বাংলাদেশে ব্যর্থ গণতন্ত্র ও জিম্মি জনগণ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 9, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ব্যর্থ গণতন্ত্র ও অধিকৃত জনগণ
গণতন্ত্রের সাফল্য বার বার অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তি সরকার গঠনে নয়। গণতন্ত্রকে তখনই সফল বলা যায় যখন সে গণতন্ত্রে স্বৈরাচারি অসৎ লোকদের বদলে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচিত হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কতটুকু সফল? রাষ্ট্র হিসাবেই বা দেশটি কতটুকু সফল? রাষ্ট্রের সফলতার বিচার হয় আইনের শাসন,দুর্নীতি-মুক্তি প্রশাসন,অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক শান্তির প্রতিষ্ঠায়। অথচ বাংলাদেশে শত শত মানুষ খুণ হয় দিবালোকে,-সেটি যেমন বেসরকারি সন্ত্রাসীদের হাতে,তেমনি সরকারি র্যাব এবং পুলিশের হাতে। চাঁদাবাজি,ছিনতাই,অপহরণ বেড়ে চলছে দেশজুড়ে। দুর্নীতিতে দেশটি পাঁচবার বিশ্ব-প্রথম স্থান পেয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশে এতটাই পিছিয়ে যে এখন বিশ্বের সর্বনিন্মের দরিদ্র দেশগুলোর একটি। বিচার ব্যবস্থা এতটাই ব্যর্থ যে,লক্ষাধিক মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলছে, শাস্তি হচ্ছে না জঘন্য অপরাধীদের। অথচ বেকসূর খালাস পাচ্ছে শাসকদলের শাস্তিপ্রাপ্ত খুণিরা। অপরদিকে বিচারের নামে বিচারের আগেই সরকার বিরোধীদের নির্মম শাস্তির ব্যবস্থা করেছে পুলিশী রিমাণ্ডে দিয়ে। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে র্যাব ও পুলিশের হাতে। কিন্তু তা নিয়ে তদন্ত নাই,বিচারও নাই। এতকাল ত্রান-কমিটির মালামাল রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্ত ক্যাডার ও টাউটদের হাতে লুন্ঠিত হত। কিন্তু এখন সেখানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরও হাত পড়েছে। এমন একটি দেশকে সফল বললে বিফল দেশ কোনটি?
রাজতন্ত্রে সফলতার গৌরব যেমন রাজার, তেমনি ব্যর্থতার দায়ভারও তার। রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ রাজাকে শুধু সিংহাসনই হারাতে হয় না,প্রাণও হারাতে হয়। তার স্মৃতি তখন ইতিহাসের আবর্জনায় গিয়ে পড়তে হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে সরকারের ব্যর্থতার মূল দায়ভার জনণের। জনগণেরও নিস্তার মেলে না ব্যর্থতার শাস্তি থেকে। এতে যেমন বিশ্বব্যাপী অপমান ও অগৌরব বাড়ে, তেমনি নানারূপ দুর্ভোগ ও দুর্গতিও বাড়ে। বাংলাদেশ তারই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গণতন্ত্রে জনগণ জেনে বুঝে ভোট দেয়,তাদের ভোটেই নির্ধারিত হয় কে হবে রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী। সরকারের লাগাম এখানে জনগণের হাতে। জনগণের দায়ভার এখানে তাই বিশাল। সে দায়ভারটি সৎ,দেশপ্রেমিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার। এ দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র অধিকৃত হয় স্বার্থশিকারি ভয়ানক দুর্বৃত্তদের হাতে। সে নির্বাচিত দুর্বৃত্তরা কখনও বা জন্ম দেয় সীমাহীন দূর্নীতি,দুঃশাসন ও দুর্ভিক্ষের,আবার কখনও বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধের। জার্মান জনগণের নির্বাচনি অপরাধের কারণেই তাদের মাথায় হিটলারের ন্যায় ফ্যাসীস্ট চেপে বসেছিল।
