বাম-অধিকৃত বিএনপি এবং বাংলাদেশের জন্য নতুন বিপদ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বিএনপির অভিযোগ, ১৯৭১’য়ে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার বিরোধী ছিল। এতকাল জামায়াতে ইসলামী নিয়ে যে বয়ান ছিল আওয়ামী লীগ, ঘাদানী ও বাম ধারার নাস্তিকদের, সে বয়ান নিয়ে এখন মাঠে নেমেছে বিএনপি। বিএনপি’র কাছে প্রশ্ন হলো, বিএনপি কেন শাহ শাহ আজীজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপ্রধান, মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং আব্দুল আলীমকে মন্ত্রী বানালো? তারাও তো একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন। ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে যে ব্যক্তিটি জনাব জুলফিকার আলী ভূ্ট্টোর সাথে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন তিনি হলেন শাহ আজিজুর রহমান। তাকেই বিএনপি দেশের প্রধানমন্ত্রী করেছিল। তাঁরা ছাড়াও বিএনপি’র বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন অনেক লোক ছিলেন যারা ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভাঙার বিরোধিতা করেছেন। বিএনপি আজ জবান দিক, জিয়াউর রহমান কেন তাদের বিএনপিতে স্থান দিলেন? তাছাড়া প্রশ্ন হলো, তথাকথিত এ স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে দেশের নিরাপত্তার কোন ক্ষতি হয়েছে কি? সংকটে পড়েছে কি দেশের স্বাধীনতা? বরং গণতন্ত্র কবরে গেছে, মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে এবং  দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণনাশ হয়েছে তো মুজিব ও তার অনুসারীদের হাতে ক্ষমতা যাওয়াতে।   

 আসলে জামায়াতে ইসলামী, শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, মশিউর রহমান যাদু মিয়া এবং আব্দুল আলিম -তাদের কেউই স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন না, তারা ছিলেন দেশপ্রেমিক এবং ছিলেন পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধী।‌ অখন্ড পাকিস্তানের মধ্যে তারা বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা দেখতেন। ‌বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমদের জন্য দেখতেন বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার অভূতপূর্ব সুযোগ। পাকিস্তান তার সংহতি বাঁচলে সেটি হতো ৪২ কোটি জনসংখ্যার পারমানবিক শক্তিধর দেশ। যেমন দেখেছিলেন হোসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিম উদ্দিন, মাওলানা আকরাম খাঁ, মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান, নুরুল আমিন, মহম্মদ আলী বোগরার মত ১৯৪৭’য়ের বাঙালি মুসলিম নেতারা। কিন্তু ইসলামী চেতনাশূণ্য বাঙালি কাপালিকদের সেটি ভাল লাগেনি। তাই তারা ভারতের কোলে গিয়ে উঠেছিল। এবং ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুসলিম নিধনে নেমেছে।

 পাকিস্তান ভাঙা এবং বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশকে পরাধীন করা ছিল ভারতের এজেন্ডা এবং শেখ মুজিব সে এজেন্ডা নিয়েই রাজনীতি করেছে এবং ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW’র সাথে মিলে আগরতলা ষড়যন্ত্র করেছে। তাই মুজিব ছিল ভারতের সেবাদাস এবং বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতার শত্রু। হিন্দুত্ববাদী‌ ভারতের ন্যায় মুজিবের যুদ্ধটিও ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ‌মুজিবের সে ভারতসেবী রাজনীতি অনুসরণ করেছে বাম ধারার নেতা কর্মীরাও। তারা আজ স্থান নিয়েছে বিএনপিতে। বিএনপি’র সেক্রেটারী মীর্জা ফখরুল এবং তার সাথের অনেকেই হলো বামধারার লোক। তাদের মাঝে কোন ইসলামপ্রেম ও মুসলিমপ্রেপ নাই। বিএনপির উপর তারাই এখন বিজয়ী। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে মুসলিম লীগ থেকে যারা বিএনপি যোগ দিয়েছিল তারা এখন বিএনপিতে নাই। বিএনপি’তে বাম ধারার লোকের দখলদারীর কারণে যখন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয় তখন তারা নীরব থেকেছে। নীরব থেকেছে ১৯৭৫’য়ের বিপ্লবের নেতাদের ফাঁসীর সময়ও। বিএনপি এখন ভারতের বি টিম রূপে ময়দানে নেমেছে।

 ভারত চায়, এখনই দেশে নির্বাচন হোক, প্রফেসর ইউনুস সরে যাক এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। বিএনপি’র ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভারত তখন ইসলামপন্থীদের নির্মূলে নামতে চায়। ইসলামপন্থীরা এখন ভারত ও বিএনপি উভয়েরই টার্গেট। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি এখন এতোটাই পাগল যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তারা হতে দিতে চায়। ছাত্রদল হেরে যাবে জেনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংসদেও নির্বাচন দিতে চায়। গণতন্ত্রের পথে তারা এখন বাধা। আওয়ামী লীগের মত তারাও বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দিতে চায়। এবং আবির্ভুত হতে চায় নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তি রূপে ।

 আজকের বিএনপি জেনারেল জিয়ার হাতে গড়া বিএনপি নয়। বরং আজকের বিএনপি হলো মীরজা ফখরুলের মত বাম ধারার নাস্তিকদের হাতে জিমি বিএনপি।  ফলে আওয়ামী লীগের মত তারা যেখানেই ইসলাম দেখতে পায় তারা তার বিরোধী। ফলে মুজিবের মূর্তি ভাঙ্গা দেখে মির্জা ফখরুলের হৃদয়ে কান্না শুরু হয়। ফ্যাসিস্ট ও দুর্বৃত্ত শেখ মুজিবকে এখনো তারা জাতির পিতার আসনে রাখতে চায়। তারা গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকেও জীবিত রাখতে চায়। তারা হাসিনাপ্রেমী শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রেসিডেন্ট রূপে দেখতে চায়। বিএনপি তাই বাংলাদেশীদের সামনে নতুন বিপদ নিয়ে হাজির হচ্ছে। তাই যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী, তাদেরকে অবশ্যই এই নতুন দানবের বিরুদ্ধে সতর্ক ও সক্রিয় থাকতে হবে?  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *