একাত্তরের শিক্ষণীয় বিষয় এবং বাঙালি মুসলিমের নতুন অর্জন
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on October 10, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
অনৈক্যের নাশকতা
মুসলিম উম্মাহ আজ যে কারণে শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন -সেটি মুসলিম দেশগুলির ভূমি, জলবায়ু ও অর্থনীতির কারণে নয়। মূল কারণটি হলো, মুসলিমদের অনৈক্য। সে অনৈক্যের মূল কারণটি হলো, মুসলিমদের মাঝে কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা ও দেশগুলিতে দুর্বৃত্ত নেতৃত্ব। দেশ চলে সর্বত্র নেতাদের নির্দেশে। ফলে নেতাগণ ভ্রষ্ট, অযোগ্য, দুর্বৃত্ত ও বেঈমান হলে দেশও তখন দুর্বৃত্ত কবলিত হয়। দুর্বৃত্ত নেতাদের সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তিটি হয় ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তির দেয়াল গড়ে। বিভক্ত করার অর্থ উম্মাহকে দুর্বল করা। তাদের লক্ষ্য, মুসলিমদের ক্ষতিসাধন। এজন্য ইসলামের শত্রুশক্তির কাছে জাতীয়তাবাদী ও বর্ণবাদীরা এতো প্রিয়। ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকচক্র এজন্যই এতো প্রিয়শেখ মুজিব এবং তার কন্যা হাসিনা। একই রূপ গাদ্দারির কারণে ব্রিটিশ সরকার থেকে মক্বার গাদ্দার গর্ভনর শরিফ হোসেন শুধু রাজনৈতিক উস্কানিই পায়নি -অর্থ, অস্ত্র এবং সামরিক সহায়তাও পেয়েছিল। কারণ উসমানিয়া খলিফার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সে ব্রিটিশ বাহিনীর কলাবোরেটর হয়েছিল।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন যত বিশালই হোক তাতে ক্ষুদ্র দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি বাড়ে না। মাথা পিছু আয়ের দিক দিয়ে কাতার সমগ্র পৃথিবীতে প্রথম। কিন্তু সে আয়ের কারণে দেশটির শক্তি বাড়েনি। মাথা পিছু আয় তা থেকে আরো শতগুণ বাড়লেও তাতে কাতার কোন শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে না। কারণ দেশটি ক্ষুদ্র। রাশিয়ার অর্থনীতি দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়েও দুর্বল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটি একটি বিশ্বশক্তি। দক্ষিণ কোরিয়া কখনোই সে মর্যাদা পাবে না। কারণ, রাশিয়ার রয়েছে বৃহৎ ভূগোল। সে বৃহৎ ভূগোলই দেশটিকে বিশ্বশক্তি বানিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের দাপট বিলুপ্ত হয়েছে; কারণ বিলুপ্ত হয়েছে তার বিশাল ভূগোল। একই কারণে বিশ্বরাজনীতিতে তুর্কীদের প্রভাবও বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখনো বিশ্বশক্তি রূপে টিকে আছে। কারণ টিকে আছে তার বিশাল ভূগোল। তাই বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তি, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হলে ভূগোল বাঁচাতে হয়। ভূগোল ক্ষুদ্রতর করার অর্থ রাষ্ট্রকে শক্তিহীন, স্বাধীনতাহীন ও নিরাপত্তাহীন করা। তাই ইসলামে এটি হারাম। কারণ মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল ও পরাধীন দেখতে চান না। উম্মাহ দুর্বল হলে খুশি হয় শয়তান এবং শয়তানের অনুসারী কাফেরগণ। মুসলিমদের তখন গোলামী নিয়ে বাঁচতে। একাত্তরের মুসলিম রাজাকরগণ ইতিহাসের সে মৌলিক পাঠটি বুঝতো। কিন্তু সে বোধ মুসলিম নামধারী বাঙালি ফ্যসিস্ট ও বাম কাপালিকদের ছিলনা। মক্কার শরিফ হোসেন ও বাংলার মুজিবের ন্যায় যারাই মুসলিম দেশের ভূগোল ছোট করেছে -তারা কখনোই মুসলিম উম্মাহর বন্ধু ছিল না। তারা দাস শয়তানের; এদের বিজয়ে শয়তানের অনুসারী পৌত্তলিকগণ তাই পুঁজি বিনিয়োগ করে -এমনকি যুদ্ধও করে। তাদের বিজয় নিয়ে এমন কি উৎসবও করে। একাত্তরে সেরূপ যুদ্ধ ও উৎসবে ভারতকে তাই দেখা গেছে।
