বাংলাদেশে দুর্বৃত্তশাসন ও দেশবাসীর ইজ্জত-সংকট
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 5, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
নির্লজ্জদের দখলে দেশ
ইংরাজী পত্রিকা “গালফ টাইমস”এ ৩১/৮/১২ তারিখে এক ভয়ানব খবর ছাপে। খবরটি বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ নারী রপ্তানির। পাচারকৃত ৫ লাখ নারীদের মধ্যে ৩ লাখ বিক্রি হয়েছে ভারতের পতিতাপল্লিতে। আর বাঁকি ২ লাখ বিক্রি হয়েছে পাকিস্তানের পতিতাপল্লিতে। এ তথ্যটি “সেভ দি চিল্ড্রেন” এর কান্ট্রি ডাইরেক্টর মাইকেল ম্যাকগ্রাথ পেশ করেছেন এক ওয়ার্কশপে। উক্ত ওয়ার্কশপটি ঢাকায় আয়োজিত হয়েছিল “ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন”এর পক্ষ থেকে এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মিজানূর রহমান।“গালফ টাইমস” থেকে এ খবরটি নিয়ে অন্যান্য বহু পত্রিকাও ছেপেছে। ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও। দেশেবিদেশে যারা মান-সম্মান ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করে তাদের জন্য এ খবরটি প্রচণ্ড মানসিক পীড়ার কারণ। কোন পরিবারের মহিলা যদি পতিতা পল্লিতে গিয়ে দেহ বিক্রয় শুরু করে তবে সে পরিবারের সদস্যদের চোখে কি ঘুম থাকে? তেমনি যে দেশ থেকে ৫ লাখ মহিলা দেহব্যবসার জন্য বিদেশে রপ্তানি হয় সেদেশের কোন ভদ্র মানুষদের মনে কি শান্তি থাকে? কারণ দেশ তো এক বৃহৎ পরিবার।বাংলাদেশ থাইল্যাণ্ড নয়। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ থেকে কি বিশ্বের মুসলমানদের এই প্রত্যাশা? এতবড় কদর্যতা নিয়ে বাংলাদেশের মুসলিমগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনেই বা কি করে মুখ দেখাবে? বাংলাদেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তি মুসলমানদের যে কতটা নীচে নামিয়েছে এ হলো তার প্রমাণ।মুজিবামলে তারা বাংলাদেশকে পরিচিত করেছিল তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি রূপে,আর এবার পরিচিত করলো পতিতা পল্লিতে নারী রপ্তানীকারক দেশ রূপে!কোন দেশের জন্য এর চেয়ে কদর্য ও গ্লানিকর পরিচিতি কি থাকতে পারে?
খবরটি দেশের চরিত্রহীন,ধর্মহীন ও বিবেকহীন রাজনৈতীক নেতাদের কাছে হয়তো মামূলী বিষয়। মামূলী বিষয় দেশের দুর্বৃত্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মচারিদের কাছেও। কারণ দুর্বৃত্তদের জীবনে শুধু যে ঈমান ও নৈতীকতা লোপ পায় তাই নয়, লজ্জাও লোপ পায়। নবীজী (সাঃ) বলেছেন, “লজ্জা ঈমানের অর্ধেক”। মু’মিনের জীবনে লজ্জা ও ঈমান তাই একসাথে বসবাস করে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের জীবনে ঈমানের সাথে লজ্জাও বিলুপ্ত হয়। দুর্বৃত্তরা এজন্যই প্রচণ্ড বেহায়া বা নির্লজ্জ হয়। ফলে অশ্লিল পোষাকে -এমনকি উলঙ্গ বা আধা উলঙ্গ হয়ে পার্টিতে যাওয়া,জনসম্মুখে নাচানাচি করা,নাটকে বা সিনেমায় অভিনয় করা বা সমূদ্র সৈকতে যাওয়া এরূপ দুর্বৃত্তদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়। পাপাচার কবলিত সমাজে সেটি অহরহ ঘটে। এমন সমাজে নাচগান,উলঙ্গতা ও অশ্লিলতাও সংস্কৃতিতে পরিনত হয়। চোর-ডাকাত,সন্ত্রাসী ও ব্যাভিচারিরা এতটাই নির্লজ্জ যে বড় বড় কদর্য অপরাধ ও খুনের ঘটনার পরও তারা সমাজে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে।এরশাদের মত শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীও তাই বাংলাদেশে গর্ব ভরে রাজনীতি করে। রাজনীতি করে গণতন্ত্র হত্যাকারি,মানবাধিকার লুন্ঠনকারি ও দুর্ভিক্ষসৃষ্টিকারি বাকশালীরাও। একই দশা বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মচারিদের। ঘুষের অর্থ আদায়ে জনগণের পকেটে হাত ঢুকোনার পরও ঘুষখোর অফিসারদের মনে তাই সামান্যতম লজ্জার উদ্রেক হয় না। বাংলাদেশ মূলত এরূপ নির্লজ্জদের হাতেই অধিকৃত।
