আযাবের গ্রাসে বাংলাদেশ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on February 27, 2019
- Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
মুসলমান হওয়ার শর্ত শুধু এ নয়, আল্লাহকে উপাস্য এবং মুহাম্মদ (সাঃ)কে তাঁর রাসূল রূপে মেনে নিবে। বরং এ বিশ্বাসও অবশ্যই থাকতে হবে যে আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিটি অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ আযাব ডেকে আনে। আর সে অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ একটি জনগোষ্ঠির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ও তাদের নেতাদের দ্বারা হলে তখন আযাব অনিবার্য হয়ে পড়ে সে জনগোষ্ঠির উপর। পবিত্র কোরআনে সে কথা একবার নয়, বহু বার বলা হয়েছে। তাছাড়া এ শিক্ষা ইতিহাস বিজ্ঞানেরও। বাংলাদেশের বিপর্যয় কেবল রাজনৈতিক নয়। নিছক সামরিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও নয়। বরং সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি ঘটছে মুসলমানদের মুসলমান রূপে বেড়ে উঠা নিয়ে। আর মুসলমান হওয়ার অর্থ শুধু নামায-রোযা পালন নয়, বরং আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচন্ড আফসোস ছিল বাঙ্গালীর মানুষ রূপে বেড়ে উঠার ব্যর্থতা নিয়ে। তিনি লিখেছেন, “হে বিধাতা, সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙ্গালী করে, মানুষ করনি।” রবীন্দ্রনাথ এ কথা বলেছেন প্রায় শত বছর আগে। বিগত শত বছরে মানুষ রূপে বেড়ে উঠার এ ব্যর্থতা না কমে বরং প্রকট ভাবে বেড়েছে।
বাড়তে বাড়তে দেশটি দূর্বৃত্তিতে বিশ্বে পাঁচবার শিরো্পা পেয়েছে। এ হলো বাংলাদেশীদের ব্যর্থতার দলীল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের নিজের ব্যর্থতা ও বিভ্রান্তি হলো, বাঙালীর মানুষ রূপে বেড়ে উঠার দায়ভার তিনি বিধাতার উপর চাপিয়েছেন। অথচ এ দায়ভার একান্তই মানুষের নিজের। মানুষ রূপে বেড়ে উঠার কাজে সহায়তা দিতে করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালা ব্যক্তিকে যেমন প্রয়োজনীয় বুদ্ধি-বিবেক দিয়েছেন তেমনি যুগে যুগে সত্যদ্বীনসহ নবী-রাসূলও পাঠিয়েছেন। মানুষের প্রধানতম দায়িত্ব হলো, সে সত্যদ্বীনের অনুসরণ করা। আল্লাহর প্রদর্শিত এ পথ বেয়ে মানুষ ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। মুসলমানগণ অতীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল এ পথেই। একমাত্র এ পথই হলো সিরাতুল মোস্তাকিম। অন্য পথগুলো হলো অবাধ্যতার তথা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের। মানুষ রূপে বেড়ে না উঠা নিছক ব্যর্থতা নয়, এটিই মানুষের সবচেয়ে বড় অপরাধ। আল্লাহর দরবারে এটি শাস্তিযোগ্যও। তাই এমন ব্যর্থতা শুধু শিরোপা আনে না, আনে আল্লাহর আযাবও। সেটি যেমন বিশ্বজোড়া অপমান রূপে আসে, তেমনি আসে ভয়ংকরি প্রলয়ের বেশেও। আর বাংলাদেশে সে আযাবের আগমন হচ্ছে দুই ভাবেই। প্রশ্ন হলো, মানুষ রূপে বেড়ে উঠার এ গভীর ব্যর্থতা নিয়ে কেউ কি মুসলমান রূপে বেড়ে উঠতে পারে? কারণ মুসলমান হওয়ার পর্ব তো শুরু হয় মানুষ রূপ বেড়ে উঠার পরই। ফলে বিপর্যয় ঘটছে শুধু আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তি নিয়ে নয়, বরং সে বিপর্যয় অনিবার্য করছে ভয়াবহ আযাবকেও। আল্লাহর বিরুদ্ধে যে অবিরাম অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ চলছে সেটি শুধু রাজনীতির অঙ্গণে নয়, বরং তা গ্রাস করছে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার-আদালত, সংস্কৃতিসহ প্রতিটি অঙ্গণ।
কোন বিমান বা বাসের যাত্রীদের জন্য বড় আযাব হলো চালক রূপে একজন দুর্বৃত্তকে পাওয়া। তেমনি একটি দেশের জন্য আযাব হলো সরকার প্রধান বা নেতা হিসাবে পাওয়া কোন দৃর্বৃত্ত ব্যক্তিকে। দুর্বৃত্ত ব্যক্তি যেমন চালকের সিটে বসে যাত্রীবাহী বাস বা বিমানকে হ্যাইজাক করে, ক্ষমতলোভী দুর্বৃত্ত নেতারা তেমনি হাইজ্যাক করে সমগ্র দেশ। আর বাংলাদেশে দুর্বৃত্তদের সবচেয়ে বড় জমায়েত ঘটেছে রাজনীতির অঙ্গেন। তাদের হাতে নির্বাচন ব্যবহৃত হচ্ছে দেশ ও দেশেবাসীর সুখ-শান্তি ও আশা-আকাঙ্খা হ্যাইজাক করার কাজে। আর একাজে সবচেয়ে সফলতা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি বার বার নির্বাচনি বিজয়ে সফলতা দেখালেও জনকল্যাণে কোন কালেই কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জিতে দলটি দেশকে দূর্নীতি, কালোবাজারি আর রাজনীতিতে খুনোখুনি উপহার দিয়েছিল। তখন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকারকে হত্যা করেছিল এমন কি সংসদের মাঝখানে। সংসদের মেঝেতে সে খুনটি কোন দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীর হাতে হয়নি, বরং ঘটেছিল নির্বাচিত সংসদ সংদস্যদের হাতে। সত্তরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এ প্রতিশ্রুতিতে জিতেছিল যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করবে এবং মজবুত করবে গণতন্ত্র চর্চা। অথচ নির্বাচনে জিতার পর পরই তারা ভারতের অস্ত্র কাধে নিয়ে দেশটিকে ধ্বংসের কাজে নেমে পড়ে। আর গণতন্ত্র চর্চা? এটিকে শেখ মুজিব আস্তাকুড়ে পাঠিয়েছিল। দেশটি ভাঙ্গার পর শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে ঢাকা ফেরার পর পরই সোহরোওর্দ্দী উদ্দানের জনসভায় বললেন, পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ১৯৪৭ থেকেই। জনগণের সাথে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কি হতে পারে? সিকিমের লেন্দুপ দর্জিও নির্বাচনে জনগণের ভোট নিয়েছিল জনগণের স্বাধীনতা, সুশাসন ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে। কিন্তু নির্বাচনি বিজয়ের পর সংসদের প্রথম বৈঠকেই সে সিকিমের ভারত ভূক্তির ঘোষণা দেয়। একইভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, নিরাপত্তাসহ মৌলিক নাগরিক-অধিকার হ্যাইজাক হয়েছে বার বার। অসম্ভব হয়েছে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা।
আওয়ামী লীগ শুধু দেশের সরকার, পার্লামেন্ট, প্রশাসন বা রাজনীতির ময়দান দখল নিয়ে খুশি নয়, তারা প্রবল ভাবে দখলে নিচ্ছে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানও। দখলদারি প্রতিষ্ঠা করছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ঈমানের ভূবনেও। ঈমানের সুস্থ্যতার আলামত নিছক নামায-রোযা–হজ্ব-যাকাত পালনে নয়, বরং ন্যায়কে ভালবাসা এবং অন্যায়-অসত্য ও দুর্বৃত্তকে ঘৃনা করার সামর্থ। এমন সামর্থের বলেই ব্যক্তি সত্যের সৈনিকে পরিণত হয়। সে তথন “নারায়ে তকবির” তথা আল্লাহু আকবর ধ্বণি শুধু জায়নামাজে দেয় না, দেয় রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহসহ জীবনের প্রতিক্ষেত্রে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আল্লাহু আকবরের চেতনা রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দল, দলীয় নেতা, ভাষা ও জাতীয় অহংকারের চেতনা। সে সাথে বিজয় পেয়েছে সেকুলারিজম। এটিই একাত্তরের