কোন মুসলিম দেশ যদি ভেঙ্গে যায় এবং ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনাটি কেউ যদি হৃদয়ে অনুভব করে তবে বুঝতে হবে সে নিরেট বেঈমান। তার ঈমানের ভান্ডারে সামান্যতম ঈমান থাকলে ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনায় তার হৃদয়ে ক্রন্দন উঠতো। এজন্যই একাত্তরে কোন আলেম, কোন ইসলামী দলের নেতা, ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কোন বুদ্ধিজীবী, কোন শিক্ষক এবং কোন পীর পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়নি। পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্পটি ছিল বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি বাম, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও পৌত্তলিক হিন্দুদের। ইসলামের বিরুদ্ধে এদের শত্রুতা কোন গোপন বিষয় নয়। একাত্তরে ভারত বিজয়ী হওয়াতে বাংলাদেশ ইসলামের এই শত্রুদের হাতেই অধিকৃত হয়। নামায়-রোজা, হজ্জ-উমরাহ ঘুষখোর-সূদখোর মুনাফিকও পালন করতে পারে। নবীজী (সা:)র যুগে মুনাফিকগণ তার পিছনেও নামাজ পড়েছে। কিন্তু তারা কখনোই হৃদয়ে ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। সে অভিন্ন অবস্থাটি মুসলিম নামধারী বাঙালি কাপালিকদেরও। তারা পরিণত হয় মুসলিম উম্মাহর ঘরের শত্রুতে।
মুসলিম দেশের বৃহৎ ভূগোলের কল্যাণ হলো, তাতে সে রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকগণ বিশ্বের বুকে বৃহৎ ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। মর্যাদা এবং গুরুত্বও পায়। এজন্যই বাংলার খাজা নাজিমুদ্দীন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মহম্মদ আলী বোগরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রূপে বিশ্বে যে সম্মান ও গুরুত্ব পেয়েছেন সেটি মুজিব, জিয়া, এরশাদ বা হাসিনা পায়নি। কারণ, পাকিস্তান ছিল সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। এজন্যই নবীজী (এসা:) এবং তাঁর সাহাবাগণ মুসলিম দেশের ভূগোল বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতেন। তেমন একটি তাড়নাতেই নবীজী (সা:)’র মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ক্ষু্দ্র ইসলামী রাষ্ট্র এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নবীজী (সা:)’র সে আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি, বিহারী, অসমীয়, সিন্ধি, গুজরাতী, পাঠান, বেলুচ ও অন্যান্য মুসলিমগণ বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দেয়। পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে বাঙালি মুসলিমগণ সুযোগ পেয়েছিল বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের। কিন্তু একাত্তরে যুদ্ধে পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক নতুন পরিচয় পায়। সেটি ভারতের পদতলে আত্মসমর্পিত এক আশ্রিত রাষ্ট্রের। তখন বিশ্বের রাজনীতিতে প্রভাব রাখা দূরে থাক, বাংলাদেশের কাজ হয় ভারতের হাতে পদ্মা-তিস্তাসহ ৫৪টি যৌথ নদীর পানি তুলে দেয়া, বুক চিরে করিডোর দেয়া, সড়ক পথ ও রেল পথ দেয়া এবং বন্দরের সুবিধা দেয়া। সে সাথে ভারতীয় পণ্যের জন্য নিজ দেশের বাজার উম্মুক্ত করে দেয়া। অথচ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধি ভারতকে কিছুই দিতে হয়নি।
