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারা বৈধতা পাবে, কারা নিষিদ্ধ হবে এবং কাদের কারাবন্দি হবে –সে নির্দেশনাটিও আসে দিল্লি থেকে। ভারতের শত্রুতা শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, ভারতের কাছে অসহ্য হলো ইসলামপন্থীরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত ইসলামপন্থীদের স্থান দিতে রাজী নয়। ভারতকে খুশি করতেই মুজিব নিষিদ্ধ করে ইসলামপন্থীদের রাজনীতি এবং কারাবন্দি করা হয় ইসলামী দলগুলির নেতা-কর্মীদের। এবং ভারতকে খুশি করতেই শেখ হাসিনা শাপলা চত্বরে হিফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায় এবং জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে চড়ায়। দাসগণ তো সেগুলিই বেশী বেশী করে যাতে তাদের হিন্দুত্ববাদী মনিবে বেশী খুশি হয়। হাসিনা ভালই জানে তার মনিব কিসে খুশি হয়। এক্ষেত্রে কোন আইন বা নীতিবাক্য কাজ দেয় না। 

ভারত জানে, ইসলামপন্থী নেতা-কর্মী মাত্রই ভারতবিরোধী। তাদের শক্তি বাড়লে বিলুপ্ত হবে ভারতের আধিপত্য। ইসলামপন্থীগণ মুজিবেরও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তবে ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মেনিফেস্টোতে ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়নি। কারণ, দেশ তখন ভারতের সৈন্য ও দখলদারী ছিল না। তখন পাকিস্তানে ছিল গণতন্ত্র। ফলে মুজিব পায়নি ইসলামপন্থীদের স্বাধীনতা হরণের সাহস। কিন্তু সে সাহস পায়, একাত্তরে ভারতের যুদ্ধজয়ের পর। তখন মুজিবের এজেন্ডা ও ভারতের এজেন্ডা একাকার হয়ে যায়। ফলে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ইসলামের শত্রুগণ পৌত্তলিক চেতনার “বন্দেমাতরম” গানটি চাপাতে না পারলেও একাত্তরের পর পৌত্তলিক চেতনার অপর গান “আমরা সোনার বাংলা”কে চাপিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশী-বিদেশী হিন্দুত্ববাদী শক্তির এ হলো বিশাল অর্জন।

জাতীয় সঙ্গীতের মূল বিষয়টি স্রেফ ভাব, ভাষা, ছন্দ এবং আবেগের প্রকাশ নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ ঘটাতে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর ঈমান-আক্বিদা, আশা-আকাঙ্খা, দর্শন, ভিশন ও মিশনের। প্রশ্ন হলো, ভাব ও ভাবনায় রবীন্দ্রনাথের “আামার  সোনার বাংলা” এবং বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দেমাতরম” গানের মাঝে পার্থক্য কতটুকু? উভয় গানেই দেশকে মাতৃতূল্য এবং পূজনীয় গণ্য করে দেশের বন্দনা গাওয়া হয়েছে। ফলে উভয় গানের মূলেই রয়েছে অভিন্ন পৌত্তলিকতা। এমন গান কি কোন মুসলিম গাইতে পারে? যারা ঈমানশূন্য ও পৌত্তলিক চেতনায় পরিপুষ্ট, রবীন্দ্রনাথের এ পৌত্তলিক গান নিয়ে তাদের আগ্রহটি গভীর। মুসলিমের ঈমান ধ্বংসই যাদের এজেন্ডা, একমাত্র তারাই চাইবে এমন এক পৌত্তলিক চেতনার গানকে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে।

রবীন্দ্রনাথের  “আমার সোনার বাংলা” গানটি জাতীয় সঙ্গীত রূপে বিবেচিত হওয়ার পিছনে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের হিন্দুত্ববাদী মনন ও বিচারবোধ। তাদের সে মানদন্ডে রবীন্দ্রনাথ দেবতুল্য গণ্য হয়েছে। ইসলাম কি বলে -সেটি আদৌ বিবেচনায় আনা হয়নি। মুজিব নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষরূপে দাবী করলেও সেক্যুলারিজমের প্রয়োগ করেছে ইসলামী চেতনা ও মুসলিমের মুসলিমত্বের বিনাশে। এটি হলো আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ। প্রশ্ন হলো, সেক্যুলার মানদন্ডে যা কিছু হালাল, সেগুলি কি ইসলামী মানদন্ডেও হালাল? জ্বিনা সেক্যুলার মানদন্ডে কোন অপরাধই নয় -যদি সে ব্যাভিচারে সংশ্লিষ্ট নারী ও পুরুষের সম্মতি থাকে। অথচ ইসলামে রয়েছে বিবাহিত ব্যভিচারীদের জনসম্মুখে প্রস্তরাঘাতে প্রাণনাশের বিধান। আর অবিবাহিতের জন্য রয়েছে লোকসম্মুখে ৮০টি বা ১০০টি বেত্রাঘাতের শাস্তি। ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন নয়, বরং সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। সেক্যুলারিস্টদের জীবনে সে আত্মসমর্পণ নাই। ফলে জাতীয় সঙ্গীতে কি গাওয়া হবে -সে বিবেচনায় ইসলামি মানদন্ড গুরুত্ব পায়নি।

 

আল্লাহতায়ালার সিলেবাস ও শয়তানের সিলেবাস

মহান আল্লাহতায়ালা চান, প্রতিটি মুসলিম বেড়ে উঠুক তাঁর প্রতি অটুট ঈমান নিয়ে। ঈমানের অঙ্গণে বৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়োজনেই মহান আল্লাহ-রাব্বুল আলামীনের রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। সেটি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানার্জন। তাই ইসলামের বিধান হলো নিয়মিত কুর’আন পাঠ। পবিত্র মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য পবিত্র কুর’আনই হলো নির্ধারিত টেক্সট বুক। এ জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অর্থ বুঝে কুর’আন তেলাওয়াত। সে ফরজটি যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে আদায় করতে হয়, তেমনি নামাজের বাইরেও। ঈমানের বৃদ্ধিতে কুর’আনী জ্ঞানের গুরুত্ব যে কত অধিক -সেটিও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। বলা হয়েছে: “মুসলিম তো একমাত্র তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম স্মরণ হওয়া মাত্রই ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন তাদের কাছে কুর’আনের আয়াত পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং আল্লাহর উপর তারা নির্ভরশীল।” -(সুরা আনফাল, আয়াত ২)। এ আয়াতের অর্থ, ঈমান বাড়াতে হলে কুর’আনের জ্ঞানের বিকল্প নাই। কুর’আনের জ্ঞানই হলো ঈমানের খাদ্য। তাই যে হৃদয়ে কুর’আনের জ্ঞান নাই, ঈমান সেখানে মৃত।   

মহান আল্লাহতায়ালার কুর’আনী প্রকল্পকে বানচাল করার লক্ষ্যে শয়তানেরও রয়েছে নিজস্ব স্ট্রাটেজী। এবং রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। শয়তান চায়, ঈমানের বিনাশ। সে লক্ষ্য পূরণে শয়তানের মূল স্ট্রাটেজী হলো, কুর’আনের সাথে সংযোগ বিচ্ছেদ। এজন্যই নিষিদ্ধ করে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানদান। মুসলিম সন্তানেরা স্কুলে যাবে এবং সে স্কুলে পবিত্র কুর’আনের শিক্ষা থাকবে না -সেটি অভাবনীয়। অথচ ব্রিটিশ কাফিরদের শাসনামলে স্কুল-কলেজে কুর’আন না পড়ানোই ছিল সরকারি নীতি। সে নীতি আজও বহাল রয়েছে বাংলাদেশ। ইসলাম কুর’আনের আয়াত পাঠে গুরুত্ব দেয়। শয়তানের অনুসারীগণ বাধ্যতামূলক করে রবীন্দ্রনাথের মত পৌত্তলিকের গান গাইতে। সেটিই হয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের নামে। শিক্ষা প্রকল্পের অংশ করা হয়েছে নাচ, গান, খেলাধুলা ও বহুবিধ উৎসব।

বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে শয়তানের সিলেবাস নিয়ে। ফলে শয়তান যেগুলি চায় না, সেগুলিই বাদ পড়েছে। তাই বাদ পড়েছে কুর’আন শিক্ষা। শয়তান চায় পাঠ্যতালিকায় পৌত্তলিক সামগ্রী। তাই সিলেবাসে স্থান পেয়েছে বঙ্কীমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ন্যায় পৌত্তলিকদের রচিত কবিতা, গান ও সাহিত্য। এবং গুরুত্ব পাচ্ছে অন্যান্য সেক্যুলারিস্টদের রচিত সাহিত্য। শয়তান এগুলির চর্চা দিয়ে মানুষের চেতনার ভূমিকে নিজ দখলে রাখে এবং সংযোগ ছিন্ন করে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর পবিত্র কুর’আনের সাথে। এরূপ পৌত্তলিক ও সেক্যুলার জ্ঞান দানে ঈমানের ভূমিতে নাশকতা ঘটবে -সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? শয়তান এভাবেই বৃদ্ধি ঘটায় শরিয়তের অবাধ্যতায়। বাংলাদেশের স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরুর আগে কুর’আন পাঠের বদলে রবীন্দ্র-সঙ্গীত (আমার সোনার বাংলা গান) পাঠ তাই বাধ্যতামূলক। সেটি শুধু দেশের সেক্যুলার স্কুলগুলিতেই নয়, এমনকি ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলোতেও। সে পৌত্তলিক গানটি গাওয়া হয় জাতীয় সংসদসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও। এভাবেই বিজয়ী করা হয়েছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শয়তানের এজেন্ডা।