প্রশ্ন হলো,কোথায় যাচ্ছে দেশ? অর্থ-সংকট,চাকুরি-সংকট,পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস-সংকট,নিরাপত্তা-সংকটের ন্যায় বহু সংকটে দেশ বহুদিন থেকেই জর্জরিত। এসব দুর্বিসহ সংকটের সাথে যোগ হয়েছে ইজ্জত-সংকট। শেষাক্ত এ সংকটের কারণে জগৎবাসীর সামনে কলংকিত হলো বাংলাদেশীদের মানবিক পরিচয়। প্রতি সমাজেই কিছু দরিদ্র,দুঃস্থ্য ও অসহায় মানুষ থাকে। অন্ধ,পঙ্গু ও শয্যাশায়ী মানুষও থাকে। লাখো লাখো এমন মানুষ বাংলাদেশে যেমন আজ আছে,তেমনি অতীতেও ছিল। বিশ্বের প্রতিদেশেই তেমন মানুষ আছে। কিন্তু এসব দরিদ্র ও পঙ্গু মানুষেরও মানুষ রূপে একটি পরিচিতি থাকে। এমন মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে কোন দেশের ইজ্জতহানি হয় না। কিন্তু যারা দেহব্যবসায়ে নামে তাদের সেরূপ মানবিক পরিচিতি থাকে না। ইজ্জতও থাকে না। বিলুপ্ত হয় তাদের নৈতীক গুণ। অথচ মানুষ তো মানবিক পরিচয় পায়,এবং সমাজে ইজ্জত পায় তার মানবিক গূণের কারণে।
অপরাধ বিবেক হত্যার
ইসলামে শুধু দেহ-হত্যাই পাপ নয়,জঘন্য পাপ হলো বিবেক-হত্যা ও ঈমান হত্যা। জনগণের বিবেক হত্যা ও ঈমান হত্যার লক্ষে যারা বই লেখে,অভিনয় করে বা বক্তৃতা দেয় ইসলামে তারাও তাই ভয়ানক অপরাধি। তাদের অপরাধ আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর।চোর-ডাকাত,খুনি ও সন্ত্রাসীদের বড় অপরাধ শুধু এ নয় জন্য যে তারা অন্যের অর্থ লুট করে বা প্রাণনাশ ঘটায়। বরং সবচেয়ে বড় অপরাধ,তারা নিজেদের বিবেককে হত্যা করে। অপমানিত করে নিজেদের মানবিক ও নৈতীক সত্ত্বাকে। মানুষের কাছে আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে বড় আমনত দেহ নয়,বরং বিবেক। বিবেক ব্যক্তিকে দেয় হিতাহিত জ্ঞান। এ আমানতটির বলেই মানুষ পায় কোনটি পাপ আর কোনটি পূণ্য –সেটি চেনার সামর্থ্য। এ অমূল্য আমানতটি ব্যক্তির জীবনে কম্পাসের কাজ করে। আঁধারের মাঝে এটিই আলোকবর্তিকা। এবং সেটি তিনি প্রতিটি সুস্থ্য মানুষকেই দিয়েছেন। এমন আমানতের বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন,“ফালহামাহা ফুজুরাহা ও তাকওয়াহা” অর্থঃ “অতপর তাকে (তার বিবেককে) ইলহাম করা হয়েছে (ওহী মারফত জানানো হয়েছে)কোনটি পাপের পথ আর কোনটি তাকওয়ার পথ (আল্লাহর অবাধ্যতার থেকে বাঁচার পথ)।”–(সুরা শামস, আয়াত ৮)। ফলে চোর-ডাকাত,ঘুষখোর,সন্ত্রাসী এবং ব্যাভিচারিও জানে কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায়। আল্লাহর দেয়া এ বিশাল আমানত বা নিয়ামতকে ধ্বংস করা ও পরিত্যাগ করা মানব জীবনের সবচেয়ে বড় খেয়ানত। সে সাথে বড় অপরাধও। দুর্বৃত্তরা সে অপরাধটিই করে। খুন করে নিজেদের বিবেককে। কারণ,কারো বিবেক বেঁচে থাকলে সে কি করে চুরি-ডাকাতি বা সন্ত্রাসে নামে? আল্লাহর আইনে দেহ হত্যার ন্যায় বিবেক হত্যার শাস্তিও কঠোর। আল্লাহাতায়ালা এমন আমানতের দায়ভার পশুকে দেননি। ফলে পশু কারো ক্ষেত খেলে তার পা কাটার বিধান নাই। কিন্তু মানুষ খেলে শরিয়তে তার হাত কাটা হয়। তেমনি পশু সমাজে ব্যাভিচার অপরাধ নয়। কিন্তু মানব সমাজে ব্যাভিচারি নরনারীর জন্য রয়েছে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি। দেহব্যবসায়ীদের অপরাধ,তারা শুধু নিজেদের বিবেককেই খুন করে না,সমাজকেও কলুষিত করে। যুদ্ধটি এখানে মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। ফলে অপরাধ এখানে গুরুতর। আল্লাহর আইনে দরিদ্র হওয়াতে অপরাধ নাই,ফলে শাস্তিও নেই। কিন্তু অপরাধ হলো অর্পিত আমানতের সাথে গাদ্দারি। আমানতটি যেখানে বিশাল,খেয়ানতের শাস্তিও সেখানে বিশাল।রাষ্ট্রীয় আমানতের সাথে খেয়ানতের কারণে সেনা অফিসারদের তাই কোর্টমার্শাল হয়। মৃত্যুদণ্ডের সাজাও হয়।কিন্তু সেরূপ শাস্তি সাধারণ নাগরিকের হয়না।
কিন্তু বাংলাদেশে মহান আল্লাহর আমানত,মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেকের বিরুদ্ধে যুদ্ধটি কি শুধু চোর-ডাকাত,সন্ত্রাসী ও দেহব্যাবসায়ীদের দ্বারা হচ্ছে? বরং সে যুদ্ধটি সবচেয়ে বড় আকারে সংঘটিত হচ্ছে দেশের সেক্যুলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। চোর-ডাকাত,সন্ত্রাসী ও দেহব্যাবসায়ীরা দেশে বহুশত বছর পূর্বেও ছিল। কিন্তু কখনোই দেশের পুরা দখলদারি তারা নিজেরা নিতে পারিনি। কখনোই প্রশাসনের ড্রাইভিং সিটে তারা বসতে পারিনি। ফলে দুর্বৃত্তের পথে দৌড়ে দেশকে তারা বার বার বিশ্বে প্রথমও করতে পারিনি। কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে। কারণ দেশ এখন দুর্বৃত্তদের দখলে,রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে তারাই।ফলে দেশ কোনদিকে যাবে সেটিও নির্ধারণ করছে তারাই। এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও পুঁজির ব্যবহার হচ্ছে তাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়নে। ফলে দ্রুত দৃর্বৃত্তায়ান হয়েছে দেশের সর্বত্র জুড়ে।