ভারতের রাজধানীতেও দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ করা যায়। প্রতিবাদে নামলে কাউকে গুলী খেতে হয়না। কিন্তু হাসিনার আমলে সেটি ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে অপরাধে পুলিশের গুলী খেয়ে অনেককে শহীদ হতে হয়েছে। ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে ফেস বুকে মন্তব্য করায় বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে লাশ হতে হয়েছে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের হাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্ররা পূজার অধিকার পেলেও মুসলিম ছাত্ররা ইফতার পার্টি বা সীরাত সম্মেলন করতে পারিনি। বাঙালি মুসলিমগণ এতোটাই স্বাধীনতা হারিয়েছিল যে, কুর’আনের তাফসির করতেও অনুমতি লাগতো। কম্যুনিস্ট, নাস্তিক বা অমুসলিমদের দল করতে বাঁধা নাই। কিন্তু ক্ষমতা হাতে পাওয়া মাত্রই মুজিব সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং সে দলগুলির নেতাকর্মীদের কারাবন্দী করেছিল। অথচ সে বিপদ পাকিস্তানে ছিল না। ফলে একাত্তরে চরম পরাধীনতা নেমে তাদের জীবনে যারা ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ নিয়ে বাঁচতে চায়।
হারাম বিষয় কখনোই হালাল হয় না
কুর’আন-হাদীস নিয়ে যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তাদের মাঝে মুসলিম দেশ ভাঙ্গার কাজটি যে হারাম -তা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ থাকার কথা নয়। সে হারামকে কখনোই হালাল বানানো যায় না। অথচ সে হারামকে হালাল বানানোর চেষ্টাটি ইসলামী জ্ঞানশূণ্য বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের মাঝে কম নয়। দেশ ভাঙ্গাকে জায়েজ করতে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পাকিস্তান আমলে অনৈক ইসলামী কাজ ও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাতে কি একটি দেশ ভাঙ্গার ন্যায় হারাম কাজ জায়েজ হয়? হারাম তো সব সময়ই হারাম। হত্যাকান্ড, জুলুম ও বৈষম্য তো উমাইয়া, আব্বাসীয় এবং উসমানিয়া আমলেও হয়েছে। উমাইয়া শাসনামলে পবিত্র ক্বা’বাতে আগুন দেয়া হয়েছে। সরকারি নৃশংসতা থেকে ইমাম হোসেন (রা:)’য়ের ন্যায় মহান ব্যক্তিও রেহাই পাননি। রেহাই পাননি তাঁর ৭২ জন সঙ্গী। তারপরও জনগণ মুসলিম রাষ্ট্রকে ভাঙ্গেনি। কারণ ক্বা’বাতে আগুন দেয়া বা হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যার চেয়েও হাজার গুণ বেশী ক্ষতি হয় যদি কোন মুসলিম রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করা হয়। এজন্যই মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি হারাম করেছেন এবং ভাষা ও বর্ণের নামে গড়ে উঠা ভেদাভেদের দেয়াল ভেঙ্গে একতা গড়াকে ইবাদত বলেছেন। এ জ্ঞানটুকু থাকার কারণেই কোন ইসলামী দল বা ব্যক্তি একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়নি। একাজ ছিল ইসলাম দূরে সরা বাঙালি ফাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীদের। যখন ভাষা, গোত্র ও আঞ্চলিকতার নামে মুসলিম ভূমিকে বিভক্ত করা শুরু হয়েছে -তখন থেকে পরাজয় এবং পতনও শুরু হয়েছে।
জনপদে সভ্য মানুষের বসবাস যেমন গড়ে উঠে, তেমনি বিষাক্ত সাপও সেখানে বাসা বাঁধার চেষ্টা করে। ঘরে সাপ ঢুকলো সে সাপ মারতে হয়, সে জন্য ঘরে আগুন দেয়াটি শুধু বুদ্ধিহীনতাই নয়, গুরুতর অপরাধ। তাই শাসক যত দুর্বৃত্তই হোক -সে কারণে দেশ ভাঙ্গা জায়েজ হয় না। জায়েজ হয় না জনগণের মাঝে ভাষা বা বর্ণ ভিত্তিক ঘৃণা, ভিন্নতা বা শোষণের কারণেও। দেশের অখণ্ডতা বাঁচিয়ে রেখেও এসব রোগের চিকিৎসা করা যায়। তাছাড়া প্রশ্ন হলো, একাত্তরের পূর্বে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ -এ ২৩ বছরের পাকিস্তানী আমলে ২৩ জন