ব্যক্তির উপর যেখানেই গুরুতর দায়ভার,সেখানেই বাড়ে যোগ্যতার গুরুত্ব। কোনটি খাদ্য আর কোনটি অখ্যাদ্য,কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা -সেটি বুঝতে বেশী বিদ্যাবুদ্ধি বা কাণ্ডজ্ঞান লাগে না। এরপরও কোটি কোটি মানুষ ধুমপানের ন্যায় বিষ পান করে। শাপশকুনকে দেবতা জ্ঞান করে মাথায় তোলে, পুজাও দেয়। অথচ শাক-শকুনের গায়ে ভণ্ডামীর আবরণক থাকে না। কিন্তু স্বার্থশিকারি দুর্বৃত্তরা সমাজে নানা রূপ লেবাস চড়িয়ে চলা ফেরা করে। ফলে নির্বাচন কালে আর কঠিন হয়ে পড়ে ভণ্ডদের ভিড় থেকে ভাল মানুষদের চেনা। সরকারের নির্বাচনের এ গুরু দায়িত্ব-পালনকে ইসলাম এতটাই গুরুত্ব দেয় যে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে সে কাজটি করেছেন প্রথম সারির সাহাবীরা। ফলে দুর্বত্তরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ধারে কাছে ভিড়তে পারেনি। একারণেই তখন রাষ্ট্র-প্রধানের আসনে বসেছেন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা। অপর দিকে এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণেই রাষ্ট্র বার বার অধিকৃত হয় ভয়ানক অপরাধীদের হাতে। সেটি যেমন অতীতে হিটলারের হাতে হয়েছে, তেমনি সাম্প্রতিক কালে হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মত নরঘাতকদের হাতে। মুসলিম বিশ্বে এ ব্যর্থতা আরো বিশাল, আর জনগণের সে ব্যর্থতা বাড়াতেই মুসলিম বিশ্বে বিপুল পুঁজি বিণিয়গে নেমেছে বিদেশীরা।ফলে কঠিন হয়ে পড়েছে সৎ ও যোগ্য মানুষের নির্বাচন।
দুর্বৃত্তের হাতিয়ার
গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় যেটি অপরিহার্য তা হল, জনগণের শিক্ষা ও চেতনায় উন্নয়ন। জনগণের শিক্ষা-দীক্ষা ও চেতনায় উন্নয়ন না এনে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা অনেকটা হাওয়ায় ঘর বাঁধার মত। গণতন্ত্র-চর্চা তখন বিপদজনক তামাশায় পরিণত হয়। এবং এরই উদাহরণ হল বাংলাদেশ।এদেশটিতে বার বার নির্বাচন হয়,সে নির্বাচনে কোটি কোটি মানুষ ভোটও দেয়।কিন্তু তাতে যেটি অসম্ভব হয়ে পড়ে তা হল,সৎ ও যোগ্য লোকদের নির্বাচন।বরং নির্বাচিত হয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী,খুণি,ব্যাভিচারি ও পরিচিত স্বৈরাচারি।গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দুর্বৃত্তদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও অর্থভাণ্ডারের উপর নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে। সুনীতি এবং সুবিচারের ন্যায় ব্যক্তির মহৎ গুণগুলিও কখনই অশিক্ষা বা কুশিক্ষায় জন্ম নেয় না, বরং সে জন্য অপরিহার্য হল লাগাতর সুশিক্ষা, অবিরাম সুচিন্তা ও পরকালে হিসাব দেয়ার সর্বমুহুর্তের ভয়। যে সমাজে ভাল মানুষের বাস,সে সমাজে ভয়ানক দুর্বৃত্তদেরও বাস। অজ্ঞতায় অপরাধী দুর্বৃত্তদের মাথায় তোলাই স্বাভাবিক। নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় দুর্বৃত্তরা অতীতে ভগবান রূপে যেভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সেটি তো অজ্ঞতার কারণেই। অজ্ঞতা ও অশিক্ষার ফলে তাই বিপর্যয়ে পড়ে গণতন্ত্র। মানবের মন থেকে অন্ধকার সরানোকে এজন্যই ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। কোরআনের প্রথম আয়াতটি তো সে পয়গাম নিয়েই। হযরত মহম্মদ (সাঃ) তাঁর ২৩ বছরের নবুয়তের জীবনে অবিরাম তো একাজটাই করেছেন। সাহাবাদের মাঝে তিনি যে জ্ঞান,যে আল্লাহ-ভীতি এবং