চেতনা। এ চেতনার ফলে অসম্ভব হয়েছে ইসলামপন্থিদের বিজয়। বার বার বিজয়ী হচ্ছে চিহ্নিত দুর্বৃত্ত, খুনি, লম্পট, নাস্তিক ও স্বৈরাচারি। সমাজে গ্রহনযোগ্যতা এবং সে সাথে ব্যাপক ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পতিতাবৃত্তি, সূদ-ঘুষ, উলঙ্গতা ও কুফরি আইন। এমন একাত্তরের চেতনার বড় পাহারাদার হলো আওয়ামী লীগ। ধর্মবিরোধী এ চেতনাকে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও দেশবাসীর চেতনা-রাজ্যে স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এখন আর নিছক রাজনৈতিক দল নয়, আবির্ভুত হয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আদর্শিক আন্দোলন রূপে। এ চেতনার প্রতিপক্ষ রূপে চিহ্নিত করছে ইসলাম ও দেশের ইসলামপন্থিদেরকে। ইসলামকে বিজয়ী করার অঙ্গিকারকে তারা চিহ্নিত করছে মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্যবাদী চেতনা রূপে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে তারা ইসলামেরও অপব্যাখা শুরু করেছে। ইসলামের প্রতিষ্ঠা বা বিজয়ের প্রতি কোন অঙ্গিকার না থাকলে কি হবে, জোরেশোরে ব্যাখা দিচ্ছে কোনটি জিহাদ আর কোনটি জিহাদ নয়। এবং সেটি ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাফেরদের সাথে সুর মিলিয়ে। ফলে ইসলামের যে ব্যাখা প্রেসিডেন্ট বুশ বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দেয় সেটিই দেয় আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা।
বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই অধিকৃত ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। বিজয়ী এ শক্তিটি যে শুধু নানা দল-উপদলে বিভক্ত বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদী, সমাজবাদী, কমিউনিষ্ট, নাস্তিকদের সম্মিলিত কোয়ালিশন তা নয়, সে কোয়ালিশনে শামিল হয়েছে দেশের হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ধর্মমতের অনুসারীরাও। তারা বিজয় পেয়েছে নির্বাচনের মাধমে। তাদের বিজয়ে ইসলামের বিপক্ষ দেশী-শক্তিই যে শুধু খুশি হয়েছে তা নয়, প্রচন্ড খুশি হয়েছে বিদেশী শত্রুপক্ষও। প্রতিবেশী ভারত সরকার ও সেদেশের প্রচার মাধ্যম সে খুশি গোপন রাখেনি। সরকারি ভাবে ভারত যে কতটা খুশি হয়েছে সেটি বুঝা যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির বক্তব্য থেকে। প্রণব মুখার্জি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোন হুমকি আসলে ভারত সরকার নিশ্চুপ বসে থাকবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তারা সশস্ত্র হস্তক্ষেপে নামবে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের মানুষ অতি কঠিন বিপদে পড়েছিল। ক্ষুদার্ত মানুষ তখন প্রাণ বাঁচাতে আস্তাকুড়ে উচ্ছিষ্ট খুঁজেছে, খাবারের খোঁজে কুকুর বিড়ালের সাথে লড়াই করেছে, রাস্তায় বমিও খেয়েছে। লজ্জা ঢাকতে মহিলারা তখন মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। সে বীভৎসতার বিবরণ বাংলাদেশী ও সে সাথে বহু বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রচুর ছাপা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে বিপদের দিনে ভারত এগিয়ে আসেনি। কোন আর্থিক সাহায্যও পেশ করিনি। বরং দেশটির সীমান্ত ফুটো করে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত খয়রাতী মাল টেনে নিয়েছে নিজ দেশে। শেখ মুজিব তখন কয়েক কোটি ছাপার ঠিকাদারি দিয়েছিল ভারতীয় সরকারি ছাপাখানায়। কিন্তু ভারত নোট ছাপার সে কাজে আদৌ সততার পরিচয় দেয়নি। তখন কয়েকগুণ বেশী নোট ছেপে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেয়। ভারত এভাবে বাড়িয়েছে দুঃখ-যাতনা ও মৃত্যু। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাংলাদেশকে তখন ছুটতে হয়েছে নানা দেশের দ্বারে দ্বারে। ভিক্ষার ঝুলির সে খেতাব বিশ বছরের যুদ্ধেও দরিদ্র আফগানিস্তানের ভাগ্যে জোটেনি। জোটেনি ভিয়েতনামের ভাগ্যেও। একটি দেশকে ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত হতে যে শুধু যুদ্ধ লাগে না, বরং লাগে প্রতিবেশী দানব রাষ্ট্রের অবিরাম শোষণও। আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামের পাশে তেমন দানব ছিল না। ফলে যুদ্ধ তাদের রক্তক্ষয় বাড়ালেও তাতে তারা ইজ্জতহীন ভিখারি হয়নি। ভারত যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বন্ধু নয়, বরং রক্ষক একটি বিশেষ পক্ষের -সেটি শুধু মুজিবামলের বিষয় নয়। আজও সেটি অবিকল সত্য। শ্রী প্রণব মুখার্জির বক্তব্যে বস্তুতঃ সেটিই প্রকাশ ঘটেছে। তার সে বক্তব্যে এটিই আজ নতুন ভাবে প্রমাণিত হলো, বাংলাদেশে ভারতের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। এবং সে এজেন্ডার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের নিজস্ব লোকও আছে। আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যে তাদের নিজস্ব লোক -প্রণব মুখার্জি মূলতঃ সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
আওয়ামী সরকারের মূল আক্রোশ শুধু শিক্ষা, শিল্প, কৃষি বা সেনাবাহিনীর উপর নয়, বরং সেটি ইসলাম ও তার মৌল-বিশ্বাসের প্রতি। এটিকেই তারা তাদের রাজনীতির মূল শত্রু ভাবে। ইসলামের সে বিশ্বাসকে মৌলবাদ বলে সেটির নির্মূলে তারা কোঁমড় বেধেছে। সম্প্রতি তারা উদ্যোগ নিয়েছে, দেশের শাসনতন্ত্র থেকে “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি উচ্ছেদ করবে। এ উচ্ছেদ কাজে তারা দেশের সেকুলার আদালতকে হাতিয়ার রূপে বেছে নিচ্ছে। অতীতে দেশের সেকুলার আদালত থেকে এ রায় হাসিল করেছিল যে “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি দেশের শাসতনন্ত্র বিরোধী। বিএনপি সরকার ঢাকা হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। কিন্তু তাদের আমলে সে আপিলের কোন রায় বের হয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে হাইকোর্টের সে রায়টি এতটাই মনঃপুত যে সে রায়ের বিরুদ্ধে তারা আর আপিল করবে না। আর এতে ফল দাঁড়াবে, “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। এভাবেই বাতিল হবে ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস। সরকার এখন উদ্যোগ নিয়েছে দেশের সেকুলার আদালতের সাহায্যেই তারা সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করবে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”। বাংলাদেশের আদালতে ব্যভিচার কোন হারাম কর্ম নয় যদি সেটি দুইপক্ষের সম্মতিতে হয়। হারাম নয় সূদও। কিন্তু সে আদালতেই নিষিদ্ধ হলো “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস”। এমন আদালত থেকে মুসলমান আর কি আশা করতে পারে? অথচ আল্লাহর আইন মোতাবেক বিচার পরিচালনা করা ইসলামে অতি গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাতের হুকুম দেওয়া হয়নি। হুকুম এসেছে শরিয়ত-ভিত্তিক আদালতের প্রতিষ্ঠায়। ইসলামে এটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহর এ জমিনে কাফেরদের দখলদারীত্বের