এ বিশ্বে অনেকেই নানা ভাবে রেকর্ড গড়ছে,পত্রিকার পাতায় তারা বড় বড় শিরোনামও পাচ্ছে। কেউ বা আবিস্কারে,কেউ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে,কেউ স্বৈরাচার-বিরোধী বিপ্লবে,কেউ বা অলিম্পিক বা বিশ্বকাপে সোনার মেডেল জিতে। কিন্তু বাংলাদেশী দুর্বৃত্তরা শিরোনাম পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।সেটি নারী রপ্তানী,দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে।পত্রিকার পাতায় যখন কোন বিদেশী বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ নারী রপ্তানীর খবরটি পড়বে তখন কি সে স্তম্ভিত না হয়ে পারে? এটি কি কোন সভ্যদেশের কাজ? বিশ্বের কোন অমুসলিম দেশেও কি এমন ঘটনা অতীতে ঘটেছে? ইসলামে মহিলাদের এমন কি একাকী হজে বা ওমরাতে যাওয়াও হারাম। সেজন্য সাথে স্বামী অথবা পিতা বা ভাইয়ের ন্যায় মোহরাম ব্যক্তি চাই। প্রশ্ন হলো অন্য দেশের নগরীতে তারা একাকী যাওয়ার অনুমতি পেল কি করে? কি ভাবেই বা তারা দেশের সীমান্ত অতিক্রম করলো? কোন মুসলিম দেশের সরকার কি মহিলাদের এভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দিতে পারে? মহিলাদের পক্ষে এরূপ দেশত্যাগ তো আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। মুসলিম দেশে এমন বিদ্রোহ-রোধের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সে দায়িত্ব সরকার পালন করেনি। হয়তো সে দায়িত্বপালন নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথাও নেই। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী শুধু দেহব্যবসায়ী এসব পতিতারাই নয়। বাংলাদেশে এমন বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন খোদ শেখ মুজিব নিজে। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশ থেকে বহুশত নারীকে গৃহপরিচারিকার কাজ দিয়ে শাহের আমলে ইরানে পাঠিয়েছিলেন। আর এখন মহিলাদের একাকী বিদেশে যেতে সুযোগ দিচ্ছেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসীনা।
দুর্ভিক্ষ নৈতীকতার
৫ লাখ নারী রপ্তানীর এ খবরটি পড়ার পর অবাক বিস্ময়ে হয়তো বহুবিদেশীই ভাববে,বাংলাদেশে নিশ্চয়ই ভয়ানক দুর্ভিক্ষ চলছে। ভাববে, মহিলা নিছক প্রাণে বাঁচাতে এরূপ পাপের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু আসল সত্য তো ভিন্ন। এখানে দুর্ভিক্ষ তো খাদ্যের নয়। খোদ বাংলাদেশ সরকারেরও বড় গর্ব হলো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে। এখানে দুর্ভিক্ষ তো নৈতীকতার। কিন্তু কেন এ দুর্ভিক্ষ? এ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনাই বা ক’জনের? নৈতীক দুর্ভিক্ষ যে বাংলাদেশে ভয়ানক ভাবে চলছে সে প্রমাণ প্রচুর।সে দুর্ভিক্ষের কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বের দুই শতটি দেশকে হারিয়ে দুর্বৃত্তিতে ৫ বার প্রথম হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশটি অলিম্পিকে কোন মেডেল না পেলে কি হবে,দুর্বৃত্তিতে মেডেল দেয়ার প্রথা ।থাকলে বাংলাদেশ তা বহুবার পেত।
বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতেও আরেক ভয়ানক খবর ছাপে।