পূর্ব পাকিস্তানীও কি পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে? অথচ বার বার প্রকাণ্ড হত্যাকান্ড ঘটেছে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর। এজন্য কি বাংলাদেশ ভাঙ্গতে হবে। মুজিবের শাসনামলে রক্ষিবাহিনী হত্যা করেছে তিরিশ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। ২০০৯ সালে ফেব্রেয়ারীতে ৫৭ সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে ঢাকার পিলখানাতে। ২০১৩ সালের ৫’মের এক রাতে শাপলা চত্তরে হিফাজতে ইসলামের শত শত মুসল্লীকে হত্যা করা হয়। এবং মিউনিসিপালিটির ময়লা ফেলার গাড়িতে তুলে তাদের লাশ গায়েব করা হয়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিপ্লব থামাতে গিয়ে প্রায় দেড় হাজার নিরীহ ছাত্র ও অছাত্রকে হত্যা করা হয়। অপর দিকে পাকিস্তানে আমলে অধিকাংশ হত্যা কান্ডগুলি ঘটেছে যু্দ্ধকালীন সময়ে। বুঝতে হবে কোন দেশে যুদ্ধ আসলে সে সাথে যুদ্ধাপরাধও আসে। একাত্তরের যুদ্ধে তাই বহুহাজার নিরীহ মানুষকে নিহত হতে হয়েছে। অথচ একাত্তরের পর বাংলাদেশে গণহত্যাগুলি ঘটেছে কোনরূপ যুদ্ধ ছাড়াই। অথচ ৯ মাসের যুদ্ধকালীন সময়টি বাদে পাকিস্তানী আমলে কখনোই এরূপ গণহত্যা হয়নি।
যে ব্যর্থতা জনগণের
তবে বাংলাদেশে ব্যর্থতা শুধু নেতাদেরই নয়, সাধারণ জনগণের। জনগণকে শুধু চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরি জানলে চলে না। তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বপালনেও যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয়। মুসলিম মাত্র দায়িত্ববান ব্যক্তি। দায়িত্বহীন ব্যক্তিগণ মুনাফিক, ফাসিক ও কাফের হয়; কিন্তু তারা মুসলিম হতে পারে না। মুসলিমকে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয় শত্রু-মিত্র চেনাতেও। কারণ মুসলিম জীবনে আমৃত্যু জিহাদটি তো তাদের বিরুদ্ধেই। চোর-ডাকাতদের বন্ধু, নেতা বা পিতা রূপে জড়িয়ে ধরার মধ্যে যা প্রকাশ পায় সেটি নিতান্তই বেঈমানী। তাতে যেমন দুনিয়ায় কল্যাণ নাই, তেমনি আখেরাতেও কল্যাণ নেই। এটি অবিকল বিষাক্ত সাপকে জড়িয়ে ধরার মত।
মুসলিমদের বড় বড় ক্ষতিগুলো যারা করেছে তাদের অপরাধগুলো কোন কালেই লুকানো ছিল না। কিন্তু তাদের সে অপরাধগুলি স্বচোখে দেখেও তারা সে অপরাধীদের নেতার আসনে বসিয়েছে। এরচেয়ে বড় অপরাধ কি হতে পারে? বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতার মূল কারণ এখানেই। বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও সে বাস সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে ভূল করে না -যদি চালক সুস্থ্য হয়। কিন্তু যাত্রীগণ দরবেশ হলেও গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটাবে বা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হবে -যদি চালক মাতাল বা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়। এজন্যই সবচেয়ে যোগ্যবান ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে বসানোর মধ্যেই কল্যাণ। এটিই নবীজী (সা:)র সূন্নত। তাই ইসলামের গৌরব যুগে রাষ্ট্র নায়কের সে সিটে বসেছেন খোদ নবীজী (সা:)। এবং নবীজী (সা:)’র ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। অথচ বাংলাদেশ হচ্ছে তার উল্টোটি। রাষ্ট্র হাইজ্যাক হয়েছে ভোট-ডাকাত ফ্যাসিস্টদের ন্যায় অতি নৃশংস দুর্বৃত্তদের হাতে। অথচ বাংলাদেশীদের মাঝে তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ নেই। গরুছাগল সামনে কোন অন্যায় হতে দেখেও যেমন নীরবে ঘাস খায়, বাংলাদেশের মুসলিমদে অবস্থা কি তা থেকে ভিন্নতর?