বিলুপ্তি ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো এ শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজ। একাজে যার উদ্যোগ নাই মহান আল্লাহতায়ালা তাকে কাফের, জালেম ও ফাসেক এ তিনটি বিশেষণে আখ্যায়ীত করেছেন। সুত্রঃ সুরা মায়েদার পর পর তিনটি আয়াত (৪৪,৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াত)। লক্ষ্যণীয় হলো, চোর-ডাকাত, ব্যাভিচারী, সূদখোর বা খুনীকেও কোরআনের কোথাও এভাবে কাফের, জালেম ও ফাসেক এ তিনটি বিশেষণে একত্রে আখ্যায়ীত করেনি। আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত এ বিশাল দায়িত্ব তাই শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সাধিত হয় না। শরিয়তের প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন একমাত্র শরিয়ত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সম্ভব। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে শয়তানের মূল শত্রুতাটিও মূলতঃ এখানে, নামায-রোযা-হজ-যাকাত নিয়ে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের তাবত কাফের দেশ নিজদেশে মুসলমানদের মসজিদ স্থাপনে বাধা দেয় না। বরং জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্যও করে। ব্রিটিশ সরকার এককালে ভারতে সরকারি খরচে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইফতারির দাওয়াত দেয়, ঈদের পূণঃর্মিলনীও করে। কিন্তু বিশ্বের কোথাও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার সামান্য প্রমাণ পেলে তারা সেখানে তৎক্ষনাৎ যুদ্ধ শুরু করে। আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার মূল কারণ তো এটিই। একই কারণে মার্কিনীদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে সোয়াতের ধর্মভীরু মানুষ। তাদের অপরাধ, তালেবানদের ন্যায় তারাও প্রতিষ্ঠা করেছিল আল্লাহর আইন। সে অপরাধে এখন মার্কিন মিজাইল নিক্ষিপ্ত হচ্ছে পাকিস্তানের অভ্যন্তুরে। দশ লাখেরও বেশী মানুষকে তারা ইতিমধ্যেই ঘরহীন উদ্বাস্তু করেছে। নিজেদের ঘোষিত এ যুদ্ধে অংশীদার করেছে পাকিস্তানের সেকুলার সরকার ও আর্মিকে।
সব গরুই যেমন একই ভাবে ঘাস খায়, তেমনি সবদেশের সেকুলারদের আচরণ একই রূপ। তুরস্কের আদালতে ব্যাভিচারী বা সূদখোর দন্ডিত হয়েছে সে প্রমাণ নেই। কিন্তু সেদেশের একজন শিশুও আদালত থেকে মাথায় রুমাল বাধার অনুমতি পায়নি। মহিলার উলঙ্গ হওয়া বা দেহ নিয়ে ব্যবসায় নামা নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু মাথায় রুমাল বাধা অপরাধ। অথচ মহিলাদের মাথা না-ঢাকা বা বেপর্দা হওয়া হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। এমন বিদ্রোহীর নামায-রোযা কি কবুল হয়? কবুল হয় কি কোন দোয়া? সম্ভব কি তার পক্ষে মুসলমান হওয়া? কারণ, মুসলমান হওয়ার অর্থই আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। আর এমন বিদ্রোহীরাই ইসলামী পরিভাষায় কাফের। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সে ধ্বনিই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সরকারের এ্যাটর্নি জেনারেল সম্প্রতি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” সংবিধানের কোন অংশই নয়। তার ভাষায় তাই সেটির সংবিধানে থাকার কোন অধিকারই নাই। যেখানে ইসলাম ও আল্লাহর নাম, তাদের কাছে সেটিই সাম্প্রদায়ীকতা। আল্লাহর উপর আস্থা তাদের কাছে যেমন সাম্প্রদায়িক কুসংস্কার, তেমনি প্রগতি-বিরোধীও। তাদের সাফ জবাব, এমন কুসংস্কার (?) ও