 

রবীন্দ্রচেতনার নাশকতা

মানুষ শুধু তার দেহ নিয়ে বাঁচে না। বাঁচতে হয় চেতনা নিয়েও। মানুষ তাঁর দৈহিক সুস্থতার জন্য জান্নাতে যাবে না, জান্নাতে যাবে তাঁর চেতনার সুস্থতার জন্য। সুস্থ চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠার কারণেই মানব শিশু তার মানবিক পরিচয়টি পায় এবং ভিন্নতর হয় ইতর পশু থেকে। সে চেতনাটি সাথে নিয়েই মানবের সর্বত্র বিচরণ। সে চেতনাটি যেমন ধর্ম-কর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে; তেমনি ধরা পড়ে তার গদ্য, পদ্য, কথা ও গানে। মানুষ বেড়ে উঠে, নেক কর্মে নামে, আমলের ওজন বাড়ায় -তার হৃদয়ে ধারণকৃত চেতনার গুণে। ঈমানদারের জীবনে চেতনার সে বিশেষ সুস্থ রূপটি হলো তার ঈমানদারী ও ঈমান-নির্ভর আক্বীদা। আর বেঈমানী হলো চরম অসুস্থতার আলামত। রোজ হাশরের বিচার দিন নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের আগে সর্বপ্রথম হিসাব দিতে হবে ঈমান ও আক্বীদার। ঈমান ও আক্বীদার বিচারে ফেল করলে অন্য কোন আমলই কাজ দিবে না। মানুষের ধর্ম, কর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-আচরনে বিপ্লব আসে ঈমান ও আক্বীদার গুণে। চেতনার এ ভূমিতে রোগ থাকলে কি ব্যক্তির ইবাদতে বা চরিত্রে পরিশুদ্ধি আসে? তখন মাসের পর মাস রোজা এবং বার বার হজ্জ করেও কি কোন লাভ হয়? তখন ব্যর্থ হয় তাকওয়া-সমৃদ্ধ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠতে। এমন ব্যর্থ ব্যক্তিরাই নামাজ-রোজা পালন করেও ঘুষ খায়, সূদ খায়, মিথ্যা বলে এবং নানারূপ দুর্বৃত্তিতে জড়িত হয়।

মানুষ কি খায় –সেটির প্রকাশ ঘটে তার দৈহিক স্বাস্থ্যের মাঝে। তেমনি কি শেখে এবং কীরূপ বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে বসবাস করে -তা দেখা যায় তার কথা, কর্ম, চেতনা ও চরিত্রের মাঝে। প্রকাশ পায় তার সঙ্গীত ও সাহিত্যে। তাই ব্যক্তির বিশ্বাস ও চেতনায় শিরক বা পৌত্তলিকতা দেখে বলা যায় -তার বিদ্যাশিক্ষার কাজটি সঠিক হয়নি। বুঝা যায়, চেতনা দূষিত হয়েছে শিক্ষালয়ে ও সাহিত্যের অঙ্গণে। নবীজী (সা:)’র হাদীস: মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে অন্য সব পাপ মাফ হতে পারে, কিন্তু শিরকের পাপ মাফ হবে না। অথচ রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যে আজীবন ছড়িয়েছেন শিরকের বীজ এবং দূষিত করেছেন বাঙালির চেতনার ভূমিকে। রবীন্দ্রানাথ নিজে ছিলেন মুশরিক; ফলে তাঁর সাহিত্য শিরকের বীজ ছড়াবে -সেটিই স্বাভাবিক। বঙ্কিমের ন্যায় রবীন্দ্রনাথও উপাস্য রূপে হাজির করেছেন দেশের মাটি ও আলো-বাতাসকে। শিরকের সে রূপটি প্রবল ভাবে ছড়িয়ে আছে তার রচিত কবিতা, নাটক, ছোটগল্প ও গানে। এরূপ পৌত্তলিক সাহিত্যের প্রসার বাড়লে, বৃদ্ধি ঘটে জাহান্নামের যাত্রীদের সংখ্যায়। বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে এখানেই রবীন্দ্রনাথের গুরুতর নাশকতা। এ অপরাধ তাদেরও যারা রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে বাঙালি মুসলিমদের ঘাড়ে জাতীয় সঙ্গীত রূপে চাপিয়েছে।

রবীন্দ্র-সাহিত্যের মূল নাশকতাটি মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে। শেখ মুজিব সে ঈমানবিনাশী নাশকতাটিই দেশব্যাপী ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গানকে জাতীয় সঙ্গীত করে। এটিই বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমিতে সর্ববৃহৎ নাশকতার কাণ্ড। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী না হওয়ার কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু জাহান্নামে যাবে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থ হওয়াতে। এবং মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাটি অসম্ভব হয় কুর’আনী জ্ঞানের অভাবে এবং চেতনার ভূমি শিরকপূর্ণ সাহিত্যে দূষিত হওয়াতে। তাই বাঙালি মুসলিমের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি ক্ষেত-খামার, কল-কারখানা ও রণাঙ্গণে হয়নি। মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও হয়নি। সেটি হয়েছে দেশের শিক্ষাঙ্গণে। সেটি রবীন্দ্র সাহিত্যের মাধ্যমে। শ্রী চৈতন্য দেবের ইসলামবিরোধী নাশকতা সীমিত ছিল শুধু হিন্দুদের মাঝে। অথচ রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিকতা প্রবেশ করেছে প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের গৃহে এবং নাশকতা ঘটিয়েছে প্রতিটি বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশুর চেতনার ভূবনে। এবং এই ভয়ানক নাশকতার জন্য দায়ী শেখ মুজিব ও বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ। কারণ, মুজিব ও তার সেক্যুলারিস্ট অনুসারীগণ নেমেছে শয়তান ও মুর্তিপূজারী রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ট কলাবোরেটর রূপে।

বাংলাদেশে আজ গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির জোয়ার। এসব খুনি ও ধর্ষকগণ আসমান থেকে পড়েনি। পতিতাপল্লী, বন-জঙ্গল, গরুর গোয়াল ও ক্ষেত-খামারেও বেড়ে উঠেনি। হিংস্র পশু উৎপাদনের জন্য জঙ্গল চাই। তেমনি দুর্বৃত্ত উৎপাদনের জন্যও ইন্ডাস্ট্রি চাই। বাংলাদেশে বিদ্যাশিক্ষার নামে মানবরূপী পশু উৎপাদনের কাজগুলো করছে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই বেড়ে উঠেছে অপরাধের নায়কগণ। বিশ্বের দরবারে দুর্বৃত্তিতে যারা বাংলাদেশকে ৫ বার প্রথম স্থানে পৌঁছে দিল তারা দেশের নিরক্ষর কৃষক, শ্রমিক বা তাঁতি নয়। তারা বেড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্বের অর্থে নির্মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। যারা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মম ভাবে লাশ বানালো তারাও কোন ডাকাতের বস্তিতে বেড়ে উঠেনি। বরং বেড়ে উঠেছে বুয়েটের ন্যায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র লীগ কর্মীটি শত নারী ধর্ষণের উৎসব করলো, সেও কোন পতিতা পল্লীতে বেড়ে উঠেনি। এদের দেখা যায় রাজপথে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে লাশের উপর নাচতে। এ থেকেই বুঝা যায় শিক্ষাঙ্গণে কতটা ঘটছে শিক্ষার নামে নৈতিক নাশকতা। স্বাস্থ্যের পতন রোধে পরিবর্তন আনতে হয় খাদ্য-পানীয়তে, চারিত্রিক পতন রোধে তেমনি পাল্টাতে হয় বই তথা শিক্ষার উপকরণ। নবীজী (সা:)’র যুগে তো সেটিই করা হয়েছিল। তাই ইসলামের শুরুটিই হয়েছে নামাজ-রোজা ফরজ করার পূর্বে কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানার্জনের সে কাজটিই হচ্ছে না। বরং অবিরাম ভাবে চলছে দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কাজ। ঈমান ও চরিত্র ধ্বংসের কাজে বিষ ঢালার কাজটি হচ্ছে পৌত্তলিক চেতনাসমৃদ্ধ জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।

