ডাকাতি ও গণহত্যায় বুদ্ধিজীবীদের উস্কানি এবং বাংলাদেশে অসভ্যতার নতুন মাত্রা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 1, 2019
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
গণহত্যা বাংলাদেশে
ফিরাউন, হিটলার, স্টালিন বা মুজির নিজে হাতে মানুষ খুন করেছেন -সে প্রমাণ নাই। অথচ মানব ইতিহাসে তারাই অতি জঘন্যতম গণগত্যার নায়ক। হুকুম পালনে অসংখ্য চাকর-বাকর থাকলে কি নিজ হাতে মানুষ খুনের প্রয়োজন পড়ে? বাংলাদেশের আইনেও আদালতে প্রমাণিত কোন খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার অধিকার কোন ম্যাজিস্টেটের থাকে না। জেলা জজেরও থাকে না। তাঁকেও দেশের হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু স্বৈরাচারি সরকারগণ মানবহত্যার সে অধিকার তাদের আজ্ঞাবহ অশিক্ষিত দাস-সৈনিকদের দেয়। মুজিব তাই সে অধিকার দিয়েছিলেন রক্ষিবাহিনীর সাধারণ সেপাইদেরকে। মুজিবের এ সেপাইগণ ৩০ হাজারের বেশী মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছিল। দেশে মশামাছি মারলে যেমন বিচার হয়না, তেমনি ৩০ হাজার মানুষ হত্যারও কোন বিচার হয়নি। ফলে হত্যাকারি সেপাইদের মধ্যে কারো গায়ে কোন আঁচড়ও লাগেনি। অথচ কোন সভ্যদেশে এমন হত্যাকান্ড হবে এবং হত্যাকান্ড শেষে তার নায়কগণ বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবে সেটি কি ভাবা যায়? কিন্তু বাংলাদেশে সেটিই রীতি।
একই রূপ নিষ্টুরতা বার বার ফিরে আসছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা তার পিতার গনহত্যার রীতি পদে পদে অনুসরণ করছেন। নির্বিচারে মানবহত্যার সে অধিকার তিনি দিয়েছেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবীর সাধারণ সেপাইদের। তাই পক্ষিশিকারের ন্যায় তারা মানব শিকার করছে। ২৮শে ফেব্রেয়ারির একদিনেই তারা ৬০ জনের বেশী নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে। পাকিস্তান আমলের পুরা ২৪ বছরে এর একতৃতীয়াংশ মানুষও কি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে? মন্দিরের সেবক পুরোহিতগণ ভক্তদের মাঝে নিজস্বার্থেই দেবদেবীর কেরামতি বাড়ায়। গরুছাগলও তাদের হাতে ভগবানে পরিণত হয়। এমন অজ্ঞতার প্রসারেই তাদের ভক্ত ও উপার্জন বাড়ে। তেমনি স্বৈরাচারি শাসকদের সেবকগণও ইতিহাসের অতি দুর্বৃত্ত শাসককেও মহামানব রূপে পেশ করে। তাই নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় গণহত্যার নায়কদেরকে তারা শুধু শাসক রূপে নয়, ভগবান রূপে পেশ করেছে। তেমনি এক দলীয় প্রয়োজনে মুজিবের অনুসারিরাও গণহত্যার নায়ক বাকশালী এ গণশত্রুকে বঙ্গবন্ধু রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে চায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পুলিশ গুলি চালিয়েছে আত্মরক্ষার্থে। অথচ প্রমাণ পেশ করা হয়নি যে, পুলিশের উপর কোথাও একটি গুলি চালানো হয়েছে। জনগণ বড় জোর পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়েছে। কিন্তু তা থেকে বাঁচার জন্য পুলিশের মাথায় হেলমেট ছিল, সাঁজায়ো গাড়ি ছিল, কাঁদানে গ্যাস ছিল, রবার বুলেট ছিল এবং সাথে লাঠিও ছিল। কিন্তু সেগুলি ব্যাবহার না করে সরাসরি বুলেট ছুড়ার অধিকার তাদের কে দিল? হত্যা-পাগল সেপাইরাই কেবল এমন একটি হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। এবং সেটি ঘটে সরকারের নির্দেশে। এমন একটা হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? এবং এর সাথে শেখ হাসিনা যে জড়িত তা নিয়েও কি সামান্য সন্দেহ থাকে? এমন হত্যাকে জায়েজ করতে প্রতিটি স্বৈরাচারি সরকারই বাহনা পেশ করে। নিহতদের বিরুদ্ধে আরোপিত করে মিথ্যা অপবাদ। এমন কি হযরত মূসা (আঃ)র ন্যায় আল্লাহর মহান রাসূলকে ফিরাউন রাজদ্রোহী, ষড়যন্ত্রকারি ও যাদুকর রূপে আখ্যায়ীত করেছে। সে মিথ্যাকে জনগণের মাঝে প্রচারের স্বার্থে মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনার হাতেও রয়েছে গৃহপালিত বিশাল মিডিয়া। এরা হত্যাপাগল পুলিশ, র্যাব, বিজিবীর খুনিদের সন্ত্রাসী না বলে সন্ত্রাসী বলছে রাস্তায় মিছিলে নামা নিরস্ত্র মুসল্লিদের। মসজিদে তালা ঝুলানোও এদের কাছে কোন অপরাধ নয়। গণহত্যার এরূপ নায়কদের হাতে যুগে যুগে হত্যা ও নির্যাতনের কলাকৌশলগুলি বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। তাতে উৎপাদিত হয়েছে হত্যা ও নির্যাতনের দানবীয় যন্ত্র। নির্মিত হয়েছে আবি গারিবের ন্যায় বিশাল বিশাল কারাগার। আবিস্কৃত হয়েছে গ্যাসচেম্বার ও পারমাণবিক বোমা।
মুজিব-হাসিনার তৃপ্তির ঢেকুর
হিটলার যেমন হাজার হাজার ইহুদীদের গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে ফুর্তি পেত, তেমনি ফুর্তি পেয়েছে শেখ মুজিব। খুনি মুজিব তো সিরাজ শিকদারকে হত্যা করার পর সংসদে ফুর্তিতে আস্ফালন তুলে বলেছেন, “কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? বাকশালী মুজিব একদলীয় শাসন চাপিয়ে বিরোধীদের রাজনৈতীক অধিকারই শুধু হনন করেননি, তাদের প্রাণও হরন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হত্যাপাগল কর্মিদের দিয়ে গড়েছিলেন নৃশংস রক্ষিবাহিনী। সে রক্ষিবাহিনী গ্রাম-গঞ্জ ও অলি-গলিতে গিয়ে রাজনৈতীক বিপক্ষদের খুঁজতো। নিছক ভিন্ন রাজনৈতীক বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে হত্যা করতো। মুজিব সে সময় বঙ্গভবনে বসে আনন্দে ঢেকুর গিলতেন। আর আজ একই ভাবে মাত্র কয়েক দিনে শতাধিক লাশ ফেলে আনন্দের ঢেকুর গিলছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। উল্লাস করছেন তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য আওয়ামী নেতাকর্মীরা। আদালতের পক্ষ থেকে যখন মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির হুকম শোনানো হয়,তখন আনন্দে তারা মিষ্টি বিনরণ করে।
সরকার যে জামায়াত শিবিরের নির্মূলে কতটা বেপরোয়া সেটি বোঝা যায় সরকারর মন্ত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন জামায়াত-শিবির নির্মূলের। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আবেদন জানিয়েছেন, গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার। পত্রিকায় প্রকাশ, ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা জনাব বেনজির আহম্মদ পুলিশের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, জামায়াত-শিবির দেখা মাত্রই গুলির। ফলে পক্ষি-শিকারের ন্যায় মানব শিকারে কোথা থেকে অনুপ্রেরণা পায় সেটি কি বুঝতে বাঁকি থাকে?
হত্যা যখন গণহত্যা
চুরি-ডাকাতির ন্যায় হত্যাও প্রতি সমাজে অহরহ ঘটে। প্রশ্ন হলো, সাধারণ হত্যাকান্ড থেকে গণহত্যার পার্থক্য কোথায়? পার্থক্যটি সহজেই অনুমেয়। সাধারণ খুনিরা ব্যক্তির ধর্ম, ভাষা, গায়ের রং বা রাজনীতি দেখে খুন করে না। কোন দল বা জনগোষ্ঠিকে নিমূলের জন্যও খুন করে না। এখানে হত্যাকান্ড ঘটে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু পাওয়া বা প্রতিশোধের স্বার্থে। সন্ত্রাসী বা ডাকাতদের হাতে সংঘটিত হত্যা তাই গণহত্যা নয়। কিন্তু যখন হত্যার লক্ষ্য হয় কোন বিশেষ একটি ধর্মীয় বিশ্বাস, বর্ণ, ভাষা ও রাজনীতির মানুষকে বেছে বেছে নির্মূল করা তখন সেটি নিতান্ত গণহত্যা। বনের হিংস্র পশুগণ শিকার ধরে নিছক বাঁচার তাগিদে। পেটের ক্ষুধা তৃপ্ত হলে পশু আর শিকার ধরে না। এমন শিকার ধরার মটিভটি নিছক বেঁচে থাকা, পশুকুলকে নির্মূল করা নয়। তাই হিংস্র পশুদের হামলায় কোন বনই পশুশূন্য হয় না। কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকদের হাতে প্রকাণ্ড গণহত্যা ঘটে। বিরান হয় ঘরবাড়ি ও জনপদ। কারণ তাদের লক্ষ্য,নিছক পেটের ক্ষুধা মেটানো নয়, বরং মনের সীমাহীন খায়েশ পূরণ। পেট পানাহারে পূর্ণ হয়, কিন্তু ক্ষুদার্ত মন নিছক পানাহারে তৃপ্ত হয় না। তাদের মন চায় বিপক্ষ দল বা গোষ্ঠির সমূলে নির্মূল। তাই হিটলার শুধু জার্মানীতে বসবাসকারি ইহুদী নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল নিয়ে খুশি ছিল না, তার লক্ষ্য ছিল প্রতিটি ইহুদীর মৃত্যূ। সে লক্ষ্যপূরণে হিটলার তাই বড় বড় গ্যাস চেম্বার নির্মাণ করেছিল।