রাষ্ট্রের কল্যাণ কাজের শুরুটি সমাজের নীচের তলা থেকে হয়না। সেটি শুরু করতে উপর থেকে। দেশের জনগণদের সবাইকে ফেরেশতা বানিয়ে রাষ্ট্রে কল্যাণ আনা যায় না। সবাইকে ফেরেশতা বানানোর কাজটি সম্ভব নয়। সেটি নবীজী (সা:)ও পারেননি। তাঁর রাষ্ট্রের অনেকেই ছিল অমুসলিম, মুনাফিক বা ফাসিক। তাছাড়া বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ মানুষ যে জাহান্নামে যাবে সেটি তো মহান আল্লাহতায়ালার কথা। তাই ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের অর্থ হলো, শাসন ক্ষমতায় নেক বান্দাদের বসানোর বিপ্লব। নইলে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও দেশে কোন কল্যাণ আসে না। বাঙালি মুসলিম দুর্গতির মূল কারণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভাল মানুষকে বসানোর ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জনগণের কাছে গুরুত্বই পায়নি। তারা কল্যাণ খুঁজেছে স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায়। এবং নিজে ভাল হওয়ায়। নবীজী (সা:) ও তাঁর প্রিয় সাহাবাগণ রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের যে মহান সূন্নত রেখে গেছেন -তা থেকে তারা কোন শিক্ষাই নেয়নি। নবীজী (সা:)’র সূন্নত হলো, মানুষকে যেমন পরিশুদ্ধ মু’মিন হতে হবে, তেমনি রাষ্ট্রকেও পরিশুদ্ধ ইসলামী হতে হবে। দূষিত পানি ও বিষাক্ত কীটে ভরা গভীর নর্দমায় নাক ভাসিয়ে বেশীক্ষণ বাঁচা যায় না। শরীরে পচন ধরে। সে বিপদ দুর্বৃত্তির প্লাবনে ভাসা রাষ্ট্রে। তাই পরিশুদ্ধ ঈমান ও আমল নিয়ে বাঁচা ও বেড়ে উঠার তাগিদে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হয়। ইসলামে এটি ফরজ।
মুজিবের অপরাধের রাজনীতি ও একাত্তরের পরম্পরা
ইসলামের শত্রুপক্ষীয় দুর্বৃত্তদের প্রশাসনিক নীতি হলো, “মানুষকে বিভক্ত করো এবং শাসন করো”। এদের কাজ তাই ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, আঞ্চলিক ভিন্নতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে জনগণের মাঝে বিভক্তি গড়া। এ নীতি নিয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ ১৯০ বছর বাংলা শাসন করেছে। যারা জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে ভয় করে তারা সবাই সে নীতি অনুসরণ করে। সে নীতি ছিল শেখ মুজিবেরও। এজন্যই মুজিবের রাজনীতির মূল পুঁজিই ছিল ঘৃণাভিত্তিক বিভক্তির রাজনীতি। পাকিস্তান আমলে তার বিভক্তির রাজনীতির ব্যাকারণ ছিল বাঙালি ও অবাঙালির বিভক্তি। তেমন একটি ঘৃণাপূর্ণ মানসিক কাঠামোর কারণে মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানে তার দলকে শক্তিশালী করার কোন চেষ্টাই করেননি। সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় মুজিবের সামান্যতম আগ্রহ থাকলে সে গরজটি তার মাঝে দেখা যেত।
মুজিবের রাজনীতির মূল স্ট্র্যাটেজি ছিল পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ভাবে বিভক্ত করে ফেলা। তার লক্ষ্য ছিল, সে রাজনৈতিক বিভক্তির মাধ্যমের পাকিস্তানের অখণ্ড অস্তিত্বকে অসম্ভব করা। সে রাজনৈতিক বিভক্তির প্রকাশ ঘটে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। তাই ১৯৭১’য়ের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়ার আগেই ১৯৭০’য়ের নির্বাচনেই খণ্ডিত হয়ে যায়। এবং মুজিবের পাকিস্তানকে খণ্ডিত করার যুদ্ধটি