পৌত্তলিক চেতনায় বিশ্বের কোথাও উন্নত চরিত্রের মানব বা উচ্চতর রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মিত হয়েছে -সে প্রমাণ নাই। কারণ, সেটি তো আদিম জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার পথ। এটিই অসভ্যতার পথ। এমন অজ্ঞতায় মানুষ নিষ্ঠুর হয়, অভদ্র ও অশালীন হয়। এমন চেতনায় সাধুরাও উলঙ্গ বা অর্ধ-উল্ঙ্গ হয়ে রাস্তায় ভিক্ষায় নামে। ভারতের এসব সাধুরা সেদেশের ২০ কোটি মুসলিম নির্মূলের ঘোষণা দিচ্ছে। একের পর এক গুড়িয়ে দিচ্ছে মসজিদ। এমন জাহিলিয়াতের কারণে ভারতে হিন্দুগণ মাত্র কিছু কাল আগেও মৃত স্বামীর চিতায় তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। রবীন্দ্রনাথের জাহেল ও অপরাধী মনের পরিচয় মেলে সতিদাহের প্রশংসায় লেখা তার কবিতায়। পৌত্তলিক চেতনায় মানব সন্তানকে বিভক্ত করা হয় বিভিন্ন জাত-পাত-বর্ণের নামে। ভারতে কোটি কোটি মানুষকে নিম্ন জাতের আখ্যায়ীত করে তাদেরকে অচ্ছ্যুত গণ্য করা হয়। এটি নিরেট অধর্ম, অভদ্র ও অসভ্য চেতনা। এতে বিলুপ্ত হয় মিথ্যা ও অন্যায়কে ঘৃণা করার সামর্থ্য। এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তি। এ দুর্বৃত্তির কারণেই ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও গণনির্যাতন হয়। তাদের গৃহ ও দোকান-পাট বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়। এবং সে একই কারণে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার ও পুলিশের রুচি নাই সে অপরাধগুলো রুখায়। বাংলাদেশে তেমন এক ভয়ংকর অসুস্থ পৌত্তলিক চেতনাকে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে যেমন রবীন্দ্রনাথের গানকে জাতীয় সঙ্গীত করে, তেমনি তার রচিত গান, নাটক ও সাহিত্যকে জনগণের রাজস্বের অর্থে বিপুল ভাবে প্রচার করে। এতে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে আরেক হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে। ফলে ভারতের বুকে হিন্দুত্ববাদীগণ নবীজী (সা:)’র বিরুদ্ধে কটুক্তি এবং মুসলিম হত্যা, মসজিদ ধ্বংস ও মুসলিমদের ঘরবাড়ী ধ্বংস করলেও শেখ হাসিনার সরকার তার নিন্দা করেনা।

 

বেঈমানের গান ও ঈমানদারের গান

ঈমানদার ও বেঈমান শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইবাদতেই ভিন্ন নয়, প্রবল ভিন্নতা দেখা যায় কবিতা, গান ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণেও। সেগুলি তাই গোপন থাকার বিষয় নয়। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও নেক কর্মটি হয় বলিষ্ঠ বিশ্বাস নিয়ে সত্য কথা বলার মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে গুরুতর অপরাধটিও হয় শিরকপূর্ণ বা বিদ্রোহাত্মক কথা দিয়ে। ব্যক্তির মুখের কথা যেমন জান্নাতে নিতে পারে, তেমনি জাহান্নামেও নিতে পারে। গান বা কবিতা অতি উচ্চমার্গীয় যিকির হতে পারে –যেমনটি ঈমানদার ক্ষেত্রে ঘটে। তেমনি গান ও কবিতার মধ্যে হতে পারে ভয়ানক কুফরি ও শিরকের প্রকাশ –এমনটিই ঘটে বেঈমানদের ক্ষেত্রে। ঈমানদার ব্যক্তি ইচ্ছামত কিছু বলতে পারে না, তেমনি ইচ্ছামত কিছু গাইতেও পারে না। সে তাই বলে এবং তাই লেখে যা তাঁর ঈমান ও ইসলামীআক্বীদার সাথে সঙ্গতি রাখে। তাঁর কথার মধ্যে থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি অটল বিশ্বাস। থাকে মহান আল্লাহকে খুশি করার প্রেরণা। থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ তথা যিকির। প্রতিটি মুসলিমকে প্রতি মুহুর্ত সে যিকির নিয়ে বাঁচতে হয়। পবিত্র কুর’আন পাঠ, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতসহ ইসলামের প্রতিটি ফরজ বিধানের মূলটি লক্ষ্য হলো, সে যিকিরকে মুসলিম জীবনে লাগাতর এবং তীব্রতর করা।

যিকিরের অর্থ ভাবনাশূণ্য মন নিয়ে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার নাম জপা নয়। বরং সেটি হলো তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়বদ্ধতা নিয়ে বাঁচার ধ্যানমগ্নতা। সেরূপ ধ্যানমগ্নতা থেকেই আসে চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব। মু’মিনের জীবনে এরূপ যিকির নিয়ে বাঁচাটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। যিকিরশূণ্যতার বিপদটি ভয়াবহ। যারাই যিকিরশূণ্য হয়, তাদের ঘাড়ের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে শয়তানকে চাপিয়ে দেয়া হয়। এমন ব্যক্তির জীবনে আসে শয়তানের অনুসরণ, আসে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি এবং এভাবেই শুরু হয় জাহান্নামের দিকে পথচলা। ঈমানদারের কবিতা ও গান হলো তার যিকিরের প্রকাশ। ফলে তাতে থাকে গভীর আল্লাহপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় সে সবের বালাই নাই্। এজন্যই মাওলানা রুমি, শেখ সাদী, হাফিজ সিরাজী ও আল্লামা ইকবালের কবিতা থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রবীন্দ্রনাথের গানে ও কবিতায় শিরক ও পৌত্তলিকতার ভাবটিই প্রবল –তা একজন পাঠককে কেবল গোনাহগারই বানাতে পারে। বাঙালি মুসলিমদের এখানেই বিপদ। তারা তাদের মাতৃভাষায় ইকবাল, সিরাজী, সাদী বা রুমী পায়নি, পেয়েছে পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমকে। বাঘ-ভালুকপূর্ণ জঙ্গলে বাস করার বিপদ ভয়ানক। এতে দেহনাশের সম্ভাবনা। তার চেয়েও ভয়ানক হলো রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কীমের ন্যায় সাহিত্যিকদের রচিত পৌত্তলিক সাহিত্যের মাঝে বসবাস। এতে থাকে ঈমাননাশের সম্ভাবনা। বাঘ-ভালুক কাউকে জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু পৌত্তলিক সাহিত্য জাহান্নামের যাত্রী বানায়। সেটি আরবের বুকে দেখা গেছে জাহিলিয়াতের যুগে। ইমরুল কায়েসের মত কবিরা সে কাজই করেছে। বাংলাদেশে বুকে সে জাহিলিয়াতের প্লাবনটি বুঝা যায় নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তির জয়-জয়াকার দেখে। বুঝা যায় গুম-খুন-ধর্ষণ-অপহরণ ও সন্ত্রাসের জোয়ার দেখে। শেখ মুজিবের গুরুতর অপরাধ হলো, রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে জাতীয় সঙ্গীত রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়ে তিনি জনগণকে গোনাহগার বানানোর শয়তানী প্রকল্পকে বিজয়ী করেছেন।  

                                         

ছবক শিরক ও পৌত্তলিকতার

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন “আমার সোনার বাংলা” গানটি লিখেছিলেন তখন বাংলাদেশ বলে কোন স্বাধীন দেশ ছিল না। সে সময় বাংলা ছিল ভারতের একটি প্রদেশ। সে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও তাদের সংখ্যা আজকের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ ছিল না। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেও সে গানটিতে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ, দর্শন, চেতনা বা স্বপ্নের প্রকাশ ঘটাতে লেখেনি। সেটি যেমন তার লক্ষ্য ছিল না, ফলে সে লক্ষ্যে তাঁর প্রস্তুতিও ছিল না। পৌত্তলিকগণ সব সময়ই নতুন উপাস্য চায়। যাদের কাছে নদ-নদী, গরু-বাছুর ও সাপ-শকুন ইত্যাদি উপাস্য, তাদের কাছে দেশ ও দেশের মাটির কদর তো বিশাল। তাই রবীন্দ্রপূজারী পৌত্তলিকগণ দেশ ও দেশের মাটিকে পূজনীয় করেছে নিজেদের সে পৌত্তলিক চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মনের পৌত্তলিক ক্ষুধা নিবারণেই জন্য লেখা হয়েছিল যে “আমার সোনার বাংলা” গান, সেটিকেই বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভারতে সে মর্যাদাটি পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা আরেকটি পৌত্তলিক চেতনার গান, সেটি হলো “বন্দেমাতরম”। সে গান গাইতে ভারতের মুসলিমদের আজ বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলিমগণ কেন এরূপ শিরকপূর্ণ গান গাইবে? “আমার সোনার বাংলা” ও “বন্দেমাতরম” এ উভয় গানের দর্শন ও বয়ান অভিন্ন পৌত্তলিকতার। যে কোন ঈমানদারেরই সেটি টের পাওয়ার কথা।

পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম হলেও কার্যত ছিলেন পৌত্তলিক। এ জগতটাকে একজন মুসলিম যেভাবে দেখে, কোন পৌত্তলিকই সেভাবে দেখে না। উভয়ের ধর্মীয় বিশ্বাস যেমন ভিন্ন, তেমনি চেতনার ও ভাবের জগতটাও ভিন্ন। কবির কবিতা ও গানে তো সে বিশ্বাস ও চেতনারই প্রকাশ ঘটে। একজন মুসলিমের কাছে এ পৃথিবীর ভূমি, আলো-বাতাস, মাঠ-ঘাট, গাছ-পালা, ফুল-ফল, নদী-সমুদ্র এবং সেগুলির অপরূপ রূপ –সবকিছুই মহান আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন। এসব কিছুই মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বের সাক্ষী দেয়। এ বিশ্বজগত মু’মিনের কাছে একটি বিশাল পাঠশালা। এ পাঠশালায় ছড়ানো অগণিত নিদর্শন দেখে সে ছবক পায়, মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির সামর্থ্য কত বিশাল এবং বৈচিত্রময়। তিনি কত মহান ও মহীয়ান। স্রষ্টার এ অপরূপ সৃষ্টিকূল দেখে মু’মিন ব্যক্তি সেগুলিকে ভগবান বা মা বলে বন্দনা করে না, বরং মনের গভীর আবেগ ও আকুতি দিয়ে “আল্লাহু আকবর” বা “সুবহানাল্লাহ” বলে। মহান আল্লাহতায়ালাকে উদ্দেশ্য করে হামদ ও নাত গায়। অথচ রবীন্দ্রনাথের চোখে বাংলার অপরূপ রূপ ধরা পড়লেও মহান আল্লাহতায়ালার সর্বময় অস্তিত্ব ও তাঁর সীমাহীন সৃষ্টির সামর্থ্য ধরা পড়েনি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের অজ্ঞতা ও দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা। এ অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের কারণে তার কাছে স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রবীন্দ্রনাথের মনে জন্ম নিয়েছে মহান স্রষ্টাকে ছেড়ে সৃষ্টির বন্দনায় শিরক। তাই এরূপ শিরকপূর্ণ গান “আমার সোনার বাংলা” কি কোন ঈমানদারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

 

জয়গান পৌত্তলিকতার

 

রবীন্দ্রনাথ তাঁর “আমার সোনার বাংলা” গানটিতে লিখেছেন:

“আমার সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ,

তোমার বাতাস

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে

ঘ্রানে পাগল করে–

মরি হায়, হায় রে

ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,

আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।

কি শোভা কি ছায়া গো,

কি স্নেহ কি মায়া গো–

কি আঁচল বিছায়েছ

বটের মূলে,

নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী

আমার কানে লাগে

সুধার মতো–

মরি হায়, হায় রে

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে

আমি নয়ন জলে ভাসি।”

রবীন্দ্রনাথের এ গানে প্রচুর ভাব আছে, ভাষা আছে, ছন্দও আছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু আছে যা একজন মুসলিমের ঈমানের সাথে প্রচণ্ড সাংঘর্ষিক। এ গানে তিনি বন্দনা গেয়েছেন বাংলার ভূমির, এবং সে ভূমির আলো-বাতাস, নদীর কূল, ধানের ক্ষেত, আমের বাগান ও বটমূলের। দেশকে তিনি মা বলেছেন। দেশের বিস্তৃত মাঠঘাট, নদীর পাড় ও বটমূলকে সে মা দেবীর আঁচল রূপে দেখেছেন। দেশকে হাজির করেছেন একজন দেবীর মুর্তিতে। গানটিতে ধ্বনিত হয়েছে সে মা দেবীর প্রতি অশ্রুসিক্ত বন্দনা। কিন্তু যে মহান আল্লাহতায়ালা সে গুলির স্রষ্টা, সমগ্র গানে একটি বারের জন্যও তাঁর বন্দনা দূরে থাক -তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নাই। অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন একজন পৌত্তলিকের জন্য এটিই স্বভাবজাত। এখানেই বঙ্কিমের “বন্দেমাতরম” গানের সাথে রবীন্দ্রানাথের “আমার সোনা বাংলা” গানের গভীর মিল।

সব পৌত্তলিকের একই অজ্ঞতা এবং একই অপরাধ। সেটি হলো নানা দেবদেবী ও নানা সৃষ্টির নানা রূপ বন্দনার মাঝে সকল কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে থাকার। এতে আছে সত্য গোপন। এরূপ সত্য গোপনই হলো ইসলামে কুফর -যা একজন ব্যক্তিকে কাফের বানায়। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে ঘৃণ্য কর্ম। এটিই পৌত্তলিকতার মূল কথা। মহাসত্যময় মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকারের এটিই হলো সবচেয়ে জঘন্যতম শয়তানি কৌশল। এটিই শিরক। এবং এজন্যই রবীন্দ্রনাথ যেমন একজন কাফের, তেমনি একজন মুশরিক। তিনি তার কবিতা ও গানের মাধ্যমে আবির্ভুত শিরকের প্রচারক রূপে। তাই তিনি শয়তানের দূত। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার বহু বড় বড় গোনাহ মাফ করে দিবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনোই মাফ করবেন না। নবীজী (সা:) সে হুশিয়ারিটি বহুবার শুনিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম এরূপ শিরকপূর্ণ গান গায় কী করে? অথচ বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের অনুসারীগণ এই শিরকের ছবক দিচ্ছেন বাঙালি মুসলিম নর-নারী ও শিশুদের। অথচ এতো বড় পাপ ইংরেজগণও করেনি। তাদের ১৯০ বছরের শাসনে ব্রিটিশ শাসকগণ কখনোই মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ শিরকের ছবক দেয়নি। মুসলিমদের জন্য এটি ছিল “রেড লাইন” –যা তারা অতিক্রম করেনি। অথচ ভারতে “বন্দে মাতরম” গানটি গাওয়া শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে। এখন সেটি মাদ্রাসাতেও গাইতে হয়। এবং বাংলাদেশে “আমার সোনার বাংলা” গান গাওয়া শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে। এখন এ পৌত্তলিক গানটি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদেরও গাইতে হয়। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের কোথাও কি কোন পৌত্তলিককে এভাবে এরূপ সম্মানের আসনে বসানো হয়েছে –যা হয়েছে বাংলাদেশে? অন্য কোন মুসলিম দেশেও কি এরূপ পৌত্তলিক গান গাওয়া হয়? অথচ এটিই হলো একাত্তরের অর্জন –যা নিয়ে বাঙালি জাতীযতাবাদীগণ উৎসব করে। প্রকৃত বিজয় এখানে হিন্দুত্ববাদের।

গদ্য,পদ্য ও গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মুখ বা জিহ্বা কথা বলে না, কথা বলে তার চেতনা বা বিশ্বাস। গদ্য, কবিতা ও গানের কথায় ব্যক্তির আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস ধরা পড়ে। তাই “আমার সোনার বাংলা” গানে যে চেতনাটির প্রকাশ ঘটেছে সেটি পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের। কোন মুসলিমের নয়। পৌত্তলিক চেতনা নিয়েই একজন পৌত্তলিক কবি কবিতা ও গান লিখবেন বা সাহিত্য চর্চা করবেন -সেটিই তো স্বাভাবিক। এমন একটি চেতনার কারণেই পৌত্তলিক ব্যক্তি সাপ-শকুন, গরু, বানর-হনুমান, নদ-নদী, বৃক্ষ, পাহাড়-পর্বতকে উপাস্য রূপে মেনে নেয় এবং তার বন্দনাও গায়। “আমার সোনার বাংলা” গানের ছত্রে ছত্রে তেমন একটি পৌত্তলিক চেতনারই প্রবল প্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে তাঁর নিজ চেতনার সাথে আদৌ গাদ্দারী করেননি। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সাথে একজন মুসলিমের গাদ্দারী তো তখন শুরু হয় -যখন সে পৌত্তলিক চেতনার এ গানকে মনের মাধুরি মিশিয়ে গাইতে শুরু করে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রভক্তদের মূল প্রকল্প হলো, বিপুল সংখ্যায় বাঙালি মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো এবং তাদের মাঝে ভারতসেবী গাদ্দার উৎপাদন। সে লক্ষ্যে তারা বিপুল ভাবে সফলও হয়েছে। মুসলিম নামধারি এরূপ গাদ্দারদের কারণে আল্লাহর শরিয়তী বিধান আজ বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের দেশে পরাজিত। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বল্লে ভারতসেবীদের হাতে  লাশ হতে হয়।