মুজিব ৩০ হাজারের বেশী রাজনৈতীক কর্মীকে হত্যা করেছিল তাদের রাজনীতিকে নির্মূল করার লক্ষ্যে। তাই সেটি ছিল নিরেট গণহত্যা। আর হাসিনা তাঁর পিতার সে পদাংক অনুসরণ করে চলেছেন। হাসিনার লক্ষ্য, দেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূল। তাঁর নিজের ও দলের প্রকাশ্য স্লোগান রাজাকার নির্মূলের। মুজিবের হাতে ছিল বিশাল রক্ষিবাহিনী। আর হাসিনা পেয়েছে পুলিশ বাহিনী, র্যাব আর বিজিবী। সে সাথে আছে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারি ক্যাডার বাহিনী -যারা পুলিশের পাশে চাপাতি ও রিভলবার নিয়ে রাজনৈতিক শত্রু খোঁজে এবং তাদেরকে হত্যা করে। নির্যাতনে ও হত্যায় ছাত্রলীগের সে ক্যাডারগণ এতটাই বেপরোয়া যে কিছুদিন আগে বিশ্বজিত দাসের ন্যায় একজন নিরীহ ব্যক্তিকে দিনেদুপুরে পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা করেছে। শাহবাগে যারা সমবেত হয়েছে তাদেরও লক্ষ্য শুধু গোলাম আযম, নিজামী, মোজাহিদ বা সাঈদীর ফাঁসি নয়, তারা চায় প্রতিটি রাজাকারের ফাঁসি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের নামে হাসিনা সরকার যে আদালত বসিয়েছে তা থেকে শাহবাগের সমবেত সন্ত্রাসীরা ফাঁসির হুকুম বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছু চায় না। ফাঁসির চেয়ে কম কোন শাস্তিতে তারা রাজি নয়। বিশ্বের বহু দেশে যাবজ্জীবন কারাদন্ডই সর্বোচ্চ শাস্তি। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদেরে বিরুদ্ধে আদালত তো সে শাস্তিই শুনিয়েছিল। কিন্তু তারা সে শাস্তিতে খুশি নয়। যেহেতু চায় বিরোধীদের নির্মূল, ফলে চায় ফাঁসি। কারণ নির্মূল তো ফাঁসি বা মৃত্যুদন্ড ছাড়া ঘটেনা।
ডাকাতি ও গণহত্যায় বুদ্ধিজীবী
একটি দেশ কখনোই কিছু চোরডাকাত, দুর্বৃত্ত অফিসার,সন্ত্রাসী খুনি বা পতিতার পাপে ধ্বংস হয় না। ধ্বংস হয় দুর্বৃত্ত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতীক নেতাদের পাপে। কারণ তারাই দেশের ড্রাইভিং সিটে। নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় এরাই আল্লাহর আযাবকে জমিনের উপর নামিয়ে আনে। বাংলাদেশও আজ এরূপ দুর্বৃত্ত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতীক নেতাদের হাতে অধিকৃত। বাংলাদেশে বহু মানুষ গুম ও খুন হচ্ছে। যেমন পুলিশ ও র্যাবের হাতে,তেমনি রাজনৈতীক ক্যাডারদের হাতে। এরূপ প্রতিটি খুনের আসল নায়ক পুলিশ বা র্যাব যেমন নয়, তেমনি রাজনৈতীক ক্যাডারগণও নয়,বরং মুল কলকাঠিটি নাড়ায় দলের নেতা। এবং সে নেতার সাথে কাজ করে এক পাল রক্তপিপাসু বুদ্ধিজীবী। বস্তুত জাতীয় পর্যায়ে সব সময়ই এমন একটি গণহত্যার পঠভূমিকা নির্মান করে বুদ্ধিজীবগণ। বিপক্ষীয় দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা, তাদের ঘরবাড়ি, দোকান-পাটে ডাকাতি করাকে তারা তাদের লেখনি ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রশংসনীয় ও বিরত্বপূর্ণ কর্ম রূপে চিত্রিত করে।
এরূপ বুদ্ধিজীবীগণও যে কতটা বিবেকহীন ও নৃশংস হতে পারে তার নজির দেখা গেছে একাত্তরে। সে হিংস্রতার নৃশংস প্রকাশ ঘটেছিল বিহারীদের বিরুদ্ধে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে স্লোগন উঠেছিল “একটা একটা মাড়ু (অবাঙালী) ধরো, সকালবিকাল নাস্তা করো”। তখন নেশা চেপেছিল খুনের। তাদের সে উস্কানির ফলেই বাঙালীরা সেদিন হাজার হাজার বিহারদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, তাদের দোকানপাট, ঘরবাড়ি দখল করেছে এবং শত শত বিহারী নারীদের ধর্ষণও করেছে। সে বীভৎস নৃশংসতার কিছু বিররণ পশ্চিমা বিশ্বের সাংবাদিক ও পশ্চিমবাংলার শর্মিলা বোসের লিখনীতে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের লেখনিতে নেই। তাদের লেখনিতে তা নিয়ে এক লাইন বর্ণনাও আসেনি। এবং সে নৃশংসতার বিরুদ্ধে তাদের থেকে সামান্যতম নিন্দাবাদও উঠেনি। এই হলো বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র ও বিবেকের মান। তাদের একই রূপ চরিত্র আজ ফুটে উঠেছে শাহবাগের মঞ্চে। এখান তারা নাস্তা করতে চায় জামায়াত শিবিরের কর্মীদের রক্তমাংস দিয়ে। তারা ধ্বনি তুলছে “একটা একটা শিবির ধরো, সকাল বিকাল নাস্তা করো”।
লক্ষ্য দেশধ্বংস