সেটি নারী লোপাটের নয়,অর্থলোপাটের। ৩১/০৮/১২ তারিখে আমার দেশ,প্রথম আলো ও অন্যান্য পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে,সোনালী ব্যাংকের রুপসী বাংলা হোটেল (প্রাক্তন শেরাটন হোটেল) শাখা থেকে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার চুরি হয়ে গেছে। এটি পুকুর চুরি নয়,সাগরচুরি। শেয়ার বাজারের ধ্বসে দেশবাসীর হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছিল। এটি হলো সে চুরির পর দ্বিতীয় বৃহৎ আকারের চুরি। ভূয়া এলসি ও ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিপুল পরিমান এ অর্থ চুরি করেছে হলমার্ক গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তাগণ। এ চুরিতে সহায়তা করেছে সোনালী ব্যাংকের দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারিরা। সে সাথে আরো গুরুতর খবর হলো,সে চুরিকর্মে যিনি সহায়তা দিয়েছেন তিনি আর কেউ নন,তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী। পত্রিকায় প্রকাশ,মোদাচ্ছের আলীর এক আত্মীয়া ব্যাংকের উক্ত শাখায় কর্মচারি। সে সূত্র ধরে তিনি সে শাখায় ঘন ঘন যেতেন এবং হলমার্ক গ্রপকে ঋণ দিতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপর চাপ দিতেন। পত্রিকায় আরো প্রকাশ,সরকারি দলের কোন কোন নেতা এ চুরিকর্ম ঘটতে দিয়ে কোটি কোটি টাকার উৎকোচ নিয়েছেন। কেউ বা নিয়েছেন কোটি টাকার গাড়ি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের কেউ কেউ লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। চুরির টাকা যেখানে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সেখানে কোটি কোটি টাকায় উৎকোচ নেয়া তো কোন ব্যাপারই নয়।
অরক্ষিত জনগণ
সরকারের বড় সমস্যা এবং সে সাথে বড় অযোগ্যতা হলো,নিজেদের দায়িত্বটিও তারা বুঝেনা। বুঝলেও সে দায়িত্বপালনে তাদের আগ্রহ নেই। যে কোন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা ও তাদের শাস্তি দেয়া। সে দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব দেশের অন্য কারো নেই,প্রয়োজনীয় সে সামর্থও নেই। ছিঁচকে চোর ধরতে হলেও বহু দূর প্রচণ্ড গতিতে দৌড়াতে হয়। সেটি কি এতই সহজ? চোর শুধু চুরিতেই পারদর্শি নয়,পালাতেও পারদর্শি। ফলে তার সাথে গৃহের বৃদ্ধ,অসুস্থ্য বা মহিলারা কি দৌড়ে পারে? তাদের ঘাড়ে কি সে দায়িত্ব চাপানো যায়? তাছাড়া হামলাকারি অস্ত্রধারি হলে সে কাজ আরো অসাধ্য হয়ে পড়ে। দুর্বৃত্তরা সমাজের ক্ষুদার্ত নেকড়ে। মানুষের রূপ ধরে তারা সমাজে চলা ফেরা করলেও আসলে তারা বনের নেকড়ের চেয়েও ক্ষুদার্ত ও হিংস্র। নেকড়ে কখনোই একসাথে একটার বেশী শিকার ধরে না। অথচ এ দুর্বৃত্তরা শাসন-ক্ষমতা হাতে পেলে সারা দেশকে মুখে পুরতে চায়। দুর্বৃত্ত সরকারের পুলিশ ও র্যাবের হাতে যত মানুষ এ অবধি আহত বা নিহত হয়েছে তা কি বাংলাদেশে বসবাসকারি সকল হিংস্র পশুর নখরেও হয়েছে?
সমাজের দুর্বৃত্তদের ধরা এবং শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব একমাত্র সরকারের। এজন্যই জনগণ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী পালে,সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পালে। তাছাড়া মুসলমানের কাছে সে দায়িত্বটা আরো বিশাল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন “আ’মিরু বিল মারুফ” এবং “নেহী আনিল মুনকার” তথা “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল”য়ে আত্মনিয়োগে। মুসলমানের জীবনে তাই চোর-ডাকাত ও দুর্বৃত্তদের ধরা এবং তাদের শাস্তি দেয়া নিছক রাজনীতি নয়,প্রশাসনিক দায়িত্বও নয়। এটি তার জীবনের মূল মিশন। মু’মিনের জীবনে এটি জিহাদের ন্যায় পবিত্র ইবাদত। এমন জিহাদে আত্মনিয়োগ না হলে যেটি ঘটে তা হলো আল্লাহর ফরমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তাই কোন প্রকৃত ঈমানদার রাষ্ট্রপ্রধান হলে দেশে শুধু নামায-রোযা এবং হজ-যাকাতই বাড়ে না,বাড়ে এমন জিহাদের অংশগ্রহণকারিদের সংখ্যাও। পুলিশ, প্রশাসন,আইন-আদালত এবং মন্ত্রীপরিষদের প্রতিটি ব্যক্তি তখন সে জিহাদের মোজাহিদে পরিনত হয়। দুর্বৃত্তদের বসবাসই সে রাষ্ট্রে তখন অসম্ভব হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়নি। বরং হয়েছে উল্টোটি। সরকারের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় নির্মলের জিহাদ। বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিনত হয়েছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জিহাদে মোজাহিদ হওয়া। কারণ সেটি হলে জিহাদ শুরু হবে তো খোদ সরকারের বিরুদ্ধে। ফলে দেশকে অভয়-অরণ্য রূপে পেয়েছে দেশের অতি হিংস্র দুর্বৃত্তরা। দেশের পুলিশ,সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের কাজ হয়েছে চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসী ধরা নয়। বরং তারা নিজেরাই পরিণত হয়েছে চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীতে। সোনালী ব্যাংকের রুপসী বাংলা হোটেল (প্রাক্তন শেরাটন হোটেল) শাখা থেকে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার চুরি হয়েছে তো এমন চোরদের হাতেই। সরকারের হাতে জনগণের জানমালই শুধু নয়,রাষ্ট্রের সম্পদও যে কতটা অরক্ষিত সেটির প্রকাশ ঘটলো এ চুরির মধ্য দিয়ে। বাংলার বিগত শত বছরের ইতিহাসে সকল চোর-ডাকাত মিলেও কি এত বিশাল অংকের টাকা চুরি করতে পেরেছে? পারিনি। কিন্তু সেটি ঘটলো আওয়ামী সরকারের আমলে। সরকার দুর্বৃত্তদের জন্য দেশের অর্থভাণ্ডার কতটা উদার ভাবে খুলে দিয়েছেন সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকী থাকে? সরকারি ক্যাডারদের হাতে এতকাল টেন্ডার লুট হয়েছে, সরকারি ভূমি ও নদীর তীর দখল হয়েছে, রাস্তার গাছ ও বনভূমি উজার হয়েছে,আর এখন লুট হচ্ছে ব্যাংকের কোষাগার। এসব দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করার পরিবর্তে নিজ দলে আশ্রয় দিয়ে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। তাই দলে আবুল হোসেন,মোদাচ্ছের আলী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের মত ব্যক্তিদের এত বিপুল আধিক্য। মাত্র কিছুদিন আগে সিলেটে এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহি বিশাল ছাত্রবাস দাউ দাউ করে আগুণে জ্বলে মাটিতে মিশে গেলে। এত বড় জঘন্য কুকর্ম বাংলার মাটিতে কোন কালেই কোন দুর্বৃত্ত ডাকাত বা সন্ত্রাসীর হাত ঘটেনি। অথচ ঘটলো ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে। দলটি যে কতটা জঘন্য অপরাধী চরিত্রের মানুষ তৈরী করতে পারে এ হলো তার নমুনা।
ফিরে এসেছে মুজিব-আমল
সরকারের মূল কাজটি হয়েছে দাড়ি-টুপিধারিদের গ্রেফতার করা এবং তাদের উপর নির্যাতন চালানো। কারণ, তাদের শত্রু চোর-ডাকাত নয়,সন্ত্রাসী বা নারী পাচারকারিরাও নয়। বরং ইসলামপন্থিরা। ইসলামপন্থিদের তারা রাজনৈতিক শত্রু রূপে দেখে। ইসলামপন্থিদের দমনে তারা শুধু ভারতের সাথেই মৈত্রী গড়েনি। মৈত্রী গড়েছে ইরশাদ এবং সমাজতন্ত্রীদের সাথেও। দেশ এখন এরূপ ধরণের নৃশংস দুর্বৃত্তদের দখলে। পশু যেমন জঙ্গলে ইচ্ছামত শিকার ধরার স্বাধীনতা পায়,তেমনি দেশের চোর-ডাকাত এবং সন্ত্রাসীরা পেয়েছে অপরাধ কর্মের অধিকার। সে সাথে নারীপাচারকারিরা পেয়েছে নারী রপ্তানীর স্বাধীনতা। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস ঘেঁটে কি ৫ লাখ নারী পাচারের ইতিহাস পাওয়া যাবে? পাওয়া যাবে কি ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার চুরির ইতিহাস? আর সন্ত্রাস? সেটিও কি কোন কালে এত বীভৎস ও ব্যাপক ভাবে হয়েছে? গত ২ মাসে হত্যা করা হয়েছে ৫৩৪ জনকে;এর মধ্যে ২৪৩ জন জুলাইতে এবং ২৯১ জন আগষ্টে। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার পহেলা সেপ্টম্বর সংখ্যায় প্রকাশ,একমাত্র কুষ্টিয়া জেলাতেই গত ৮ মাসে ৫৫ জন নিহত হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। সম্প্রতি শিলাইদহের কাছে সন্ত্রাসীরা পদ্মার বুকে যাত্রীভর্তি নৌকায় উঠে তিনজনকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে।এবং একজনের মাথা ছিন্ন করে সাথে নিয়ে গেছে। খুনিরা এতকাল রাতের আঁধারে গোপনে খুন করতো।এখানে তারা এতটাই স্বাধীনতা পেয়েছে যে একাজে রাতের ঘুম নষ্ট করাকে অনার্থক মনে করে। প্রয়োজন বোধ করে না হত্যাকর্ম গোপনে করার। বরং সেটি করে দিনে-দুপুরে বহু লোকের চোখের সামনে। মুজিব আমলেও সেটি হত। ভরা হাটে,ঈদের জামায়াতে,এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় তখন মানুষ খুন হতো। বলা যায়,সরকার অতি সফল ভাবেই মুজিব-আমলকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। যারা মুজিবামলকে বাংলার স্বর্ণযুগ বলে গর্ব করে তাদের এখন আরেক উৎসবের মওকা মিলেছে।