পরকালীন জবাবদেহীতার যে গভীর ভয় সৃষ্টি করেছিলেন তাতে দুর্বৃত্তদের পক্ষে নেতা নেতা হওয়া দূরে থাক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছে আসাই অসম্ভব হয়েছিল। প্রতিটি সাহাবী পরিণত হয়েছিলেন সুনীতি ও সুশাসনের অতন্দ্র রক্ষককে। দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নেতা রূপে প্রতিষ্ঠায় তাঁরা ছিলেন আপোষহীন। ফলে খোলাফায়ে রাশেদার সময় কোন খলিফাকেই নিজ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রচারে নামতে হয়নি, অর্থ বিণিয়োগও করতে হয়নি। বরং সে কাজটি পবিত্র দায়িত্ব রূপে পালন করেছেন সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে ভোটপ্রার্থী যেভাবে নিজেকে মহামানব রূপে আত্মপ্রচার করে,ইসলামের গণতন্ত্রে সেরূপ রিয়াকারি বা আত্মপ্রচার নেই। সুশাসন ও সুনীতির প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এমন সুযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে তারা অপরিহার্য ভাবতেন। আল্লাহর খলিফা তথা প্রতিনিধি রূপে সে দায়িত্বপালন গণ্য হয়েছিল উচ্চতর ইবাদত রূপে। আল্লাহর খলিফা শুধু শাসক নন,বরং প্রতিটি ঈমানদার। এখানে দায়িত্ববান তাই প্রত্যেকেই। সমাজের সবাই এখানে অতন্দ্র প্রহরী ও যোদ্ধা। এমন সমাজে কি দুর্বৃত্তের হাতে ভোটলুট বা ভোটক্রয় সম্ভব? গণতন্ত্র বাঁচে তো এরূপ দায়িত্ববান মানুষদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে। ভাল মানুষ গড়ার পাশাপাশি সেখানে গুরুত্ব পায় এবং গতি পায় উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণের কাজ। অপর দিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখনই দুর্বৃত্তদের হাতে যায় তখনই অসম্ভব হয়ে উঠে সুশিক্ষা ও সুনীতি নেয়া বেড়ে উঠা। তখন হামলার মুখে পড়ে জ্ঞানী ও যোগ্যবান ব্যক্তিরা। তাই স্বৈরাচার-কবলিত মুসলিম রাষ্ট্রে ইমাম মালেক ও ইমাম হাম্বলী, ইমাম আবু হানিফার মত ব্যক্তিবর্গ বন্দী হয়েছেন,নিদারুন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অনেকে শহিদও হয়েছেন।
অভাব অবকাঠামোর
ব্যর্থ সরকারের অপরাধ অতি গুরুতর,সে অপরাধ দেশে আযাব ডেকে আনে। তেমনি গুরুতর অপরাধ ব্যর্থ জনগণেরও। জনগণের দায়ভার নিছক ঘরবাঁধা,সন্তান-পালন,চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকুরি-বাকুরি নয়। বরং সেটি হল, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার কাজে সর্ব-সামর্থ নিয়ে অংশ নেয়া। ইসলামে এটি জিহাদ। দেশের নাগরিক এমন এক দায়িত্ব-সচেতনতা নিয়ে বেড়ে না উঠলে বিফল হয় গণতন্ত্র। গণতন্ত্র বিশাল পার্লামেন্ট ভবনে বাঁচে না,বাঁচে জনগণের এ দায়িত্ব-সচেতনতার মাঝে। ব্রিটিশেরা গণতন্ত্র চর্চায় যতটুকু সফলতায় পেয়েছে তার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশটির বহু লক্ষ রাজনৈতিক কর্মী, সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর বহু শত বছরের মেহনত। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশটির শত শত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়,পত্র-পত্রিকা ও শত সহস্র বই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের নির্মানে এগুলি হল অতি অত্যাবশ্যক অবকাঠামো। তবে ইসলামী সমাজে যেটি গড়ে উঠে সেটি শুধু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই নয়,সে সাথে গভীর তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। তখন শ্রদ্ধা বাড়ে শুধু অন্যের মতামতের প্রতি নয়,বরং তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার প্রতিও। ফলে এক সময়ের ক্রীতদাস বেলাল হাবসী ও সালমান ফারসী সমাজের যে কোন অভিজাতদের সম-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তাই ইসলামী সমাজে বিপ্লবটি আসে মানব মনের আরো গভীরতর স্তর থেকে। নবীজী(সাঃ)ও তাঁর মহান সাহাবাদের জীবনের সবচেয়ে বেশী শ্রম,মেধা ও প্রতিভা ব্যয় হয়েছিল মানুষের মাঝে এ মূল্যবোধ ও তাকওয়া গড়ে তোলায়।তাদের সে মেহনতের ফলে মুসলিম সমাজে শুধু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই বাড়েনি,বেড়েছিল এমন এক উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধ যার ফলে খলিফা তার চাকরকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে রশি ধরে টেনেছেন। আজও কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সে ঐতিহ্য নির্মিত হয়নি। যে মূল্যবোধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও মন্ত্রীদের যেরূপ রাজা বা রাণীর সামনে মাথা ঝুঁকাতে হয় সেটি মুসলিম সমাজে কবরস্থ হয়েছিল চৌদ্দ শত বছর আগে।
ঝোপঝাড়ে বীজ গজালেও সেটি বেড়ে উঠে না। তেমনি অশিক্ষা ও কুশিক্ষাগ্রস্ত সমাজে গণতান্ত্রিক বা মানবিক মূল্যবোধও বেড়ে উঠে না। শিক্ষার অর্থ নিছক ডিগ্রিদান নয়,বরং সেটি যোগ্য ও অযোগ্য, সৎ ও অসৎ, ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে তারতর্ম নির্ণয়ের সামর্থ। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যতটা সার্টিফিকেট বিতরণ হয়েছে ততটা সে যোগ্যতা গড়ে তোলা হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশের বড় সমস্যা শুধু অশিক্ষা নয়, প্রচণ্ড কুশিক্ষাও। দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভয়ানক কুশিক্ষা নিয়ে যে বিপুল সংখ্যক যুবক বেরুচ্ছে তারা যে শুধু দুর্নীতিতে বিশ্বজুড়া রেকর্ড গড়ছে তা নয়, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকেও অসম্ভব করে তুলেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষা ছাত্রদের সৎ পথ না দেখিয়ে বিপুল ভাবে বিপথে টানছে। বাংলাদেশের বড় বিপদ এখানেই। ফলে তিরিশ বা চল্লিশের দশকের নির্বাচনে যে মান ও যে যোগ্যতার মানুষের নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল এখন সেটি অসম্ভব ও অচিন্তনীয় হয়ে উঠেছে। তবে বিপদ শুধু গণতন্ত্রচর্চার নয়,সভ্য ভাবে বাঁচারও। দেশ সবচেয়ে ব্ড় বিপদে পড়েছে শিক্ষিত নামধারী এসব কুশিক্ষিতদের হাতে। একারণেই দেশে বার বার নির্বাচন হচ্ছে বটে, কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় ও ক্ষমতা বাড়েছে দুর্বত্তদের।
রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও গণতন্ত্রের সামর্থ্য
মানব সমাজের সবচেয়ে শক্তিশাল প্রতিষ্ঠান হল রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের হাতে যে প্রশাসনিক কাঠামো ও জনশক্তি তা যেমন শক্তিশালী,তেমনি বিশাল এবং বিস্তৃত। থাকে বিশাল অর্থনৈতিক সামর্থও। ব্যক্তি বা সমাজের কল্যাণে কিছু করার সামর্থ রাষ্ট্রের হাতে তাই বিশাল। সে সামর্থ্য বহু গুণ বাড়ে যদি সে প্রশাসনে সৎ ও যোগ্য মানুষের সম সামর্থ্যের বিণিয়োগ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বড় কল্যান,সাধারণ মানুষের যেমন সামর্থ বাড়ায় তেমনি সেটির বিণিয়োগের সুযোগও সৃষ্টি করে। রাজতন্ত্র ও স্বৈরাচারি পদ্ধতিতে সবাই সে সুযোগ পায় না। ফলে জনগণের নিজ নিজ ভাগ্য-পরিবর্তন ও সরকার-পরিবর্তনের সে সুযোগ তেমন আসেনা। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে রাষ্ট্রের সে বিশাল সামর্থ যখন হিটলারের ন্যায় ফ্যাসীবাদী বা শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালীর হাতে গিয়ে পড়ে তখন প্রচ্ণ্ড ভয়াবহতা আসে তাদের স্বৈরাচারে। রাষ্ট্রের বিশাল জনশক্তি ও প্রশাসন তখন নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়। নির্বাচিত হলেও স্বৈরাচারির চেয়েও তারা স্বৈরাচারি হয়ে উঠে। রাজা বা সামরিক জান্তাগণ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ায় নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে জনগণকে তবুও কিছু স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার গর্বে সেটি অপ্রয়োজনীয় মনে করে এসব নির্বাচিত স্বৈরাচারিরা। তাই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারিগণ রাজা বা রাজপুত্র ছিলেন না,ছিলেন হিটলার বা শেখ মুজিবের ন্যায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আইয়ুব ও ইয়াহিয়া খানের আমলে তাই বহু দলীয় রাজনীতি,বহু বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা থাকলেও,মুজিবের বাকশালী আমলে সেটি ছিল না।
রাষ্ট্রপরিচালনার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি দেশের দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়া কোরআনের শিক্ষা নয়। আবুজেহল ও আবু লাহাবদের ন্যায় অপরাধীদের নেতা রূপে মেনে নেয়া নবীজী (সাঃ)র সূন্নতও নয়। বরং এক ভয়ানক দায়িত্বহীনতা। ইসলামে এটি গুরুতর পাপ। সে পাপ ও দায়িত্বহীনতা ভয়ানক আযাব ডেকে আনে। তবে সে দায়িত্বপালন নিছক ভোটদানে হয় না। বরং সেজন্য,রাষ্ট্রের কল্যাণ-কর্মে জনগণের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হয়। রাজনীতি ও সমাজনীতির ময়দানে তাদের নামিয়ে আনতে হয়। নবীজী (সাঃ)র আমলে এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যিনি সমাজ ও রাষ্ট্র সংশোধনের এ কাজে আত্মবিণিয়োগ করেননি। কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী সবাই একই কাতারে হাজির হয়েছিলেন। শতকরা ৬০ ভাগ সাহাবী তো শহিদ হয়ে গেছেন। শুধু ভোটদান নয়, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে ভোটদানের পাশাপাশি অর্থ, শ্রম, মেধা এমন কি রক্তদানে প্রস্তুত থাকাটাই যে ঈমানদারি, সেটি তো তারা এভাবেই শিখিয়ে গেছেন।
গণতন্ত্রের অর্থ যদি নিছক ভোট দান ও ভোট গণনা হয় তবে বাংলাদেশে গণতণ্ত্র যে সফল সেটিই বলতে হবে। সে সফলতা নিয়ে উৎসবও হতে পারে। কারণ বাংলাদেশে তার জন্ম থেকে বহু নির্বাচন হয়েছে। এমনকি সামরিক স্বৈরাচারিরাও বহু নির্বাচন দিয়েছে। আর গণতন্ত্রের অর্থ যদি হয় সবচেয়ে সৎ,যোগ্য,দেশদরদী ও দেশপ্রেমিক মানুষের নির্বাচন, তবে বলতে হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেটি দেশটির জন্মের পূর্ব থেকেই। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে এমন সব ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছিল যারা মানুষ খুণ করেছিল খোদ সংসদের মেঝেতে। মাঠ-ঘাট, গ্রামে-গঞ্জ বা বনে জঙ্গলে মানুষের সামনে মানুষ খুণ হলে সে খুণের সাক্ষি পাওয়া যায়। তা নিয়ে বিচার বসে, অপরাধীকে শাস্তিও দেয়া হয়। কিন্তু সংসদের মাঝে যখন ডিপুটি স্পীকার খুণ হল সে খুণের কোন সাক্ষী পাওয়া যায়নি। তাই তার কোন বিচারও হয়নি। যেন সে খুণের ঘটনাটি ঘটেছিল মানুষের সামনে নয়, কিছু অবলা জীব-জন্তুর সামনে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিল এমন কিছু ব্যক্তি ও নেতা যারা জনগনের অধিকারকে সমুন্নত রাখার অঙ্গিকার করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা গণতন্ত্রকেই নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারা রহিত করেছিল জনগণের ন্যূনতম নাগরিক অধিকার এবং প্রতিষ্ঠিত করেছিল একদলীয় বাকশালী শাসন।সে স্বৈরাচারি শাসনামলে সত্যকথা বলা,সত্যপ্রচারে কোন পত্রিকা প্রকাশ করা বা জনকল্যাণের নিয়ত নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল গঠন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে গণ্য হত। প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ সেদিন স্বৈরাচারের হাতে নিহত হয়েছিল। সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সেদিন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি নির্বাচন।সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অতি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
জিম্মি গণতন্ত্র
অতীতে শাসন ক্ষমতায় বসবার জন্য রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ লড়তে হতে। সে যুদ্ধে নিজের প্রাণের বাজী রেখে শত্রু পক্ষকে পরাজিত করতে হত। সে সব যুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার, অপপ্রচার, গুপ্তচরবৃত্তি কোনটাই নিষিদ্ধ ছিল না। আর আজ ক্ষমতালাভের জন্য প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করতে হয়না, আহত বা নিহতও হতে হয় না। যুদ্ধের সে স্থানটি নিয়েছে ভোটযুদ্ধ। এ ভোট যুদ্ধে অস্ত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার, অপপ্রচার, গুপ্তচরবৃত্তি কোনটাই নিষিদ্ধ হয়নি। বরং বহুগুণ বেড়েছে। অতীতে যারা সাহসী ছিল এবং উন্নত মানের অস্ত্র ও রণকৌশলের অধিকারি ছিল তাদের মিথ্যা বা ষড়যন্ত্র নির্ভর না হলেও চলতো। কিন্তু ভোট যুদ্ধে মিথ্যা প্রতারণা স্বৈরাচারিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের লক্ষ্য একটাই, যে কোন ভাবে ক্ষমতায় আহরণ। ধোকাবাজীও এ ভোট-যুদ্ধে তাই অপরাধ গণ্য হয় না। ফলে গণতন্ত্রের শত্রুরাও গণতণ্ত্রের খাদেমের অভিনয়ে নামে।
নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিচারবোধ, মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা থাকে না। তার লক্ষ্য,ইন্দ্রিয় সুখ। সে সুখের তাড়নায় সে নেশার বস্তুটি খোঁজে। সেটি না পেলে নেশার প্রকাপে চুরি-ডাকাতিতেও কসূর করে না। নেশার প্রকোপে নিজের পিতামাতার তহবিলেও হাত দেয়। অর্থ সংগ্রহে এমন কি স্ত্রীকেও দেহ ব্যবসায় লাগায়।