জাতীয় সঙ্গীতের সুর, ছন্দ বা কবিত্বই বড় কথা নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সে সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাতির ভিশন, মিশন, ধর্ম, জীবন-দর্শন ও আশা-আকাঙ্খার কতটা প্রকাশ ঘটলো –সে বিষয়টি। জাতীয় সঙ্গীতের মাঝে প্রতিফলিত হয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আক্বীদা, বিশ্বাস ও চেতনা। জাতীয় সঙ্গীতের লেখককে এজন্য নবেল-প্রাইজ বিজয়ী হওয়াটি জরুরি  নয়। বিশ্বের দুই শতের বেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কয়টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের লেখক নবেল প্রাইজ বিজয়ী? এক্ষেত্রে জরুরি  হলো দেশবাসীর চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করার সামর্থ্য। কিন্তু সে সামর্থ্য  কি রবীন্দ্রনাথের ছিল? রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম বিশাল। হাজার হাজার পৃষ্ঠা তিনি লিখেছেন। যখন তিনি লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত তখন তার চোখের সামনেই এদেশের উপর চলছিল উপমহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জুলুমটি। সেটি ছিল সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন। সে শাসন সাথে এনেছিল অর্থনৈতিক শোষন। এনেছিল নীল চাষ। এনেছিল দেশীয় শিল্প, কৃষি ও শিক্ষার ধ্বংসের অভিনব কৌশল। বাংলার মসলিন শিল্পের ধ্বংসে তারা তাঁতীদের হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত কেটেছে। ১৭৬৯-৭০’য়ে এনেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যাতে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শোষন, শাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে নিন্দাজ্ঞাপনের জন্য বেশী মানবতা লাগেনা। বিবেকের সে সামর্থ্য  বাংলার বহু সাধারণ মানুষেরও ছিল। সে জুলুম, শোষণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে বাংলার ফকিরগণ বিদ্রোহ করেছে। সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছে। সিপাহীরাও বিদ্রোহ করেছে। তিতুমীর লড়াই করেছে। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু সে জুলুম ও শোষন রবীন্দ্রনাথের বিবেককে স্পর্ষ করেনি। সাম্রাজ্যবাদী জুলুমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা দূরে থাক একটি কবিতা, একটি গান বা একটি প্রবন্ধও তিনি লেখেননি। বরং ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ যখন দিল্লি আসেন, রবীন্দ্রনাথ তাকে “জনগনমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা” গানটি গেয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এই হলো রবীন্দ্রনাথের চেতনা ও বিবেকের মান।

                                                                                                                                   

“সোনার বাংলা” গানের প্রেক্ষাপট

“আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনার একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পেক্ষাপট রয়েছে। গানটি রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের পর। বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয় ১৯০৫ সালে। পশ্চিম বঙ্গের তুলনায় অর্থনীতি ও শিক্ষাদীক্ষায় অতি পশ্চাদপদ ছিল পূর্ব বঙ্গ। পূর্ববঙ্গের সম্পদে দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল কলকাতার হিন্দু জমিদার, হিন্দু মহাজন ও ব্রিটিশসেবী হিন্দু বাবুদের। কলকাতা শহরের শতকরা ৮০ ভাগ বাসিন্দাই ছিল হিন্দু। শুধু প্রশাসনই নয়, বাংলার শিক্ষা ও শিল্প গড়ে উঠছিল স্রেফ কলকাতাকে কেন্দ্র করে। সিংহভাগ পাট উৎপাদন করলে কি হবে, পূর্ব বাংলায় কোন পাটকল ছিল না। মুসলিমদের দাবী ছিল বাংলাকে বিভক্ত করা হোক এবং পূর্ববঙ্গের রাজধানি করা হোক ঢাকাকে। সে দাবীর ভিত্তিতে ১৯০৫ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইস রয় লর্ড কার্জন পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠন  করেন। এ নতুন প্রদেশের রাজধানী রূপে গৃহীত হয় ঢাকা নগরী। শহরটি জেলা শহর থেকে রাজধানী শহরে পরিণত হয়। রাতারাতি বেড়ে যায় সারা ভারতের বুকে এই নতুন প্রাদেশিক শহরটির রাজনৈতিক গুরুত্ব। তখন ঢাকায় কার্জন হলসহ বেশ কিছু নতুন প্রশাসনিক ইমারত এবং হাই কোর্ট ভবন নির্মিত হয়। নির্মিত হয় কিছু প্রশস্ত রাজপথ। নতুন এ প্রদেশটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলার এবং সে সাথে আসামের মুসলিমদের মাঝে সৃষ্টি হয় তখন নতুন রাজনৈতিক ঐক্য ও প্রত্যয়। সে ঐক্য ও প্রত্যয় নিয়ে ১৯০৬ সালে ঢাকার বুকে গঠিত হয় মুসলিম লীগ -যা শুধু বাংলার মুসলিমদের জন্যই নয়, সমগ্র ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে সৃষ্টি করে নতুন আত্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিক চেতনা। ১৯৪৭ সালে এই মুসলিম লীগই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে।

মুসলিমদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং কলকাতাকে বাদ দিয়ে ঢাকার মর্যাদা বৃদ্ধি কলকাতার হিন্দু বাবুদের ভাল লাগেনি। কবি রবীন্দ্রনাথেরও ভাল লাগেনি। অথচ বাঙালি মুসলিমগণ সে বিভক্তিকে নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করে। তারা এটিকে কলকাতাকেন্দ্রীক হিন্দু আধিপত্য থেকে বাঙালি মুসলিমদের মুক্তি রূপে দেখে। বাংলা বিভক্তির বিরুদ্ধে বর্ণ হিন্দুদের পক্ষ থেকে শুরু হয় সন্ত্রাসী আন্দোলন। সে সন্ত্রাস ছিল উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিপুষ্ট। সন্ত্রাসীরা মন্দিরে গিয়ে শপথ নিত। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সে সন্ত্রাসী আন্দোলনের সমর্থক। সে সন্ত্রাসের পক্ষে প্রয়োজন ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্রের। সে অস্ত্র জোগাতেই রবীন্দ্রনাথ যুদ্ধে নামেন তার কবিতা, গান ও উপন্যাস নিয়ে। এ বিশেষ প্রেক্ষাপটেই রচিত হয় “আমার সোনার বাংলা” গান।

“আমার সোনার বাংলা” গানে যা প্রকাশ পেয়েছে সেটি রবীন্দ্রনাথের একান্তই সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী চেতনার। মুসলিম না হওয়ার কারণে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের বিশ্বাস, দর্শন, স্বপ্ন, ভিশন ও মিশনের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য কোনটিই রবীন্দ্রনাথের  ছিল না। পূর্ব বাংলার পশ্চাদপদ মুসলিমদের প্রতি অগ্রসর বাঙালি হিন্দুদের কোন দরদ না থাকলেও অখণ্ড বাংলার প্রতি তাদের দরদ উপচিয়ে পড়ে। এ গানের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল। সে লক্ষ্যটি হলো বাংলা-প্রেম’র উপর ভর করে বাংলার বিভক্তির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। বাঙালি হিন্দুদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির মূল বিষয়টি হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গভঙ্গ রদের দাবী। ব্রিটিশ শাসকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ ও  বাঙালি হিন্দুদের সে দাবী রাজা পঞ্চম জর্জ মেনে নেন এবং ১৯১১ সালে বাংলা আবার একীভূত হয়।

বঙ্গভঙ্গ রদের পর প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা নেমে আসে পূর্ব বঙ্গের মুসলিমদের মাঝে। বিক্ষুদ্ধ এ মুসলিমদের শান্ত করতে ভারতের ব্রিটিশ সরকার তখন ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেটিও কলকাতার বাঙালি হিন্দুদের ভাল লাগেনি। তার মধ্যেও কলকাতার শ্রীহানীর কারণ খুঁজে পায়। ফলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও বাঙালি বাবুগণ তখন বিক্ষোভে রাজপথে নামেন। মিছিলে নেমেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা রোধে কলকাতার গড়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। সে জনসভাতেও সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ। এই হলো রবীন্দ্র মানস। পরিতাপের বিষয় হলো, যে প্রচণ্ড মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার হিন্দুত্বের চেতনাবাহী ”আমার সোনার বাংলা” গানটিই রচনা করেন সেটিই এখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।

 