একাত্তরে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে পঞ্চাশের দশক থেকেই। ষাটের দশকে সেটি তীব্রতা পায় এবং একাত্তরে তা বিজয় পায়। তাই মুজিব যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে ১৯৭২’য়ের ১০ জানুয়ারীর সোহরাওয়ার্দী ময়দানের জনসভায় বলে, “স্বাধীনতার সংগ্রাম একাত্তরে নয়, ১৯৪৭ থেকেই শুরু করিছিলাম” -তখন সে মিথ্যা বলেনি। বরং সে যে ১৯৭০’য়ের প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা গুলিতে “পাকিস্তারন জিন্দাবাদ” স্লোগান দিত -সেটি মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ ছিল। অথচ মুজিবের এ বিভক্তির রাজনীতি ইসলামে হারাম এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ, জনগণের চেতনার অঙ্গণে বিভক্তির বিষ প্রয়োগ করা কোন সভ্য, ভদ্র ও হালাল নীতি হতে পারে না। মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের মাঝে একতা গড়াকে ফরজ করেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন। তাই মুজিব একজন ভয়ানক অপরাধী। তার যুদ্ধটি ছিল মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। এজন্যই এ পৃথিবী পৃষ্ঠে যারা শয়তানের পৌত্তলিক এজেন্ট তারা মুজিবের সাথ এতোটা একাত্ম ছিল। কারণ, শয়তানের এজেন্টগণ তাদের আপন লোকদের চিনতে ভূল করেনা।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর মুজিব বিভেদ গড়ে স্বাধীনতা পক্ষ ও বিপক্ষের ভিত্তিতে। এমন ক্ষমতালিপ্সু ক্ষুদ্র মনের মানুষদের কারণেই মুসলিম দেশগুলি ৫০টির বেশী টুকরোয় খন্ডিত হয়েছে এবং দুর্বল হয়েছে। শয়তান এবং তাবত ইসলাম বিরোধীশক্তিও তো সেটিই চায়। এজন্যই ইসলামের শত্রু শক্তির অধিকৃত দেশগুলিতে তাদের বন্ধুর অভাব হয় না। বাংলাদেশের বুকে আত্মবিনাশী সে বিভক্তির রাজনীতিকে বলবান করার কাজে ভারতীয়দের বিনিয়োগ এজন্যই বিশাল। সে রাজনীতিকে বিজয়ী করতে একাত্তরে তারা যুদ্ধও করেছে। তাদের সে নীতি আজও প্রয়োগ করে চলছে। ফলে শেখ হাসিনার পিছনে ভারতীয়দের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বিনিয়োগটি ছিল একাত্তরের ন্যায় বিশাল। দেহ খন্ডিত হলে যেমন অসম্ভব হয় নিজ পায়ে দাঁড়ানো, তেমনি এক শক্তিহীন পঙ্গুত্ব নেমে আসে খন্ডিত দেশেরও। ইসলামে তাই এটি হারাম।
ফলে ভারতের ন্যায় যারাই ইসলাম ও মুসলিমের ক্ষতিসাধনে উদগ্রীব তাদের সম্মিলিত স্ট্র্যাটেজী হলো, প্রতিটি মুসলিম দেশে বিভক্তি ও বিদ্রোহ সৃষ্টিকারীদের ময়দানে নামানো। সেটি যেমন পাকিস্তান আমলে দেখা গেছে, তেমনটি আজও দেখা যাচ্ছে। ভারত শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে খুশি নয়, মেরুদন্ড ভাঙ্গতে চায় বাংলাদেশেরও। সে লক্ষ্যে ভারতের বিপুল বিনিয়োগ বাংলাদেশে। সেটি যেমন ভারতসেবী গুন্ডা উৎপাদনে, তেমনি রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে সৈনিক গড়ে তোলায়। গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতসেবীদের ক্ষমতায় রাখা। ভোটে জিতবে না -সেটি নিশ্চিত হয়েই ভারত হাসিনার মধ্যরাতের ভোট-ডাকাতিকে সমর্থন দিয়েছিল। এবং সমর্থন দিয়েছে ভোট-ডাকাত হাসিনার সশস্ত্র দমন প্রক্রিয়াকে।