আওয়ামী লীগের এজেন্ডা দেশগড়া নয়, বরং দেশধ্বংস। বাংলাদেশে শিল্পকারখানা পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল মুজিব আমলে। এবং সেটি ছিল ভারতের হাতে বাংলাদেশের বাজার তুলে দেয়ার লক্ষ্যে। কারণ ভারতকে এছাড়া খুশি করার কোন সহজ পথ ছিল। ফলে মুজিব আমলে ভারতীয় পণ্যের সয়লাব এসেছিল। সেজন্য আদমজীর ন্যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকলকে ধ্বংস করাও ভারতীয় চরগণ অপরিহার্য মনে করে। ধ্বংস করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। তখন একের পর এক আগুন দেয়া হয়েছিল পাটের গুদামে। ভারতীয় পণ্যের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল দেশের সীমান্ত। এভাবেই একাত্তরে ভারতের সামরিক অধিকৃতি প্রতিষ্ঠা লাভের পর প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল অর্থনৈতিক অধিকৃতি। শেখ হাসিনাও ময়দানে নেমেছে সে অভিন্ন স্ট্রাটেজী নিয়ে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক। এ ব্যাংকের অর্থায়নে দেশে ৪ হাজারের বেশী শিল্প-কলকারখানা প্রতিষ্টিত হয়েছে। তাই ভারতীয় স্বার্থের সেবকগণ চায়, ইসলামী ব্যাংকের ন্যায় সফল প্রতিষ্ঠানটির আশু ধ্বংস। ইতিমধ্যেই তারা সরকারি ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি কাটা ডাকাতি করেছে। এখন ডাকাতি করতে চায় ইসলামি ব্যাংকের কোষাগারে। ডাকাতি করতে চায় ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস এর ন্যায় ইসলামপন্থিদের প্রতিষ্ঠানগুলি। এমন খুন ও ডাকাত কর্মে উৎসাহ দিচ্ছে দেশের আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীগণ।
দেশধ্বংসী এসব বুদ্ধিজীবীদের মন যে কতটা সন্ত্রাসপূর্ণ, এবং বিপক্ষীয়দের সম্পদ লুন্ঠন ও তাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় তারা যে কতটা পুলক বোধ করেন তারই চিত্র বেরিয়ে এসেছে শাহবাগের সমাবেশে তাদের দেয়া বক্তৃতায়। এরা পেশাদার খুনি নয়, চোরডাকাতও নয়। কিন্তু তাদের ভূমিকাটি পেশাদার চোরডাকাত ও খুনিদের চেয়েও ভয়ংকর। খুনি ও চোরডাকাতগণ জনসভায় দাঁড়িয়ে মানুষকে হত্যা ও চুরিডাকাতিতে উৎসাহ দেয় না। তারা সে কুকর্মকে নিজেদের মধ্যেই সীমিত রাখে এবং গোপনে করে। কিন্তু আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা সে কুকর্মকে জাতীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করতে চায়। শাহবাগে প্রদত্ত বক্তৃতায় তারা যেমন খুনে উৎসাহ দিয়েছেন, তেমনি উৎসাহ দিয়েছেন জামায়াতের গড়া প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পদের উপর ডাকাতিতে।সে উৎসাহতে বহু স্থানে ইসলামী ব্যাংকের উপর হামলা হয়েছে। ইসলামপন্থিদের প্রতিষ্ঠিত বহু হাসপাতালেও বিপুল ভাংচুর হয়েছে।
রক্তপীপাসু বুদ্ধিজীবী
আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের মূল আগ্রহটিও দেশগড়া নয়,বরং দেশধ্বংস। সে লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নামধারি এসব আওয়ামী দুর্বৃত্তগণ যে কতটা উগ্র সে চিত্রটি ফুটে উঠেছে দৈনিক সংগ্রামে ৭/৩/১৩ তারিখে ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের“শাহবাগের বুদ্ধিজীবীরা” শিরোনামে রচিত একটি নিবন্ধে। সে নিবন্ধ থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া যাকঃ “সমাবেশে আওয়ামীপন্থী লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. আনোয়ার হোসেন সবচেয়ে বেশি উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। “জয় বাংলা” বলে বক্তব্য শুরু করে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,“শিবিরকে প্রতিহত করতে আমাদের রাস্তায় লাঠিসোটা নিয়ে নামতে হবে।তোমরা আজ জেগে উঠেছো, বিজয় হবেই হবে।” জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের সমাজ,রাষ্ট্র ও সংবাদ মাধ্যমের সব ক্ষেত্র থেকে বর্জনের মাধ্যমে নতুন আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.আনোয়ার হোসেন তো হামলার লক্ষ্যকে শুধু জামায়াতের নির্মূলে সীমিত না রেখে বিএনপির নির্মূলেও উস্কানি দিয়েছেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,‘জামায়াতের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা ইন্ধন জুগিয়েছে,তাদেরও বিচারের সময় এসে গেছে।জামায়াত-শিবিরকে ক্ষমা করার আর সময় নেই।জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত সব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে হবে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।” ডা.