রাষ্ট্রীয় তহবিল পাহারা দেয়ার কাজটি সরকারের কাছে যে কতটা গুরুত্বহীন সেটিও পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ সোনালী ব্যাংকের উক্ত শাখায় দীর্ঘকাল কোন অডিটিই করেনি। অথচ সেখানে প্রতি ৬ মাসে অডিট হওয়ার কথা। পুলিশ যদি পাহারা দিতে মহল্লাতেই না নামে তবে চোর-ডাকাতদের তো পোয়াবারো। এমন সুযোগ পেলে চোর-ডাকাতগণ কি রাতের আঁধারের অপেক্ষায় থাকে? তারা তখন দিনদুপুরে মানুষের চোখের সামনে চৌর্যবৃত্তি ও দস্যুবৃত্তিতে নামে। সেটিই ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখায়। ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা একদিনে বা এক মাসে চুরি হয়নি। হয়েছে ধীরে ধীরে,অতি পরিকল্পিত ভাবে। ব্যাংকের মালিক দেশের সরকার। অতএব যা কিছু অনিয়ম হয়েছে তার জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়,দায়ী খোদ সরকার। ব্যাংকের নিয়ম হলো কোন কর্মকর্তাকে শাখায় তিন বছরের জন্য রাখা যাবে না। এসব দুর্বৃত্ত অফিসারদের জন্য সে নিয়মেরও প্রয়োগ হয়নি। অবাধ চুরির জন্য সরকার শুধু পর্যাপ্ত সময়ই দেয়নি,সে চুরিতে যেসব কর্মকর্তা সাহায্য করেছে তাদের প্রমোশনও দিয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের ক্ষেত্রে। বিশ্বব্যাংক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুর্নিদ্দিষ্ট অভিযোগ এনেছিল। বিশ্বব্যাংক কোন দেশের বিরোধী দল নয়,শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দুষমনও নয়।তাই যে কোন দেশের দায়িত্বশীল সরকারই বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত অভিযোগ কোনরূপ গুরুত্বই পায়নি। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে নিজ দেশেও কোনরূপ তদন্ত হতে দেয়নি। প্রথমে শেখ হাসিনা সে অভিযোগকে শুধু ভীত্তিহীনই বলেননি,বরং আবুল হোসেনকে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকও বলেছেন। তাকে মন্ত্রীপদে বহালও রেখেছেন। বিশ্বব্যাংকের চেয়ে আবুল হোসেনই শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার যে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে,বিষয়টি তা নয়। নিজ দলের মন্ত্রীদের দূর্নীতিবাজ বললে এবং সে অপরাধে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলে কি সরকারের ইজ্জত থাকে? তখন ধ্বস নামে জনপ্রিয়তায়। শেখ হাসিনা সেটি বুঝেন। তাছাড়া কোন ডাকাত সর্দারই কি তার দল থেকে অতি সফল ডাকাতকে এতটা সহজে বিদায় দেয়?
সরকার প্রথমে আবুল হোসেনকে যেমন দুদক বা পুলিশের হাতে দেয়নি, তেমনি সুরঞ্জিত সেনকেও দেয়নি। অবশেষে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত বিশাল অর্থ বিশ্বব্যাংক যখন প্রত্যাহার করে নেয় এবং পদ্মা সেতুপ্রকল্প যখন গর্তে গিয়ে পড়ে তখন সরকারের হুশ ফেরে। আবুল হোসেনকে তখন পদত্যাগে বাধ্য করেছে। তবে সুরঞ্জিত সেনের ভাগ্য ভাল,বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে লাগলেও তার বিরুদ্ধে লাগেনি। কারণ সুরঞ্জিত রেলমন্ত্রী ছিলেন,বাংলাদেশ রেলের অর্থের মালিক তো আর বিশ্বব্যাংক নয়। এ অর্থের মালিক অসহায় দরিদ্র জনগণ। বিশ্বব্যাংকের হাতে যে বিশাল অর্থবল ও জনবল,বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের হাতে কি সে শক্তি আছে? শক্তি তো একীভূত হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে। আর তাতে প্রচণ্ড ভাবে শক্তিহীন হয়েছে জনগণ। আর একারণেই লুন্ঠিত হচ্ছে তাদের রাজস্বের অর্থ।রেলের বিপুল অর্থ,সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার মার্কেটের হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠনে তাই দুর্বৃত্তদের সামান্যতম বাঁধার মুখেও পড়তে হয়নি। সে লুন্ঠনে শেখ হাসিনার সরকার বরং তাদের নানা ভাবে পথ করে দিয়েছে। জঙ্গলে শিকার ধরার অপরাধে কোন পশুকেই ফাঁসীতে তুলা হয় না। বাংলাদেশে সমুদ্র চুরির নায়কদেরও তাই ফাঁসী দূরে থাক,গায়ে আঁচড় দেয়া হয় না। পদ্মা সেতু নিয়ে যে এতবড় চুরির ঘটনা ঘটলো,সে অপরাধে কি কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বা শাস্তি দেয়া হয়েছে? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এজন্যই জনগণের সামনে মুখ বাড়িয়ে বড় বড় কথা বলার সাহস পান।দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে?