বাঙালি মুসলিমের সাহিত্য সংকট ও জাতীয় সঙ্গীত

জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে একটি জনগোষ্ঠির নিজস্ব চেতনা, বিশ্বাস ও স্বপ্নের চিত্র। একাজ অন্যকে দিয়ে হয়না, সেটি দায় একান্ত নিজেদেরই। বাঙালি মুসলিমের  করুণ ব্যর্থতা হলো, সংখ্যায় আজ ১৬ কোটির বেশী হয়েও নিজ দেশের উপযোগী একখানি জাতীয় সঙ্গীত তারা রচনা করতে পারিনি। ইতিমধ্যে কেউ সেটি লিখে থাকলেও সেটি খুঁজে বের করায় রয়েছে ব্যর্থতা। তারা ভিক্ষুকের ন্যায় হাত বাড়িয়েছে রবীন্দ্রনাথের ন্যায় মুসলিম-বিদ্বেষী এক পৌত্তলিকের কাছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এরূপ কদর্য ভিক্ষাবৃত্তির ইতিহাস নাই। দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়ার ইতিহাসটি যেমন একমাত্র বাঙালি মুসলিমের, এরূপ বুদ্ধিবৃত্তিক ভিক্ষাবৃত্তির ইতিহাসও একমাত্র তাদের। যারা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের বিজয়ী করতে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারে, এমন গর্হিত কাজ একমাত্র তারাই করতে পারে। এর চেয়ে অধিক লজ্জা ও অধিক অপমানের বিষয় আর কি হতে পারে? চাল-ডাল, তেল-গ্যাসের ন্যায় নানা সামগ্রী অন্য দেশ ও অন্য ধর্মের মানুষ থেকে কেনা যায়, কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত নয়। কারণ এটি একান্তই নিজেদের চেতনা, ঈমান-আক্বিদা ও ভিশনকে নিজ মনের মাধুরি মিশিয়ে প্রকাশের বিষয়। অন্যদের পক্ষে সেটি অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয় কবি নন। চেতনা ও বিশ্বাসে তিনি বাঙালি মুসলিমদের আপন জনও নন। তার কবিতা ও গানে কখনোই ধ্বনিত হয়নি বাঙালি মুসলিমের চেতনা ও বিশ্বাসের কথা। তাই সেটি জাতীয় সঙ্গীতে ধ্বনিত হবে -সেটিই বা কীরূপে আশা করা যায়? বাংলাদেশীদের উপর এরূপ জাতীয় সঙ্গীত চাপিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে একমাত্র ভারতের এজেন্ডাই পূরণ হতে পারে। বাঙালি মুসলিমের নয়। 

তাছাড়া আজকের শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের বাংলাদেশ এবং রবীন্দ্র-আমলের অবিভক্ত বাংলা এক নয়। রবীন্দ্রনাথের অবিভক্ত বাংলায় মুসলিমদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৫৫ ভাগ। সে বাংলা ঢাকাকেন্দ্রীকও ছিল না। এখন এটি এক ভিন্ন চরিত্রের বাংলাদেশ -যে দেশে রবীন্দ্রনাথ একদিনের জন্যও বাস করেননি। কোনদিনও তিনি এদেশের নাগরিক ছিলেন না। এদেশের স্বাধীনতার কথা তিনি যেমন শোনেননি, তেমনি এ দেশের শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমদের নিয়ে তিনি কোন ভিন্ন স্বপ্নও দেখেননি। ফলে তাঁর পক্ষে বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, স্বাধীনতা, আকাঙ্খা বা স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করা কি আদৌ সম্ভব? তাছাড়া এ সঙ্গীতটি সে উদ্দেশ্যে লেখাও হয়নি। জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের বিষয়টি দোকান থেকে ‘রেডিমেড’ সার্ট কেনার ন্যায় নয়। এটিকে বরং বিশেষ রুচি, বিশেষ আকাঙ্খা, বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে অতি বিশেষ গুণের ‘tailor made’ হতে হয়। প্রতিটি দেশেরই একটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয় থাকে। দেশবাসীর বিশেষ কিছু স্বপ্নও থাকে। সে বিচারে প্রতিটি দেশই অনন্য। সে অনন্য বৈশিষ্ঠের কারণেই পশ্চিম বাংলার ন্যায় বাংলাদেশে ভারতের অংশ হয়নি, বরং পৃথক অস্তিত্ব পেয়েছে। সে অনন্য বৈশিষ্ঠের প্রকাশ ঘটাতে হয় জাতীয় সঙ্গীতে। দেশের জাতীয় সঙ্গীতকেও তাই স্পেশাল তথা অনন্য হতে হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে সেটি নাই।

জাতীয় সঙ্গীত কোন সাধারণ গান নয়। জাতীয় সঙ্গীতের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও দর্শনগত এজেন্ডা থাকে। তাতে দেশবাসীর মিশন ও ভিশনের ঘোষণাও থাকে। ১৯০৫ সালে বাঙালি হিন্দুদের এজেন্ডা ছিল বঙ্গভঙ্গ রদ ও অখণ্ড বাংলা। তখন সে এজেন্ডা পূরণে প্রয়োজন দেখা যায় “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভাল বাসি” গানটির। কিন্তু ১৯৪৭ সালে হিন্দুদের রাজনৈতিক এজেন্ডাই পাল্টে যায়; তখন নতুন এজেন্ডা হয় বঙ্গভঙ্গ। তখন প্রয়োজন হারিয়ে ফেলে এই গান। কিন্তু ১৯৭১’য়ের পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের এজেন্ডাও পাল্টে গেছে। ভারতীয় হিন্দুদের রাজনীতিতে আবার ফিরে এসেছে “অখণ্ড বাংলা”র প্রকল্প। তাই আবার প্রয়োজন দেখা দেয় এ গানটির। তারা জানে, অখণ্ড বাংলা গড়লে সম্ভাবনা বাড়ে পশ্চিম বাংলার সাথে যুক্ত হয়ে ভারত ভুক্ত হওয়ার। তাতে ভারত পাবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের উপর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ। তাতে বাড়বে ভারতের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। এ সুযোগটি পেতে অতীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে বহু হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলার বুকে এসে যুদ্ধ করেছে। তাই এতো কাছে থেকে ভারত সে সুযোগ ছাড়ে কেমনে?‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ তবে সে ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তনের পূর্বে ভারত চায়, বাংলাদেশীদের চেতনার মানচিত্রে পরিবর্তন। চেতনাগত পবিবর্তনের লক্ষ্যেই পুণরায় প্রয়োজন পড়েছে অবিভক্ত বাংলার পক্ষে আবেগ সৃষ্টির। তাই কদর বেড়েছে রবীন্দ্রনাথের “সোনার বাংলা” গানের।

কোন যুদ্ধই স্রেফ সামরিক ক্ষেত্রে সীমিত থাকে না। যুদ্ধ চলে বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানেও। ১৯৭১’য়ের ভারতের সামরিক যুদ্ধটি শেষ হয়েছে, কিন্তু তীব্র ভাবে এখনো চলছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ। পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে ভারত এক ধাপ এগিয়েছে মাত্র, কিন্তু অখণ্ড ভারত নির্মাণের মূল লক্ষ্যটি এখনো অর্জিত হয়নি। ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের লক্ষ্য, বাঙালি মুসলিমের আদর্শিক ভূবনে পরিবর্তন আনা। কারণ, পূর্ব বাংলার মুসলিমগণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভূক্ত হয় পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে ভাষা, বর্ণ বা আঞ্চলিক বন্ধনের কারণে নয়। সেটি সম্ভব হয়েছিল প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের কারণে। এজন্যই ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের মূল টার্গেট হলো প্যান-ইসলামী চেতনার বিলুপ্তি। সে স্থান পূর্ণ করতে চায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে। 

১৯৭১’য়ে সামরিক বিজয়ের পর ভারতের ইসলামী চেতনা নির্মূল প্রজেক্ট বহুদূর এগিয়ে গেছে। ১৯৪৭’য়ে শতকরা ৯৬ ভাগ বাঙালি মুসলিম পাকিস্তানে যোগ দেয়ার পক্ষে ছিল। অথচ চিত্রটি এখন ভিন্ন। মনের মাধুরি মিশিয়ে যারা রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গায় তাদের অনেকেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টিকে অনাসৃষ্টি মনে করে। তাদের সামনে ১৯৪৭ আবার ফিরে এলে এ প্রজন্ম পাকিস্তানভূক্তির বিপক্ষে যেত। ভারত তাই বিজয়ী হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে। নতুন প্রজন্ম ভূলে গেছে ১৯৪৭-পূর্ব বাঙালি মুসলিমদের দুরাবস্থার কথা। তখন বাংলার শহরে ও গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ দালানকোঠা ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিল হিন্দুরা। গ্রাম এলাকায় জমির মালিক ছিল হিন্দু জমিদারগণ। মুসলিমগণ জমির মালিক হয়েছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর। শহর এলাকার শতকরা ৮৫ ভাগের বেশী জমিজমার মালিক ছিল হিন্দুগণ। ব্রিটিশ আমলে সরকারি চাকুরীতে মুসলিমদের সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগও ছিল না। সরকারি চাকুরীতে ভারতের মুসলিমগণ এখনো শতকরা ৪ ভাগের কম –যা ঘোষিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “সাচার কমিশন”য়ের রিপোর্টে। অথচ ভারতে মুসলিমগণ জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ। সংখ্যায় তারা ২২ কোটি।

 