প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন,‘এদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবির ক্যানসার।একে প্রতিহত করতে না পারলে কেউ নিরাপদে থাকবে না। তাই এদের প্রতিহত করতে হবে। বাংলার মাটি থেকে জামায়াত-শিবিরকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে।’ আর উৎখাত তো শুধু নির্যাতন ও তাদের সম্পদ ডাকাতিতে হয় না। এজন্য তাদের হত্যা করা চাই। তাই সে হত্যাকর্মটি যেমন জাফর ইকবাল ও আনোয়ার হোসেন চান, তেমনি চান ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত। প্রশ্ন হলো,হত্যাপাগল নাযী বাহিনীর খুনিদের মুখে ইহুদীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত আক্রোশ কি এর চেয়ে ভিন্নতর ছিল?
যে কোন সভ্যদেশে গণহত্যায় এমন উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেয়া নিতান্তই ফৌজদারি অপরাধ। সে অপরাধে নিশ্চয়ই তাদের শাস্তি হতো। কিন্তু ডাকাত পাড়ায় ডাকাতি ও খুনের উস্কানি দেয়া কোন অপরাধ নয়। বরং সেটি প্রশংসীন কাজ। নইলে ডাকাতপাড়ায় নতুন ডাকাত গড়ে উঠবে কীরূপে? ফলে বাংলাদেশে সে অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়না, শাস্তিও হয় না। সরকার দেশকে একটি ডাকাত-অধিকৃত জনপদে পরিণত করেছে। তাই এসব অপরাধী বুদ্ধিজীবীদের কোন শাস্তি হয়নি। বরং তারা স্ব স্ব পদে অধিষ্ঠিত আছেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগ-বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে গণ-শপথ পাঠ করানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, সমাবেশ থেকে যে কোনো একদিন গিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আমার দেশ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ও বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খানসহ আরও অনেকের বক্তৃতাতেও ছিল ফ্যাসিবাদ ও বাকশালের পদধ্বনি। সমাবেশে উচ্চারিত গানের মধ্যে ছিল, ‘একটা একটা শিবির ধর, সকাল বিকাল জবাই কর’, ‘জামায়াতের আস্তানা গুড়িয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জামায়াতের আস্তানা দখল কর, দখল কর’, ‘সাম্প্রদায়িকতার আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, শিবির ধরে জবাই করো’, ‘শিবির ধরো ধরো, সকাল বিকাল জবাই কর। অধিকাংশ গানের মূল কথা ছিল জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সম্পত্তি দখল করা এবং দলটির নেতা-কর্মীদের হত্যা বা জবাই করা।”
নাজী” অধিকৃত বাংলাদেশ
ড.ইনায়েত রহিত নামের একজন প্রবাসী বাংলাদেশী বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রটি তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন,“ Bangladesh is going the way that Germany did in 1929-30-31-32-33. Please read the history of the Nazi party. I can see the exact reflection in Bangladesh. I can see Adolf Hitler, Joseph Goebbels, Herr Ribbentrop, Hermann Goering…….match them to the players in Dhaka…..you will find exact duplicates. They first chased the top Jewish hierarchy, who they blamed for defeat of World War I, and then expanded it to include every Jew…man, woman, child for their misfortune. First they looted their property, banned their clubs; then they went after their blood. Finally it was every Jew…man, woman and child who were to be rounded up and butchered. Blame was spread to include the children, and even unborn children, so Hitler decided on the “final solution”, so future generations would not be born. When I hear the shrill slogans from Dhaka to kill the children of “Razakars”, even their grandchildren, and even future generations to come, I shiver…..I get the cold feeling in my spinal cord, I cry….is this what is coming ? Are the followers of Prophet Muhammad going to face the same cruelty that the followers of Prophet Moses faced less than a hundred years ago. Are these new Aryans ( the superior Bakshal race) as ruthless as their compatriots ( Nazis) of a couple of generations ago ?