ভারতীয়দের একাত্তরের যুদ্ধটি একাত্তরে শেষ হয়নি। একাত্তরে তাদের যুদ্ধটি ছিল পাকিস্তানকে খন্ডিত করার। পাকিস্তানকে খন্ডিত করার প্রয়োজনটি দেখা দিয়েছিল উপমহাদেশে মুসলিম শক্তিকে দুর্বল করার প্রয়োজনে। একাজে তারা কলাবোরেটর রূপে বেছে নিয়েছিল ইসলামী চেতনাশূণ্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, বামপন্থী ও সেক্যুলারিস্টদের। তবে পাকিস্তান খন্ডিত হলেও দুর্বল হয়নি, বরং পরিণত হয়েছে পারমাণবিক শক্তিশালী দেশে। ফলে একাত্তরে যেরূপ রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেরূপ বিজয় এখন অসম্ভব। এর ফলে ভারতের সমস্যা বা ভয় কোনটাই কাটেনি। উপরুন্ত ভারতীয়দের মনে ভয় জেগেছে পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্ভব নিয়ে। ভারত-অনুগত দাস শাসনের অবসান হলে তেমন একটি বাংলাদেশের উদ্ভব যে সম্ভব -তা নিয়ে ভারতের শাসক চক্রের নিজেদের বিশ্বাসটিও প্রবল। তখন যুদ্ধ দেখা দিবে ভারতে পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি প্রদেশে। এ কারণেই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজী হলো বাংলাদেশের বুকে যারা ভারতের গোলামী নিয়ে বাঁচতে চায় -তাদেরকে সযত্নে রাজনীতিতে বাঁচিয়ে রাখা। এবং যারা মুসলিম পরিচিতির ধারক তাদের নির্মূল করা। তেমন একটি লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যেতেও রাজি।
একাত্তরের পর থেকেই বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতীয় যুদ্ধের আলামতগুলি প্রচুর। মুজিব ও হাসিনার আমলে সেটির প্রবল রূপ দেখা গেছে গুম-খুন, বৈচারিক হত্যা ও বিচারবহির্ভুত হত্যার মধ্য দিয়ে। সেরূপ হত্যার মধ্য দিয়ে ভারতবিরোধীদের নির্মূলের। বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বললে কেউ ক্ষিপ্ত হয় না। লাঠি হাতে কেউ ধেয়েও আসে না। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে লাঠি হাতে মারতে তাড়া করে ছাত্রলীগের গুন্ডাগণ। পিটিয়ে হত্যাও করে। সেটি দেখা গেছে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংস ভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। এখন মুজিব-হাসিনা প্রেক্ষাপটে নাই; কিন্ত ভারত ময়দানে আছে তার পুরনো এজেন্ডা নিয়ে। সেটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় সংকট।
মুজিব-হাসিনা আস্তাকুড়ে; অমর রবে ইসলামে সৈনিকেরা
মুজিব স্বাধীনতা চায়নি, গণতন্ত্রও চায়নি। স্বাধীনতা চাইলে কি সে ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি স্বাক্ষর করতো? গণতন্ত্রও চায়নি। গণতন্ত্র চাইলে কি দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতো? নিষিদ্ধ করতো কি সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা? মুজিবের ছিল একটি মাত্র এজেন্ডা। সেটি হলো যে কোন মূল্যে গদিতে বসা। সে লক্ষ্যে সে যেমন পাকিস্তান ভাঙ্গতে দু’পায়ে খাড়া ছিল, তেমনি প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করতেও। সে অভিন্ন এজেন্ডাটি নিয়ে রাজনীতি করেছিল হাসিনাও। আর এরূপ ক্ষমতালোভী দেশ বিক্রেতাদের দাস রূপে পেলে ভারত তাদেরকে দিয়ে ইচ্ছামত কাজ করিয়ে নিবে এবং নিরাপত্তা দিবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? তাই মুজিবকে দিয়ে যেমন ২৫ সালা দাসচুক্তি, পদ্মার পানি, বেরুবাড়ি ও অর্থনৈতিক বাজার আদায় করে নিয়েছে, তেমনি হাসিনার মাধ্যেমে নিয়েছে করিডোর, তিস্তা ও ফেনি নদীর পানি, সড়ক পথ, রেল পথ এবং বাংলাদেশের বন্দরে ভারতীয় জাহাজের প্রবেশাধীকার। এরূপ ক্ষমতালিপ্সুদের ক্ষমতায় যাওয়াতে এভাবে দেশের ভয়ানক স্বার্থহানি ঘটে।