বিপন্ন মুসলিমত্ব

বাঙালি মুসলিমের চেতনা রাজ্যে ভারতীয় দখলাদারিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে বাঙালি সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীগণ। এরা হচ্ছে ভারতের পক্ষে খাঁচার ঘুঘু। এরা চায়, তাদের ন্যায় অন্যরাও ভারতীয় খাঁচায় প্রবেশ করুক। এরূপ ভারতসেবী সাংস্কৃতিক সৈন্য গড়ে তোলার কাজে ভারতের বিনিয়োগটি ১৯৪৭ থেকেই। ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ভারতের সে খরচটি বিপুল ভাবে কমেছে। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে এখন ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশী মুসলিমের নিজস্ব রাজস্বের পুঁজি। ভারতের বর্তমান স্ট্রাটেজী হলো, একাত্তরে অর্জিত অধিকৃতিকে যে কোন ভাবেই হোক লাগাতর ধরে রাখা। বাংলাদেশের উপর ভারতের দখলদারীটি শুধু সামরিক, রাজনৈতিক বা অর্থনতিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক। সে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকৃতিরই প্রতীক হলো জাতীয় সঙ্গীত রূপে চাপিয়ে দেয়া পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের হিন্দুত্বের গান।

রবীন্দ্রনাথ নিজে ছিলেন অখণ্ড হিন্দু ভারতের ধ্বজাধারি। সে অখণ্ড হিন্দু ভারতের চেতনা থেকেই ভারত থেকে মুসলিম নির্মূলের প্রবক্তা মারাঠী শিবাজীকে তিনি জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়েছেন। শিবাজীকে বন্দনা করে তিনি কবিতাও লিখেছেন। এখন সে রবীন্দ্রনাথকে ভারত ব্যবহার করছে বাংলাদেশের উপর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের যোগসূত্র রূপে। এজন্যই বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা ও রবীন্দ্র-অর্চনা বাড়াতে ভারত সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের এতো বিনিয়োগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের রাজস্বের অর্থে বাংলা এ্যাকাডেমীর কাজ হয়েছে প্রতিবছর পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের উপর শত শত বই প্রকাশ করা। অথচ ইসলামের মহান নবীজী(সা:) এবং মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির উপর কি এর দশ ভাগের এক ভাগ বই ছাপানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

জাতীয় সঙ্গীত দেশ ও দেশবাসীর এজেন্ডার কথা বলে। অথচ ক্ষমতালোভী সেক্যুলারিস্টদের মূল এজেন্ডাটি হলো, কুর’আনে প্রদর্শিত সিরাতাল মুস্তাকীমকেই জনগণের দৃশ্যপট থেকে বিলুপ্ত করা। সে লক্ষ্যেই এক পৌত্তলিকের রচিত সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গাইতে বা শুনতে জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবে অধিকৃত হচ্ছে বাঙালি মুসলিমের মনের ভূবন। অধিকৃত সে মন বাধ্য হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে দূরে থাকতে। মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে দূরে থাকার বিপদটি তো ভয়াবহ। তখন সে ব্যক্তির উপর সঙ্গীরূপে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিয়োগ দেয়া হয় অভিশপ্ত শয়তানকে। সে ঘোষণাটি এসেছে পবিত্র কুর’আনে। বলা হয়েছে, “যে কেউ দয়াময় প্রভুর (রহমানের) স্মরণ থেকে দূরে সরবে তার উপর নিয়োগ দেয়া হবে শয়তানের, সে তার সঙ্গী হবে।” –(সুরা জুখরুফ, আয়াত ৩৬)। এবং এর পরিণতি হলো, শয়তান তখন অসম্ভব করে জান্নাতের পথে চলা –এ ঘোষণাটি এসেছে উক্ত সুরার পরবর্তী আয়াতে।

রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ানোর মূল লক্ষ্যটি শুধু গান গাওয়ানো নয়। বরং সেটি হলো, দেশবন্দনায় ডুবিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে মুসলিম চিত্তকে ভূলিয়ে রাখা। ফলে তার পরিণতিটি ভয়াবহ। বিপদটি হলো, সঙ্গী রূপে তখন শয়তানকে নিজ ঘাড়ে বসিয়ে নেয়ার। জনগণের কাঁধে শয়তান বসিয়ে দেয়ার সে ভয়ানক পাপের কাজটিই করছে বাংলাদেশের সরকার। সে পাপের শুরু মুজিবের হাতে হলেও আজও সেটি শেষ হয়নি। সরকারের এই অব্যাহত নীতির কারণেই দিন দিন শয়তানের অধিকৃতি বাড়ছে বাংলাদেশীদের মনের ভূবনে। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গণই শুধু নয়, জনগণের চেতনার মানচিত্রও অধিকৃত হয়ে যাচ্ছে পৌত্তলিক হিন্দুদের হাতে। ফলে বাংলাদেশে রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে ইসলামের শত্রুপক্ষের জনবল বিশাল। জাতীয় সঙ্গীত এভাবেই পরিণত হয়েছে জনগণের ঈমান ধ্বংস ও জাহান্নামে পৌছানোর নীরব হাতিয়ারে।

 

দেশধ্বংসী নাশকতা

রবীন্দ্রনাথের গানে দেশের মাটি, নদীর তট, পথ-ঘাট, গাছ-পালা, ফলমূল ও আলো-বাতাসের বর্ণনা থাকলেও  সামান্যতম উল্লেখ নাই সেই সর্বস্রষ্টা করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার যিনি সেগুলি সৃষ্টি করেছেন। এ সঙ্গীত গাওয়ার মুহুর্তে একজন মুসলিম সন্তান ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর কুদরতকে স্মরণে রাখতে। ফলে ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সংযোগ গড়তে। পবিত্র কুর’আনের সুরা বাকারা’য় মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: “ফাজকুরুনি, আজকুরুকুম।” অর্থ: “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করবো।” মুসলিমগণ তাদের মহা প্রতিপালক রবের স্মরণ তাই শুধু নামাজ-রোজায় করেনা, বরং প্রতি পদ্যে, গদ্যে, গানে এবং প্রতিটি কর্মে ও পথচলায় করে। এর মাঝেই তো মু’মিনের ঈমানদারী। এবং সেটি বেশী বেশী করে মুসলিম দেশের জাতীয় সঙ্গীতে। কারণ, সে সঙ্গীত মুসলিম জনগণের সম্মিলিত যিকির।  অথচ রবীন্দ্রনাথের গানে সেটি হয়নি। সেটি করার সামর্থ্যও রবীন্দ্রনাথের ছিল না। বরং তাঁর গানে পৌত্তলিক কায়দায় পূজনীয় রূপে হাজির করা হয়েছে দেশকে। এভাবে মহান আল্লাহতায়ালার যিকির ও ইসলামের মূলআক্বীদা থেকে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-সেনা এবং সাধারণ মানুষকে পরিকল্পিত ভাবে দূরে সরানো হচ্ছে। সে সাথে জন্ম দেয়া হচ্ছে শিরক তথা পৌত্তলিকতার।

নবী্জী (সা:)’র আমলেও আরব দেশে বিস্তৃত ভূমি, চন্দ্র, সূর্য, অবারিত আকাশ ও আলো-বাতাস ছিল। সে ভূমিতেও মাঠ-ঘাট, ফুল-ফল ও বৃক্ষরাজি ছিল। কিন্তু মহান নবীজী (সা:) কি কখনো সে গুলিকে মা বলে সম্বোধন করেছেন? বরং আজীবন হামদ-নাত ও প্রশংসা গীত গেয়েছেন সে সৃষ্টিকুলের মহান স্রষ্টার। মহান আল্লাহতায়ালার অনুগত বান্দাহ রূপে মুসলিমের বড় দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহতায়ালার সে নামকে সর্বত্র বড় করা তথা তাঁর নামে তাকবির দেয়া। তা নিয়ে বার বার হুকুম এসেছে পবিত্র কুর’আনে –যেমন এসেছে সুরা মুদাচ্ছেরের ৩ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে: ওয়া লি রাব্বিকা ফাকাব্বির”। অর্থ: এবং তোমরা রবের জন্য তাঁর নামের তাকবির দাও। তাই মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সমাবেশে জোর গলায় “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি তোলা। এটিই মহান আল্লাহতায়ালার যিকির। প্রতি মুসলিমের উপর এমন ধ্বনি তোলা নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজ। কিন্তু বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের সভা-সমিতি থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বনি বিলুপ্ত হয়েছে। দেয়া হয় “জয় বাংলা” ধ্বনি। বিদ্রোহ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে। মুসলিম দেশের জাতীয় সঙ্গীতে হামদ, নাত ও তাকবিরের বদলে ভূমি, নদ-নদী, ভাষা বা বর্ণের বন্দনা থাকবে –সেটি কি ভাবা যায়? সেটি হলে পৌত্তলিকদের থেকে ঈমানদারের পার্থক্য কোথায়? কিন্তু কি বিস্ময়! জাতীয় সঙ্গীতের নামে সরকারের তদারকিতে শিরক হচ্ছে এবং গুনাহগার বানানো হচ্ছে জনগণকে -তা নিয়ে মোল্লা-মৌলভী, আলেম, পীর, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার ছাত্র, ইসলামী দলগুলির নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মুসল্লীদের মাঝে সামান্যতম প্রতিবাদ নাই। তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। বাঙালি মুসলিমের চেতনার মানচিত্র হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসীদের হাতে কতটা অধিকৃত এবং মুসলিমগণ কতটা দায়িত্বজ্ঞান-বর্জিত -এই হলো তার নমুনা।