প্রখ্যাত ব্যারিষ্টার Toby M. Cadman গত ৫মার্চ ২০১৩ তারিখে তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতার উপর একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সে নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি আর্ন্তজাতিক মানবতাবিরোধীতা ট্রাইবুনাল (আইসিটি)সর্ম্পকে তিনি লিখেছেন, “All those accused of war crimes must be convicted and duly executed. Nothing less will suffice. One must ask what therefore is the point in a trial where the only acceptable result is execution. One is reminded of the words of Justice Jackson, Chief Prosecutor of the International Military Tribunal, Nuremberg who stated: “If you are determined to execute a man in any case there is no occasion for a trial. The world yields no respect to courts that are merely organized to convict.
To this point, the Prime Minister, Sheikh Hasina Wajed, has been reported as saying in Parliament that she would talk to the judges to convince them to take the sentiments of the protesters into account in formulating their decisions. It is notable that one of the first judgments issued by the Tribunal referred to the ‘will of the people’ in reaching its decision clearly demonstrating the emotive manner in which these trials are now being conducted.
On 28 February 2013, the third accused, Maulana Delwar Hossain Sayedee, was convicted and sentenced to death following a trial that was characterized by prosecutorial and judicial misconduct, witness perjury, witness abduction and a flagrant denial of basic human rights standards. The call for death echoed by the Shahbagh demonstrators has seemingly dictated the course of events unfolding in the Tribunal in an atmosphere where defence witnesses are now too afraid to appear and where the judges have now been swayed by mob, anti-Jamaat sentiment.” The big question is what would have been the response of the Shahbagh demonstrators had Sayedee not received the death sentence. It is clear that the Tribunal Judges were under such pressure to respond to the public calls for blood that, had they not responded as such, it is not inconceivable that it could have been their own blood spilt on Shahbagh.”
শাহবাগের পজিটিভ দিক
নর্দমার মশামাছি ও কীটগুলো কখনোই তাদের উপস্থিতি গোপন রাখতে পারে না। তাদের সামনে দুর্গন্ধময় আবর্জনা ফেললেই তারা স্বমুর্তিতে হাজির হয়। শাহবাগের মোড়ে ইসলামের শত্রু নাস্তিক-মুরতাদদের সমাবেশ শুরু হলে এসব আওয়ামী বুদ্ধিজীবীগণও নিজ ঘরে নীরবে বসে থাকতে পারেনি। তারা নিজ নিজ চরিত্র নিয়ে শাহবাগে হাজির হয়েছে। আল্লাহপাক তো এভাবেই সমাজের ভয়ানক দুর্বৃত্তদের সমাজে পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বিদ্যাশিক্ষার গুরত্বপূর্ণ অঙ্গণেও ইসলামের কতবড় ভয়ংকর শত্রুগুলো বসে আসে সেটিও আল্লাহতায়ালা দুচোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। শাহবাগের আন্দোলনের এটিই পজিটিভ দিক। ইসলামের রক্তপিপাসু খুনিদের তাই আর হ্যারিকেন লাগিয়ে নগরে বন্দরে খোঁজাখোঁজির প্রয়োজন নেই। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রকৃত পরিচয়টি স্বশরীরে জনসম্মুখে তুলে ধরেছে। পানি এতই ঘোলা করা হয়েছে যে বড় বড় মাছ গুলো এখন ভেসে উঠেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবেন তাদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে রোগ আর এখন লুকানো বিষয় নয়। রোগের জীবানূগুলো এখন রাজ পথে জোয়ার সৃষ্টি করেছে। কারা দেশের শত্রু আর কারা মিত্র সেটি এখন সুস্পষ্ট। এখন প্রয়োজন,রোগমুক্তির লক্ষ্যে এদের থেকে নিষ্কৃতির লড়াই।
চোরডাকাত ও খুনির সংস্কৃতি শাহবাগে