তেমনি এক প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিবিদগণও। নিছক ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে তারা ন্যায়নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধকে তারা আস্তাকুঁড়ে ফেলে। তারা জোট বাঁধে নৈতিকতার ভিত্তিতে নয়, বরং কি করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় এবং ক্ষমতায় গিয়ে দেশের অর্থভাণ্ডারের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠার করা যায় সে লক্ষটি সামনে রেখে। তখন শত্রুদেশের সাথে ষড়যন্ত্র করতেও দ্বিধা করে না। এমনই এক প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততায় মীর জাফর উপনিবেশিক ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়েছিল। আজ যে বাংলাদেশের পানি সম্পদের উপর ভারতের লুণ্ঠন, দেশের বুক চিরে ট্রানজিট, সীমান্তে পুশ-ইন ও মানুষ হত্যা, তালপট্টি দ্বীপের উপর জবর দখল – সেগুলো তো শেখ মুজিব ও তাঁর দলের ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির কারণেই। এ রাজনীতিই তাদেরকে ভারতের প্রতি আত্মসমর্পিত করেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র এবং ভারতীয় বাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরে ডেকে আনার পিছিনে এমনই এক আত্মসমর্পিত চেতনা কাজ করেছিল।
আদালত নিজেই কোন সুবিচার আনে না। সাক্ষীগণ যদি মিথ্যা সাক্ষী দেয় তখন অসম্ভব হয় সুবিচার। তখন আদালত ও বিচারকের সংখ্যা শতগুণ বাড়ালেও সুবিচার প্রতিষ্ঠা পায় না। গণতন্ত্রে আদালত বসে সমগ্র দেশ জুড়ে। সেটি ভোট বাক্স। ভোটের মাধ্যমে জনগণ সাক্ষ্য দেয় কে সৎ ও যোগ্যমান। সেখানে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে গণতন্ত্র ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই গণতন্ত্র বা নির্বাচন নিজেই সুফল আনে না,মূল দায়ভারটি এখানে জনগণের। জনগণ যদি জেনেবুঝে ধোকাবাজ, চরিত্রহীন, সন্ত্রাসী ও স্বৈরাচারিকে ভোট দেয় তখন ব্যর্থ হয় গণতন্ত্র। এমন নির্বাচন শতবার হলেও সুশাসনও প্রতিষ্ঠা পায় না। বরং প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্তদের স্বৈরাচারির দুঃশাসন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নামে বার বার সেটিই হয়েছে। এমন অবস্থায় গণতন্ত্র জনগণকে মু্ক্তি দিতে পারে না,বরং নিজেই জিম্মি হয়ে পড়ে অযোগ্য জনগণের হাতে। তখন নির্বাচন পরিনত হয় সমাজের সবচেয়ে দুর্বৃত্তদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ারে। তাছাড়া জনগণকে মিথ্যা নির্বাচনী ওয়াদায় শোনানোর কাজে কোন সত্যবাদী কি তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় পারে? কারণ মিথ্যাবাদীর জিহ্বায় কোন লাগাম থাকে না। সে ২০ টাকা মন ধরে চাউল খাওয়ানো মিথ্যা ওয়াদা যেমন করতে পারে, তেমনি প্রতি ঘরে চাকুরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও শোনাতে পারে। এখান জনগণের দায়ভার হল,এমন মিথ্যুকদের চেনা এবং ভোটের মাধ্যমে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু যে সমাজে এমন ধোকাবাজদের ভোট দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় সেখানে গণতন্ত্র নিজেই এক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন অসম্ভব হয় সৎ ব্যক্তির বিজয়, এবং অসম্ভব হয় দেশে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা।
জিম্মি জনগণ ও দায়ভার