প্রগতি-বিরোধী (?) বিশ্বাসকে তারা শাসনতন্ত্রে স্থান দিতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, তারা বাদ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় ধর্ম রূপে ইসলামকেও। কথা হলো, এমন কাজ কি কোন ঈমানদারের হতে পারে? মুসলমানের কাজ তো শুধু শাসনতন্ত্রে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম রূপে ঘোষণা দেওয়া নয়, বরং দায়িত্ব হল আল্লাহর বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর হুকুমের প্রতি আনুগত্য শুধু মসজিদে নয়, শাসতন্ত্রেও ধ্বণিত হতে হবে। মার্কিনীরা ডলারের নোটের উপর বড় বড় হরফে লিখে “WE TRUST IN GOD” অর্থ আমরা আল্লাহর উপর আস্থা রাখি। আল্লাহর নির্দেশকে তারা কতটুকু মানে এখানে সেটি বড় কথা নয়, আল্লাহর প্রতি এটি তাদের নুন্যতম ভদ্রতা বা শালীনতা। কিন্তু মহান আল্লাহর সাথে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সে শালীন আচরণটুকুও করতে রাজী নয়। আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের অশালীন ও অভদ্র আচরণের মাত্রা এতটাই তীব্র যে, আল্লাহর আইন তথা শরিয়তকে তারা বাংলাদেশের আদালত-গৃহে ঢুকতে রাজী নয়। এমন কি বরদাশত করতে রাজি নয় শাসনতন্ত্রে আল্লাহর নামকেও। আল্লাহর সাথে এর চেয়ে বড় অশালীন উদ্ধত আচরণ আর কি হতে পারে? আরও লক্ষণীয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামের সাথে এমন অশালীন আচরণের পরও তা নিয়ে রাজপথে কোন প্রতিবাদ নেই, কোন আন্দোলন নেই। এরপরও কি একটি দেশের জনগণ আল্লাহর নেয়ামত পেতে পারে? এটি তো আযাবপ্রাপ্তির পথ। কোরআনে বর্ণিত আদ-সামুদ গোত্র, বনি ঈসরাইল ও মাদাইনের অধিবাসীদের অবাধ্যতা বা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কি এর চেয়েও গুরুতর ছিল? তাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট কোরআন ছিল না যা বাংলাদেশীদের কাছে আছে। আর কোরআন থাকার কারণে দায়িত্বটাও বেশী। আর সে দায়িত্বটা পালিত হতে পারে, সে কোরআনী আইনের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সে কোরআনী বিধানের প্রয়োগটি কোথায়?
মুসলমান হওয়ার সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা হলো, সে হবে আল্লাহর অতি অনুগত খলিফা বা প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের প্রতিনিধির কাজ হলো রাষ্ট্রের আইনের সর্বত্র অনুসরণ ও প্রয়োগ। সে দায়িত্ব “আমিও মুসলমান” -শুধু এ কথা বলার মধ্য দিয়ে পালিত হয় না। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হওয়ার চেতনা মুসলিম মনে প্রচন্ড এক বিপ্লবী চেতনার জন্ম দেয়। সরকারের ডিসি, এসপি বা কমিশনার হওয়ার চেয়েও এ চেতনার শক্তি এবং দায়িত্ববোধ অনেক বেশী। কারণ সরকারের ডিসি, এসপি বা কমিশনার হওয়ায় কিছু বেতন বা বাড়ী-গাড়ী জুটে, কিন্তু সে দায়িত্ব-পালন যত ভালভাবেই হোক না কেন তাতে বেহেশত পাওয়ার প্রতিশ্রুতি মেলে না। আল্লাহর খলিফা হওয়ার এমন চেতনা নিয়ে ঈমানদার যখন জায়নামাযে দাঁড়াবে তখন সে আনুগত্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যখন সে রাজনীতিতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন তথা শরিয়তকে প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জানমাল বিলিয়ে দিবে। নবীজীর শতকরা ৬০ ভাগ সাহাবা সে কাজে শুধু অর্থ ও শ্রম-দানই করেননি, প্রাণও দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীগণের বিপুল ভাগ নিজেদের মুসলমান রূপে দাবী করলেও তাদের সে বিণিয়োগটি কই? দায়িত্ব-পালন দূরে থাক, তারা এখন কোমড় বেঁধেছে সে দায়িত্বপালনের চেতনাকে বিলুপ্ত করায়। খেলাফতের দায়িত্বপালনের চেতনাকে তারা বলছে মৌলবাদ। আর সে ইসলামি চেতনার বিলুপ্তি সাধনের চেতনাকে বলছে একাত্তরের চেতনা। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এমন অশালীন ও অবাধ্য আচরণ কি ব্যক্তি ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ ডেকে আনে? আল্লাহর বিরুদ্ধে মুজিবের অবাধ্য আচরণ সত্তরের দশকে বাংলাদেশের বুকে আযাব ডেকে এনেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ তখন না খেয়ে বা প্রলয়ংকরি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মরেছে। আদ-সামুদ গোত্র, মাদাইনের অধিবাসী, নমরুদ বা ফিরাউনের বাহিনীরও এত লোকক্ষয় হয়নি যতটা হয়েছে বাংলাদেশের বুকে ঘটে যাওয়া সেসব প্রলয়ংকরি আযাবে। প্রচন্ড তান্ডব নেমে এসেছিল মুজিবের পরিবারের উপরও। এমন ঘটনা গাছের ঝরা-পাতা পরার ন্যায় মামূলী ব্যাপার ছিলনা। অথচ ঝরে পরা পাতাটিও মাটিতে পড়ে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে। আল্লাহর অনুমিত ছাড়া কোন সামুদ্রীক ঝড়ের কি সামর্থ আছে মানুষ হত্যা দূরে থাক গাছের একটি মরা পাতা ফেলার? মানুষ তো বাঁচে মরে আল্লাহর অনুমতি নিয়েই। প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগ নেতাদের কি সে বিশ্বাস আছে? আল্লাহর নিয়ামতকে নিয়ামত আর আযাবকে আযাব বলার সামর্থ সবার থাকে না। সে সামর্থ আসে একমাত্র ঈমানের বলে। সেটিই হলো ইসলামি চেতনা। সেকুলার চেতনায় সে সামর্থ নির্মিত হয় না। এ অসামর্থতার কারণেই আল্লাহর আযাবকে তারা আযাব বলতে রাজী নয়। বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আযাবকে এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে আল্লাহর কুদরতকেই তারা আড়াল করতে চায়। আড়াল করতে চায় আল্লাহর সাথে কৃত কদর্য আচরণকেও। তাদের বিদ্রোহ যে আযাব ডেকে আনতে পারে সে ধারণাকেও এভাবে তারা জনগণের মন থেকে বিলুপ্ত করতে চায়। অথচ ঈমানদার হওয়ার জন্য চেতনার নুন্যতম এ সামর্থটুকু অতি প্রয়োজন। এটুকু না থাকলে কি তাকে মুসলমান বলা যায়? আর তেমন একটি বিশ্বাস থাকলে কোন ব্যক্তি কি “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস” এর ন্যায় কথাটি শাসনতন্ত্র থেকে বিলুপ্ত করতে পারে? শিরক শুধু দেব-দেবীকে উপসানায় ভাগীদার করা বা পুজা দেওয়া নয়। শিরক হলো আল্লাহর কুদরতের সাথে অন্যকে ভাগীদার করা। প্রলয়ংকরি ঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, খড়া, ভূমিকম্প -এসব সৃষ্টির ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহর। অথচ সেকুলার চেতনাধারিরা আল্লাহর সে ক্ষমতাকে ভূলিয়ে বা সে ক্ষমতাকে অস্বীকার করে সে স্থলে বসায় প্রকৃতিকে। এমন এক চেতনার কারণেই তারা আল্লাহর আযাবকে বলছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি কি কম শিরক? অথচ শিরক হলো মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে অমার্জনীয় গুনাহ। বিচার দিনে আল্লাহতায়ালা বান্দাহর সকল গুনাহ মাফ করলেও এগুনাহ মাফ করবেন না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল নতুন প্রতিশ্রুতিতে। কিন্তু কার্যতঃ তারা অনুসরণ করছে শেখ মুজিবের সেই পুরনো নীতিকেই। ফলে মুজিব আমলের ন্যায় আজও চলছে আল্লাহর আযাবকে অতি দ্রুত নীচে নামিয়ে আনার কাজে। সে লক্ষ্যেই আজ তীব্রতা পাচ্ছে আল্লাহর প্রকাশ্য অবাধ্যতা। ষড়যন্ত্র হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামের অনুসারিদের বিরুদ্ধে। ইসলামপন্থিদের নির্মূলে আঁতাত গড়া হচ্ছে ইসলাম-বিরোধী কাফেরদের সাথে। ফলে বিপর্যয় যে অনিবার্য তাতে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? তবে কথা হলো, এ অবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোন পথটি বেছে নিবে? আল্লাহর বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহের মুখে জনগণের নীরবতা কি আদৌ ঈমানদারী? আল্লাহর খলিফার দায়িত্ব কি এ বিদ্রোহের নীরব দর্শক হওয়া? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলে কোন রাজকর্মচারি কি সেটি নীরবে দেখে? সে নীরবতায় কি তার চাকরি থাকে? অথচ মুসলমানদের অপরাধ আজ এরচেয়েও গুরুতর। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত এ বিদ্রোহের মুখে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান যে নীরব বা নিরপেক্ষ থাকছে অবস্থা তা নয়, বরং ভোট দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে, মেধা ও শ্রম দিচ্ছে এমন কি প্রয়োজনে প্রাণও দিচ্ছে সে বিদ্রোহী শক্তিটির পক্ষে। ফলে আযাব শুধু সরকারকে নয়, জনগণকেও যে ঘিরে ধরবে তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? এমন আযাবে ঘর, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিদায় নেয় শান্তি, সুখ, নিরাপত্তা। মানুষ তখন লাশ হয় পথে ঘাটে। তখন নারীরা ধর্ষিতা হয় শুধু রাজপথে নয়, নিজঘরেও। নিরাপত্তার খোঁজে মানুষ তখন ঘর ছেড়ে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। অনেকে বাধ্য হয় দেশ ছাড়তেও। মুজিব আমলে তো সেটিই হয়েছিল। এমন এক নিরাপত্তাহীনতার কারণে শেখ মুজিবকে রক্ষিবাহিনী গড়তে হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কি তিনি নিরাপত্তা পেয়েছিলেন? পেয়েছিল কি তার পরিবার? তিনি সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট নিয়েছিলেন। কিন্তু দেশবাসীর জন্য উপহার দিয়েছিলেন দুর্ভিক্ষ, সীমাহীন দূর্নীতি, মৃত্যু আর ‘তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি’র খেতাব। খাদ্যের খোঁজে মানুষ তখন কুকুরের সাথে লড়াই করেছে। একই ভাবে আজ নিরাপত্তাহীনতা নেমে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে গরীবের জীর্নকুটির অবধি। নেতা-নেত্রীর প্রাণ বাঁচাতে তাই আজ কোটি কোটি টাকা খরচ করে বুলেট প্রুফ গাড়ী আমদানি করতে হয়। জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াতেও তাদের প্রচন্ড ভয়। নিজ গৃহে বা অফিসে তাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় শত শত পুলিশের প্রহরায়। এভাবে বন্দী জীবন নেমে এসেছে শুধু জেলের কয়েদীর জীবনেই নয়, সরকারি-বেসরকারি নেতা-নেত্রীদের জীবনেও। এভাবে নেতা-নেত্রীরা প্রাণে বাচলেও বাঁচছে না সাধারণ মানুষ। লাশ হচ্ছে ব্যবসায়ী, কৃষক ও সাধারণ ছাত্র। নিরাপত্তা পাচ্ছে না এমনকি সামরিক বাহিনীর পদস্থ্য অফিসারগণও। একসাথে ৫৭ জন অফিসার প্রাণ দিয়ে দেশবাসীকে সে নিরাপত্তাহীনতার কথা তারা জানিয়ে দিয়ে গেলেন। কথা হলো, এসব কি কম আযাব? তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা যেভাবে অবিরাম বেড়ে চলেছে তাতে আযাবের বর্তমান মাত্রাই বা আর কতকাল স্থির থাকবে? এ অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ কি অচিরে এক ভয়ানক আযাবকে অনিবার্য করবে না?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018