ডাকাতি করা, লুটতরাজ করা এবং মানুষ খুন করা যে কোন সমাজেই অতি গুরুতর অপরাধ। কোন সভ্য সাধারণ মানুষ এমন অপরাধ কর্মে নামে না। এটিই সভ্য সমাজের অতি ন্যূনতম মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি। এমন সভ্য সংস্কৃতির নির্মাণে বছরের পর বছর ধর্মপালন ও জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন হয়। তাই ধর্মহীন ও জ্ঞানচর্চাহীন বনেজঙ্গলে তাই সভ্যতর মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি গড়ে উঠে না। পাপুয়া নিউগিনি, আন্দামান বা নিকোবরের বন্য মানুষগুলো তাই জীবন যাপনে পশুকুল থেকে সামান্যই ভিন্ন। কারণ তাদের মাঝে ধর্ম বা জ্ঞানচর্চার প্রবেশ ঘটেনি। ডাকাত-পাড়াতেও সে সংস্কৃতি থাকে না। সেখানে বরং ডাকাতি, খুন ও ধর্ষণও নিন্দনীয় না হয়ে বরং তেমন বর্বর কাজে লাগাতর উৎসাহ দেয়া হয়। ডাকাতপাড়ায় এ রোগটির মূল কারণঃ ধর্মীয় শিক্ষা ও উন্নত নৈতীক জ্ঞান না থাকা। অথচ ডাকাতপাড়ার সে সংস্কৃতি নেমে এসেছে ঢাকার শাহবাগের সমাবেশে। সে সমাবেশ থেকে তাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জবাই করায় উৎসাহ দেয়া হচেছ। স্লোগান উঠেছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলির উপর ডাকাতির। স্লোগান দেয়া হচ্ছে সকল ইসলামপন্থিদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। অথচ সে স্লোগান গুলো ডাকাতপাড়ার ডাকাত বা পতিতাপল্লির পতিতাও দিচ্ছে না। বরং দিচ্ছে সেখানে জমা হওয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রশিক্ষক। দেশের বুদ্ধিজীবীগণ। বিদ্যাশিক্ষার নামের দেশে কি পরিমাণ ঘৃনা, অশিক্ষা ও কুশিক্ষা ছড়ানো হয়েছে শাহবাগের আন্দোলন হলো তারই উদাহরণ। উনানে বসিয়ে একটু তাপ দিলে পানির আবর্জনা যেমন ফেনা রূপে ভেসে উঠে, তেমনি শাহবাগীদের আন্দোলনে ভেসে উঠছে সমাজের আবর্জনা।
গভীরতর নৈতীক পচন
বাংলাদেশে নৈতীক পচনটি যে কতটা গভীরে ছড়িয়ে পড়েছে তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। কোন সভ্যসমাজে কি কখনো এ স্লোগান উঠে যে, বিচারে রায় হতে হবে একমাত্র মৃত্যুদন্ড? অথচ বাংলাদেশে শুধু সে দাবীই উঠছে না, বরং হুমকি দেয়া হচ্ছে অন্য কোন রায় ঘোষিত হলে তা মানা হবে না। বলা হচ্ছে, ফাঁসির হুকুম না হলে রাজপথের আন্দোলন থামানো হবে না। এমন দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনকারিগণ একা নয়, তাদের সে দাবীর প্রতি সমর্থন জানাতে শাহবাগে ছুটে গেছেন ড.কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল হক ও আসিফ নজরুলের মত ব্যক্তিবর্গ। ছুটে গেছেন বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। বাংলাদেশের পচন যে গত গভীর সেটি কি বুঝতে এরপরও বাঁকি থাকে? বাংলাদেশ অধিকৃত শুধু এক স্বৈরাচারি শাসকগোষ্ঠির হাতেই নয়, নিদারুন জিম্মি হয়ে পড়েছে নৈতিকতাহীন একপাল বু্দ্ধিজীবীদের হাতেও। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শাহবাগীদের বিদ্রোহ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাদের ফাঁসির দাবি এবং সে দাবির প্রতি এসব বুদ্ধিজীবীদের একাত্মতার এরূপ খবর যতই বিশ্বব্যাপী প্রচার পাচ্ছে ততই ধিক্কার উঠছে বাঙালীর নৈতীক পচন নিয়ে। এখন বিশ্ববাসী বুঝতে পারছে, একমাত্র এমন এক গভীর পচন নিয়েই একটি জাতি বিশ্বের ২০০টির বেশী দেশকে হারিয়ে দুর্বৃত্ত কর্মে পর পর ৫বার প্রথম হতে পারে। নৈতীক পচনটি শুধু দেশের চোর-ডাকাত, পতিতা, ঘুষখোর অফিসার, ডেস্টিনী-হলমার্কের ন্যায় কোম্পানীর কর্মকর্তাদেরকেই আক্রান্ত করেনি, চরম ভাবে আক্রান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, আদালতের বিচারক, আইনবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদেরও। শাহবাগীদের আন্দোলনের ফলে এদের ভদ্র লেবাস দেহ থেকে খুলে পড়েছে। বিশ্ববাসীর সামনে তারা আজ উলঙ্গ।
বাড়ছে বিশ্বব্যাপী অপমান