ভারত ও ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের চেহারাটি একাত্তরেও সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু সেদিন অনেকের চোখই অন্ধ ছিল পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণার কারণে। আকাশে ঘন মেঘ জমলে সূর্যও আড়াল হয়ে যায়; তেমনি মনে বিদ্বেষ ও ঘৃণা জমলে সত্যকে দেখার সামর্থ্যও বিলুপ্ত হয়। একাত্তরে ভারত ও ভারতসেবীদের কুৎসিত চেহারাটি এজন্যই অনেকে দেখতে পায়নি। এখন তো বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান নাই। পাকিস্তানের প্রতি সে ঘৃণাও নাই। ফলে সবাই দেখতে পাচ্ছে ভারত ও ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের প্রকৃত চেহারাটি। তাই তাদের প্রতি ঘৃণাটি এখন শুধু আর একাত্তরের রাজাকারদের একার বিষয় নয়, সেটি পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষের অভিজ্ঞতা লব্ধ নিজস্ব উপলব্ধি।
ফলে ভারতসেবী বাকশালীদের মিথ্যাচার সরিয়ে একাত্তরের সত্য ঘটনাগুলি জানার এখনই উপযুক্ত সময়। কারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং কারা ভারতসেবী গাদ্দার -একাত্তরের ইতিহাসের মাঝে রয়েছে তার প্রামাণ্য দলিল। সে দলিলে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো, আগ্রাসী ভারতের হামলা থেকে স্বাধীনতা বাঁচানোর তাড়নাটি কখনোই সেসব ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট, বামপন্থী নাস্তিক ও ইসলামশূণ্য সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় ছিল না -যারা একাত্তরের ভারতে গিয়ে ভারতের প্রতিপালন পেয়েছে ও প্রচুর নিমক খেয়েছে। বরং সেটি হলো একাত্তরের সে রাজাকারদের চেতনা -যারা নিজেদের রক্ত দিয়ে ভারতীয় বাহিনী ও ভারতের অর্থে পালিত সেবাদাসদের আগ্রাসন রুখতে জিহাদে নেমেছিল। বহু হাজার রাজাকার সে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দেশকে বাঁচাতে শহীদ হয়েছিল। তারা সেদিন খাড়া হয়েছিল ভারতসেবী বাঙালি কাপালিক রূপে নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ববান stakeholder তথা অংশীদার রূপে। তারা সেদিন লড়াইয়ে নেমেছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাঁচানোর এজেন্ডা নিয়ে।
বিগত ৫৪ বছর ধরে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় ফ্যাসিস্ট, নৃশংস দুর্বৃত্ত এবং স্বাধীনতার শত্রুর প্রশংসায় অবিরাম গীত গাওয়া হয়েছে। এবং অবিরাম চরিত্রহনন হয়েছে রাজাকারদের। কিন্তু মুজিব ও হাসিনার দিন শেষ হয়েছে। দেশ জুড়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুজিবের শত শত মুর্তি। ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট, বামপন্থী নাস্তিক এবং সেক্যুলারিস্ট কাপালিকদের দিনও অচিরেই শেষ হবে। কিন্তু একাত্তরের রাজাকারগণ হাজার বছর পরও মুসলিম উম্মাহর দরবারে সম্মানিত হবে। সেটি তাদের প্যান-ইসলামী চেতনার জন্য। একাত্তরে জাতীয়তাবাদের প্রবল প্লাবনে ভেসে না গিয়ে তারা ইতিহাস গড়েছিল; এবং ইতিহাস গড়েছিল সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সে প্লাবনের সামনে প্রতিরোধে নেমে। ইসলামের মৃত্য নাই, তেমনি মৃত্যু নাই তাদেরও যারা ইসলামের পতাকাবাহী। জুলাই-আগস্টের বিপ্লব সে সত্যকেই আবার প্রমাণিত করলো। বাঙালি মুসলিমের এটিই অভূতপূর্ব নতুন অর্জন। ১০/১০/২০২৪
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018