ইংরাজীতে সোসাল ক্যাপিট্যাল বা সামাজিক পুঁজি বলে একটা কথা আছে। এটি হল, জনগণের এমন কিছু গুণ যা রাষ্ট্রের নির্মানে অপরিহার্য। এটি ছাড়া কোন আর্থিক পুঁজির সফল বিণিয়োগ হয় না। দেশে শান্তি-সমৃদ্ধিও আসে না। তাই উন্নত রাষ্ট্রের নির্মানে শুধু ভূখণ্ড, জনগণ, সরকার ও সরকারি প্রশাসন থাকলে চলে না, অতি অপরিহার্য হল এই সোসাল ক্যাপিটাল বা জনগণের উন্নত গুণাবলি। আর সেটি গড়ে উঠে উন্নত পরিবার,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদ মাদ্রাসা,সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে। যে দেশে এ প্রতিষ্ঠানগুলো অনুন্নত সে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিষ্ঠা অনেকটা শূন্যে প্রাসাদ নির্মানের মত। প্রশ্ন হল,বাংলাদেশে কতটা কাজ হয়েছে এগুলো গড়ে তোলার জন্য। মুসলিম সমাজে উন্নত মানুষ গড়ার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হল পবিত্র কোরআন ও নবীজী (সাঃ)র সূন্নাহ। মহান আল্লাহর এটিই শ্রেষ্ঠ নয়ামত। পবিত্র কোরআন এবং নবীজী (সাঃ)র সংস্পর্শে এসেই আরবের অতি দুর্বৃত্ব মানুষগুলো মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে পেরেছিলেন। তাদের হাতেই গড়ে উঠেছিল মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। ন্যায়নীতি ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিকে বিজয়ী করার কাজে শুধু ভোটাদন নয়,প্রয়োজনে লড়াই করা বা যুদ্ধ করাকেও ইবাদত গণ্য করে। জনগণ তখন শুধু ভোটদানে কাতার বাঁধে না,কাতার বাঁধে জানমালের বিণিয়োগেও। রাজনীতি লক্ষ্য তখন শুধু গণতন্ত্র চর্চা হয় না, বরং সেটি হয় আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা তথা উচ্চতর সভ্যতার নির্মান। অথচ বাংলাদেশে সরকার এ অবধি কিছুই করেনি যার মাধ্যমে এমন আত্ম-কোরবানীর প্রেরণা গড়ে উঠে। বরং ব্যাপক কাজ করেছে এমন চেতনার বিনাশে। এ লক্ষ্যে সরকার শুধু স্কুল-কলেজে কোরআন শিক্ষাকে সংকুচিত করেনি, বরং অসম্ভব করেছে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে রাষ্ট্র নির্মানে আত্মনিয়োগকেও। শেখ মুজিব এমন কাজকে বেআইনী তথা ফৌজদারি অপরাধ রূপে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজকের সেক্যিউলার নেতৃবৃন্দও সে পথ ধরেছেন। শরিয়ত, জিহাদ এবং খেলাফতের ন্যায় ইসলামের যে মৌল বিষয়গুলো নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেগুলি নিয়ে চিন্তা করা বা রাজনীতি করাকে এখন তারা মৌলবাদ বলছেন। সরকারের পুলিশ,সরকারি দলের ক্যাডার এবং র্যাবের মূল কাজ হয়েছে ইসলামের সে মৌল শিক্ষাকে সর্বভাবে প্রতিহত করা। অথচ গণতন্ত্রের মূল কথা,জনগণকে নিজ নিজ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দর্শনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশে সে অধিকার নেই। সেটি যেমন শেখ মুজিবের আমলে ছিল না। আজও নাই। বরং পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছে অজ্ঞতার সেবকরা। যে অজ্ঞতার বলেই মুজিব আমলে তাঁর মগজে বাসা বেঁধেছিল জাতিয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও সেক্যিউলারিজম, আজ বাংলাদেশে সেটিই বিজয়ী আদর্শ। ফলে বাংলাদেশে শুধু গণতন্ত্র চর্চা ব্যর্থ হচ্ছে না,ব্যর্থ হচ্ছে উচ্চতর ব্যক্তি,রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মানের প্রচেষ্ঠা। দেশ পরিণত হয়েছে দূর্নীতিপরায়ন আমলা, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও বিভ্রান্ত বুদ্ধিজীবীদের অভয় অরণ্যে। সমগ্র দেশ ও দেশবাসী এসব দুর্বৃত্তদের হাতে এখন জিম্মি। তাই জনগণের দায়ভার শুধু স্বৈরাচারি সরকার থেকে মূক্তি নয়,বরং এ জিম্মিদশা থেকে মূক্তি। নইলে বাড়বে শুধু পার্থিব জীবনের অশান্তিই নয়,অনন্ত-অসীম পরকালীন জীবনের অশান্তিও। ২৬/০৬/১১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018