বিচারের রায় শুধু মৃত্যুদন্ড হলে আদালত বসানো দরকার কি? সে সমাজে তো দরকার শুধু এক পাল হত্যাপাগল জল্লাদের। সে জল্লাদদেরই বিপুল সমাবেশ হয়েছে শাহবাগে। সে প্রশ্নটি রেখেছেন বিলেতে প্রখ্যাত ব্যারিস্টার টবি ক্যাডমান। একই কারণে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্বের প্রতিটি বিবেকমান ব্যক্তি। ট্রাইবুনাল বাতিলের বিরুদ্ধে শত শত মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে লন্ডন, কায়রো, ইস্তাম্বুল, কলকাতা, কূয়ালামপুর ও টোকিওসহ বিশ্বের বহু নগরীতে। উদ্বেগ বেড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারে। পৃথিবীপৃষ্ঠে বিচারের নামে এতবড় হত্যাকান্ড আধুনিক কালে হলে তাতে শুধু বাঙালীদেরও অপমান বাড়বে না, অপমান বাড়বে সমগ্র মানব জাতির,বিশেষ করে মুসলমানদের। বাঙালী মুসলমানগণ ইতিমধ্যেই মুসলিম ইতিহাসে বহু অপকর্মে রেকর্ড গড়েছে। সেটি যেমন একাত্তরে মুসলিম ভূমিতে বিশাল কাফের বাহিনী আহবান করে,তেমনি মুজিবামলে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি এবং নব্বইয়ের দশকে হাসিনার প্রথমবার ক্ষমতায় আসায় দুর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার মধ্য দিয়ে।এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেক কলংক যোগ হতে যাচ্ছে। সেটি বিচারের নামে প্রতিটি রাজাকারের ফাঁসির হুকুমের নামে আরেক গণহত্যার।ফাঁসির রায় আদায়ে আদালতের উপর প্রচন্ড চাপসৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজপথে নামানো হয়েছে দলীয় ক্যাডারদের।বিচারকদের তারা জল্লাদ রূপে ব্যবহার করতে চায়। ক্যাডারদের দাবী,আদালতে ফাঁসির হুকুম না হলে তারা মাঠ ছাড়ছে না। সরকার তাদের শুধু উৎসাহ ও নিরাপত্তাই দিচ্ছে না,লাগাতর অর্থ ও খাদ্যপানীও জোগাচ্ছে। অথচ এরূপ পাইকারি ফাঁসির হুকুম নুরেমবার্গের আদালতে নাজীদের যেমন হয়নি,হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে কোন যুদ্ধাপরাধীরও হয়নি। অথচ বাংলাদেশে এমন দাবি উঠছে ১৬ কোটি দেশবাসীর নামে।এমন দাবিতে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের কদর্যতা ও অপমান ছাড়া আর কি অর্জিত হতে পারে? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এরচেয়ে বড় অপরাধই বা কি হতে পারে? বাংলাদেশের জনগণ কি এরূপ কদর্য অপরাধীদের বরদাশত করতে থাকবে?
বাঙালী মুসলমানের ব্যর্থতা
ইসলামে ইবাদত শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত আদায় নয়,বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল। আল্লাহর এ হুকুম পালনই মুসলমানের জীবনে মূল মিশন।সে মিশন পালনেই মুসলমানের জীবনে জিহাদ শুরু হয়।সে জিহাদের বরকতেই তারা পরিণত হয় শ্রেষ্ঠ মানবে। এবং নির্মিত হয় শ্রেষ্ঠতম সভ্যতা।সেটিই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত,তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য,তোমরা নির্দেশ দাও সৎকর্মের,আর নিষেধ করো অসৎকাজের,এবং বিশ্বাস করো আল্লাহকে।”–সুরা আল-ইমরান,আয়াত ১১০।আরো বলা হয়েছে,“তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটি দল থাকতে হবে যারা কল্যাণের দিকে মানুষকে আহবান করবে,এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে।এবং তারাই সফলকাম।”-সুরা আল-ইমরান,আয়াত ১০৪।যে মুসলমানের জীবনে আল্লাহ-নির্দেশিত এ মিশন নেই এবং সে মিশন পালনে জিহাদই নাই –তারা কি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি হতে পারে? তারা বরং নীচে নামায় বা দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়বে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? বাংলাদেশের কলংক বাড়াচ্ছে একাত্তরের রাজাকারগণ নয়,বরং আজকের ক্ষমতাসীন এ দুর্বৃত্তরাই। বাংলাদেশে নামায-রোযা,মসজিদ-মাদ্রাসা বাড়লেও ১৫ কোটি মুসলমানের দেশটিতে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা যেমন বাড়েনি,অন্যায়ের তান্ডবও কমেনি।বরং সমগ্র দেশে অধিকৃত হয়ে আছে অতি দুর্বৃত্ত অপরাধিদের হাতে।বাংলাদেশের মুসলমানদের এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? এ ব্যর্থতা নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারেই বা কি জবাব দিবে? ১০/৩/২০১৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018