দেশে এখন অসংখ্য মুজিব
কোন ব্যক্তির সৎ হওয়ার লক্ষণ হলো,সে কখনোই নিজের পাশে দুর্বৃত্তদের স্থান দেয়না। আলো যেমন আঁধারকে বরদাস্ত করে না,তেমনি সৎ ব্যক্তিও মিথ্যাচারি ও দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেয় না। কারো সৎ হওয়ার অর্থ,দূর্নীতির বিরুদ্ধে সে আপোষহীন হয়। তাই কাউকে চিনতে হলে তার আশেপাশের লোকদের চিনতে হয়। পাশে দুর্নীতিবাজ লোকদের ভিড় দেখে এ রায় নিশ্চিত ভাবেই নেয়া যায়,ব্যক্তিটি সৎ নয়।শেখ হাসিনার নৈতীকতার বিচারে প্রশ্ন হলো,তাঁর পাশে যাদের দেখা যায় তারা কারা? তার পাশে তো আবুল হোসেন,সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,মুদাচ্ছির আলীর ন্যায় ব্যক্তিবর্গ। পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার বদলে তার কাজ হয়েছে তাদেরকে প্রটেকশন দেয়া। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবও একই ভাবে গাজী গোলাম মোস্তাফার ন্যায় প্রমানিত দুর্বৃত্তদের নিজের অতি কাছে স্থান দিয়েছিলেন। গাজী গোলাম মোস্তাফা ছিল মুজিব আমলে আওয়ামী লীগের ঢাকা শহরের সভাপতি এবং সে সাথে বাংলাদেশ রেড ক্রসের প্রধান। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে চলছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ,লক্ষ লক্ষ মানুষে সে দুর্ভিক্ষে অনাহারে মারা যায়। সে সময় বিদেশী সাহায্য আসতো রেড ক্রসের মাধ্যমে। আর গাজী গোলাম মোস্তাফার কাজ ছিল সে অর্থ আত্মসাৎ করা। বহু বিদেশী পত্রিকায় তার সে দূর্নীতি নিয়ে বহু নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। কিন্তু তাকে প্রটেকশনও দিয়েছেন শেখ মুজিব নিজে।কোনরূপ পুলিশ বা দুর্নীতি-দমন বিভাগ তার কাছে ভিড়তে পারিনি। যেমন আজ পারছে না আবুল হোসেন ও সুরঞ্জিতদের কাছে ভিড়তে। দুর্ভিক্ষ,দূর্নীতি এবং একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার নিয়েই ছিল সে সময়ের মুজিববাদ। সে মুজিববাদের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল বিশ্বব্যাপী তলাহীন ঝুড়ির খেতাব। আর সে কলংকিত যুগটি নিয়েই শেখ হাসিনা ও আওয়মী লীগ নেতাদের প্রচুর গর্ব।
শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশাল,দুর্নীতি ও দুর্ভিক্ষ সারা বিশ্বের নিন্দিত হলেও শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাকর্মী কাছে সেটাই অহংকার। গলিত আবর্জনার প্রতি মশা-মাছির আকর্ষণটি প্রকট। সেখান থেকে তাদেরকে সহজে ফেরানো যায় না। মুর্তিপুজা জাহান্নামের পথ। মানব-ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে সনাতন অজ্ঞতা বা জাহিলিয়াত। পবিত্র কোরআনে এ জাহিলিয়াত নানাভাবে নিন্দিত হলে কি হবে মুর্তিপুজারিদের কাছে সেটিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তেমনি আকর্ষণ রয়েছে মুজিবী আদর্শের প্রতি। মুজিব নিজে কোন বড় ব্যবসায়ী বা বড় চাকুরিজীবি ছিলেন না। কোন জমিদারপুত্রও ছিলেন।কাজ করতেন এক বীমা কোম্পানীতে। কিন্তু তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে দ্বিতল বাড়ির মালিক হয়েছেন। দুর্নীতিমুক্ত কোন চাকুরিজীবীর পক্ষে তার আজীবনের সঞ্চয় দিয়েও কি ঢাকার ধানমন্তিতে বাড়ি করা দূরে থাক,এক টুকরা জমি কেনাও সম্ভব নয়। পাকিস্তান আমলেও সেটি সম্ভব ছিল না। কিন্তু মুজিব পেরেছিলেন। আর সেরূপ পারাটাই হলো মুজিবী আদর্শ।তাঁর অনুসারিদের কাছে সেটাই মুজিববাদ। সে পথ ধরেই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা তাই দলে দলে শেখ মুজিব,আবুল হোসেন ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হচ্ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা লাভে মুজিববাদ এখন বিপুল ফসল দিচ্ছে। ফলে লোপাট হচ্ছে শুধু শেয়ার মার্কেট,সোনালী ব্যাংক বা বিশ্বব্যাংকের দেয়া অর্থ নয়,বরং সমগ্র দেশ। লোপাট হচ্ছে বাংলাদেশীদের মানবিক পরিচয়। ফলে যে অপমান বেড়েছিল মুজিবামলে, আজ ও একই ভাবে সংকট বাড়ছে দেশবাসীর ইজ্জতে। বরং দেশবাসীর বেইজ্জতি বাড়াতে শেখ হাসিনা তার পিতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তার পিতার আমলে জুটেছিল তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির খেতাব। আর আজ রেকর্ড নির্মিত হচ্ছে বিদেশের পতিতাপল্লিতে ৫ লাখ নারী রপ্তানি,বিশ্বব্যাংকের অর্থলুট,সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লুটের মধ্য দিয়ে।
শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ
সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে চলছে ভয়ানক নৈতীক দুর্ভিক্ষ। খাদ্যের দুর্ভিক্ষ দূর করতে দেশবাসীকে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য উৎপাদন করতে হয়। আর নৈতীকতার দুর্ভিক্ষ দূর করতেও দেশজুড়ে বিশাল বিনিয়োগ চাই। এবং সেটি লাগাতর ভাবে। স্রেফ খাদ্য-উৎপাদন,রাস্তাঘাট ও কলকারখানা বাড়িয়ে দেশবাসীর উন্নয়ন ঘটে না,মানবতায়ও সমৃদ্ধি আসে না। ফলে শান্তি বা সফলতাও বাড়ে না। যে কোন সভ্য দেশে সে বিশাল বিনিয়োগটি হয় ধমীয় প্রতিষ্ঠান,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে। মানবিক উন্নয়নে মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি হয়েছে ঘটেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। সেটি যেমন লক্ষাধিক নবী-রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে,তেমনি কেতাব নাযিলের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পবিত্র কোরআন নাযিল। আলো-বাতাস,নদ-নদী,ফুল-ফল,তেল-গ্যাস কত কিছুই না করুণাময় আল্লাহতায়ালার দান। কিন্তু মানব জাতির কল্যাণে মহান আল্লাহর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দান হলো কোরআন। তবে শুধু কোরআনের ন্যায় পরিপূর্ণ ম্যাসেজই পাঠাননি,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যাসেঞ্জারও পাঠিয়েছেন। আজকের মুসলমানদের হাতে তাই মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ দুটি নিয়ামত। একটি কোরআন,অপরটি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত। এ দুটির অনুসররণে রয়েছে শ্রেষ্ঠ মানব রূপে বেড়ে উঠার প্রতিশ্রুতি। মহম্মদ আসাদের মতে যা হলো “Most perfect plan for human living” । আল্লাহতায়ালার দেয়া সে পথ অনুসরণ করেই আরবের জাহেল জনগণ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। এবং অতিদ্রুত মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। নারীরা পেয়েছিল পুরষের সমান মর্যাদা। ক্রীতদাসরা পেয়েছিল দাসত্ব থেকে মুক্তি।
বর্জ্য দাফনের কাজটি হয়নি
ধর্ম,সমাজ,রাজনীতি এবং জন-কল্যাণের নামে যুগে যুগে বহু ধর্ম, বহু দর্শন ও বহু মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। মানবসৃষ্ট এ ধর্ম ও মতবাদগুলোর নাশকতা কি কম? আল্লাহতায়ালা বলেছেন,“ নিশ্চয়ই পথ দেখানোর দায়িত্ব আমার।” –(সুরা লাইল, আয়াত ১২)। পবিত্র কোরআন হলো সে পথ। ইসলামের পরিভাষায় সেটাই সিরাতুল মোস্তাকীম। মানুষের কাজ হলো নিষ্ঠার সাথে সে পথ অনুসরণ করা। কিন্তু মানুষ যখন নিজেদের সীমিত জ্ঞান নিয়ে পথ গড়া শুরু করে তখন নানা ধর্ম ও মতবাদের নামে প্রচণ্ড বিপর্যয়ও ঘটে। সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় জোসেফ স্টালীন রাশিয়ায় কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। বিপুল প্রাণনাশ ঘটেছে চীন ও ক্যাম্বোডিয়ায়।নাৎসীবাদ ও ফ্যাসীবাদের প্রসার বাড়াতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত করেছে হিটলার ও মুসোলিনী। সে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে বহুকোটি মানুষের। মানব কল্যাণে শুধু গৃহের বর্জ্যকে দাফন করলে চলে না, দাফন করতে হয় মানবসৃষ্ট এসব দুষ্ট মতবাদ, দর্শন ও ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোকেও। নইলে মহাসংকট ও সংঘাত শুরু হয় রাষ্ট্র ও সমাজ জুড়ে। মুজিবের ফ্যাসীবাদী দর্শন তেমনি এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু করেছিল বাংলার মাটিতে। ডেকে এনেছিল দুর্ভিক্ষ,স্বৈরাচার,দূর্নীতি,অর্থনৈতিক মড়ক,ভাতৃঘাতি সংঘাত, ভারতের আধিপত্য এবং ইসলামবিরোধী রাজনীতি। তখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ও কর্মকাণ্ড। নিষিদ্ধ হয়েছিল সকল ইসলামী দল। আরবের জনগণ জাহিলী পৌত্তলিকতাকে যেমন দাফন করেছে,তেমনি জার্মান ও ইতালির জনগণ দাফন করেছে নাৎসীবাদ ও ফাসিবাদকে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে একই ভাবে দাফন হয়েছে সমাজতন্ত্র। কিন্তু বাংলাদেশে সে বর্জ্য দাফনের কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। তাই আজও বেঁচে আছে মুজিবের ফ্যাসীবাদ তার স্বৈরাচার,ইসলামবৈরীতো,দূর্নীতি ও ভারতসেবী নীতি নিয়ে। এবং সেটি বেঁচে আছে প্রচণ্ডতা নিয়ে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দেশ-ধ্বংসী ও ইজ্জত-ধ্বংসী নাশকতাও দূর হচ্ছে না। বরং বেড়ে চলেছে নীচে নামা। এখানেই বাংলাদেশের বিপদ। ০২/০৯/১২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018