ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ এবং পানিযুদ্ধের মুখে বাংলাদেশ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 28, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ভারত বিশাল বাঁধ দিচ্ছে বরাক নদীর উপর। এ বরাক নদীই বাংলাদেশের অমলশীদ নামক জায়গায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বিভক্ত হয়েছে। আবার আজমেরী গঞ্জে এসে একত্রিত হয়ে মেঘনা নদীর জন্ম দিয়েছে। যৌথ পানি কমিশনের সাবেক বাংলাদেশী সদস্য তৌহিদ আনোয়ার খান বলেন, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি প্রবাহের মূল উৎস হলো বারাক নদী। তার মতে বরাক নদীর পানির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পায় কুশিয়ারা, আর প্রায় ২০ ভাগ পায় সুরমা। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে ১০০ কি.মি. উজানে এ নদীর উপরই টিপাইমুখ জায়গায় নির্মিত হচ্ছে বাঁধ। এ বাঁধ শেষ হবে ২০১২ সালে। উজানে বাঁধ দিলে স্বভাবতই ভাটির নদী পানি পায় না। এটুকু শুধু স্কুলের ছাত্র নয়, নিরক্ষর মানুষও বুঝে। কারণ এটুকু বুঝবার জন্য সামান্য কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। কিন্তু বুঝতে রাজী নয়, আওয়ামী লীগের দলীয় নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী ঘরানার সরকারি কর্মকর্তাগণ।
সেটিরই প্রমাণ মিলছে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যে। সম্প্রতি তেমনি এক বক্তব্য দিয়েছেন, যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশী সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন। হাসিনা সরকার টিপাই মুখ বাঁধ পরিদর্শনের জন্য ১০ সদস্যের যে কমিটি গঠন করেছে তিনি সে দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ তথা টেকনিক্যাল পার্সন। সফরকারি এ দলটির নেতৃত্বে থাকবেন একনিষ্ঠ ভারতপন্থি আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আব্দুর রাজ্জাক। “দৈনিক আমার দেশ”এর (২৮শে জুন, ২০০৯) সাথে সাক্ষাতকারে মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন,
“বরাক নদী থেকে মাত্র শতকরা ১ ভাগ পানি কুশিয়ারাতে আসে, এবং সুরমা একটুও পায়না। তার মতে ব্রক্ষ্মপুত্রের শতকরা ৭০ভাগ পানি এসে নদী দু’টিকে সচল রেখেছে।” তিনি আরো বলেছেন, “টিপাই বাঁধ” নির্মিত হলে বর্ষা মৌসুমে সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বন্যার কবলে পড়বে না। তার যুক্তি হল, বাঁধ নির্মিত হলে পলিমাটি জমবে না, লবণাক্ত পানিও প্রবেশ করবে না এবং ফসলী জমিও নষ্ট হবে না। এতে নৌ-চলাচল বাড়বে। উক্ত সাক্ষাৎকারে জনাব মীর হোসেন এটাও বলেছেন যে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে কুশিয়ারা ও সুরমায় পানি থৈ থৈ করবে।
কথা হল, শেখ হাসিনার পছন্দের পানি-বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিটি যেসব কথা বলছেন তা কি তিনি বুঝেসুঝে বললেন? বাংলাদেশে ভারতীয় স্বার্থের সরকারি উকিল তথা ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তিও সম্ভবতঃ এমন যুক্তি দেখাতে লজ্জা পাবেন। অপর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রি ডাঃ দীপুমনি সম্প্রতি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে পানি চুক্তির ফলে বাংলাদেশ গঙ্গার ন্যায্য পানি পাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশী কর্মকর্তাগণ বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, ভারত পানির প্রাপ্য হিস্যা না দিয়ে অনেক কম দিচ্ছে। কথা হলো ডাঃ দীপুমনিও কি জেনেশুনে এরূপ কথা বলছেন? প্রশ্ন হলো, দীপুমনির ন্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মীর সাজ্জাদ হোসেনের মত পানি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বাংলাদেশী টিম গঠন করলে ভারতীয় টিমে কোন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন আছে কি? বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার কাজে এমন ব্যক্তিদেরকে ভারতে পাঠালে কি দেশের স্বার্থ বাঁচবে? কথা হলো, এমন সব ব্যক্তি বাংলাদেশে থাকতে ঢাকায় ভারতীয় দূতের প্রয়োজন আছে কি? ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার পিনক রঞ্জন বলছেন, টিপাইমুখ বাঁধ একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, এতে নদীর পানি কমানো হবে না। শ্রী পিনক রঞ্জনের সে কথা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ শুধু মেনেই নেয়নি, বরং বাড়িয়ে বলছে এ বাঁধের ফলে বাংলাদেশের নদীতে পানির পরিমাণ বাড়বে। বলছে, এ বাঁধ ফারাক্কা নয়, তাই এ বাঁধে পানি বেড়ে ভাটীর সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনাতে পানির থৈ থৈ অবস্থা সৃষ্টি হবে।
কথা হল, বরাক নদীর শতকরা এক ভাগ পানি যদি কুশিয়ারা পায় তবে বাঁকী ৯৯ভাগ পানি কোথায় যায়? আর এ বাঁধের ফলে সিলেটের বন্যাই যদি থেমে যায় তবে প্রশ্ন, বরাক নদীর শতকরা এক ভাগ পানি ঠেকিয়েই কি সে পানি দিয়ে কি ভারতে বিদ্যূতের রমরমা অবস্থা সৃষ্টি করা হবে? আরো প্রশ্ন হল, সিলেট জেলার বন্যার কারণ কি বরাকের শতকরা এক ভাগ পানি? তাহলে যে স্থানে বারাকের বাঁকী ৯৯ ভাগ পানি যাচ্ছে সেখানে বন্যার কি অবস্থা? তাছাড়া বাঁধ দিলে পলিমাটি আসা বন্ধ হবে, সুরমা-কুশিয়ারায় পানি থৈ থৈ করবে এবং নদী দুটিতে নৌ-চলাচল বাড়বে সেটিই বা কীরূপে সম্ভব? নদীর উজানে বাধ দিলে কি ভাটিতে থৈ থৈ পানি হয়? ফারাক্কা বাঁধের ফলে পানির থৈ থৈ অবস্থা ভাগিরথিতে, পদ্মায় নয়। পদ্মায় তো হাঁটু পানি। সে পানিতে জাহাজ দূরে থাক বার মাস নৌকাও চলে না। অথচ ভাগিরতীতে বার মাস জাহাজ চলে। আন্তর্জাতিক মানের বন্দরও গড়ে উঠতে পারে। পদ্মার পানি অন্যায় ভাবে তুলে নেওয়ায় রমরমা হয়েছে কোলকাতা বন্দর। ভারত যে গঙ্গার পানি বন্টনে ন্যায্য আচরণ করেনি বরং ভয়ানক বঞ্চনা করেছে -সেটি বুঝবার জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই। একনজর ভাগিরথি ও পদ্মা দেখাটাই যথেষ্ট। পদ্মা ও ভাগিরথি দু’টো নদীই আমি স্বচক্ষে দেখেছি। প্রতিবেশী দেশের প্রতি ভারত সরকারের আচরণ যে কতটা নিষ্ঠুর ও বিবেকশূণ্য, এবং কতটা ন্যায়বিচার ও মানবতা-শূণ্য তার বড় স্বাক্ষী হল এই কানায় কানায় থৈ থৈ করা ভাগিরথি নদী আর শুকিয়ে যাওয়া পদ্মা। পদ্মার বুকে পানির চেয়ে বালিরই আধিক্য। গ্রীষ্মে ধু ধু করে এর সমগ্র বুক। অথচ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও করাচীর রাস্তায় আজও পাটের গন্ধ খুজেঁ বেড়ালেও, ভাগীরথিতে পদ্মার পানির গন্ধ পায় না। পদ্মার করুণ চেহারাও তাদের নজরে পড়ে না। বরং দাবী করে পদ্মা ন্যায্য পানি পাচ্ছে!
বাংলাদেশের সীমান্ত ও সীমান্তে বসবাস করা নিরীহ মানুষ ও গরুবাছুড়ই শুধু ভারতীয় সন্ত্রাসের শিকার নয়, প্রচন্ড সন্ত্রাসের শিকার হলো এর নদ-নদী, প্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিদ ও পশু-পাখিসহ প্রতিটি জীব। লন্ডনের টেমস নদীতে বহু হাজার বছর আগে পানির যে প্রবাহ ছিল এবং কানায় কানায় যেভাবে পূর্ণ হতো -এখনও তাই হয়। বার্মার ইরাবতি, ইউরোপের দানিয়ুব, ব্রাজিলের আমাজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির আজও সে হাজার বছরের পুরনো থৈ থৈ রূপ। অথচ আজ থেকে মাত্র ৫০ বছর আগে পদ্মার যে প্রমত্তা প্রবাহ ছিল এখন সেটি বিলুপ্ত। গোয়ালন্দের ন্যায় দিবারাত্র মুখর বহু নদীবন্দর এখন বিলুপ্ত। এর বুক চিরে এখন আর হাজার হাজার নৌকা পাল তুলে ইলিশ মাছ ধরে না। স্টীমারও চলে না। যে পদ্মা হাজার হাজার বছর ধরে বাংলায় বেঁচে ছিল সেটি ফারাক্কার মরণ ছোবলে সহসাই মারা গেছে। পদ্মার পরিচয় মিলবে এখন শুধু অতীত ইতিহাস, উপন্যাস, ছোটগল্প ও কিছু প্রবীণ ব্যক্তিদের স্মৃতীতে। কারণ- টেমস, ইরাবতি, দানিয়ুব বা আমাজানের উপর কোন দূর্বৃত্ত সন্ত্রাসীর থাবা পড়েনি। নির্মিত হয়নি কোন ফারাক্কা। দস্যূতার শিকার হয়নি এর পানি। দেশে দেশে প্রকৃতি তো এভাবেই অক্ষত থাকে। প্রকৃতির উপর এটিই তো মানব জাতির দায়বদ্ধতা। অথচ আগ্রাসী প্রতিবেশীর কারণে বাংলাদেশে সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দেশ হলো বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের অপরাধ অনেক, তবে সেগুলির মাঝে এটিই হলো অন্যতম বড় অপরাধ।
ভারত সরকারের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও জনগণের নজর থেকে যা গোপন রেখেছে সেটি হল, টিপাইমুখ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কাছাড় জেলার ফুলেরতল নামক স্থানে যে আরেকটি প্রকান্ড বাঁধ দিচ্ছে সেটির কথা। সে বাঁধটি দেওয়া হচ্ছে সেচ প্রকল্পের অংশ রূপে। সে বাঁধের উজানে পানির যে বিশাল জলাশয় গড়া হচ্ছে সেখানে পানি আসমান থেকে নামবে না। নেওয়া হবে টিপাই বাঁধের উজান থেকে। ফলে বরাকের পানিপ্রবাহ থেকে যে পানি এতকাল সুরমা-কুশিয়ারা পেত সেটি আর পাবে না। ভারত যখন ফারাক্কায় বাঁধ দিচ্ছিল তখনও বলেছিল, বাঁধের লক্ষ্য নিছক ভাগিরথিতে কিছু পানি দিয়ে কোলকাতার বন্দরকে সচল করা। কিন্তু পরবর্তীতে পদ্মার পানি দিয়ে শুধু কোলকাতার বন্দরকে সচল করা হয়নি, সবুজ করা হয়েছে মধ্য-ভারতের বহু শত মাইল দূরের মরুভূমিকেও। এভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে একান্ত পদ্মা পাড়ে বসবাসকারি বাংলাদেশের মানুষকে। বরং তাদেরকে উপহার দেওয়া হয়েছে ভয়াবহ মরুভূমিকরণ প্রক্রিয়া। অথচ এমন আচরণ শুধু প্রকৃতির সাথেই দূষমনি নয়, এ দূষমনি আন্তর্জাতিক আইন বিরুদ্ধেও। অওয়ামী নেতৃবৃন্দ শিশু নয় যে তার একথা বুঝে না। কিন্তু বেশী মনযোগী নিজেদের ক্ষমতার মসনদকে টিকিয়ে রাখতে। আর এ জন্য ভারতের সাহায্যপ্রাপ্তিকে তারা অপরিহার্য ভাবে। মীর জাফরও শিশু ছিল না। আহম্মকও ছিল না। জানতো, লর্ড ক্লাইভের বাহিনীর বিরুদ্ধে পলাশীতে যুদ্ধ না করার অর্থ বাংলার স্বাধীন অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়া। কিন্তু তারপরও সে যুদ্ধ করেনি। বাংলার স্বাধীনতা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল, পুতুল শাসক রূপে হলেও কিছুদিনের জন্য মসনদে বসা। আার এজন্যই সে ইংরেজদের মন যুগিয়ে চলাকে বাংলার স্বাধীনতার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিত।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে এ মর্মে চুক্তি হয় যে, দুইদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কোন নদীর উপর কোন কিছু করতে হলে অপর দেশের অনুমতি নিতে হবে। এটি হল চুক্তির ৬ নং ধারা। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে ভারত বাংলাদেশের সাথে আলোপ-আলোচনা না করে স্পষ্টতঃ সে ধারা লংঘন করেছে। বরাক-সুরমা-কুশিয়ারর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য হল ৯৪৬ কিলোমিটার, আর এর মধ্যে ৬৬৯ কিলোমিটারই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। তাছাড়া ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এ পার্বত্য এলাকাটি জনবিরল। এর ফলে এ নদীর পানির উপর নির্ভরশীল ভারতীয়দের তুলনায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা ১০ গুণেরও বেশী। ফলে বরাক নদীর পানির উপর অধিক অধিকার বাংলাদেশের। অথচ ভারত বাংলাদেশকে সে ন্যায্য অধিকার দিতে রাজী নয়। সম্পদের লুন্ঠনে লুন্ঠনকারি সন্ত্রাসী কখনই প্রকৃত মালিকের অনুমতি নেওয়ার ধার ধারে না। ভারতও তেমনি বাঁধ দিতে বা নদী থেকে পানি তুলে নিতে অনুমতি নেয়নি বাংলাদেশের। সেটি যেমন ফারাক্কার ক্ষেত্রে ঘটেছে, তেমনি ঘটছে টিপাইমুখের ক্ষেত্রেও। এ বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ভারত ২০০৪ সালে জার্মানীর বার্লিনে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক পানিচুক্তিও লংঘন করেছে। সে চুক্তি মোতাবেক কোন দেশেরই আন্তর্জাতিক নদীর পানি তুলে নিয়ে অন্যদেশের ভূ-প্রকৃতিই পাল্টে দেওয়ার অধিকার নেই। অথচ ভারত সে আন্তর্জাতিক চুক্তিও লংঘন করেছে। বাংলাদেশকে না জানিয়ে সবকিছুই তারা লুকিয়ে লুকিয়ে করছে। সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী জনাব হাফিজ উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি কমিশনের মিটিংয়ে ২০০৩ এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধের উপাত্ত তথা ডাটা দিতে বলে। কিন্তু ভারত তা দেয়নি। একই কাজ করেছে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ কালেও।
টিপাইমুখ বাঁধের ফলে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশের বিপুল এলাকা বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট জেলা এবং বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। শুকিয়ে যাবে সুরমা ও কুশিয়ারা ও এদু’টির ৬০টির মত ছোট ছোট শাখা নদী। পানির অভাবে বিপন্ন হবে চাষাবাদ, পশুপালন, মৎসপালন, নৌ-চলাচল ও গাছপালা। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবে আরো গভীরে। ফলে নলকুপের পানিতে বাড়বে আর্সেনিকের মাত্রা। যেমনটি ফারাক্কার কারণে হয়েছে উত্তর বাংলার বিশাল এলাকা জুড়ে। ফলে পানিপানের ফলে বাড়বে আর্সেনিকের ন্যায় বিষাক্ত বিষপান। আর এরূপ বিষপানে ব্যাপকভাবে বাড়বে মানব দেহে ক্যান্সার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মানবজাতির ইতিহাসে এইডসের চেয়েও মহামারি হবে বাংলাদেশের এ আর্সেনিকজনিত ক্যান্সার। নদীতে পানি না থাকায় এ নদীগুলো বেয়ে সমুদ্রের নোনা পানি উপরে উঠা শুরু করবে এবং তা প্রবেশ করবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। আর এতে বিপন্ন হবে চাষাবাদ।
তবে শুধু পানিসংকট, স্বাস্থ্যসংকট বা কৃষিসংকটই নয়, বাংলাদেশে বিশেষ করে সিলেট্ জেলার লোকদের উপর ভয়ংকর বিপর্যয় আসবে অন্যভাবে। টিপাইমুখ বাঁধের উচ্চতা হবে ১৮০ মিটার। এবং পানি ধরবে ১৫,৯০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। বাঁধটি যে এলাকাতে নির্মিত হচ্ছে সে এলাকাটি ভূমিকম্পের জন্য অতি পরিচিত। বিগত একশত বছরে সেখানে বহু ভূমিকম্প হয়েছে। ভারতের ইউনিভার্সিটি অব মনিপুরের অধ্যাপক ড. সয়বাম ইবোতম্বি সম্প্রতি এক নিবন্ধে বলেছেন, এ এলাকার ভূ-গর্ভে ভাজপূর্ণ স্তর রয়েছে। তার মতে এমন ভূ-প্রকৃতি সম্পন্ন এলাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়। আর সে ভূমিকম্পে ফাটল সৃষ্টি হবে এ বাঁধে। এবং ভেঙ্গে যেতে পারে এ বাঁধ। তখন বাঁধের উজানের বিশাল লেকের পানির স্রোতে সৃষ্টি হবে সর্বনাশা এক প্লাবন যা কযেক মিনিটেই তলিয়ে দিবে সমগ্র সিলেট। তখন সে প্লাবনের পানিতে ভেসে যাবে বহু মানুষ ও সম্পদ। ফারাক্কা বাধের উজানে অতিরিক্ত পানি অন্যদিকে গড়ে যাবার জন্য ভাগিরথি আছে। আসে-পাশের সমতল ভূমিও আছে। কিন্তু টিপাইমুখে তা নেই। ফলে বছরের পর বছর ধরে জমাকৃত সে পানিতে প্রলয় এলে সেটি সিলেটবাসীর মাথার উপরই পড়বে।
সন্ত্রাসী হামলায় স্বচ্ছল পরিবারও নিমিষে নিঃশেষ হয়। তেমনি নদীর উপর সন্ত্রাসে দ্রুত বিবর্ণ হয় দেশের জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতিসহ সমগ্র দেশ। একাত্তরের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরই শধু নয়, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের উপরও ভারতীয় সন্ত্রাস ও লুটতরাজ চরম আকার ধারণ করেছে। আইয়ুব খান বাঙ্গালী ছিলেন না। কিন্তু যখন ফারাক্কা নির্মিত হচ্ছিল তখন তিনি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন, “এ বাঁধটি চালু করলে আমরা বোমা মেরে উড়িয়ে দিব।” এবং সে হুমকী কাজও দিয়েছিল। তাই এ বাধেঁর পরিকল্পনা ১৯৫১ সালে শুরু হলেও ভারত সরকারকে পাকিস্তান ভাঙ্গা অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে বিস্তর পুঁজিও বিণিয়োগ করতে হয়েছে। এজন্য একাত্তরে হাজার হজার সৈন্যের রক্তক্ষয় ও বহু হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকান্ড একখানি যুদ্ধও লড়তে হয়েছে।
ফাঁরাক্কা বাধের নির্মাণ ছিল আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। অথচ সে অন্যায় ও অবৈধ বাঁধকে জায়েজ করে দেয় শেখ মুজিব। তুলে নিতে দেয় ভারতীতের ইচ্ছামাফিক পানি। শেখ মুজিব শুধু পানির উপর ভারতীয় দস্যুতাকেই বৈধতা দেয়নি, বৈধতা দিয়েছিল দেশের সম্পদ লুন্ঠনেও। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে তিনি বর্ডার খুলে দেন। পাত্রের তলায় ফুটো থাকলে সে পাত্রে পানি অবিরাম ঢাললেও তাতে পানি থাকে না। আর বর্ডার হলো একটি দেশের তলা। বাংলাদেশের সে তলা প্রায় ৪ হাজার মাইলব্যাপী। আর মুজিব সীমান্ত বাণিজ্যের নামে সীমান্ত খুলে দিয়ে তলাটিই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত পেয়েছিল তলাহীন ঝুড়ি রূপে। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানী সেপাহী ও অফিসারেরা যতটা যত্ন সহকারে সীমান্তের হেফাজত করেছিল আওয়ামী লীগ সেটিও করিনি। সীমান্ত রক্ষার সে গুরুত্বও অনুভব করেনি। এভাবেই আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে দেশবাসীর জন্য উপহার দিয়েছিল বাংলার ইতিহাসের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ। অথচ নির্বাচনে ওয়াদা দিয়েছিল ২০ টাকা মণ দরে চাউল খাওয়ানোর।
বাংলাদেশের এবারের নির্বাচনেও ভারতের বিণিয়োগ ছিল বিশাল। ভারত সরকার কোন খয়রাতি প্রতিষ্ঠান নয় যে নিঃস্বার্থভাবে অর্থদান করবে। বরং তাদের প্রতিটি বিণিয়োগের পিছনে থাকে বিস্তর মুনাফা তোলার চেতনা। সেটি যেমন মুজিব আমলে ছিল, তেমনি এ আমলেও। এক্ষেত্রে ভারতের টার্গেট মুলতঃ পাঁচটি ক্ষেত্রে। একই রূপ ভারতীয় স্ট্রাটেজী ছিল মুজিবের আমলেও। সেগুলো হলোঃ
এক) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মেরুদন্ড দারুণ ভাবে ভেঙ্গে দেওয়া যাতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। মুজিব আমলে আর্মিকে দূর্বল করে রক্ষিবাহিনী গড়া হয়েছিল সে কারণেই। এবং কেনা হয় নি কোন ট্যাংক ও বিমান। খয়রাত হিসাবে কয়েক খানি ট্যাংক জুটেছিল মিশর থেকে। এমনকি পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্রশস্ত্রও বাংলাদেশে রাখা হয়নি। আর এখন শুরু হয়েছে সেনা অফিসার নিধন ও সেনা অফিসারদের বহিস্কার। সৃষ্টি করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাথে বিডিআরের সংঘাত।
দুই) বাংলাদেশের নদীগুলো থেকে পানি সম্পদ লুন্ঠন করে দেশটির ভূ-প্রকৃতি ও ভূগোলকে বিপন্ন করা। তাই ফারাক্কার বাঁধটি যেমন শেষ বাঁধ ছিল না, তেমনি শেষ বাঁধ নয় টিপাইমুখ বাঁধও। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মার পানি অপহরণ শেখ মুজিবকে দিয়ে জায়েজ করিয়ে নিয়েছিল। এবারের আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে জায়েজ করে নিবে সুরমা-কুশিয়ারার পানি লুন্ঠনও।
তিন) বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে যাওয়া জন্য ট্রানজিটের সুযোগ হাসিল করা। বিগত সরকারগুলি সে সুযোগ দেয়নি। এবার তারা এশিয়ান হাইওয়ের ছদ্দবেশে সে সুযোগ আদায় করে ছাড়বে।
চার) বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করা। মুজিবামলে তারা পাট ও বস্ত্র শিল্পকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করেছিল এবং ধরাশায়ী করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। এভাবে বিশ্বব্যাপী ভিক্ষাবৃত্তি পরিণত হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির খেতাব জুটেছিল তো একারণেই। তখন একের এর এক পরিকল্পিত ভাবে পাটের গুদামে আগুন দেওয়া এবং পাট ও বস্ত্রকলগুলোর যন্ত্রাংশ খুলে ভারতে নেওয়া হয়। একইভাবে আবার শুরু হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি লুট করা ও সেগুলিতে আগুন দেওয়ার কাজ।
পাঁচ) দেশের ইসলামি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে নির্মূল করা। মুজিব আমলে যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলাম ছিল বা মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত ছিল তা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কোরআনের আয়াত তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রকান্ড আকারের মূর্তি বসানো হয়েছিল। কাজি নজরুল ইসলামের গা থেকেও ইসলাম খসিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাই নজরুলে ইসলাম কলেজ হয়ে যায় নজরুল কলেজ। যুদ্ধাপরাধি বিচারের নামে দেশের ইসলামপন্থিদের গ্রেফতার ও তাদের উপর নির্যাতের মূল হেতু তো এখানেই। অপর দিকে তসলিমা নাসরিনদের ন্যায় ইসলামের ঘোরতর দূষমণদের আবার দেশে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। লক্ষ্যণীয় যে, মুজিবামলে ভারত এ ৫টি ক্ষেত্রে যেরূপ দ্রুত সফলতা পেয়েছিল, আজও একই রূপ সফলতা পাচ্ছে। ভারত গত নির্বাচনে বিপুল পুজি বিণিয়োগ করেছে। এখন তাদের মুনাফা তোলার পালা।
আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির জোয়ার দেখেছে, ভাটাও দেখেছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় হল, তা থেকে সামান্যতম শিক্ষাও নেয়নি। ফলে দলটির উপর বিপর্যয়ও নেমে আসছে বার বার। অতীতের ন্যায় এখন এটাই ভেবেছে, তারা যেহেতু নির্বাচিত সেহেতু যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ সিকিম নয় যে, নির্বাচিত লেন্দুপ দর্জিদেরকে সংসদে দাঁড়িয়ে নিজদেশের সার্বভৌমত্ব বিলিয়ে দিতে দিবে এবং বিলিন হতে দিবে ভারতের মাঝে। এটি আর গোপন বিষয় নয় যে, ভারতের প্রতি আওয়ামী লীগের প্রচন্ড দায়বদ্ধতা আছে। কারণ ভারত একাত্তরে তার নিজ ভূমিতে কয়েক লক্ষ আওয়ামী নেতাকর্মীকে প্রচুর আদর-যত্নে আপ্যায়ন করেছিল। নেতাদেরকে কোলকাতার হোটেলে মহা-ধুমধামে জীবনযাপনের সুযোগ দিয়েছিল। এসব নেতারা বিপুল সাহায্য পেয়েছে একাত্তরের পরও। ১৯৭৫এর পট পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনা নিজেও ভারতের দিলখোলা মেহমানদারি পেয়েছেন। এভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের প্রচন্ড অঙ্গিকার কখনই গোপন থাকেনি। সে অঙ্গিকার এখনও অটুট। এজন্যই সম্প্রতি ভারতীয় মন্ত্রি শ্রী প্রণব মুখার্জি বলেছেন, এবার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু হলে ভারত বসে থাকবে না। তার এ হুমকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, এটি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ। আওয়ামী সরকারের উচিত ছিল প্রণব মুখার্জির এমন উদ্ধত বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়া। কিন্তু তারা তা দেয়নি। কারণ তাদেরও তো নিমকহালালীর ব্যাপার আছে। ফলে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানায় কি করে? একই রূপ নিমকহালালী করতে গিয়ে শেখ মুজিব ফারাক্কার পানি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, খুলে দিয়েছিলেন সীমান্ত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া শত শত কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র ভারতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সঁপে দিয়েছিলেন বেরুবাড়ি। একইভাবে হাসিনা সরকারও তুলে দিবে সুরমা-কুশিয়ারার পানি। এতে বাংলাদেশ মরুভূমি হলে তাদের কি ক্ষতি? মুজিবামলে দেশের ভুখা মানুষ ডাস্টবীনের উচ্ছিষ্ঠ, লতাপাতা, এমনকি বমিও খেয়েছে। তখন অভাবের তাড়নায় মানুষ জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। অথচ সে দূর্দিনেও সমৃদ্ধি ও আনন্দ বেড়েছিল আওয়ামী নেতাদের।
টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক মহা পরীক্ষা নিয়ে হাজির। জালেমের কাছে নতি স্বীকারে কোন কল্যাণ নেই, গর্বেরও কিছু নেই। আত্মসর্পণের এ পথ ভয়ানক অকল্যাণ ও অপমানের। বিশ্ব আজ দারুনভাবে সন্ত্রাসকবলিত। আর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হল আগ্রাসী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো। তাদের সন্ত্রাসের কারণে আজ অধিকৃত ও লুন্ঠিত দূর্বল দেশগুলোর তেল, গ্যাস ও পানি সম্পদ। এ অধিকার জমাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকান্ড সন্ত্রাসী যুদ্ধ লড়লো আফিগানিস্তান ও ইরাকে। একই কারণে অধিকৃত হয়েছে ফিলিস্তিন ও কাশ্মির। একইভাবে অধিকৃত ও লুন্ঠিত হয়েছে পদ্মার পানি এবং আজ অধিকৃত ও লুন্ঠিত হতে যাচ্ছে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি। অথচ পানিই বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এ পানির সাথেই রয়েছে বাংলার মানুষের মনের ও দেহের সম্পর্ক। এ সম্পদ লুন্ঠিত হলে বাংলাদেশীদের প্রাণে বাঁচাই দায় হবে। এতদিন ভুমি নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে, বহু যুদ্ধ তেল নিয়েও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামীদিনের যুদ্ধগুলি হবে পানি নিয়ে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রকান্ড সে যুদ্ধ ভারত শুরুই করে দিয়েছে। আমরা সে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছি পদ্মায়, এখন পরাজিত হতে চলেছি সুরমা ও কুশিয়ারায়। প্রশ্ন হল, বাংলাদেশীরা কি এভাবে পরাজিতই হতে থাকবে? আমরা কি ভিয়েতনামীদের চেয়েও দূর্বল? আর ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী? তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, এমন একটি যুদ্ধ কি আওয়ালীগের নেতৃত্বে সম্ভব? যুদ্ধ দূরে থাক, সামান্য প্রতিবাদেও কি তাদের আগ্রহ আছে? শেখ মুজিব শত শত জনসভা করেছেন। সে সব জনসভায় উচ্চারণ করেছেন বহু লক্ষ বাক্য। কিন্তু একটি বাক্যও কি মরন বাঁধ ফারাক্কার বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন? করেন নি। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা ছিল তার রাজনীতির নিষিদ্ধ ক্ষেত্র। তেমনি এক অবিকল অভিন্ন ভূমিকায় নেমেছেন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। ফলে টিপাইমুখ নিয়ে হাসিনা সরকার প্রতিবাদ করবে সেটি কি আশা করা যায়? তার দলের নেতারা তো প্রশংসায় নেমেছে। ভারত যা বলছে সেটিকেই আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টায় নেমেছে। এজন্যই বলছে, টিপাই বাঁধ দিলে সুরমা-কুশিয়ারায় পানি থৈ থৈ করবে। শেখ মুজিব একই রূপ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলার মানুষকে। বলেছিলেন, ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। বরং নেমে এসেছিল ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ। শেখ হাসিনা তার নিজের সন্তানদের আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। ফলে সমগ্র বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে গেলেও তাতে তার নিজ প্রজন্মের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি? নেই। তাই পানি-সমস্যাটি শেখ হাসিনার নিজের সমস্যা নয়, এটি নিতান্তই জনগণের। ফলে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আসতে হবে জনগণের স্তর থেকেই। আজকের বাংলাদেশীদের সামনে বস্তুতঃ এটিই হল বড় পরীক্ষা। এখানে পরীক্ষা হবে তারা কতটা মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় সেটির। পরীক্ষা হবে স্বাধীন জাতি রূপে বাঁচবার প্রকৃত সামর্থের।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018