প্রতিটি দেশ ও দেশের জনগণের শুধু রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত পরিচয়ই থাকে না, থাকে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পরিচয়। সে পরিচয় থেকেই পায় ভিন্ন মানচিত্র। জনগণের চেতনায় যেমন সুনির্দ্দিষ্ট দর্শন থাকে, তেমনি সে দর্শনের আলোকে রাজনৈতিক স্বপ্নও থাকে। সে স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠায় জনগণের জীবনে লড়াইও থাকে। সে বিচারে প্রতিটি দেশই অনন্য। সে অনন্য বৈশিষ্ঠের কারণে জাতীয় সঙ্গীতও অন্যদের থেকে ভিন্নতার হয়। সে অনন্য বৈশিষ্ঠের কারণেই পশ্চিম বাংলার ন্যায় বাংলাদেশ ভারতের অংশ নয়। পশ্চিম বাংলার সাথে বাংলাদেশের পার্থক্যটি ভূমি, জলবায়ু বা আলো-বাতাসের নয়, বরং সেটি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিমের দর্শন, ভিশন ও মিশনের। বড় পার্থক্যটি হলো, প্রতিবেশী বাঙালি হিন্দুদের থেকে ভিন্নতর একটি স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার। সে ভিন্ন স্বপ্নের কারণেই ১৯৪৭’য়ে পশ্চিম বাংলার হিন্দুগণ যখন ভারতে যোগ দেয়, পূর্ব বাংলার মুসলিমগণ তখন সচেতন ভাবেই ভারতে না গিয়ে পাকিস্তানে যোগ দেয়। সে বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হয় দেশের ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র। ভারতের লক্ষ্য, বাংলাদেশের সে বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে বিলুপ্ত করা। সে লক্ষ্যেই আগ্রাসন হচ্ছে বাংলাদেশীদের চেতনার ভূবনে।

রবীন্দ্রনাথের গান ও সাহিত্য পরিণত হয়েছে বাঙালি মুসলিমের ঈমান ধ্বংসের হাতিয়ারে। এ কাজটি হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। এতে হামলার মুখে পড়েছে এবং বিপন্ন হচ্ছে বাঙালি মুসলিমের ঈমান ও মুসলিমত্ব। আর বাঙালি মুসলিমের মুসলিমত্ব বিপন্ন হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কি সুরক্ষা পাবে? বাংলাদেশে তার স্বাধীন অস্তিত্ব পেয়েছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুসলিমত্বের জন্য, বাঙালিত্বের জন্য নয়। মুসলিমত্ব্ই বাঙালি মুসলিমদের দিয়েছে বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য। এবং সে বৈশিষ্ট্যের কারণেই ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা ভারতে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল। আজও সে পরিচয়ের কারণেই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছে। তাই মুসলিমত্ব যতই বিপন্ন হবে ততই বিপন্ন হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মুসলিমত্বের বিলুপ্তির মাঝেই বস্তুত বাংলাদেশের আদর্শিক সীমান্তের বিলুপ্তি। এটিই হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশ-ধ্বংসী নাশকতা! ভারত ও ভারতসেবী বাঙালিগণ তো সেটিই চায়।

 

পৌত্তলিক জাতীয় সঙ্গীত: হিন্দুত্বের প্রতি দায়বদ্ধতার ঘোষণা

আত্মসমর্পণের পর ইচ্ছামত স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা থাকে না। স্বাধীনতা থাকে  না কি খাবে বা কি পান করবে -সে সিন্ধান্তটি নেয়ার। প্রভু যা খাওয়ায় বা পান করায় -সেটিই খেতে হয় ও পান করতে হয়। প্রভূর পক্ষ থেকে জাতীয় সঙ্গীত রূপে যা গাইতে বলা হয়, তাই গাইতে হয়। এমন কি বিষ পান করানো হলেও সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস থাকে না। এরূপ গোলামী নিয়ে বাঁচাই হলো শেখ মুজিবের লিগ্যাসি। সেটাই একাত্তরের চেতনা। ভারতীয় সেনা বাহিনীর দ্বারা ব্যাপক লুটপাট হলো, বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নেয়া হলো এবং তুলে নেয়া হলো পদ্মার পানি –তবুও মুজিব প্রতিবাদ করেনি। দেশের বুক চিড়ে অবাধ করিডোর ও দেশের সমুদ্র বন্দরে সুবিধা চাইলে সেটিও ভারতকে দিতে হয়। দিতে হচ্ছে তিস্তার পানি। মুজিবের সে লিগাসি হাসিনার মাধ্যমে আজ প্রবল প্রতাপে বেঁচে আছে। তাই ভারতের খায়েশকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়া হয়। এসবই হলো ভারতের কাছে আত্মসমর্পণের দলিল। একই ভাবে জাতীয় সঙ্গীত রূপে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিণত হয়েছে ভারতের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীকে।

বাঙালি মুসলিম জীবনে নিদারুন আত্মসমর্পণটি নেমে আসে ১৯৭১’য়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অধিকৃত হওয়ার পর। ১৯৭২’য়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ভারত তার সেনাবাহিনীকে তুলে নিলেও হাজার হাজার চর ও রাজনৈতিক এজেন্টদের তুলে নেয়নি। দেশ এখন ভারতের এজেন্টদেরই দখলে। দেশ দখলের এটিই হলো বিশ্ব মাঝে সবচেয়ে সস্তা প্রকল্প। ১ কোটি মানুষের কাশ্মীর দখলে ভারতকে সেখানে ৬ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করতে হয়েছে। বাংলাদেশে একজনও নাই। ভারত দখলে রাখার সে কাজটি করছে র’য়ের এজেন্ট এবং নিজ অর্থে প্রতিপালিত বাংলাদেশী এজেন্ট। ভারত জানে নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভারতপন্থীদের বিজয় অসম্ভব। তাই নিজের চরদের শাসন বাঁচাতে গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে কবরে পাঠানো হয়েছে। ভারত স্বীকৃতি দিয়েছে ভোটডাকাতিকে। এবং স্থায়ী রূপ দেয়া হয়েছে ভারতীয় এজেন্টদের জবরদখলকে। ইংরেজগণ তাদের ১৯০ বছরের শাসনের গণদাবীর পরওয়া করেনি। তারা শাসন করেছে নিজ খলিফা তথা ভাইসরয়দের মাধ্যমে; এবং সেটি হাজার হাজার মাইল দূর থেকে। ভারতীয়রাও দিল্লিতে বসে সেটিই চায়। সে জন্য তারাও ঢাকার শাসন ক্ষমতায় চায় আত্মসমর্পিত খলিফাদের। সে খলিফার শাসনকে গ্রহণযোগ্য করতেই চায় বাংলাদেশীদের মানসলোকে চায় পৌত্তলিক চেতনার চাষাবাদ।

তেমন একটি ভারতসেবী চেতনার আবাদ বাড়াতেই প্রয়োজন পড়েছে বাংলাদেশের বুকে রবীন্দ্র সঙ্গীত, রবীন্দ্র সাহিত্য ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রয়োজন পড়েছে ভারতসেবী মিডিয়ার। এসবই হলো বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমি দখলে নেয়ার হাতিয়ার। সে সাথে প্রয়োজন পড়েছে নৃশংস রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তির ফ্যাসিবাদেরও। এ ফ্যাসিবাদে সত্যকে সত্য বলা এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সত্য বলায় গুম-খুনের শিকার হতে হয়। সব কিছুই চলছে দিল্লির সুদূর প্রসারিত ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী। ভারতীয় এ আগ্রাসনের মুখে বাঙালি মুসলিম বাঁচছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। প্রতিবাদের আওয়াজ তুললে রাজাকার ও পাকিস্তানের দালাল বলা হয়। যেন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সে সাহস ও দায়ভার একমাত্র রাজাকারদেরই শোভা পায়! ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেস বুকে বক্তব্য দেয়ায় আবরার ফাহাদের ন্যায় বুয়েটের নির্দলীয় নিরীহ ছাত্রকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে লাশ করা হয়। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোটি চিত্রিত হয় পাকিস্তানী চেতনা রূপে। যেন পাকিস্তানীদের মত স্বাধীন ভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোটি বাঙালি মুসলিমের জীবনে বেমানান ও অনাকাঙ্খিত। সেটি যেন একাত্তরের চেতনার পরিপন্থী এবং ভারতের সাথে গাদ্দারী। চিরকাল ভারতের প্রতি আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচাই যেন বাঙলি মুসলিমের একাত্তরের দায়বদ্ধতা! সে কথাটি বার বার শুনাতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টগণ কখনোই ভূল করে না। এবং ভারতের প্রতি সে দায়বদ্ধতা ও আত্মসমর্পণের ঘোষণাটি দিতে হয় মনের মাধুরী মিশিয়ে পৌত্তলিক কবির ঈমান বিধ্বংসী পৌত্তলিক গানটি গেয়ে। ১ম সংস্করণ ১০/০৫/২০১৫; ২য় সংস্করণ ২৫/০২/২০২১।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *